এডিটর’স মাইন্ড

রাষ্ট্রদ্রোহী

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০২ জুলাই, ২০২২


Thumbnail

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত ২৮ জুন, মঙ্গলবার এক ঐতিহাসিক নির্দেশনা দিয়েছেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে ডিভিশন বেঞ্চ পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেন। এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে হাই কোর্ট বেঞ্চ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।  দুই মাসের মধ্যে কমিশনকে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এ বিষয়ে আগামী ২৮ আগস্ট শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। হাই কোর্ট বেঞ্চ পদ্মা সেতুকে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এ ধরনের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র করে তাদের জাতীয় শত্রু বলে মন্তব্য করেন হাই কোর্ট। বাংলাদেশে এই প্রথম একটি ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচনের জন্য সর্বোচ্চ আদালত সরাসরি নির্দেশনা দিলেন। এ নির্দেশনার মাধ্যমে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিলেন আদালত। জাতীয় শত্রু মানে দেশের শত্রু। যারা দেশের বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। এ ধরনের রাষ্ট্রদ্রোহীর সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত। আদালতের এ নির্দেশনার এক দিন পর বুধবার ইউনূস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। এ বিবৃতিতে ড. ইউনূস তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ড. ইউনূসের মতো একজন গুণীজনের বিবৃতি অসংলগ্ন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি বিবৃতিতে দাবি করেছেন, ২০১১ সালে পদত্যাগ করতে বলায় গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক আইনি মর্যাদা রক্ষার্থে তিনি হাই কোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন। এর সঙ্গে চাকরি ধরে রাখার কোনো সম্পর্ক নেই। ওমা! এ কী কথা! রিট পিটিশনটাই হলো ড. ইউনূসকে পুনর্বহালের নির্দেশনা চেয়ে। অথচ এখন তিনি বলছেন, এর সঙ্গে চাকরি ধরে রাখার সম্পর্ক নেই। পুরো বিবৃতি এ রকম জগাখিচুড়িতে ভরপুর। হাই কোর্ট কমিশন গঠনের নির্দেশনার পরপরই এ বিবৃতি দেওয়া হলো। এর কারণ সুস্পষ্ট। আগেভাগে তিনি দায়মুক্তির চেষ্টা করলেন। তার মানে গ-গোল তো কিছু আছে। না হলে এত দিন কোনো প্রতিবাদ নেই, আদালত কমিশন গঠন করতে বলার পর কেন এ বিবৃতি? কমিশন গঠনের আগেই তিনি বলছেন, ‘আমি ষড়যন্ত্রকারী নই’। বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জন অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। অনেক কষ্টের। আর প্রতিটি অর্জনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নানা ষড়যন্ত্র। কখনো দেশে, কখনো বিদেশে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আবার প্রায় সব ক্ষেত্রেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অর্জনকে বানচাল করার সব চেষ্টা করেছে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে খুনি মোশতাক চক্র ষড়যন্ত্র করেছিল। যুদ্ধের মধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন প্রস্তাব নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছিল। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ এটা টের পেয়ে মোশতাককে পররাষ্ট্র দফতর থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। ’৭৫-এ জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্য। এ হত্যার ষড়যন্ত্র হয়েছিল আওয়ামী লীগের ভিতরেই। ২০০৭ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সেই ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা ছিল আমাদের সুশীলসমাজের একটি অংশ। লোভী ও চতুর সুশীলদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন কিছু কাপুরুষ রাজনীতিবিদ। পদ্মা সেতু নিয়েও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। এ ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিয়েছিল সুশীল শিরোমণি ড. ইউনূসের নেতৃত্বে দেশের স্বনামধন্য কিছু ব্যক্তি। এসব ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্যই ছিল বাংলাদেশকে থামিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিনাশ। সব ষড়যন্ত্রই রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, আমরা একটি ষড়যন্ত্রেরও স্বরূপ উন্মোচন করতে পারিনি কিংবা আগ্রহ দেখাইনি। একটি ষড়যন্ত্র আরেকটি ষড়যন্ত্রের ভিত্তি তৈরি করেছে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে কার কী ভূমিকা তা নিয়ে একটি কমিশন গঠনের দাবি উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের পর। বঙ্গবন্ধু সে সময় দেশ গড়ার কাজেই মনোযোগী ছিলেন। এজন্য কমিশন গঠনে আগ্রহী হননি। জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। দালাল আইন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ-দেশি দোসরদের বিচার শুরু করেছিলেন। এ বিচার অব্যাহত থাকলে মুখোশধারী স্বাধীনতাবিরোধীদের চিহ্নিত করা যেত। তাদের আওয়ামী লীগ এবং সরকার থেকে আলাদা করা যেত। কিন্তু সে প্রক্রিয়া নস্যাৎ করে দেয় ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট। ’৭৫-পরবর্তী আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে নিরন্তর কাজ করেন। জনমত গড়ে তোলেন। মানবাধিকারের জন্য আন্দোলন করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হয়। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করেন। আত্মস্বীকৃত বেশ কয়েকজন খুনির সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের তদন্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ বেশ কয়েকজন নেতা কয়েক বছর ধরে এ ব্যাপারে একটি ‘তদন্ত কমিশন’ গঠনের দাবি করছেন। গত বছর জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্রের তদন্তে একটি ‘জাতীয় কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচার করেছি, কিন্তু এই নীলনকশার তদন্ত করতে পারিনি।’ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জাতীয় শোক দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগস্ট ষড়যন্ত্রের নানা বিষয় উত্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘এত বড় দল, এত নেতা কেউ এগিয়ে এলো না। একটা প্রতিবাদ মিছিল করতে পারল না কেন?’ আগস্ট ট্র্যাজেডি নিয়ে ভাবলেই অনেক প্রশ্ন মাথায় কিলবিল করে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সব সদস্য কেন ভেড়ার পালের মতো সুড়সুড় করে বঙ্গভবনে খুনি মোশতাকের আজ্ঞাবহ ভৃত্য হলো? তিন বাহিনীর প্রধানরা কেন পুতুলের মতো নীরব-নিথর থাকলেন? জিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে বদলির আদেশ বাতিলে কে বা কারা বঙ্গবন্ধুকে প্ররোচিত করেছিল? ইত্যাদি অনেক প্রশ্ন। আগস্ট ট্র্যাজেডির সময় যারা চারপাশে ছিলেন তাদের অনেকেই চলে গেছেন। আর কিছুদিন পর সত্য অন্বেষণে সাক্ষীও পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার কেন আগস্ট ষড়যন্ত্রের মূল উদ্ঘাটনের জন্য একটি কমিশন এখনো করল না? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না। ওয়ান-ইলেভেন ছিল বাংলাদেশে গণতন্ত্র এবং রাজনীতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্রের চেনা কুশীলবরা এখন কেউ বিদেশে, কেউ দেশে বহাল। এ বিষয়ে ১-১১-এর বিরাজনীতিকরণের নীলনকশা বাস্তবায়ন হয়নি শেখ হাসিনার সাহস এবং দৃঢ়তার জন্য। কিন্তু গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এ ষড়যন্ত্রের স্বরূপ উন্মোচন হয়নি আজও। ড. ইউনূস ওয়ান-ইলেভেনের আগেই কেন নোবেল পুরস্কার পেলেন? তা-ও আবার শান্তিতে! যৌথভাবে (গ্রামীণ ব্যাংক ড. ইউনূস) নোবেল পুরস্কার কীভাবে এক ব্যক্তির অর্জন হিসেবে প্রচার হলো সে-ও এক প্রশ্ন। ড. ইউনূসের নোবেল জয়ের পরপরই রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা। সেই রাজনৈতিক দলে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের যোগদান! নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংঘাত। জনগণকে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পরিকল্পিতভাবে ঠেলে দেওয়া। দুটি প্রথম সারির দৈনিকে (একটি বাংলা, একটি ইংরেজি) বিরামহীনভাবে রাজনীতিবিদদের চরিত্রহনন। তারপর ড. ফখরুদ্দীনের মতো এলিট আমলাকে সিংহাসনে বসানো। সবকিছু নিখুঁত নীলনকশার পরিপাটি বাস্তবায়ন। এরপর ড. কামাল হোসেনের সাংবিধানিক ফতোয়া দিয়ে অবৈধ অনির্বাচিত সরকারকে বৈধতা দেওয়া। দুই সম্পাদকের বিরামহীনভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার তোষণ। একজন স্বনামে কলাম লিখলেন, ‘দুই নেত্রীকে সরে যেতেই হবে’। অন্যজন গোয়েন্দা সংস্থার চিরকুট যাচাই-বাছাই না করেই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পটভূমি তৈরি করলেন। সব যেন এক সুতোয় মালা গাঁথার মতো। দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে ১-১১-এর ঘটনার তদন্ত কমিশন গঠিত হওয়া প্রয়োজন ছিল; কিন্তু হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত না হওয়ার জন্যই খুনি মোশতাক জাতির পিতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। ঠিক তেমনি, ১-১১-এর কুশীলবদের ব্যাপারে তদন্ত না হওয়ার কারণেই এরা পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করার সাহস পেয়েছিল। ১৯৭১, ১৯৭৫, ২০০৭ এবং ২০১১-এর ষড়যন্ত্র একসূত্রে গাঁথা। এসব ষড়যন্ত্র আসলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আবার ’৭১ ও ’৭৫-এর ষড়যন্ত্রের কুশীলবরা যেমন ছিল এক ও অভিন্ন। তেমনি ওয়ান-ইলেভেনের কুশীলবরাই পদ্মা সেতু না হওয়ার ষড়যন্ত্রে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ’৭১ ও ’৭৫-এর ষড়যন্ত্রকারীরা যুদ্ধাপরাধী, খুনি। আর ২০০৭ ও ২০১১-এর ষড়যন্ত্রকারীরা হলো গণতন্ত্রবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী।

পদ্মা সেতুতে ড. ইউনূস কেন বাধা দিয়েছিলেন? কেনই বা তাঁর সঙ্গে ১-১১-এর কুশীলবরা যোগ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণে ষড়যন্ত্র নিয়ে যতবার কথা বলেছেন ততবার ড. ইউনূস প্রসঙ্গ এসেছে। ড. ইউনূস ছিলেন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের চাকরির একটি নির্দিষ্ট বয়সসীমা থাকে। গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্ধারিত বয়স অতিক্রান্ত হয়েছিল বহু আগেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁকে অবসরে পাঠায়। ড. ইউনূস বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যান। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সঠিক। এরপর ড. ইউনূস শুরু করেন দেনদরবার-তদবির। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনও টেলিফোন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। প্রচ্ছন্ন ধমকও দেন। কিন্তু হিলারি-ইউনূস কেউই সম্ভবত বুঝতে পারেননি শেখ হাসিনা অন্য ধাতুতে গড়া। তিনি শেখের বেটি। এসব চাপের কাছে নতিস্বীকার তিনি কখনই করবেন না। এর পরই অন্য চাপ। সে চাপটি হলো পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ। মহাজনী ব্যবসায় বেড়ে ওঠা ড. ইউনূস জানতেন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হলে অন্য দাতারাও সরে যাবে। আমার মনে হয়, ড. ইউনূস বুঝতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলে আর গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে ফিরতে পারবেন না। এজন্য তিনি শেখ হাসিনা সরকারকেই সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নেমেছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ হারিয়ে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ দখলের মাধ্যমে প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন। ঘটাতে চেয়েছিলেন আরেকটি ১-১১। পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ ছিল আসলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র। ২০১২ সালের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র দেড় বছর আগে। এ সময় যদি আমরা ‘মাইনাস ফরমুলার প্রবক্তা’ দুটি সংবাদপত্রে চোখ রাখি, দেখব দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে নানা গল্পকাহিনি। ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. শাহদীন মালিকসহ আরও কতিপয় সুশীল পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি প্রমাণে কলমযোদ্ধা হয়ে গেলেন! পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক সরে আসা নিয়ে সে সময় কে কী বলেছেন তা ইতোমধ্যে দেশের গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়েছে। সে প্রসঙ্গ এখানে আর উল্লেখ করতে চাই না; কিন্তু এই সংঘবদ্ধ সাঁড়াশি আক্রমণের লক্ষ্য ছিল একটাই- সরকারকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ। এ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারবে না- এটি প্রমাণের চেষ্টা। সুশীলরা ক্ষমতায় আসে রাজনৈতিক শক্তির ঘাড়ে চড়ে। ২০০৭ সালে সুশীলরা বিএনপির কাঁধে সওয়ার হয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল। ইয়াজউদ্দীনকে দিয়ে একের পর এক এমন সব সিদ্ধান্ত সে সময় বিএনপি নিয়েছিল, যাতে ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচনের পথও রুদ্ধ হয়েছিল। ২০১২ সালেও সুশীলরা আরেকটি ‘অনির্বাচিত’ অধ্যায় শুরুর নীলনকশা করেছিল বিএনপিকে মাথায় রেখে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ সময় মাঠে নামলেন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নিয়ে। বক্তৃতায় বলতে শুরু করলেন, এ সরকারের আমলে পদ্মা সেতু হবে না। পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে হচ্ছে। এমন অবাস্তব, হাস্যকর কথা বলে তিনি সুশীলদের ক্রীড়নকে পরিণত হলেন।

২০১৩ সালের সব সিটি করপোরেশনে জয়ী হওয়ার পর বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস যখন তুঙ্গে ঠিই তখনই বেগম জিয়া জাতীয় নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেন। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সার্টিফিকেট আর বেগম জিয়ার নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা- দুইয়ে মিলে সুশীলদের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত। ওয়ান-ইলেভেনের আগে দুই সুশীল সম্পাদক যা করেছিলেন, ঠিই একই ভূমিকায় আবার মাঠে নামলেন। কিন্তু তাঁরা বোধহয় কার্ল মার্কসের অমর বাণীটির কথা ভুলে গিয়েছিলেন। মার্কস বলেছিলেন- ‘ইতিহাসে একই ঘটনার একই রকম পুনরাবৃত্তি হয় না।’ ২০১৪ সালের নির্বাচন হলো। ২০০৭-এর মতো আরেকটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করতে পারল না। ফলে ‘পদ্মা সেতু’ ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে একটি নির্বাচিত সরকারকে হটানোর চক্রান্ত ভেস্তে গেল। এ ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেল শুধু একজন মানুষের জন্য। তাঁর নাম শেখ হাসিনা। ওয়ান-ইলেভেনের মতো এ সময়ও আওয়ামী লীগের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা যাবে না।’ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তি বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে ঋণচুক্তি আবার চালুর জন্য ওয়াশিংটনে ছুটে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সুবিধা হলো, তিনি ভবিষ্যৎটা খুব ভালো দেখতে পান। তিনি জানতেন কারা পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। কেন করছেন। ২০১২ সালের ৪ জুলাই সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মতামত উপেক্ষা করে তিনি জাতীয় সংসদে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন। ৮ জুলাই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। ৯ জুলাই এটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। এরপর অসম্ভবকে সম্ভব করার এক অবিশ্বাস্য যুদ্ধ। এ কারণেই ২৯ জুন বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সেতুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা, আমাদের প্রত্যয়। শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর মুখ দেখেছি।’ সুশীলদের বিরুদ্ধে এটি ছিল শেখ হাসিনার দ্বিতীয় বিজয়। এ সুশীলরাই ২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ বানানোর এক কুৎসিত নোংরা খেলায় মেতেছিলেন। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল। ঠিক পাঁচ বছর পর ওই একই চক্র ‘পদ্মা সেতু’ নাটক করে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য বঙ্গবন্ধু পরিবারকে দুর্নীতির কালিমা দিতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনাকে আবার রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চেয়েছিল। কিন্তু ১-১১-এর সময় শেখ হাসিনা যেমন করে সততার আলোয় সব অসত্যের অন্ধকার দূর করেছিলেন, তেমনি ২০১২ সালেও তিনি হিমালয়ের মতো সাহসী হয়ে উঠেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রমাণ করেছিলেন তিনিই সত্য।

এ দেশে কিছু মানুষ আছে যারা সারাক্ষণ অন্যের অনিষ্ট চায়। নিজেদের হাজারো পাপ, কিন্তু তারা ব্যস্ত অন্যের খুঁত খোঁজায়। জনগণের মঙ্গল, কল্যাণ, ভালো- সবকিছু তাদের খুব অপ্রিয়। এ গোষ্ঠী দেশে গণতন্ত্র চায় না। উন্নয়ন দেখলেই দুর্নীতি খোঁজে। বাংলাদেশ স্বাবলম্বী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়ালে তারা হাহাকার করে। বিদেশি প্রভুদের নির্দেশই তাদের জন্য অমর বাণী। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সামনে এ দেশের মুখোশ উন্মোচন করে দিয়েছে। পদ্মা সেতু প্রমাণ করে দিয়েছে তারা সত্য বলেন না। তারা দেশের মঙ্গল চান না। উন্নয়ন চান না। আমরা আশা করি শিগগিরই কমিশন গঠিত হবে। পদ্মা সেতু উন্মোচনের মতো ভদ্রলোকের মুখোশ পরা রাষ্ট্রদ্রোহীদের চেহারা উন্মোচিত হবে। সেদিন না হয় আমরা আরেকটা উৎসব করব।

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।

রাষ্ট্রদ্রোহী   পদ্মা সেতু   ড. ইউনূস  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন