এডিটর’স মাইন্ড

বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০১ অক্টোবর, ২০২২


Thumbnail বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে

১ অক্টোবর ২০০১। ২১ বছর আগের এ দিনটা আমরা কজন মনে রেখেছি? ওইদিন বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০০১ সালের ১৩ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনা ঘটে। পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। রাত ১০টার দিকেই বোঝা যায় বিএনপি-জামায়াত জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে। কিন্তু বিপন্ন বিস্ময়ের তখনো অনেক বাকি। রাতেই বিএনপি-জামায়াতের সব ক্যাডার ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ সমর্থক ও সংখ্যালঘুদের ওপর। ১৯৭১-এর ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আদলে সারা দেশে শুরু হয় হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ। এক নারকীয় উৎসব। মুহূর্তে নিরীহ মানুষের আর্তনাদ বিএনপি-জামায়াতের জয়োল্লাস ম্লান করে দেয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিথর মূর্তির মতো তামাশা দেখতে থাকে। এ সেই পয়লা অক্টোবর যেদিন বাংলাদেশ প্রতিহিংসার নির্মমতা দেখেছিল। ভয়ে শিউরে উঠেছিল। জার্মান নাৎসিদের মতো প্রতিপক্ষকে নির্মূল করে দাও- এ বন্য হিংস্রতার এক ভয়াবহ রূপ দেখেছিল বাংলাদেশ। ওইদিন একজন সিনিয়র সাংবাদিক আমাকে বলছিলেন, ‘এটাই বিএনপির পতনের শুরু।’ ১ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচনে সংখ্যালঘু নিধন চলে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ‘খতম’ করে আওয়ামীমুক্ত বাংলাদেশ নির্মাণের অভিযান চলে। ওই ১০ দিন দেশে কোনো আইন ছিল না। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ইচ্ছাই হলো আইন। ১০ অক্টোবর শপথ নেয় বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। এরপর বাংলাদেশ প্রবেশ করে এক কৃষ্ণগহ্বরে। কেমন ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের বাংলাদেশ? কজন মনে রেখেছেন সেই ‘আইয়ামে জাহেলিয়া’র কথা। ২০০৬ সালে নানা নাটক করে বিএনপি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে। আসলে ক্ষমতার চাবি ছিল বেগম জিয়ার হাতেই। মূলত ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলেই এ দেশ বিএনপি-জামায়াতের সেই দমবন্ধ শাসনের অবসান হয়। সেই থেকে প্রায় ১৬ বছর বিএনপি ক্ষমতার বাইরে।

ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেওয়া একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। এ যেন জলের মাছের ডাঙায় জীবন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি ভাঙেনি। এও এক বিস্ময়। টিকে থাকার জন্য সংগ্রামরত দলটি এখন সরকার পতনের ডাক দিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনঃ প্রবর্তনের ঘোষণা দিয়েছে। দলটির নেতারা এসব কর্মসূচিতে লাঠিসোঁটা নিয়ে যোগ দেওয়ার জন্য কর্মীদের নির্দেশ দিচ্ছেন। আরেক নেতা এতেও খুশি নন। তিনি আরও এক কাঠি সরেস। তিনি কর্মীদের আরও বড় লাঠি নিয়ে সমাবেশে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রশাসন-পুলিশকে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ ধরনের কর্মসূচি দিতেই পারে। নির্বাচনের আগে সংগঠন গোছাতে, কর্র্মীদের উজ্জীবিত করতে এটা ভালো কৌশল। কিন্তু আমার অবাক বিস্ময় অন্য জায়গায়। বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে তাঁরা যেন দেবদূত। ভিনগ্রহ থেকে আসা সফেদ মানব। একটি রাজনৈতিক দল যখন জনগণের কাছে যায় তখন তাদের স্বচ্ছ ও পরিষ্কার থাকা উচিত। ভালোমন্দ মিলিয়েই একজন মানুষ। একটি রাজনৈতিক দলও। যে-কোনো একটি রাজনৈতিক দলের অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব হলো আত্মসমালোচনা। নিজেদের ভুলভ্রান্তিগুলো বুঝতে পেরে তা সংশোধন করা। বিএনপি দুই মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। এ সময় বিএনপি যে ভুলগুলো করেছে তা স্বীকার করে তারা জনগণের কাছে যাবে বলেই একজন নাগরিক হিসেবে আমার প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় তাঁদের শাসনামলে বাংলাদেশের মানুষ স্বর্গে ছিল। আসলে কেমন ছিল তখনকার বাংলাদেশ?

বুধবার দেখলাম ছাত্রদল নেতাদের পেটানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিএনপি মহাসচিব। টেলিভিশনে দেখলাম বলছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের মধ্যযুগীয় কায়দায় পেটানো হয়েছে।’ মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘সরকার ফ্যাসিস্ট কায়দায় বিরোধী দলকে আক্রমণ করছে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। পেটানো হচ্ছে।’ প্রথমেই বলে নিই, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া, পেটানো কিংবা হামলা কোনো গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার নয়। মিরপুরে, বনানীতে, ভোলায়, মুন্সীগঞ্জে যারা এটা করেছেন, অন্যায় করেছেন। এতে আওয়ামী লীগ ও সরকারের লাভ হয়নি। ক্ষতি হয়েছে। এসব খুবই বাজে দৃষ্টান্ত। কিন্তু বিএনপি নেতারা কি একবার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, ক্ষমতায় থাকার সময় এর চেয়েও জঘন্য কাজ তাঁরা করেননি? ১ অক্টোবর, ২০০১ থেকে ১০ অক্টোবরের পত্রিকার পাতাগুলো কি বিএনপি নেতারা একবার চোখ বুলিয়ে দেখবেন?

২০০২ সালের মার্চে আওয়ামী লীগ নেতা বাহাউদ্দিন নাছিমকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজধানী ঢাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কারাগারে বন্দিকালীন অবস্থায় তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়। একটি ব্যাগ দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে সিলিংফ্যানের সঙ্গে উল্টো করে ঝোলানো হয়। পানিভর্তি বোতল দিয়ে তাঁর নিতম্ব, হাঁটু, কোমর, বাহু ও যৌনাঙ্গে আঘাত করা হয়। ফ্যান চালু করে তাঁর শরীর চারদিকে ঘোরানো হয়। বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়। এভাবে পাঁচ দিন ধরে তাঁকে নির্যাতন করা হয়।’ শুধু বাহাউদ্দিন নাছিম একা নন। ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসীর মামুনের মতো ব্যক্তিত্বদের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা, শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার মতো সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বেছে বেছে হত্যার ব্যাপারে বিএনপি নেতারা কী বলবেন? ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে নতুন করে আবার কিছু বলতে চাই না। কিন্তু বিএনপির ‘সাধু’ নেতারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, ওই ঘটনায় তাঁদের দায় নেই? বলে রাখা দরকার, ছাত্রলীগের কতিপয় দুর্বৃত্ত যা করছে তা অমার্জনীয়। সেদিন আওয়ামী লীগের এক নেতা বলছিলেন, ‘সরকারের সব অর্জন ছাত্রলীগই খেয়ে ফেলছে।’ ইডেন কলেজ থেকে চট্টগ্রাম। টেন্ডারবাজি থেকে ধর্ষণ। কোন অভিযোগ নেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে? কিন্তু আপনি যখন অন্যের সমালোচনা করবেন, তখন কি আয়নায় নিজের মুখটা একটু দেখবেন না?

বিএনপি-জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল কী করেছে। চলুন একটু স্মৃতি হাতড়ে আসি। ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাত্রদলের দখলে চলে যায়। ২ অক্টোবর ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হল দখল করে নেয়। ১৮ অক্টোবর দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের শিরোনাম ছিল এ রকম- ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ক্যাডাররা’। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে; ২১ বছর আগে ২০০১ সালের ১৩ অক্টোবর একই ঘটনা ঘটেছিল। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বেধড়ক পেটানো হয়। ছাত্রলীগের বহু কর্মী পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেননি। ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মীদের নির্বিচারে পেটানো হয়। এভাবেই বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ বছর চলে ছাত্রলীগ নিধন কর্মসূচি। দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগকে দাঁড়াতে নেওয়া হয়নি। বিএনপির কোনো নেতা কি বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ছাত্রদলের কর্মকান্ডে আমরা দুঃখিত, ব্যথিত। আবার ক্ষমতায় গেলে প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনের ওপর এভাবে হামলা করা হবে না।’ এখন যে ছাত্রদলের কমিটি হয়েছে তা কি ছাত্রলীগের চেয়ে ভালো? ৩০২ জনের বিশাল কমিটি গঠনের পর ৩২ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসার কারণে বিএনপি নেতারাই তাদের বাদ দিয়েছেন। ছাত্রদলের কর্মীরাই বলছেন অছাত্র, খুনি আর মাদকসেবীদের আখড়া ছাত্রদল। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে এ ছাত্রদল কী করবে?

বিএনপি এখন যে আন্দোলন করছে তার অন্যতম ইস্যু ‘লোডশেডিং’। সাধারণ মানুষ অতীত ভুলে গেছে। ভুলে গেছে বিদ্যুৎ ভোগান্তির সেই দুর্বিষহ স্মৃতি। কিন্তু বিএনপি নেতারা কী করে ভোলেন কানসাট ট্র্যাজেডির কথা! খাম্বা কাহিনি কি বিএনপি নেতাদের হৃদয়ের কোনায় ব্যথা জাগায় না? ১২ ঘণ্টার লোডশেডিং দেওয়া সেই বিএনপি যদি এখন ১-২ ঘণ্টার লোডশেডিং নিয়ে সমালোচনা করে তখন তো বুঝতে হবে দলটি জনগণের কথা ভাবে না। বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘ছায়া প্রধানমন্ত্রী’। তাঁর কথায় দেশ চলত। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কোনো সরকার কোনো দিন দিতে পারবে না।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বলতে পারবেন তাঁরা ক্ষমতায় এলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেবেন? তাহলে কি তারেক জিয়াকে মিথ্যাবাদী বলা হবে না?

দ্রব্যমূল্য নিয়েও বিএনপি নেতাদের আহাজারি চোখে পড়ার মতো। এ কথাও ঠিক, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিছু মন্ত্রীর কথাবার্তা এমন বেসামাল পর্যায়ে চলে গেছে যে, তাঁদের দায়িত্ব কী তা-ও তাঁরা ভুলে গেছেন। এক মন্ত্রী দেখলাম কদিন আগে বলছেন, ‘ডিম আমদানি করা হবে কি না তা কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করব।’ ডিম তো কৃষিমন্ত্রীর এখতিয়ারাধীন বিষয় নয়। ডিম মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। কিন্তু ওই মন্ত্রীর কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে কৃষিমন্ত্রী প্রতিদিন ডিম নিয়ে নানা রোমাঞ্চকর বক্তব্য দিয়েই চলেছেন। এসব অযোগ্যতা যে বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে তা আওয়ামী লীগের নেতারাও স্বীকার করেন। কিন্তু বিএনপির আমল কি শায়েস্তা খানের যুগ ছিল? সে সময় অধ্যাপক আবুল বারকাত গবেষণা করে দেখালেন ‘শুধু চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, ডিজেল, কেরোসিনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে ২ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।’ বাংলাদেশের গড় মাথাপিছু আয় তখন এখনকার অর্ধেকেরও কম ছিল। সে সময় কাঁচা মরিচের কেজি উঠেছিল ১৬০ টাকায়। সব পণ্যের মূল্য পাঁচ বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। সেই ব্যর্থতার দায় স্বীকার না করে অন্যকে গালি দেওয়া কি যুক্তিসংগত? বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে দ্রব্যমূল্য কমবে, এ গ্যারান্টি কি মির্জা ফখরুল দিতে পারবেন?

শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব। ইদানীং বিএনপি মহাসচিব সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় কেমন ছিল এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বিএনপির ভূমিধস বিজয়ের পর সবচেয়ে নির্মম পাশবিকতার শিকার হয়েছিল সংখ্যালঘুরা। শেফালী, পূর্ণিমা, কৃষ্ণার ধর্ষণের কথা এ দেশের সংখ্যালঘুরা কীভাবে ভুলবেন? অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘সংখ্যালঘু নির্মূলের এক অন্যায্য কর্মসূচির নীরব বাস্তবায়ন চলছে বাংলাদেশে।’ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আরোহণের কদিন পর দুর্গাপূজা শুরু হয়। একটি দৈনিকের শিরোনাম ছিল, ‘সারা দেশে নিরানন্দ পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু’। ২১ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন দৈনিকে খবর ছিল, মিরসরাই ও সীতাকুন্ডে প্রতিমা ভাঙচুর, চাঁদাবাজি, লুটপাট। বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে শারদীয় দুর্গোৎসব মানেই ছিল প্রতিমা ভাঙচুর, আতঙ্ক। এজন্য কি বিএনপি অনুতপ্ত? বিএনপি কি কখনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছে?

বিএনপি নেতারা প্রায় সবাই এখন অর্থনীতিবিদ। দেশের রিজার্ভ, অর্থনীতি, বিদেশি ঋণ ইত্যাদি বিষয়ে তোতাপাখির মতো জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দেন। সেদিন একজন বিএনপি নেতার কাছে জানতে চাইলাম- ভাই বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন রিজার্ভ কত ছিল? উনি কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, জানি না। তিনি না জানলেও বিএনপি নেতা রিজভী অবশ্য সব জানেন। রিজভী বললেন, ‘বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন সর্বকালের সর্বনিম্ন।’ একটু ভিরমি খেলাম। বইপত্তর ঘেঁটে দেখলাম অন্য তথ্য। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে কখনো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারই অতিক্রম করেনি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে। ক্ষমতায় আসার এক বছরের মধ্যেই অর্থমন্ত্রী দাতাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। ২০০৩-এর ৬ নভেম্বর ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘অর্থনীতি বিপর্যস্ত। জরুরি সাহায্য দরকার।’ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়ন কার্মকান্ড স্থগিত করা হয়। ৯ নভেম্বর উপমন্ত্রী মণি স্বপন দেওয়ান বলেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার জন্য এ সিদ্ধান্ত’। ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে দাতাদের নির্দেশে আট দফা বাজেট সংশোধন করা হয়। সে সময় সাইফুর রহমান বলেছিলেন, ‘ঋণ নিলে বিদেশিদের কথা শুনতে হয়।’ এখান থেকেই বোঝা যায় গত এক যুগে বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় চলে গেছে। এখন যাঁরা ৩৭ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আর্তনাদ করেন তাঁরা জ্ঞানপাপী। রিজভী হয়তো এ জ্ঞানপাপীদের খপ্পরে পড়েছেন। গত এক যুগে দুর্নীতি হয়েছে, অর্থ পাচার হয়েছে। কিন্তু বিপুল উন্নয়ন বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছে। বিএনপি নেতারা এখন প্রায়ই বলেন, ‘এ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ সব দখল করে ফেলেছে।’ তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ঢাকা সিটি করপোরেশন দখল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে তালা ভেঙে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দখল, রাতের অন্ধকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে সরিয়ে উপাচার্যের চেয়ার দখল কী ছিল? বিএনপি ক্ষমতায় এসেই সংসদ ভবনের সব স্যুট দখল করে। এ সময় তৎকালীন স্পিকার আবদুল হামিদ বলেছিলেন, ‘এখন তো বিএনপি দখলদারদের হাত থেকে আমার চেয়ারও পাহারা দিয়ে রাখতে হবে বলে মনে হচ্ছে।’ (৭ অক্টোবর, ২০০১, দৈনিক ইত্তেফাক)।

দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। নিশ্চয় তাদের বেদনা আছে। ক্ষমতায় যাওয়ার তীব্র ক্ষুধা আছে। কিন্তু তার সঙ্গে আত্মোপলব্ধি থাকতে হবে। থাকা উচিত অনুশোচনা এবং অনুতাপ। সবার আগে বিএনপির উচিত তাদের অতীত কর্মকান্ডের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা। অনুতপ্ত হওয়া। কিন্তু ইদানীং বিএনপি নেতাদের কথাবার্তায় দম্ভোক্তি প্রকাশ্য। বিএনপি নেতারা এখন যেসব কথাবার্তা বলছেন তাতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে কী কী হতে পারে সে সম্পর্কে আমরা একটি ধারণা করতে পারি। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাঁর অবর্তমানে তারেক জিয়া দায়িত্ব নেবেন।’ তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘এ দুজনই স্ট্রাইকার এবং ফিনিশার।’ তাহলে তো বিএনপি ক্ষমতায় এলেই সুপ্রিম কোর্ট দখল করে নেবে। গতবার তারা সাবেক নেতাকে প্রধান বিচারপতি করার জন্য সংবিধান সংশোধন করেছিল। এবার স্থায়ী কমিটির সদস্যকে প্রধান বিচারপতি বানাতে হবে। আইন ওই সংবিধান পাল্টাতে হবে। বলতে হবে, পলাতক, দন্ডিত থেকেও প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য হওয়া যায়। বিএনপি নেতারা প্রচ- উন্নয়নবিরোধী। তাঁরা প্রায়ই বলেন, উন্নয়নের বেলুন চুপসে গেছে। সব আওয়ামী ভাঁওতা। গালগল্প। শুধু দুর্নীতি হয়েছে। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় এলেই পদ্মা সেতু ভেঙে ফেলা হবে। ধ্বংস করা হবে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পসহ সব উন্নয়ন চিহ্ন। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট হয়েছে। তাই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হবে। দিনে সূর্যের আলো, প্রকৃতির বাতাসে মানুষ কাজ করবে। আর রাতে জোছনায় ¯œান করবে। সারা দেশে ধন্য ধন্য পড়ে যাবে।

বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় আসল সমস্যা ‘বাংলাদেশ’টাতেই। তাই বিএনপি ক্ষমতায় এলে এ দেশটার নামই পাল্টে দেবে। দলের মহাসচিব কদিন আগে অবশ্য বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল!’ বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্লোগান হবে ‘এসো পাকিস্তানে ফিরে যাই।’ বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ কি আবার পাকিস্তান হবে?

লেখক : নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিএনপি যদি   আবার   ক্ষমতায়   আসে  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে স্ত্রী-পুত্র, ভাই, শালাদের উৎপাত

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।

এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না। আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।

দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন। এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।

শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়। এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে। কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের মতো উন্মোচিত করেছে।

উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয় কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন, সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।

উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায় জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি। যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।

সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার। তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।

প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন। নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি। ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন। এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত, পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।

এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন। শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

 

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


আওয়ামী লীগ   রাজনীতি   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

কঠোর শেখ হাসিনা: সিদ্ধান্ত না মানলে সব হারাবেন মন্ত্রী-এমপিরা

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে ৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে?

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন, তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।   


শেখ হাসিনা   উপজেলা নির্বাচন   আওয়ামী লীগ   মন্ত্রী-এমপি  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।

আকর্ষণহীন, উত্তেজনাহীন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রক্রিয়া। যথারীতি উপজেলা নির্বাচনেও বিরোধী দল নেই। শেষ মুহুর্তে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিএনপি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। স্বতন্ত্রভাবেও উপজেলা নির্বাচনে কেউ অংশ নিলে তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তিন ধাপে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপের মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার শেষ দিনে দেখা গেল বিএনপির বেশ কিছু স্থানীয় পর্যায়ের নেতা উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু এর পর পরই এলো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন, তাদের বেশীর ভাগই মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেবেন বলেই ধারণা করা যায়।। উপজেলা নির্বাচন এখন আওয়ামী লীগের নেতাদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই-ভাতিজা, শালা-মামাদের নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। আবারও আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই। মানুষের সামনে বিকল্প নেই। সাধারণ ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে কেন যাবে? বিএনপির এই ‘ভোট বর্জন’ কৌশল কি বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ারই অংশ? 

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্বাচন বর্জন, অসহযোগ আন্দোলনও সফল হয়নি। শুধুমাত্র ভোটাররা নির্বাচনে আগ্রহ হারিয়েছেন। যে নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব নির্ধারিত, সেখানে ভোট দিয়ে কি হবে-এরকম একটি মানসিকতা পল্লবিত হয় ভোটারদের মধ্যে। নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নষ্ট হতে শুরু করে ২০১৪ সাল থেকেই। ঐ নির্বাচনও বিএনপি বর্জন করেছিল। সে সময় ১৫৩ টি আসনে জনগণ ভোটই দিতে পারেনি। বিএনপির বর্জন দেশের নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ২০১৮’র নির্বাচনেও জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এবারও অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী ভোট দিতে যাননি। জনগণের সামনে কোন বিকল্প ছিলো না। অথচ ঐতিহ্যগত ভাবেই এই অঞ্চলের মানুষ নির্বাচন পাগল। ভোটকে তারা উৎসব মনে করে। সেই উৎসব এখন ভাঙ্গা হটের মতো। দেশের অর্ধেকের বেশী নাগরিক জীবনে ভোটই দেননি। একটি ভোট যে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগের হাতিয়ার, এটিই এদেশের মানুষ এখন ভুলতে বসেছে। এটি বিরাজনীতিকরণের সবচেয়ে বড় উপসর্গ। তাবৎ পন্ডিতরা জনগণের ভোটের অধিকার হরণের জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে। বিএনপি তো প্রতিদিন মুখস্থ বুলীর মতো, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার নিয়ে আওয়ামী লীগকে গালাগালি করছে। কিন্তু গণতন্ত্র রক্ষা, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির কি কোন দায়িত্ব নেই? বিএনপি কি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে? নাকি তৃতীয় পক্ষের কাছে ক্ষমতা তুলে দেয়ার মিশনে বিএনপি একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। সে প্রসঙ্গে এখন যেতে চাই না। 
এবছরের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি কি পেল? এবার অবাধ, সুষ্টু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উপর প্রচন্ড চাপ ছিলো। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ, হুশিয়ারির প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের অবাধ, সুষ্টু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করতেই হতো। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর জনগণের কাছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিলো। পশ্চিমা দেশ গুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গভীর মনোযোগ দিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছিল। সব কিছু মিলিয়ে এবার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করা ছিলো অসম্ভব, অলীক কল্পনা। কিন্তু বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলো। জনগণ ভোটের মাঠে নানা চিন্তা, মত ও পথের প্রার্থী পেলেন না। বিএনপি বলতেই পারে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না- এটা নিশ্চিত হয়েই তারা নির্বাচন বর্জন করেছে। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া বিএনপির এই অনুমান কে মানবে? বিএনপির নির্বাচন বর্জনে দলটির ক্ষতি হয়েছে। জনগণের ক্ষতি হয়েছে। লাভ হয়েছে সুশীল সমাজের। এই নির্বাচন জনগণের মধ্যে রাজনীতি ও নির্বাচন সম্পর্কে অনীহা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা দখলের পটভূমি তৈরীর কাজ হয়েছে আরো ত্বরান্বিত। ২০০৭ সালে এরকম রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি করেই সুশীলরা ক্ষমতা দখল করেছিল। 

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে সংবিধান থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। তারপর থেকেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে সুশীল সমাজ। এজন্য বিএনপির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলারও চেষ্টা করছেন সম্মানিত কিছু সুশীল। কিন্তু বিএনপি যদি রাজনীতির পথেই থাকতো, তাহলে নির্বাচনে যেতো। তাদের অভিযোগ জনগণের সামনে তুলে ধরতো। ভারতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনেও বিরোধী দল বিজেপির বিরুদ্ধে দমন পীড়ন, নিপীড়নের অভিযোগ উত্থাপন করেছে। আম-আদমী পার্টির প্রধান নেতা কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রকে সাসপেন্ড করা হয়েছে পার্লামেন্ট থেকে। কংগ্রেস অভিযোগ করছে, বিজেপি নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু তাই বলে কংগ্রেস, আম-আদমী পার্টি কিংবা তৃণমূল কি নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছে? না, বরং তারা এই অভিযোগ গুলোকেই নির্বাচনে ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেছে, জনগণের কাছে। বিএনপির জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর যে হতাশা এবং অস্থিরতা তা দেখে আমার মতো অনেকেই মনে করছিল, দলটির ভুল ভাঙ্গবে, আত্ম উপলব্ধি হবে বিএনপির। ভুল শোধরানোর জন্য হলেও উপজেলা নির্বাচনে তারা অংশ নেবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিএনপিকে অংশগ্রহণের জন্য অনবদ্য এক সুযোগ সৃষ্টি করেছিল। টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। ফলে বিএনপিও এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশগ্রহণ করলে ভোটে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহ তৈরী হতো। বিএনপি এবং তার গোপন এবং প্রকাশ্য মিত্ররা নির্বাচনে অংশ নিলে গণতন্ত্রের রক্তশূন্য শরীরে রাজনীতির রক্ত সঞ্চালিত হতো। উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ‘রাজনীতি’ কে আরো দুর্বল এবং মুমূর্ষু করলো। বিএনপি দেশে গণতন্ত্র চায় না। জনগণের অধিকারও চায়না। তারা শুধুমাত্র চায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে। এটা যেমন সত্য, তেমনি এর বিপরীতে প্রশ্ন উঠতেই পারে আওয়ামী লীগ কি মুক্ত, সুস্থ রাজনীতি চায়? আওয়ামী লীগ কি গণতন্ত্রের বিকাশ চায়? রাজনীতি হত্যার উৎসবে কি আওয়ামী লীগও সামিল নয়? 

টানা প্রায় ১৬ বছর ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কৌশল যেভাবে রপ্ত করেছে, ঠিক সেভাবে কি সংগঠনকে নীতি ও আদর্শের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে? আওয়ামী লীগের ভেতরে কি কোন রাজনীতি আছে? আদর্শ চর্চা আছে? প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেই কি নিজেকে হত্যা করছে না? সারা দেশে এখন আওয়ামী লীগ কয়েক ভাগে বিভক্ত। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলটি কোন্দল বিভক্তিকে সাংগঠনিক স্বীকৃতি দেয়। দেশে এখন কোন বিরোধী দল নেই। কোথাও সরকারের সমালোচনা নেই। সবাই সরকারকে ‘সাধু সাধু’ করে। আওয়ামী লীগ এখন একাধিক টীম হয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে খেলছে। কোন্দলকে দেয়া হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগ একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। বিএনপি-জামায়াতের দরকার নেই, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারাই একে অন্যের চরিত্র হনন করছে, রক্ত ঝরাচ্ছে, খুন করছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। তারা এসব কোন্দলকে পাত্তা দিতেই রাজি নন। আওয়ামী লীগ নেতারা এখন আত্ম তুষ্টির সর্বোচ্চ চূড়ায়। কোন বাস্তবতা উপলব্ধি করে না। তাদের মতে, বিরোধী দল নেই, তাই একাধিক গ্রুপ থাকলে দল শক্তিশালী হবে। কর্মী বাড়বে। দলে ভারসাম্য থাকবে। একজন এমপি বলছিলেন, সবাই তো শেখ হাসিনার। যে জিতবে, সেই আপন। যে হারবে, সে জয়ীকে চাপে রাখবে। এরকম ‘চেক এ্যান্ড ব্যালেন্স’ কৌশল চলছে আওয়ামী লীগ। এটাই নাকি ভালো। কিন্তু এটি যে কি ভয়ংকর দর্শন তা বুঝতে আওয়ামী লীগকে আরেকটি দুঃসময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এর ফলে বিশ্বস্ত, ত্যাগী, দল ও নেতার জন্য সব কিছু উৎসর্গ করার মতো নেতা-কর্মী শূন্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ। নেতা আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন, নেতার জন্য জীবন দেবো-এই মনোভাব আওয়ামী লীগ থেকে উঠে গেছে বহু আগেই। আওয়ামী লীগে এখন ‘নব্য মোশতাক’ তৈরী হচ্ছে মাশরুমের মতো। নেতার সামনে স্তুতি, আড়ালে সমালোচনা-এটাই এখন আওয়ামী সংস্কৃতি। সব নেতা, পাতি নেতা জানেন, মূল নেতা তার বিকল্প রেখেছেন। তিনি দলে অপরিহার্য নন। কাল নেতার হাত সরে গেলেই সে ‘জিরো’। মূল নেতার তিনি একান্ত আপন নন। এই উপলব্ধি তাকে লোভী করে। দুর্নীতিবাজ করে। আদর্শহীন এক সুবিধাবাদী রাজনীতিবিদে পরিণত করে। এই উপলব্ধির কারণেই সে সংগঠন ভালোবাসেনা, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে না। আওয়ামী লীগের ক’জন নেতা এখন দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন? কাজের চেয়ে মূল নেতার নেক নজরে থাকাটাই তাদের জন্য লাভজনক। এজন্য আওয়ামী লীগে চলছে আখের গোছানোর উৎসব। যে যেভাবে পারছে সম্পদের পাহাড় গড়ছে। দলের ত্যাগী, পরীক্ষিতরা হয় বৈষয়িক হয়ে উঠেছেন। টাকা-কড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য মনোযোগী হচ্ছেন, অথবা দূরে, নিভৃতে চলে যাচ্ছেন অবহেলায়, হতাশায়। দল করো, পদ দখল করো, নির্বাচন করো, টাকা বানাও-আওয়ামী লীগের এই অধ্যায় সমাপ্ত প্রায়। এরপর শুরু হয়েছে, ছেলে, বউ, শালা, মামা, ভাগিনাদের প্রতিষ্ঠিত করার প্রতিযোগিতা। যার এক ঝলক দেখা যাচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে। আওয়ামী লীগের নেতাদের একটা বড় অংশ এখন সাধারণ মানুষকে ‘মানুষ’ মনে করে না। তাদের পাত্তাও দেয় না। নেতারা চার পাশে রাখেন স্তাবকদের। কিছু একটা বলেই চাটুকারদের দিকে তাকান। তারা অনুগত ভৃত্যের মতো মাথা নাড়েন এবং হাসেন। 

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও আজ বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীদের মতো। এরা জনসম্পৃক্তহীন, উদ্বাস্তু। জনবিচ্ছিন্নতার শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে স্বৈরাচারের গর্ভে জন্ম নেয়া জাতীয় পার্টি। এই সুযোগে রাজনীতির মরা লাশ কুড়ে কুড়ে খাওয়ার অপেক্ষায় মৌলবাদী শকুন। তরুণদের মধ্যে রাজনীতির আগ্রহ নেই। আরো সোজা সাপটা বললে, তরুণরা রাজনীতিকে রীতিমতো ঘৃণা করে। একারণেই ‘রাজনীতি মুক্ত’ ক্যাম্পাসের দাবী এখন জনপ্রিয় হচ্ছে। যারা ছাত্র রাজনীতি করেন, তাদের মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছাত্র নেতাদের ভয় পান বটে, কিন্তু সম্মান করেন না। রাজনীতি এখন সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। এভাবেই সর্বত্র রাজনীতিকে কলংকিত করার উৎসব চলছে। রাজনীতি মানেই খারাপ-এটা প্রমাণের এক ভয়ংকর খেলা শুরু হয়েছে। যার মূল লক্ষ্য হলো গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো। আবার অগণতান্ত্রিক, অনির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠা। কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে ক্ষমতার চাবি তুলে দেয়া। তেমন পরিস্থিতির দিকেই কি ছুটছে বাংলাদেশ?     

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

পদ হারানোর ঝুঁকিতে আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন। 

আওয়ামী লীগের সভাপতির সঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদকের টেলিআলাপের পরপরই ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির ৩ নম্বর কার্যালয়ে যান এবং সেখানে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তিনি যারা যারা নিকট আত্মীয় স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছে, তাদের তালিকা তৈরি করার জন্য সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্দেশ দেন। 

একই সাথে তিনি এটাও জানান যে, যদি কেউ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নিজের নিকট আত্মীয় স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করে তাহলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এরকম একটি বক্তব্যের পরপরই আওয়ামী লীগের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক গণমাধ্যমে শুধু বিষয়টি অবহিত করেননি, তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকের পর অন্তত তিনজন আওয়ামী লীগের নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং কথা বলে তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। 

উল্লেখ্য, ড. আব্দুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই  হারুন অর রশীদ হীরা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা থেকে এবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তার এই প্রার্থীতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। তারা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথেও টেলিফোনে কথা হয়েছে বলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। তার সাথেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কথা বলেন এবং তাকেও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য পরামর্শ দেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গেও আলাপ করেছেন বলে জানা গেছে। তার ছেলে আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন। 

এই সমস্ত স্বজনরা যদি শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করে সে ক্ষেত্রে কী করা হবে? এ রকম প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেছেন এবং এদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানা গেছে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা প্রেসিডিয়াম এবং এই প্রেসিডিয়ামের দুজন সদস্য যখন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে তাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী করেছেন তখন অন্যরা সেটা মানবে কীভাবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে একটি দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান গ্রহণ করতে চায় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা বলেছেন, যারাই এ সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, এর আগেও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে দল থেকে পদ হারানো বা বহিষ্কারের নজির রয়েছে। আওয়ামী লীগের এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী যখন দল থেকে বহিষ্কৃত হন তখন তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। কাজেই শেষ পর্যন্ত যদি এই উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের অবস্থান নিয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না নেয়া হয় তাহলে এই দুই নেতা বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।

আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন   ড. আব্দুর রাজ্জাক   শাহজাহান খান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন