অন্যান্য
দিনের মতোই রবিবার নিজ দফতরে গিয়েছিলেন তথ্য সচিব মকবুল হোসেন। সেখানে একটি বৈঠকে সভাপতিত্ব
করছিলেন। আকস্মিকভাবে তার একজন ব্যক্তিগত কর্মচারী সভাকক্ষে প্রবেশ করেন। সচিবের কানে
কানে কিছু বলেন। এর পরই তথ্য সচিব সভা থেকে উঠে যান। নিজেই খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন
সরকারি কর্মচারী আইনের ৪৫ ধারাবলে তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
৪৫ ধারায় বলা হয়েছে: একজন
সরকারি কর্মকর্তার চাকরির মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার তাকে অবসরে পাঠাতে পারে। এ
ক্ষেত্রে কোনো কারণ ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। আবার যে-কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাকরির
মেয়াদ ২৫ বছর পূর্ণ হলে তিনিও স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন করতে পারেন। বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক
অবসরের রীতি অনেক পুরনো। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার এর যথেচ্ছ প্রয়োগ করেছে। ১৯৯১ সালে
বিএনপি ক্ষমতায় এসে ’৭৩-এর ব্যাচ নির্মূল করেছে এ বিধানবলে। এদিক থেকে অবশ্য আওয়ামী
লীগ অনেক উদার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এ আইনের তেমন প্রয়োগ করেনি। বরং বিএনপি-জামায়াতপন্থি
হিসেবে পরিচিত ও চিহ্নিত অনেককে সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত
জোট ক্ষমতায় এসে প্রশাসনে ও পুলিশে আওয়ামীপন্থিদের বেছে বেছে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায়।
এ নিয়ে সে সময় কেউ প্রতিবাদ করেনি। অনেক আমলাই নীরবে এ আইনের সমালোচনা করেন। কিন্তু
প্রকাশ্যে মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন। কিন্তু এবার মকবুল হোসেনের অবসর নিয়ে যেন আকাশ ভেঙে
পড়ল! চারদিকে হুলুস্থুল। যেন তথ্য সচিবই প্রথম ব্যক্তি যিনি বাধ্যতামূলক অবসরের কাঁচিতে
কাটা পড়লেন। সরকার তথ্য সচিবকে কেন বাধ্যতামূলক অবসর দিয়েছে তার কারণ ব্যাখ্যা করেনি।
এটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন বা বাধ্যবাধকতাও নেই। কিন্তু এ নিয়ে প্রশাসনে, রাজনৈতিক
আড্ডায় চলে অস্থির আলোচনা। মার্চে তিনি লন্ডনে গিয়েছিলেন। নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের
পাশে কোনো অফিসে যেতেন। দুর্নীতিসহ নানা মুখরোচক আলোচনায় টইটম্বুর দেশ। এ নিয়ে যখন
আড্ডা জমে উঠেছে, ঠিক সে সময় মঙ্গলবার রাতে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
অবসরে পাঠাল। ব্যস, শুরু হয়ে গেল নানা গুঞ্জন, আলোচনা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবশ্য
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতো ‘মৌনব্রত’ পালন করেনি। মন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিব দুজনই তাদের
বিরুদ্ধে ‘অন্তহীন’ অভিযোগ আছে বলে উল্লেখ করেছেন। যে কারণেই করা হোক না কেন, এ চারজন
কর্মকর্তাকে অবসরের মধ্য দিয়ে সরকার সুস্পষ্ট কিছু বার্তা দিয়েছে। প্রথম বার্তাটি হলো-
সরকারের বিরুদ্ধে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে একটি গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করছে। দ্বিতীয় বার্তা
হলো- সরকার এ ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। এবং তৃতীয়ত- এ ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সরকার
কঠোর অবস্থানে যাবে।
শুধু
এ চার কর্মকর্তা নয়, বর্তমানে চাকরিতে আছেন কিংবা অবসরে গেছেন এরকম বেশকিছু কর্মকর্তার
তৎপরতা রহস্যময়। সচিবালয়ে কান পাতলেই নানা কথা শোনা যায়। বিএনপি-জামায়াতপন্থি আমলা
এবং পুলিশ প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি এখন খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছেন। তাদের মুখোশ খুলে যাচ্ছে।
এতদিন যারা নিজেকে আওয়ামী লীগ প্রমাণের প্রাণান্ত চেষ্টা করে সফল হয়েছিলেন, সেসব ভাগ্যবান
সরকারি কর্মকর্তা এখন গোপনে গোপনে আওয়ামী লীগের সমালোচনায় মুখর। দেশ রসাতলে যাওয়া নিয়ে
তাদের বেদনা দীর্ঘ হচ্ছে। আর বিএনপির বিভিন্ন সাবেক আমলার সঙ্গে তারা এখন কুশল বিনিময়
বাড়িয়েছেন। সামাজিক অনুষ্ঠানে একটু আড়ালে বিএনপিপন্থি কাউকে একান্তে বলছেন, ‘আমি তো
আপনাদেরই’।
প্রশাসনে
মুষ্টিমেয় কিছু ‘দায়িত্বশীল’ কর্মকর্তার মধ্যে এ প্রবণতা চলছে কয়েক মাস ধরে। ১৫ বছরের
নিদ্রা ভঙ্গ করে বিএনপি নেতারা মাঠে নেমেছেন। তাঁরা হুংকার দিচ্ছেন। সরকারকে ফেলে দেওয়ার
দিন-তারিখ পর্যন্ত ঘোষণা করছেন। দু-একটি কর্মসূচি সফল হওয়ায় বিএনপি নেতারা দিশাহারা।
একজন নেতা বললেন, সমাবেশে লাঠি নিয়ে যেতে হবে। আরেক নেতা আরও এককাঠি সরেস। বললেন, লাঠি
আরও বড় হতে হবে। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান লক্ষ্য হলো জনমত সংগঠিত করে ক্ষমতায় যাওয়া।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিরোধী আন্দোলনকে পরোক্ষভাবে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘বিরোধী দলের কাজই হলো আন্দোলন করা’। কিন্তু সেই আন্দোলন হতে হবে শান্তিপূর্ণ।
গত দুই মাসে বিএনপির মধ্যে আন্দোলনকে সহিংস করে তোলার এক উগ্র প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
বিএনপি যেন চাইছে লাশ পড়ুক। মানুষ মারা যাক। সহিংসতা হোক। কারণ কী? তাহলে কি অন্যতম
বিরোধী দলটি দেশে অশান্তি-বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়? একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
ক্ষমতা বদলের একমাত্র উপায় হলো নির্বাচন। বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচনে যাবে না। আগে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার লাগবে। তার আগে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। বিএনপির অবশ্য নির্বাচনে
না যাওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে। দলটির শীর্ষ দুই নেতাই নির্বাচনের অযোগ্য। তাই তর্কের
খাতিরে আমরা যদি ধরেও নিই, ভোটে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল, তবু তো শীর্ষ দুই নেতার
কেউই সরকারপ্রধান হতে পারবেন না। তাই অন্যকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য বিএনপি নির্বাচনে
যাবে কোন দুঃখে। তার মানে, বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায় না, নির্বাচনও চায় না। বিএনপি একটি
নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আবার একটি এক-এগারো ঘটাতে চায়। এই তো চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহের পর
খুলনার সমাবেশ নিয়ে বিএনপির আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায়। দেশে
একটি অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সেদিন রাখঢাক
না করেই বলছেন, ‘বিএনপি আবার একটি এক-এগারো আনার ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র
সফল হবে না।’
ওবায়দুল
কাদের যা-ই বলুন না কেন, বিএনপি যে তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনতে মরিয়া তা তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের দাবিকে কবর থেকে তুলে আনার চেষ্টার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত। ২০০৭ সালে এক অসহনীয়
ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়েই এক-এগারো এসেছিল। ১১ জানুয়ারি একটি জগদ্দল পাথরের মতো
অনির্বাচিত সরকার চেপে বসেছিল জনগণের বুকের ওপর। শুরু হয়েছিল বিরাজনীতিকরণ। রাজনৈতিক
নেতাদের চরিত্রহননের এক কুৎসিত নোংরা খেলা। ২০০৭ সালের এক-এগারো সরকার ছিল আসলে সুশীলদের
নীলনকশার বাস্তবায়ন। যারা নিজেদের বাইরে আর কিছুই বোঝে না। নিজেদের স্বার্থে সবকিছু
করতে পারে। ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ওই সুশীল নিয়ন্ত্রিত সরকার দেশের অর্থনীতি
ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা বেসরকারি খাত ধ্বংসের
উৎসব শুরু হয়েছিল। স্বনামধন্য ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের গ্রেফতার, হয়রানির নজিরবিহীন তাণ্ডব
শুরু করেছিল সুশীল সরকার। শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী উদ্যোগে অবৈধভাবে অভিযানের নামে
চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। দুই বছরে বিভিন্ন শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে
প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা অবৈধভাবে চাঁদাবাজি করা হয়েছিল। লুট করা হয়েছিল। এসবের
খুব কমই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়েছিল তখন। আতঙ্কে, ভয়ে, লজ্জায়, অপমানে অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য
বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যাঁরা প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা নিগৃহীত হয়েছেন। নির্যাতন ভোগ করেছেন।
শুধু সুশীলরা ভালো আর সবাই খারাপ- এরকম একটি উদ্ভট তত্ত্বে দেশকে এক গভীর সংকটের অতল
গহ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। প্রশাসনে, বিচারালয়ে সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়ে সুশীলরা অনন্তকাল
দেশের মালিক হতে চেয়েছিলেন। দুই বছরে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ভাতের বদলে আলু খাওয়ার
নসিহত নিয়ে এসেছিলেন সুশীল অধিপতি। কিন্তু কৃষক ন্যায্য দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু বিছিয়ে
এক অভিনব প্রতিবাদ করেছিলেন। শিক্ষাঙ্গনে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছিল। সম্মানিত শিক্ষকদের
কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ঢোকানোর মতো অমার্জনীয় অপরাধ করেছিল এক-এগারো সরকার। এক অনিশ্চিত
আতঙ্কের জীবন থেকে মুক্তি পেতে হাঁসফাঁস শুরু করে জনগণ। বিদেশি প্রভু, যারা এ সুশীলদের
কথায় গদগদ হয়ে এক-এগারো আগমনে পথ প্রশস্ত করেছিলেন, খুব শিগগিরই বুঝতে পারেন ‘ব্যাটা
সাধুবেশে পাকা চোর অতিশয়’। একসময় বিদেশি প্রভুরাও প্রশ্রয়ের ছাতা সরিয়ে নেন। অবশেষে
নির্বাচন দিয়ে কেটে পড়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম অথর্ব ও বিভীষিকাময় সরকারটি।
সম্প্রতি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো সেই সময়কেই ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘আবার যেন অযোগ্যদের
হাতে ক্ষমতা না যায় সেজন্য সজাগ থাকতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী জেনে-বুঝেই কথাটা বলেছেন।
২০০৭ সালের ফখরুদ্দীন সরকার ছিল অনেকটাই ‘হীরক রাজার’ মতো। কয়েকজন তথাকথিত পণ্ডিতের
খামখেয়ালিপনা যে দেশকে কী ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে পারে ড. ফখরুদ্দীনের সরকার তার
সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এ প্রেক্ষাপটেই সে সময় বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আর তত্ত্বাবধায়ক
সরকার চাই না’। ড. আকবর আলি খান বলেছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন করে ভাবতে
হবে’। মূলত ২০০৭ সালে ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারই এ ব্যবস্থা সম্পর্কে গণ-অনাস্থা তৈরি
করে। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
বিরুদ্ধে ঐকমত্যে পৌঁছে। ড. ফখরুদ্দীনের সুশীল-শোভিত ‘এক-এগারো ফেরেশতা’ প্রমাণ করে
দেয়, এ দেশের সুশীলরা একটি কাজই পারে, তা হলো অন্যের নিন্দা। সবার সমালোচনা। ওই বিভীষিকার
দুই বছরে মানুষ ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছিল। বিরক্তির মাত্রা এমন ছিল যে ‘সুশীল’ শব্দটাই
এখন এক গালিতে পরিণত হয়েছে। সে সময়ই ‘আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার না’- এ ব্যাপারে এক জাতীয়
ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানেই কিছু সুশীলের রাতারাতি দেবতা বনে
যাওয়া। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানেই সাধারণ মানুষকে যন্ত্রণায় দাহ করা। বিএনপির প্রয়াত
নেতা তরিকুল ইসলাম ছিলেন এক-এগারোর একজন ভুক্তভোগী। সে সময় তিনি নির্যাতিত হয়েছিলেন,
কারাবরণ করেছিলেন। জেল থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে তিন তালাক’। সেই
বিএনপিই এখন আবার ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ফিরিয়ে আনার দাবিতে রাস্তায় লাঠিসোঁটা নিয়ে
জড়ো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানেই এক-এগারো। বিএনপি কি তাহলে আবার একটি এক-এগারো
ঘটাতে চায়? আবার বিরাজনীতিকরণের ষড়যন্ত্র চায়? নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন,
‘নিকৃষ্ট গণতন্ত্রও অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো’। বিএনপি কেন আবার সেই অনির্বাচিত
সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়? বিএনপির অপরিণামদর্শী নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই ২০০৭
সালে এক-এগারো এসেছিল। এখন আবার দায়িত্বহীন রাজনীতির মাধ্যমে তারা তেমন একটা অবস্থার
সৃষ্টি করতে চাইছে।
পাঠক
লক্ষ করুন, ২০০৭ সালে এক-এগারো ঘটানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল কূটনৈতিকপাড়া।
বিএনপি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করেছিল ক্ষমতালিপ্সায়। এজন্যই বিচারপতি কে
এম হাসানকে তারা প্রধান বিচারপতি করে। সংবিধান সংশোধন করে প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে
নিশ্চিত করা হয় তিনি যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হন। এরপর ‘একান্ত অনুগত’ রাষ্ট্রপতি
ড. ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে এই ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়।
দেড় কোটি ভুয়া ভোটার আর আজিজের মতো ভাঁড়কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে কার্যত নির্বাচনব্যবস্থাকেই
ধ্বংস করে দেয়। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। বিদেশি দূতাবাসগুলো তৎপর হয়। পশ্চিমা
দেশগুলো আজ্ঞাবহ সুশীল সরকার গঠনে উৎসাহ দেয়। কারণ এতে তাদের খবরদারি করার সুযোগ বাড়ে।
এবারও বিএনপি কথায় কথায় ধরনা দিচ্ছে কূটনৈতিকপাড়ায়। বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট
নিয়োগ দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একঝাঁক দুর্বৃত্ত তোতাপাখির মতো বকবক করে যাচ্ছে
বিরামহীন। পশ্চিমা দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তারা যেন আবার একটি অনির্বাচিত সরকারকে
আনার সবুজ সংকেত দেয়। এমনকি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা
দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন! দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ কীভাবে এত আত্মঘাতী হতে
পারেন? এক-এগারো আনতে বিএনপির কোনো কোনো নেতা ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে ’৭১-এর
যুদ্ধাপরাধীদের ‘শহীদ’ বলার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন।
এক-এগারো
ছিল সুশীলদের মাস্টারপ্ল্যান। দুই বছর নয়, ১০ বছর জনগণের ঘাড়ে চড়ে মধু খাওয়ার নীলনকশা।
সে সময় সুশীলরা যেমন নিদ্রাহীন রাত কাটাতেন দেশের কথা ভাবতে ভাবতে, এখনো তারা তেমনি
অবস্থায়। দীর্ঘদিন স্যুট-টাই সেলফে। সফেদ শার্টে জং ধরেছে। আগে তো পাঁচ বছর পরপর কিছু
না করেই সবকিছু পাওয়া যেত। এখন ১৪ বছরের অপেক্ষা। এজন্য সুশীলরা কখনো অর্থনৈতিক সংকটের
ভয় দেখাচ্ছেন। কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিহরণ শোনাচ্ছেন। ২০০৭ সালে এ সুশীলদের নেতৃত্বে
পরামর্শে টিএফআই সেলে কি নারকীয়তা হতো। কীভাবে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে গিয়ে
নির্যাতন করা হয়েছিল সে সময়। তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার? এখন আবার সুশীলরা ওত পেতে আছেন।
বিএনপির আন্দোলনে তাদের দেহমনে চনমনে এক ভাব এসেছে দারুণভাবে। বিএনপির আন্দোলনের পালে
হাওয়া লাগাতে তারাও এখন মাঠে নেমেছেন। এক-এগারোর অঘটন ঘটাতে আমাদের কিছু ভ্রষ্ট রাজনীতিবিদও
কসরত করেছিলেন। ক্ষমতার হালুয়া-রুটি খেতে তারা নিজেদের আদর্শ, লজ্জা সব বিসর্জন দিয়েছিলেন
২০০৭ সালে। তাদের ‘সংস্কার’ ‘সংস্কার’ উল্লাস এখন ওই শব্দটিকেই করেছে দুর্গন্ধময়। এখনো
রাজনীতিতে দেখুন। বিএনপি যেমন অহর্নিশ লাশের জন্য অপেক্ষা করছে, অনাসৃষ্টি প্রার্থনা
করছে, আওয়ামী লীগের একটি অংশও সেই ষড়যন্ত্রের খেলায় বুঝে না বুঝে যোগ দিয়েছে। আওয়ামী
লীগের হঠাৎ বনে যাওয়া কিছু মন্ত্রী বেশুমার লুটপাট, দুর্নীতি, অনিয়ম করে বেহেশতি সুখ
উপভোগ করছেন। এদের ওপর মানুষের অসন্তুষ্টি, ক্ষোভ বেড়েই চলেছে। এরা যেন মনে করছেন
‘অদ্যই শেষ রজনী’। যা করার এখনই করে নিই।
আওয়ামী
লীগ, ছাত্রলীগের নিজেদের মারামারি, খুনোখুনি এখন নিত্যকার ব্যাপার। কদিন আগে জেলা পরিষদ
নির্বাচন হলো। কাগজে কলমে এটা নির্দলীয় নির্বাচন। কিন্তু আওয়ামী লীগই যেন আওয়ামী লীগের
প্রতিপক্ষ। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ অমান্য করে যাঁরা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন
তাঁরাও দেশে এক-এগারো আনতে চান। এঁরাই গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তি। গত এক যুগে আওয়ামী লীগে
ব্যাপকভাবে অনুপ্রবেশ করেছে বিএনপি-জামায়াত। এরা এতদিন নানা সুযোগ নিয়েছে। এখন ষড়যন্ত্রের
অংশীদার। বিএনপির আন্দোলনে নানাভাবে বাতাস দিচ্ছে তথাকথিত এসব নব্য আওয়ামী লীগার।
দেশি-বিদেশি এ সম্মিলিত ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছিল স্বার্থপর কিছু সুশীলের হাতে। এখন বিএনপি আন্দোলনের নামে তেমন একটি ফরমুলার পেছনেই ঘুরছে। এতে দেশের ভালো হবে না খারাপ হবে, সে চিন্তা চুলায় যাক। আওয়ামী লীগকে বিদায় করতে পারলেই যেন বিএনপি হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। বিএনপি, আওয়ামী লীগের একটি অংশ, সুশীলসমাজ, সুশীল নিয়ন্ত্রিত কিছু গণমাধ্যম, প্রশাসনের একটি অংশ এবং কয়েকটি পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকের সর্বনাশা বিরাজনীতিকরণ ও উন্নয়নবিরোধী ফরমুলা এক-এগারো। ২০০৭ সালের সেই ক্রিয়াশীল শক্তিগুলো আবার সক্রিয় হয়েছে। কিন্তু ২০০৭ আর ২০২২ তো এক নয়। এ দেশের জনগণ কখনো সেই অযোগ্য, অপদার্থ শাসনে ফিরে যাবে না। ইতিহাসে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় না। তা ছাড়া আমাদের আছেন একজন বিশ্বনেতা। বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতায় যিনি অনন্য, অসাধারণ। তাঁর নাম শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ রাজনীতি এক-এগারো বিএনপি সরকার নির্বাচন
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।