এডিটর’স মাইন্ড

একজন ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদকের সন্ধানে আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৫ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

আওয়ামী লীগ আগামী কাউন্সিল অধিবেশনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করেছে। ২৪ ডিসেম্বর দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহত্তম এ রাজনৈতিক দলটির কাউন্সিল হবে। আওয়ামী লীগের এবারের কাউন্সিল নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের যে কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সম্মেলনের দিন-তারিখ চূড়ান্ত করা হয়, সেই বৈঠকে দলটির সভানেত্রী কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এবারের কাউন্সিল হবে অনাড়ম্বর। এক দিনের। জাঁকজমকবর্জিত। প্রায় ১৪ বছর টানা ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলটির কাউন্সিল হওয়ার কথা ব্যাপক ঘটা করে। উৎসবমুখর পরিবেশে। কিন্তু তা না করে কেন এরকম সীমিত আয়োজনের নির্দেশনা? এর কারণ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশে ক্রমে ঘনীভূত হওয়া অর্থনৈতিক সংকট। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘ আগামী বছর সম্পর্কে আগাম সতর্কবার্তা ঘোষণা করেছে। বলা হচ্ছে, ২০২৩ হবে দুর্ভিক্ষের বছর। ২০২০ সাল থেকেই বিশ্ব নানা সংকটে টালমাটাল। করোনা গোটা বিশ্বকে গভীর অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড় করিয়েছে। করোনার সংকট কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রায় নয় মাস ধরে চলছে এ যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ইউরোপকে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। এ যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে। আমাদের অর্থনীতির শক্তি এবং সামর্থ্যরে জায়গাগুলো ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ছে। প্রবাসী আয়ে কোনো সুখবর নেই। আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম প্রবাসী আয় এসেছে অক্টোবরে। রপ্তানি আয়েও সুখবর নেই। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। বিদ্যুৎ সংকট, গ্যাস সংকট শিল্পোৎপাদনকে গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে নিয়ে গেছে। একমাত্র কৃষি ছাড়া কোথাও কোনো সুখবর নেই। বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। চিহ্নিত অর্থ পাচারকারী, লুণ্ঠনকারীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই। এত সংকটের মধ্যেও দুর্নীতি কমেনি। আমলাতন্ত্রের বাড়াবাড়ি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংকটের কথা বলছেন। দুর্ভিক্ষের কথা বলছেন। বুধবার নবীন সরকারি কর্মকর্তাদের এক অনুষ্ঠানে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। অনুরোধ করলেন কৃচ্ছ্রসাধনের। আহ্বান জানালেন এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না রাখার। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিলেন। প্রধানমন্ত্রী যখন সংযম ও ব্যয় সংকোচের কথা বলছেন, তখন দুই আমলা শিরোমণির জন্য বিলাসবহুল বাড়ি বানানোর অনৈতিক ও কুৎসিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন চলছে। সেই প্রাসাদে সুইমিংপুলও থাকবে! দেশ যখন সংকটের উত্তাপে বিপন্ন তখন শিরোমণি আমলারা একটু সাঁতার বিনোদন করবেন না, তা কী করে হয়। দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হয়ে ওঠা আমলারা যখন নানা সুযোগ-সুবিধার থালা চেটেপুটে খাচ্ছেন, তখন রাজনৈতিক দল হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল বিএনপির সমালোচনার ভাঙা রেকর্ড অবিরত বাজিয়ে চলেছে। কিছু মন্ত্রী এবং নেতার বক্তব্য এখন গণবিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। টানা ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগে নানা জানা-অজানা রোগ বাসা বেঁধেছে। কিছু কিছু রোগ দুরারোগ্য ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে। অনুপ্রবেশকারী, সুবিধাবাদী হাইব্রিডরা যেন এখন আওয়ামী লীগকেই গ্রাস করে ফেলছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা দলটির কিছু ব্যক্তি যেন ভিনগ্রহ থেকে আসা এলিয়েন। এদের গাল সামান্য রোদে মাখনের মতো গলতে থাকে। তৃণমূলের বেশির ভাগ ত্যাগী-পরীক্ষিত কোণঠাসা। তাদের চোখে মুখে উদ্বেগের ছাপ। দলে কোনো চেইন অব কমান্ড নেই। কোন্দল, হানাহানি প্রায় সর্বত্র। টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রি হচ্ছে। পদবাণিজ্য, কমিটি-বাণিজ্য আওয়ামী লীগে মহামারির আকার ধারণ করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জেলা পরিষদ সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ! এমপিদের অর্ধেকেরই এলাকার সঙ্গে সংশ্রব নেই। সারা দিন ব্যস্ত থাকেন নানা তদবিরে। চাকরি-বাণিজ্য, ত্রাণ নয়ছয়, কমিশন-বাণিজ্য এসব নিয়েই ব্যস্ত আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধেক সংসদ সদস্য। এরা যেন মনে করছেন, এবারই শেষ সুযোগ। যা বানানোর বানিয়ে নিই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন সময়ের দাবি। দলের কয়েকজন নেতা নিজেদের অযোগ্যতা, দায়িত্ব এড়াতে বিএনপিবিরোধী চটুল বক্তব্য রাখাটাই একমাত্র কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাঁদের কথার দাপটে মৃতপ্রায় বিএনপিও এখন জেগে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী যখন সংকটের কথা বলছেন খোলামেলাভাবে, তখন কিছু মন্ত্রী সংকট আড়ালের লুকোচুরি খেলায় মেতেছেন। সবকিছু মিলিয়ে দল এবং সরকার কোনোটাই ভালো নেই। ২০০৯ সালে ’৭৫-পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয়বারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ সময় বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সে উন্নয়নই আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এক বছরের কিছু বেশি সময় আছে সংসদ নির্বাচনের। এর মধ্যে নানা অস্বস্তি, সমালোচনায় এলোমেলো আওয়ামী লীগ। এ রকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ তার জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ।

১৯৮১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৮১-এর ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে। সেই কাউন্সিলে দল রক্ষার জন্য শেখ হাসিনাকে নেতা নির্বাচিত করার কোনো বিকল্প ছিল না। সেই থেকে দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে দলের সভানেত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন শেখ হাসিনা। এ মুহূর্তেও তাঁর কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনা একাই দলের হাল ধরে আছেন। একাই সব ঝড়ঝঞ্ঝা সামলাচ্ছেন। শেখ হাসিনা ছাড়া এ দলটি মুমূর্ষু। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘একজন কাউন্সিলরও যদি না চায় তাহলে আমি আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকব না।’ কাউন্সিলর তো দূরের কথা। একজন কর্মীও শেখ হাসিনার বিকল্পের কথা স্বপ্নেও ভাবেন না। তাই আসন্ন কাউন্সিলে যে দলীয় প্রধান পদ নিয়ে কোনো আলোচনাই হবে না, তা বলাই বাহুল্য। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ পদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের আবেগ ও ভালোবাসা জড়িত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক যুগ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায়ই তিনি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগকে জনগণের সংগঠনে পরিণত করেছিলেন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুুজিবুর রহমান। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন রোজ গার্ডেনে গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়েছিল। আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম সভাপতি হয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। প্রথম সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। কারাগারে থেকেই শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত দলটির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক অবশ্য সংগঠনের জন্য তেমন কিছু করতে পারেননি। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশ নিয়ে গ্রেফতার হন শামসুল হক। ১৯৫৩ সালে অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন শামসুল হক। ১৯৫৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন দলটির প্রথম সাধারণ সম্পাদক। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঢাকার মুকুল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের প্রথম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগের জাগরণের অধ্যায় শুরু হয়। মুসলিম লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ছিল। আওয়ামী লীগের প্রতি শুরু থেকেই বাঙালির সমর্থন ও সহমর্মিতা ছিল। কিন্তু সংগঠন শক্তিশালী করা, জনগণকে সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজ শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিব যখনই কারাগারের বাইরে থেকেছেন, তখনই সারা দেশ চষে বেড়িয়েছেন। সংগঠন গড়ে তুলেছেন। ১৯৫৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিব। আওয়ামী লীগের প্রাণ ভোমরায় পরিণত হন তিনি। তরুণ সাহসীদের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে এক উজ্জীবিত সংগঠনে পরিণত করেন। আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতীক। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারীতে আওয়ামী লীগের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের বিরোধ প্রকাশ্য হয়। কাগমারী সম্মেলনের পর মার্চে মওলানা ভাসানী দলের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৫৭ সালের ১৩ ও ১৪ জুন ঢাকার শাবিস্তান সিনেমা হলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে ভাসানীর পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি। পদত্যাগ করলেও ভাসানীকেই আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বহাল রাখা হয়। কিন্তু এর কদিন পরই ১৯৫৭ সালের ২৫-২৬ জুলাই ভাসানীর উদ্যোগে ঢাকায় গণতান্ত্রিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগ ভেঙে যায়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে একটি দল আত্মপ্রকাশ করে। এ সময় মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে মুজিবের সংগঠন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হয়। বন্ধ হয়ে যায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ১৯৬৪ সালের ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভা। এ সভায় দল পুনরুজ্জীবিত করার সিদ্ধান্ত হয়। তর্কবাগীশ সভাপতি ও শেখ মুজিব হন সাধারণ সম্পাদক। এ ধারাবাহিকতায় মার্চের ৬ ও ৭ ঢাকার ইডেন প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলে তর্কবাগীশ সভাপতি হন। চতুর্থবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন ‘অসাধারণ’। আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা। বাঙালির স্বপ্নের সারথি। এর পরের ইতিহাস বাঙালির মুক্তির ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। ’৭০-এর নির্বাচন। শেখ মুজিবই হয়ে ওঠেন বাঙালির মুক্তির পথপ্রদর্শক। বাংলাদেশের আরেক নাম। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ছয় দফা অনুমোদিত হয়। ওই কাউন্সিলেই আওয়ামী লীগের ইতিহাসে সবচেয়ে কার্যকর ও অসাধারণ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিব দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধুর পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন আরেক ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ তাজউদ্দীন আহমদ। ১৯৬৬-এর ১৮ মার্চ তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। বঙ্গবন্ধু যেমন ছিলেন জনগণের নেতা। জনজাগরণের কাব্য। তাজউদ্দীন ছিলেন নিভৃত সংগঠক। গোছানো একজন নেতা। একজন জ্ঞানমনস্ক রাজনীতিবিদ। বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণতা দেওয়াই ছিল তাঁর আরাধ্য। ১৯৬৭ সালের ২৭ আগস্ট নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন আরেক মহিরুহ এ এইচ এম কামারুজ্জামান। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগের শেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭০ সালের ৪ জুন। এ কাউন্সিলে দ্বিতীবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। আওয়ামী লীগের জন্য এ কাউন্সিল ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। এ কাউন্সিলে নির্বাচিত নেতৃত্বই ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক বিজয় এনে দেন। এনে দেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ম্যান্ডেট। ’৭১-এর মার্চে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার পরিকল্পনার নিখুঁত বাস্তবায়ন করেন ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ।

’৭০-এর ৪ জুনের কাউন্সিল যেমন আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের কাউন্সিলও তেমনি এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আওয়ামী লীগকে দাঁড় করিয়েছে। ’৭০-এর কাউন্সিলে তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে এক ঐতিহাসিক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু কেন সেদিন তাজউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তা বোঝা যায় ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে। তাজউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সংগঠনভাবনা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার আরেকটি প্রমাণ পাওয়া যায়। আমার বিবেচনায় ওই সময় যদি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অন্য কেউ হতেন তাহলে প্রবাসী সরকার গঠন, মুক্তিযুদ্ধকে সংগঠিত করা অনেক দুরূহ হতো। ’৭৫-এর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যাঁরা সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তাঁরা সবাই ভালো নেতা। সদ্যপ্রয়াত বেগম সাজেদা চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক, জিল্লুর রহমান, আবদুল জলিল, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও ওবায়দুল কাদের। প্রত্যেকেই জাতীয় নেতা। আওয়ামী লীগের ত্যাগী সংগ্রামী নেতা। কিন্তু এঁদের মধ্যে মাত্র দুজন ছাড়া কেউই ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক হয়ে উঠতে পারেননি। এদের কেউ কেউ সংকটে বিভ্রান্ত হয়ে গেছেন। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। ’৭৫-এর ট্র্যাজেডির পর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ১৯৭৭ সালের ৩ ও ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেনে ক্ষুদ্র পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। কিন্তু কাউন্সিল শুরুর আগেই আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নেয়। তীব্র কোন্দলের মুখে জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়। তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের। ১৯৭৮ সালের ৩ থেকে ৫ এপ্রিল সংকটাপন্ন আওয়ামী লীগ কাউন্সিল করে। এ কাউন্সিলে আবদুল মালেক উকিল সভাপতি হন। দক্ষ সংগঠক বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় আবদুর রাজ্জাকের সামনে সুযোগ এসেছিল ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক হয়ে ওঠার। কিন্তু সংকীর্ণ স্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ এবং বিভ্রান্তির চোরাগলিতে আটকে যান আবদুর রাজ্জাক। বঙ্গবন্ধুবিহীন আওয়ামী লীগ এক পথহারা বিভ্রান্ত বহুধাবিভক্ত রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়। তৃণমূল থেকে আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে দরকার। এ সময় মুমূর্ষু আইসিইউতে থাকা আওয়ামী লীগকে বাঁচানোর আর কোনো বিকল্প ছিল না। ’৮১-এর কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হয়। শেখ হাসিনা সভানেত্রী হওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে জাগরণ সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠনের সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধেন। ইতিহাসে অমর হওয়ার এক অনন্য সুযোগ এসেছিল দক্ষ সংগঠক আবদুর রাজ্জাকের সামনে। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকারের পাশে বিশ্বস্ততার প্রতীক হয়ে থাকার এক অনন্য সুযোগ পেয়েছিলেন এই নেতা। কিন্তু গোষ্ঠীস্বার্থ, মাইম্যান নীতিতে আবদুর রাজ্জাক ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক হয়ে উঠতে পারেননি। শেখ হাসিনার পথ কঠিন করতে আবদুর রাজ্জাক উপদলীয় কোন্দলের পথে পা বাড়ান। তাঁর উদ্যোগে ১৯৮২ সালের ১ মে ছাত্রলীগ ভেঙে যায়। এ ধারায় আওয়ামী লীগ ভাঙনের মুখে পড়ে। ১৯৮৩ সালের ২২ অক্টোবর মহিউদ্দিন আহমদকে সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাককে সাধারণ সম্পাদক করে বাকশাল গঠিত হয়। এ সময় আবার সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব দেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীকে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ক্রমে তিনি ‘অসাধারণ’ হয়ে ওঠেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী প্রমাণ করেন নেতার প্রতি বিশ্বস্ত, আদর্শের প্রতি অনুগত থাকলে সংগঠন গড়ে তোলা যায়। নেতার আদেশ-নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সাজেদা চৌধুরী হয়ে উঠেছিলেন দুঃসময়ের কাণ্ডারি। ’৮৭ সালের কাউন্সিলে যখন তিনি পূর্ণাঙ্গ সাধারণ সম্পাদক হন, তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর পর জিল্লুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন ১৯৯২-এর ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বরের কাউন্সিলে। তিনিও ছিলেন বিশ্বস্ততার প্রতীক। ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন না জিল্লুর রহমান। কিন্তু নেতার প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বস্ততায় অনুকরণীয় নেতা হয়ে থাকবেন চিরকাল। আবদুল জলিলও বিশ্বস্ত ছিলেন। দলীয় সভানেত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন। কর্মীদের খোঁজখবর নিতেন। সংগঠনের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু কঠিন সময়ে সংকটে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে পারেননি। ওয়ান-ইলেভেনের ধাক্কায় হতবিহ্বল জলিল রাজনীতিতে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেন। একজন ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি আওয়ামী লীগের এই পোড় খাওয়া নেতা। আবার কর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগে না থাকার পরও ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওয়ান-ইলেভেনের কঠিন সময়ে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্য ‘মাইনাস ফরমুলা’ আবিষ্কার হয়। মাইনাস ফরমুলা বাস্তবায়নের জন্য গ্রেফতার করা হয় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে। ’৭০-এ বঙ্গবন্ধু যেমন তাজউদ্দীন আহমদকে সাধারণ সম্পাদক করে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনাও তেমনি গ্রেফতারের আগে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করে রাজনৈতিক বিচক্ষণতার প্রমাণ রেখেছিলেন। প্রচারবিমুখ, কর্মীদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখা সৈয়দ আশরাফ সংকটে ‘অসাধারণ’ হয়ে ওঠেন। আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সৈয়দ আশরাফ নিভৃতে থাকতে পছন্দ করতেন। খুব বেশি কথা বলতেন না। কিন্তু যখন কথা বলতেন যখন মূল্যবান কথাই বলতেন। প্রতিদিন গণমাধ্যমের সামনে যা খুশি বয়ান দিয়ে নিজেকে খেলো করতেন না। তাঁর কথা জনগণ বিশ্বাস করত, পছন্দ করত। ২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় তার কথাগুলো এখনো কানে বাজে। কী শক্তিশালী, কী দৃঢ় সেই বক্তব্য। গোটা দেশবাসী আশ্বস্ত হয়েছিল ওই কথায়। সৈয়দ আশরাফ প্রমাণ করেছেন সাধারণ সম্পাদকের কাজ প্রতিদিন কাগজ দেখে একই কথা বারবার বলা নয়। সাধারণ সম্পাদককে বিশ্বস্ততার প্রতীক হতে হবে। তার কথাবার্তা হতে হবে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। এবার কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কর্মীদের চাওয়া একটাই- একজন ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক। যিনি নেতার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন। আদর্শে থাকবেন অবিচল। সংকটে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কর্মীদের সুখ-দুঃখ দেখবেন। দলের ত্যাগী-পরীক্ষিতদের পাশে দাঁড়াবেন। দলের কাজ করবেন দিনরাত। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এমন নেতা আওয়ামী লীগে আছে। সামনে কঠিন সময়। এ সময় এ রকম একজন ‘অসাধারণ’ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com


আওয়ামী লীগ   কাউন্সিল   সাধারণ সম্পাদক  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু: শেখ হাসিনাই হতে পারেন শান্তির দূত

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা। 

উল্লেখ্য, ২০১২ সালে শেখ হাসিনার বিশ্বশান্তির দর্শন জাতিসংঘ অনুমোদিত হয়েছে। এই বিশ্বশান্তি দর্শনের আলোকেই ইসরায়েল ইস্যুতে একটি রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে। 

বাংলাদেশ মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে কঠোর এবং যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ গাজায় নিরীহ মানুষের ওপর অবিচার, হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সবসময় নিন্দা জানাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি তার ঈদের শুভেচ্ছা ভাষণেও মধ্যপ্রাচ্যের মানবিক বিপর্যয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা 'মাদার অব হিউম্যানিটি' হিসেবে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্ব মানবতার কণ্ঠস্বর হয়েছেন। আর এ কারণেই বিশ্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। উদার মুসলিম দেশের নারী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি আলাদা একটি অবস্থানে রয়েছেন। বাংলাদেশ একদিকে যেমন ইসরায়েলের আগ্রাসনের নিন্দা করে, অন্যদিকে ধর্মান্ধ মৌলবাদ এবং ধর্মের নামে উগ্র সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করে। আর এটি বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে বিশ্বের এমন একজন নেতা যিনি মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে সংকট সমাধানের আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে দাঁড়াতে পারেন। তার শান্তির মডেলকে সামনে রেখে যদি বিবদমান পক্ষগুলো আলোচনার টেবিলে বসে তাহলে ইসরায়েল ইস্যুতে শান্তি অসম্ভব নয়।

বিশ্বে যারা নেতৃবৃন্দ আছেন তারা প্রায় অনেকেই বিতর্কিত এবং পক্ষপাতে দুষ্ট। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্ব নেতার অবস্থানে থাকতে পারছেন না। চীন এই বিষয়ে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবে পক্ষ করতে চায় না। তাছাড়া বিভাজিত বিশ্বে চীনের নেতৃত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ মেনে নেবে না এটা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি রাশিয়া এখন নিজের ঘর সামলাতে ব্যস্ত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে সমঝোতায় নেতৃত্ব দেওয়া পুতিনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। 

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু এরদোয়ান ব্যাপারে ইসরায়েল সহ অন্যান্য দেশগুলোর একটি অবস্থান রয়েছে। তাছাড়া তুরস্ক এই বিতর্কে কতটুকু সহনীয় অবস্থায় থাকতে পারবে তা নিয়ে ব্যস্ত।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী এখন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। এই অবস্থায় বিশ্বকে যুদ্ধাবস্থা থেকে সামাল দিতে পারেন একমাত্র শেখ হাসিনাই। তার শান্তির বার্তা যদি বিবাদমান পক্ষগুলো অনুধাবন করে তাহলে এই জটিল কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শান্তি অসম্ভব নয়। আর এই শান্তির জন্য শেখ হাসিনাই হতে পারেন বিশ্ব নেতা। তার শান্তির দর্শন এবং তার শান্তির উদ্যোগের মাধ্যমে এই অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তি হতে পারে বিশ্ব।

ইরান-ইসরায়েল   শেখ হাসিনা   শান্তির দূত   জো বাইডেন   ইরান  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন যারা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৩ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

পুরনোদেরকে অসম্মান না করে নতুনদের জন্য জায়গা করে দেওয়ার যে কৌশল সেটি রাজনীতিতে একটি শিক্ষণীয়। কিছু দিন আগেও যারা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তাদের বদলে এখন আস্তে আস্তে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বেশ কিছু নেতা। যারা আওয়ামী লীগে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। বিশেষ করে ১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগ সরকার গঠিত হওয়ার পর যাদেরকে বেশি পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন;

১. ড. হাছান মাহমুদ: ড. হাছান মাহমুদের পদোন্নতি ঘটেছে। এর আগে তিনি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী। এবার তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। স্পষ্টতই আওয়ামী লীগ সভাপতি তাকে পাদপ্রদীপে নিয়ে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও বটে। কোন কারণে সাধারণ সম্পাদকের পদ খালি হলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। আগামী দিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও ড. হাছান মাহমুদের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই অনেকে মনে করছেন। আর এই সমস্ত বিবেচনা থেকেই আওয়ামী লীগে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে সামনে আসছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। 

২. জাহাঙ্গীর কবির নানক: জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন নিজ যোগ্যতায়। মাঠের নেতা হিসেবে তার দীর্ঘদিনের সুনাম ছিল। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। রাজনীতিতে চড়াই উতরাই এর মধ্য দিয়েই তিনি এগিয়ে গেছেন তার আদর্শের কারণে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়ার পর তিনি ভেঙে পড়েননি। বরং সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে গেছেন। তার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে উন্নীত হন। এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতা এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি এখন আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারক হয়ে উঠেছেন। 
৩. আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক কর্মী বান্ধব হওয়ার কারণে তার অবস্থান আস্তে আস্তে দৃঢ় হচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতাদের অন্যতম বাহাউদ্দিন নাছিম কর্মীদের কাছে আওয়ামী লীগ সংগঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং সংগঠনের প্রশ্নে অকুতোভয় এবং একনিষ্ঠ এই নেতা মন্ত্রী না হয়েও আওয়ামী লীগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন নীতি নির্ধারক হয়ে উঠছেন নিজ যোগ্যতায়। 

৪. আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর মতোই তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। কিন্তু তারপরও তিনি ভেঙে পড়েননি। সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। এবার নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থার প্রতিদান তিনি ভালো ভাবেই দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের একটি পালা বদল ঘটছে। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু কিংবা শেখ ফজলুল করিমের জায়গা আস্তে আস্তে এই সমস্ত নেতারা জায়গা করে নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের একটা পাইপলাইন তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। যেখানে পর্যায়ক্রমে নেতারা অপেক্ষমান অবস্থায় আছেন। নেতৃত্বের শূন্যতা আওয়ামী লীগে যেন না হয় সেজন্য একটি দূরদর্শী রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আব্দুর রহমান   জাহাঙ্গীর কবির নানক   ড. হাছান মাহমুদ   আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

অন্ধকার ছয়দিন

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।  

এবার বাংলাদেশ দু’টি বড় উৎসব কাছাকাছি সময় উদ্যাপন করছে। ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করতে না করতেই, আগামীকাল (রোববার) ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ। বাঙালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। আর ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বাংলাদেশে ঈদ-উল-ফিতর কেবল মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় উৎসব নয়। এ অঞ্চলে বসবাসরত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও এই উৎসবে আনন্দ করে। সম্প্রীতির বাংলাদেশে ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এই রীতি চলে এসেছে দীর্ঘদিন। ইদানিংকার মতো সাম্প্রদায়িক দৃষ্টি ভঙ্গিতে কোন ধর্মীয় উৎসবকেই দেখা হতো না। ঈদের দিন অন্য ধর্মের বন্ধুরাও বাসায় আসতো সেমাই মিষ্টি এক সাথে খাওয়া হতো। আবার হিন্দুদের পূজাতেও আমরা যেতাম। অনেক মজা হতো। যতো দিন যাচ্ছে আমাদের ধর্মীয় উদার নৈতিক চেতনাকে গ্রাস করে ফেলছে ধর্মান্ধ সংকীর্ণতা। এখন ঈদ উৎসব যেন অনেকটাই ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে শৃঙ্খলিত। রমজান মাস জুড়ে এক ধরনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকে যা স্বতঃস্ফূর্ত না। আরোপিত এবং লোক দেখানো। এই আরোপিত বিধি নিষেধ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন কিছু ‘বক ধার্মিক’। এদের কারণে গত তিন ঈদে পহেলা বৈশাখ নির্বাসিত ছিলো। পবিত্র রমজানের সাথে পহেলা বৈশাখের কোন বিরোধ নেই। কিন্তু তারপরও অতি উৎসাহী কট্টরবাদীদের দাপটে শৃঙ্খলিত হয় পহেলা বৈশাখ। অথচ বাঙালী হিসেবে পহেলা বৈশাখীই আমাদের প্রথম এবং প্রধান সর্বজনীন উৎসব। বাংলা বর্ষ বরণ বাঙালীর প্রাণের উৎসব। এই উৎসব অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেশ কয়েক বছর পর এবার পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হবে বাঁধাহীন ভাবে। বাঙালী জাতি বর্ষবরণ করবে মুক্ত ভাবে। এটা আমাদের জন্য বড় আনন্দের উপলক্ষ্য তো বটেই। কিন্তু এত বড় উৎসব হবে সংবাদপত্রহীন! কি অদ্ভুত! সংবাদপত্র কি দায়িত্বহীন মালিকানার শিকার?

ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। সম্প্রীতির বন্ধনে অটুট। কিছু মানুষ যতোই কট্টর মৌলবাদী হোক না কেন, সাধারণ মানুষ এখনও উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। এজন্য একই সময়ে একাধিক ধর্মাবলম্বীদের উৎসব এদেশে নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়। এবার রমজানের কথায় ধরা যাক না কেন। এবার রমজানের মধ্যেই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ‘ইস্টার সানডে’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোজার মধ্যেই দোল উৎসবে হিন্দু সম্প্রদায় রং উৎসবে মেতেছে। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কোথাও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা বলেননি যে, রোজার জন্য ইস্টার সানডে করা যাবে না কিংবা দোল উৎসব বন্ধ রাখতে হবে। ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় কিছু উপরের তলার মানুষ। যারা ধর্ম প্রতিপালনের চেয়ে লোক দেখানোতে বেশী আগ্রহী। এদের হাতে ধর্ম এবং সংস্কৃতি কোনটাই নয়। এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠিত হচ্ছে-এজন্য আমি আনন্দিত। বাংলাদেশের মানুষের সামনে এটি এক অনন্য সুযোগ। এর মাধ্যমে প্রমাণ হতে পারে আমরা বাঙালী, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা উদার। এদেশের মানুষ যেমন ঈদ উৎসব করলো তেমনি বাংলা নববর্ষকেও বরণ করবে। এই বর্ষ বরণের উৎসব যেন ঢেকে দিচ্ছে সংবাদপত্রে ছুটি। এবার ঈদের ছুটিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিকরা। ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ মিলিয়ে মোট ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধ রাখার এক অগ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংবাদপত্র মালিকরা। পহেলা বৈশাখে কেন সংবাদপত্র বন্ধ থাকবে? কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ‘ঈদ সংখ্যা’ সাময়িকী প্রকাশ করেছে। এটা ভালো উদ্যোগ। সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে এই সব সাময়িকী গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমি আশা করেছিলাম এবার যেহেতু কাছাকাছি সময়ে ঈদ এবং বর্ষবরণ তাই সংবাদপত্রগুলো পহেলা বৈশাখে একটা ছোট সাময়িকী করবে। আলাদা আলাদা সাময়িকী না করুক ঈদ সংখ্যা এবং নববর্ষ সংখ্যা মিলিতভাবে করবে। কিন্তু কোথায় কি, এবার পহেলা বৈশাখে কোন সংবাদপত্রই বেরুচ্ছে না। শুধু পহেলা বৈশাখ কেন? বাংলাদেশে এখন চলছে অন্ধকার সময়। ১০ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল দেশে কোন সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। এটি নজীর বিহীন। 

অবশ্য কেউ বলতে পারেন, এ যুগে সংবাদপত্র ৬ দিন না ৬ মাস বন্ধ থাকলো কার কি? এখন সংবাদের জন্য কে আর দৈনিক পত্রিকার অপেক্ষা করে? অনলাইন, টেলিভিশন, সোশাল মিডিয়ার এই যুগে কেউ আর খবরের জন্য সকালের সংবাদপত্রের অপেক্ষা করে না। সকাল বেলা এক কাপ চায়ের সাথে একটি সংবাদপত্র এখন উত্তেজনাপূর্ণ রোমাঞ্চ নয়। এসব ঘটনা প্রিন্ট মিডিয়ার অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠারই ইঙ্গিত। কিন্তু তারপরও প্রিন্ট মিডিয়া এখনও বিশ্বস্ততা এবং আস্থার প্রতীক। একজন পাঠক টেলিভিশনে বা অনলাইনে যতো সংবাদই দেখুক বা পড়ুক না কেন, দিনের শেষে তার নির্ভরতা ছাপা কাগজ। অনলাইনে কোন সংবাদ পাঠ করার পর তার সত্যতা যাচাই করে ছাপা কাগজে। তাই এখনও সংবাদ, সঠিক তথ্যের জন্য প্রধান নির্ভরতার জায়গা হলো সংবাদপত্র। তথ্যের এই বিশ্বস্ত উৎস বন্ধ আছে। টানা ছয়দিনের জন্য দেশের মানুষ সংবাদপত্র পাবে না। এই ছয়দিনকে বলা যায় অন্ধকার সময়। সংবাদপত্র বিহীন একটা দিন মানে অন্ধকার দিন-রাত্রি। গত ১০ এপ্রিল থেকে অন্ধকার ছয়দিন শুরু হয়েছে। আমরা যারা সেকেলে মানুষ। ঘুম থেকে উঠেই পত্রিকা খুঁজি তাদের জন্য এই ছয়দিন দূর্বিসহ, অবর্ননীয়। 

প্রশ্ন হলো সংবাদপত্রের মালিকরা কেন এরকম সিদ্ধান্ত নিলো? এই সিদ্ধান্ত দেশের সংবাদপত্র শিল্পকে আরো সংকটে ফেলবে। বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের মালিকানা শিল্পপতি এবং ব্যবসায়ীদের দখলে। প্রধান সব সংবাদপত্রই কোন না কোন শিল্প গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে। বড় শিল্পপতিদের কাছে সংবাদপত্র হলো মর্যাদার প্রতীক। মুক্ত সাংবাদিকতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, পাঠকের কাছে দায় বদ্ধতা ইত্যাদি ব্যবসায়ীদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়। সংবাদপত্র এখনকার মালিকদের কাছে ‘ক্ষমতা’ এবং ‘অস্ত্র’। এই ক্ষমতা দেখিয়ে তারা তাদের ব্যবসাকে সম্প্রসারিত করে। সুদৃঢ় করে। সরকার সংবাদপত্র মালিকদের ভয় পায়। ব্যাংক তো তটস্থ থাকে। তাই পত্রিকা থাকা মানে ব্যবসায়ীদের সব মুশকিল আসান। কর্পোরেট হাউসে এখন সাংবাদিকতা নেই, এক ঝাঁক ক্রীতদাস আছে। যাদের একমাত্র কাজ মালিকদের মনোরঞ্জন করা। এদের মধ্যে যিনি সম্পাদক তিনি হলেন সবচেয়ে বড় ক্লাউন। মালিকদের খুশী করাই তার একমাত্র কাজ। পেশাগত উৎকর্ষতা চুলোয় যাক। যিনি মালিকের স্বার্থ যতো নিবিড়ভাবে সুরক্ষিত করেন তিনি ততো বড় সম্পাদক। এই অস্ত্র প্রয়োগ করে মালিকরা প্রতিপক্ষকে ভয় দেখায়। যারা তাদের কথা শোনে না তাদের এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করে। সংবাদপত্রের মালিকানা ব্যবসায়ীদের কাছে একধরনের বর্মের মতো। নিজেদের অপকর্ম, স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার জন্য সংবাদপত্রকে তারা ব্যবহার করে। সংবাদপত্রের মালিক হবার কারণে কেউ তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেনি। এভাবেই চলছে সংবাদপত্র শিল্প। সংবাদপত্র এখন কর্পোরেট ক্রীতদাস। তাই মালিকরা সংবাদপত্র দুই দিন বন্ধ থাকলো না ছয়দিন বন্ধ থাকলো তা নিয়ে ভাবেন না। তারা তাদের ব্যবসা সুরক্ষা পত্রিকা দিয়ে কতটা হলো তা নিয়েই ব্যস্ত। সংবাদপত্র মালিকরা পাঠকের কাছে জবাবদিহিতার বিশ্বাসী নন। তারা দেখেন এই সংবাদপত্র তাদের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারছে। ছাপা কাগজ একদিন বের না হলে অনেক সংবাদপত্রের অনেক টাকা সাশ্রয়। এসব বিবেচনা করেই মালিকরা মনে করেছেন পত্রিকা যদি কয়েকটা দিন বন্ধই থাকে, কি এমন ক্ষতি। কিন্তু এই ছয়দিন সংবাদপত্র বন্ধ যে এক ভয়ংকর বার্তা দিলো তাকি মালিকরা অনুধাবন করেন? সংবাদপত্র ছাড়াও যে দেশ চলে, এমন এক ঘোষণাই কি দিলেন না মালিকরা। ভবিষ্যতে এর মূল্য দিতে হবে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেই। 

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

সরকারের তিন মাস: সেরা অর্জন

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই। 

সরকার এই প্রথম তিন মাসে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে;

১. নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা আদায়: ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটি সরকারের একটি প্রধান অর্জন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে কীভাবে দেখবেন? নির্বাচনের পরে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা রকম আগাম পূর্বাভাস ছিল, সংশয় ছিল। কিন্তু এই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সফলতা অর্জন করেছে। নির্বাচনের পর প্রায় সব দেশই নতুন সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে। এটি সরকারের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এই সরকার যে এত তাড়াতাড়ি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করবে এটা অনেকেই ভাবতে পারেননি। 

২ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম দূর করার জন্যই সাঁড়াশি উদ্যোগ: নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কিছু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছে। সুন্নতে খতনা করতে গিয়ে একাধিক শিশুর মৃত্যু, অবৈধ হাসপাতালে রোগীদের ভুল চিকিৎসার মৃত্যুর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তার সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে হাসপাতালগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ বেশ কিছু ক্লিনিক হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যে দুর্নীতির মধ্যে ডুবে ছিল তা এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষ সরকারের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছে এবং আশা করছে যে, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধের ক্ষেত্রে তার অবস্থান অটুট রাখবেন এটাই সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করে।

৩. সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রি: এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত সফল হতে পারেনি বটে, তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরকার সুলভ মূল্যে পণ্য বিক্রির যে বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষ করে ভ্যান রমজান মাসে সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিতরণ ব্যাপকভাবে ঢাকা এবং আশেপাশের এলাকাগুলোর মানুষকে সুবিধা দিয়েছে। এই উদ্যোগের সঙ্গে মিলে দেশের ৩৫ টি জেলায় রাজনীতিবিদ, প্রশাসন নিজস্ব উদ্যোগে সুলভ মূল্যে রমজানের পণ্য বিতরণ করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তরমুজ নিয়ে যখন কিছু মধ্যসত্ত্বভোগী লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে তখন কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকের বাজারের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে তরমুজ বিক্রি করে একটি নজির স্থাপন করেছে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় শিক্ষা যে, বিকল্প চ্যানেলের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে পণ্য দিলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তা খুব উপকার দেয়।

৪. ব্যাংক একীভূত করা: ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগটি নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরেই করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত দুর্বল ব্যাংক আছে, সেই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সকল ব্যাংক একীভূত করবে এবং ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। এই নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রাজশাহী, কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সহ একাধিক ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এর ফলে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। তবে সকলে প্রত্যাশা করেন এ সমস্ত ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া বানানোর ক্ষেত্রে যারা দায়ী তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তাদেরকে ছাড় দেওয়ার জন্য যেন ব্যাংক একীভূত না হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।

৫. অবৈধ দালান-কোঠার বিরুদ্ধে অভিযান: বিশেষ করে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয় অবৈধ দালান এবং অনুমোদিত ভবনের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছে তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। সরকারের নতুন গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রী দায়িত্ব নিয়েছেন। তার কাছে মানুষের প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়াবে এই প্রত্যাশা। এখন পর্যন্ত যে অভিযান চলছে সেই অভিযান সরকারের সফল উদ্যোগের একটি বলেই অনেকে মনে করছেন। এছাড়াও সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ভালো কাজ করছে, যে কাজগুলো ফলাফল পেতে সাধারণ মানুষকে অপেক্ষা করতে হবে। 


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

তোফায়েল আহমেদ: রাজনীতিতে অস্তমিত সূর্য

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ০৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়? 

এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তোফায়েল আহমেদ জয়ী হয়েছেন। সংসদে তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। তবে তিনি এখন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকটাই বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছেন। বিশেষ করে একাধিক অসুস্থতা তাকে এখন স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলা করতে দেয় না। তার কণ্ঠস্বরের তেজও কেড়ে নিয়েছে তার একের পর এক অসুখ। 

তোফায়েল আহমেদের এক পাশ অনেকটাই অবশ হয়ে গেছে। আর এ কারণেই তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তবে এখনও তিনি লেখালেখি করেন এবং নানারকম রাজনৈতিক আলোচনায় তাকে আগ্রহীও দেখা যায়। তবে আগের যে তোফায়েল আহমেদ, যিনি যে কোন রাজনৈতিক আড্ডা এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে মধ্যমণি হিসেবে সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন, যার দিকে তাকিয়ে থাকত লক্ষ লক্ষ জনতা সেই তোফায়েল আহমেদ এখন নেই। 

অনেকেই মনে করেন যে, রাজনৈতিক অসুস্থতার চেয়ে মানসিক ভাবেই তোফায়েল আহমেদ বেশি বিপর্যস্ত। বিশেষ করে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর তার ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরুর প্রেক্ষাপটেই রাজনীতিতে তিনি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। 

গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবসের স্মরণে এক লেখায় কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেছিলেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু যখন আক্রান্ত হন, ৩২ নম্বর যখন খুনিরা ঘিরে ফেলে তখন তিনি বেশ কয়েক জনকে ফোন করেছিলেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন তোফায়েল আহমেদে। হতাশাজনক হলেও তোফায়েল আহমেদ সেই টেলিফোনের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি। এই লেখাটির পর আওয়ামী লীগের মধ্যে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছিল। অনেকে এটা নিয়ে হৈ চৈ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তোফায়েল আহমেদ এর প্রতিবাদও করতে পারেনি। কারণ আওয়ামী লীগ সভাপতিকে যারা চেনেন তারা সকলেই জানেন যে, বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি তথ্য প্রমাণ ছাড়া কোন বক্তব্য দেন না। এই ঘটনার পর আকস্মিকভাবে তোফায়েল আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন তিনি হয়ত নির্বাচন করবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং বিজয়ী হয়েছেন অসুস্থ শরীর নিয়ে। 

এখন তিনি জাতীয় সংসদে আসেন বটে তবে আগের মত সরব উপস্থিতি তার নেই। হয়ত রাজনীতির জীবনে তিনি শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে রাজনীতির ইতিহাসে তোফায়েল আহমেদ চিরকাল বেঁচে থাকবেন। তার রাজনৈতিক জীবনের দুটি ভাগ সবসময় আলোচিত থাকবে। একটি হল স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর একান্ত বিশ্বস্ত সহচর হিসেবে তরুণ তুখোড় ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ। আরেকটি হল পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে তার বিতর্কিত এবং রহস্যময় ভূমিকা। কোন তোফায়েল আহমেদ ইতিহাসে বেশি আলোচিত থাকবেন তা সময়ই বলে দেবে।



তোফায়েল আহমেদ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন