এডিটর’স মাইন্ড

মানি ইজ নো প্রবলেম

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

রবিবার সকাল। বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছি। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস তাই প্রচণ্ড যানজট। গাড়িতে বসে অফিসের টুকটাক কাজ সারছি। এর মধ্যেই আমার এক বন্ধুর ফোন। ধরতেই বলল, ‘দোস্ত খবর শুনছ। কোনো ব্যাংকে বোলে টাকা নাই। আটটা ব্যাংক নাকি দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। আমি তো অল্প কিছু টাকা রাখছি ব্যাংকে। এখন কী করব?’ বন্ধুর টেলিফোন রাখতে না রাখতেই রংপুর থেকে ফোন করলেন এক আত্মীয়।  বললেন, ‘ব্যাংকে নাকি টাকা নাই। মাত্র কিছু টাকা আছে ব্যাংকে। এটাই তো সারা জীবনের সম্বল। এখন কী করব। অফিসে যেতে যেতে এরকম আরও কয়েকজনের ফোন। সবাই উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত। আমার এক অনুজ একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাকে ফোন করলাম আসলে ঘটনা কী জানার জন্য। তিনি তো হো হো করে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘ভাই আপনিও কি এসব ফেসবুকের গুজবে বিশ্বাস করা শুরু করলেন? এসব ফালতু খবর একটা মহল ছড়াচ্ছে। কোনো ব্যাংকেই তারল্য সংকট নেই। তার কথায় আশ্বস্ত হলাম। তখনই মনে হলো ১৯৭৪ এর কথা। সে সময় একটি স্বনামধন্য পত্রিকায়জাল জড়ানো বাসন্তী ছবি ছাপা হয়েছিল। বলা হয়েছিল বাসন্তীর কোনো কাপড় নেই। লজ্জা নিবারণের জন্য বাসন্তী জালে আব্রু ঢেকেছে। ওই খবর সে সময় হইচই ফেলেছিল। বঙ্গবন্ধু সরকারকে ঘায়েল করার জন্য সে সময়ই বাসন্তীর সাজানো নাটক ব্যবহার করা হয়েছিল।৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বাসন্তী বাসন্তী করে রাজনীতির মাঠে কত না অসত্য কুৎসিত আপত্তিকর কথাই ছড়ানো হলো।৮১- ১৭ মে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাই বাসন্তী নিয়ে মিথ্যাচারের স্বরূপ উন্মোচন করেছিলেন। নিজে গিয়েছিলেন বাসন্তীর বাড়িতে। জানা গেল বাসন্তী একজন প্রতিবন্ধী। ওই ছবি ছিল বানোয়াট। আওয়ামী লীগ সরকার সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির জন্যই সে সময় বাসন্তীর ওই ছবি বানানো হয়েছিল। বাংলাদেশে অপসাংবাদিকতার ইতিহাস বাসন্তীর ছবি সম্ভবত সেরা দৃষ্টান্ত। বাসন্তীকে নিয়ে যারা সে সময় নোংরা খেলা খেলেছে তারা কেউই বাসন্তীর জন্য কিছুই করেনি। শেখ হাসিনাই বাসন্তীর জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন।৭৪- ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল না। সংবাদপত্রে এক সাজানো ছবিই আওয়ামী লীগের অনেকটা সর্বনাশ করেছিল। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগ। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যেন গুজবের ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ গুজব হলো- ব্যাংকে টাকা নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন চোখ রাখলে মনে হবে, বাংলাদেশ বোধহয় দেউলিয়া হওয়ার পথে। সরকার পতনের দিনক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর হলো এমন সব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এরপর নিয়ে বিরোধী নেতারা বক্তব্য রাখছেন। অবশেষে তা মূল ধারার গণমাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আপনাকে অসত্য তথ্য বিশ্বাস করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ব্যাংকে টাকা নেই, গুজব ছড়ানোর আগেই গুজব ছড়ানো হলো আমাদের রিজার্ভে টাকা নেই। বাংলাদেশ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রিজার্ভ। এটি আমাদের একটা গর্ব করার বিষয় ছিল। কিন্তু করোনা মহামারি আর বৈশ্বিক সংকটের কারণে রিজার্ভ কমছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশেই রিজার্ভ কমছে বৈশ্বিক সংকটের কারণে। একটি দেশে যদি তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা মজুদ থাকে তাহলে সেটাকে নিরাপদ মনে করা হয়। বাংলাদেশে এখন যে নিট রিজার্ভ মজুদ আছে তা দিয়ে চার মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। তাই রিজার্ভ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে চীনে। অক্টোবরের শেষে দেশটির রিজার্ভ ছিল ৩০৫২ বিলিয়ন ডলার। অথচ জুলাইয়ে দেশটির রিজার্ভ ছিল হাজার বিলিয়ন ডলার। মাত্র তিন মাসে চীনের রিজার্ভ কমেছে প্রায় হাজার বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের দিক থেকে প্রথম ১০টি দেশের একটি ভারত। জুনের শেষে ভারতের রিজার্ভ ছিল ৫৯৯ বিলিয়ন ডলার। অক্টোবরের শেষে এসে তা কমে ৫২০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী দেশ হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ যুক্তরাষ্ট্র রিজার্ভের দিক থেকে প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ২৪২ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের দিক থেকে যে দেশগুলো সংকটে আছে তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে সংকটে থাকা দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশ এখন দেউলিয়া প্রায়। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ীশ্রীলঙ্কার পাশাপাশি লেবানন, রাশিয়া, সুরিনাম এবং জাম্বিয়া খেলাপি ঋণের দেশ। অতি সম্প্রতি বেলারুশও খেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছে। মুহূর্তে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে যে দেশগুলো আছে তার একটি তালিকাও প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ওই তালিকায় যেসব দেশের নাম রয়েছে সেগুলো হলো- আর্জেন্টিনা, ইকুয়েডর, মিসর, এল সালভাদর, ইথিওপিয়া, ঘানা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, তিউনিশিয়া এবং ইউক্রেন। পাঠক লক্ষ করুন তালিকায় বাংলাদেশ নেই। তাহলে বাংলাদেশকে দেউলিয়া বানানোর প্রাণান্ত চেষ্টা কেন? কিছুদিন আগে আইএমএফ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেল। সফরের মধ্যেই গুজব ছড়ানো হলো যে, বাংলাদেশকে আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পিত গুজবকে লুফে নিলেন কিছু রাজনীতিবিদ। তারা একযোগে বাদ্য বাজাতে শুরু করলেন। এরপর দেশের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম গুজবকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আদাজল খেয়ে মাঠে নামল। অর্থনীতিবিদ থেকে সদ্য রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এক দেবদূত যেন আইএমএফের মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হলেন। ঘোষণা করলেনবাংলাদেশ ঋণ পাচ্ছে না। তার বক্তব্য যখন ডাহা মিথ্যা প্রমাণ হলো তখন কোনো গণমাধ্যম তাকে জিজ্ঞাসা করল নাআপনি এভাবে অসত্য তথ্য কীভাবে দিলেন সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম মিথ্যাচার করলে আপনি জাতির বিবেক, সাহসী মানুষ। আর সত্য তুলে ধরলেই আপনি সরকারের দালাল। সবাই মিলে যেন বাংলাদেশকে পঙ্গু, বিবর্ণ, দেউলিয়া প্রমাণের বিরামহীন চেষ্টা। কিন্তু কেন? পুঁজিবাদী বিশ্বে বলা হয়, সবকিছুর মূলে বাজার এবং অর্থ। বিদেশে বসে যারা নিরন্তর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে তারা যে বিনে পয়সায় এসব করছে না তা বলাই বাহুল্য। তাদের নিয়মিতভাবে মাসোহারা দিয়ে পোষা হচ্ছে। এখন যে পরিকল্পিত গুজব ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোর পেছনেও লোভনীয় অর্থের হাতছানি আছে। বাংলাদেশকে ক্ষতবিক্ষত করতে কেন এত বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে? এর কারণ খুবই সহজ সরল এবং পরিষ্কার। রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যই এসব গুজবকে রীতিমতো শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানো। একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতা থেকে হটানোর একমাত্র গণতান্ত্রিক পথ হলো নির্বাচন। সেজন্য জনমত গঠন করতে হয়। ভোটে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেই ক্ষমতাসীন দলকে পরাস্ত করতে হয়। ক্ষমতা থেকে নামাতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটাতে এখন ভিন্ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়ার কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথম ধাপ, অবিরত সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য ভিত্তিহীন তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। এসব অপপ্রচারভাইরাল করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপ, অপপ্রচারের সূত্র ধরে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রচারণা করবে। ওই গুজবগুলোকে জায়েজ করবে। তৃতীয় ধাপ, বিরোধী দলের বক্তব্যের সূত্র ধরে মূল ধারার কিছু গণমাধ্যম সংকট, ব্যর্থতা ইত্যাদি নিয়ে ফলাও করে প্রচার করবে। চতুর্থ ধাপ, ক্ষমতার লোভে অস্থির কিছু সুশীল নিয়ে নিয়মিত টকশোতে গিয়ে কথা বলবেন, কলাম লিখবেন। পঞ্চম ধাপ, সবকিছু নিয়ে সরাসরি জনগণের কাছে গিয়ে অসত্য তথ্যগুলো বলা হবে। ষষ্ঠ ধাপ, কিছু কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হবে। সপ্তম ধাপ, দাতা দেশ, সংস্থা এবং পশ্চিমা দেশের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করে সরকারকে চাপে ফেলা হবে। সাত ধাপ পেরোলেই সাফল্য- এটাই এখন বাংলাদেশের রাজনীতি। চতুর্থ ধাপ পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ দৃশ্যমান। কিন্তু পঞ্চম ধাপের ঘটনাগুলোকে আমরা উপেক্ষা করছি। কদিন আগে সৌদি আরব থেকে এক ব্যক্তি আমাকে ফোন করলেন। আমার লেখা পড়ে মাঝেমধ্যেই তিনি ফোন করেন। অনেক বিষয়ে পরামর্শ দেন। তিনি আমাকে বললেন, এখানে প্রবাসী ভাইদের কাছে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন গিয়ে কথা বলছেন। তারা কঠিন পরিশ্রম করে দেশে পরিজনকে সুখে রাখার সংকল্পে দৃঢ় মানুষগুলোকে বিভ্রান্ত করছে।

তিনি বললেন, ‘প্রবাসীদের বলা হচ্ছে- ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানো নিরাপদ না। আপনার টাকা মার যাবে। আপনি টাকা দেন, আমি হুন্ডি করে দিচ্ছি। তার মতে, সৌদি আরবে এখন হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোর হিড়িক পড়েছে। টাকা পাঠাতে সময় লাগছে ১০ মিনিট। একজন অভিবাসী ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়েই ওই রাজনৈতিক ব্যক্তি বাংলাদেশে ফোন করছেন। পরিবারের ঠিকানা বাংলাদেশে থাকা ব্যক্তিকে জানিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের ওই ব্যক্তিটি টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছেন প্রাপকের বাসায়। ফোনে সৌদি প্রবাসীকে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিচ্ছেন। পরিবারের সদস্য টাকা বুঝে পাওয়ার কথা নিশ্চিত করতেই অপর প্রান্তের কর্মী বলছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। এভাবেই সৌদি আরব, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, জর্ডানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলছেহুন্ডি মিশন। আর কারণেই কাগজ-কলমে প্রবাসী আয় কমছে। টাকা আসছে অবৈধ পথে। শুধু কি বিদেশে? দেশে কী হচ্ছে? রবিবার সোমবার ব্যাংকে টাকা নেই বলে যে গুজব ছড়ানো হলো তার নেপথ্যেও বিএনপি এবং জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। ঢাকার একজন বিএনপির পরিচিত নেতা তার ফেসবুকে লিখলেন- ‘ব্যাংক থেকে লাখ টাকা তুলতে গেলাম। ব্যাংকে টাকা নেই... এভাবে আমি পাঁচজন বিএনপি নেতার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখলাম। শব্দ আর টাকার অংকের হেরফের আছে কিন্তু মূল বক্তব্য একই। একজন বিএনপি নেতা তার বাড়িতে রীতিমতো কর্মিসভা করে বলেছেন- সবাই ব্যাংকে যাবে, যার যা টাকা আছে তুলে নেবে। এভাবে পরিকল্পিতভাবে ব্যাংকিং খাতকে একটা সংকটে ফেলার চেষ্টা চলছে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্বরিত পদক্ষেপের প্রশংসা করতেই হয়। গুজবকে পল্লবিত হতে দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। দ্রুত প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণকে আশ্বস্ত করছে। এরকম পদক্ষেপ যদি ডলার নিয়ে সরকার কিংবা বাংলাদেশ ব্যাংক করতে পারত তাহলে দেশের ডলার পরিস্থিতি এত নাজুক হতো না। সেদিন একজন অর্থনীতিবিদ বলছিলেন, ডলার এখন শেয়ার মার্কেটের মতো ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। অনেকে মুনাফার আশায় ডলার কিনে বাসায় রাখছে। এখানেও বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক কূটকৌশল। দুই দলের বিত্তবান নেতা-কর্মীরা বাজার থেকে মুড়িমুড়কি কেনার মতো ডলার কিনে মজুদ রেখেছেন। ওই অর্থনীতিবিদ বলছিলেন, পাসপোর্ট, বিদেশ যাওয়ার টিকিট এবং ভিসা ছাড়া এখন ডলার বিক্রি বন্ধ করা উচিত। একজন ব্যক্তি চাল, ডাল, আদা, লবণের মতো ডলার কিনবেন এটা কী করে হয়? এখন যে প্রবণতা চলছে তাতে বাজারকে স্থিতিশীল করার জন্য যত ডলারই ছাড়া হোক না কেন, সংকট কাটবে না। এখন একটি সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক বাহিনী মাঠে নামানো হয়েছে। এদের কাজ হলো খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে সংকট সৃষ্টি করা। এটা তাদের জন্য লাভজনক ব্যবসাও বটে। প্রশ্ন হলো, এত বিপুল ডলার কেনার টাকা বিএনপি বা জামায়াতের নেতা-কর্মীরা কোথায় পাচ্ছেন। প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মহাসমাবেশগুলোর বৈশিষ্ট্যগুলো খানিকটা খতিয়ে দেখা দরকার। সন্দেহ নেই, বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে বিএনপি যে জনসভাগুলো করছে তাতে বিপুল জনসমাগম হচ্ছে। নেতা-কর্মীরা সেখানে যোগ দিচ্ছেন। প্রতিটি সমাবেশের আগে অযাচিতভাবে পরিবহন ধর্মঘটের নাটক করা হচ্ছে। এতে ক্ষমতাসীন দলের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির কর্মীরা দুই-তিন দিন আগেই সমাবেশ হবে যে শহরে সেখানে আসছেন।বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে ফরিদপুরের সমাবেশে কিছু কর্মীর সাক্ষাৎকার দেখছিলাম। সেখানে কর্মীরা বলছেন, তারা তিন দিন আগে সমাবেশে যোগ দিতে এসেছেন। তাদের আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়ার খরচ কে দিচ্ছে? দল দিচ্ছে। আগের দিন সমাবেশস্থলে রীতিমতো পিকনিকের উৎসব। বিরিয়ানি, তেহারি, খিচুড়ি রান্নার লোভনীয় দৃশ্য আমরা প্রত্যক্ষ করছি। সাধারণভাবে হিসাব করলে দেখা যায়, একেকটি সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এত টাকা বিএনপি পাচ্ছে কোত্থকে? গত ২৮ জুলাই বিএনপি তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে। এতে দেখা যায়, গত বছর দলটির আয় হয়েছে ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা। দলের সদস্যদের মাসিক চাঁদা, মনোনয়ন ফরম বিক্রি, ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে অনুদান এবং এফডিআরের লভ্যাংশ থেকে টাকা আয় হয়েছে বলে হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সময় দলটির ব্যয় হয়েছে কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা। কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, ক্রোড়পত্র বিল, অফিস খরচসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে বলে বিএনপির দাখিলকৃত হিসাব বিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুযায়ী দলটি কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৭ কোটি টাকার ঋণে জর্জরিত। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হচ্ছে বলে দলটির নেতারা প্রতিদিন গলা ফাটিয়ে বক্তৃতা দেন, সেই দলটির অবস্থাই আসলে শ্রীলঙ্কার মতো। কাগজ-কলমে দায়দেনাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল সপ্তাহে ১০-১৫ কোটি টাকা হাওয়ায় উড়াচ্ছে কীভাবে? বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক একনায়ক জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, ‘মানি ইজ নো প্রবলেম। ক্যান্টনমেন্টে বসে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জিয়া বিএনপি গঠন করেছিলেন। টাকা দিয়ে অন্য দলের লোক ভাগিয়ে এনেছিলেন। দল গঠনের জন্য ব্যবসায়ী, শিল্পপতিদের হুমকি দিয়ে চাঁদা নিতেন এমন অভিযোগ লিখে গেছেন প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে এবং বিএনপিকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি বলেছিলেনমানি ইজ নো প্রবলেম। বিএনপির রাজনীতির মূলমন্ত্র এটি। এখন আবারমানি ইজ নো প্রবলেম তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগ দেখছে বাংলাদেশ। টাকা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রায় পুরোটাই দখল করে নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। লবিস্ট নিয়োগ করে সরকারকে চাপে ফেলা হয়েছে। ্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল গত বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। একটু কান পাতলেই বিএনপি নেতাদের চাপা উল্লাসের কথা শোনা যায়। ওই দিন নাকি বাংলাদেশের ওপর আরেকটি বড় নিষেধাজ্ঞা আসছে। নিষেধাজ্ঞা গত বছরের নিষেধাজ্ঞার চেয়েও ভয়ঙ্কর হবে। বাংলাদেশ স্তম্ভিত হবে এমন কথাও শুনি। ১০ ডিসেম্বরের সভা সমাবেশ নিয়ে নয়, আসন্ন নিষেধাজ্ঞা নিয়েই বিএনপি খুশিতে বাকবাকুম করছে। টাকা নাকি কথা বলে। এখন তো তার সত্যতাও দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা এখন বিএনপি নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন। সরকারকে হটাতে বিএনপি টাকার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে। মানি ইজ নো প্রবলেম। কিন্তু টাকাটা আসছে কোত্থেকে? কদিন আগে শুনলাম আওয়ামী লীগের নেতা বলছেন, ‘ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি হুমকি দিয়ে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছে বিএনপি নেতারা। ব্যবসায়ীরা কি নাদান শিশু। তাদের ভয় দেখাল আর কোটি কোটি টাকা বের করে দিলেন। ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে এমন ধারণার সঙ্গে আমি একমত নই। কিছু কিছু ব্যবসায়ী এখন বিএনপিপ্রেমিক হয়ে উঠেছেন। ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচনের পরহাওয়া ভবন কেন্দ্রীয় ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছিল। এসব ব্যবসায়ী তখন ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তারা প্রায় সবাই রাতারাতি আওয়ামী লীগ হয়ে যান। হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফ যে প্রতিষ্ঠানকে ফ্লাইওভার নির্মাণের অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন; ভোজবাজির মতো সেই ফ্লাইওভার অনুমোদন পান হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ সেই ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, রাজকন্যার সঙ্গে অর্ধেক রাজত্বের মতো পায় পাওয়ার প্ল্যান্ট, আরও নানা ব্যবসা। তারা এখন কী করছেন? একসঙ্গে অনেক ব্যাংকের মালিকানা পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ কোথায়? দেশে না বিদেশে? খবর কে রাখে। অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপ এখন দিনে আওয়ামী লীগের সমর্থক সেজে পাঁচতারকা হোটেলে মন্ত্রীদের সঙ্গে ফটোসেশন করছেন। রাতে বিএনপির প্রবাসী যুবরাজের জন্য নজরানা পাঠাচ্ছেন। এমন অভিযোগ বিভিন্ন আলোচনাতেই শোনা যায়। গার্মেন্টের নামে ওভার ইন ভয়েসিং করে হাজার কোটি পাচার করে যারা কোটি টাকা অনুদানের চেক নিয়ে গদগদ করতে করতে সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হচ্ছেন, গভীর রাতে তাদের গোপন ফোনে দূর দেশে কার সঙ্গে কথা হয়? আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বিএনপির মনোরঞ্জনে ব্যস্ত ব্যবসায়ীদের খবর কি সরকার জানে নাব্যবসায়ীদের একটি অংশ এখন দুই নৌকায় পা দিয়ে চলছেন। জ্বালানি সংকটে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে আর্তনাদ করতে করতে বিএনপিকে সচল রাখার জ্বালানিতে সরবরাহ করছেন বেশ কিছু ব্যবসায়ী। এদের সম্পর্কে খোঁজখবর কি নেওয়া হচ্ছে? সরকারকে নয় বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে যারামানি ইজ নো প্রবলেম তত্ত্ব আবার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করছে তারা রাষ্ট্র এবং জনগণের জন্য ক্ষতিকর।  ধ্বংসের উন্মত্ত রাজনীতিতে অবৈধ টাকার অবাধ প্রবাহ বন্ধ না করলে সামনে পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে বাধ্য।



মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আবার লাইমলাইটে আমু

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৭ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতাদের মধ্যে অন্যতম। আওয়ামী লীগের অন্য সব প্রবীণ নেতারা এখন নিজেদের গুটিয়ে নিলেও এখনও আমির হোসেন আমু স্ব অবস্থানে আছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি আবারও লাইমলাইটে আসছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ এখন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে একেবারে অনুপস্থিত থাকে। বয়সের ভারে তিনি ন্যুব্জ হয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংসদ উপনেতা সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরীও দলীয় কর্মকাণ্ডে থাকেন বটে তবে আগের মতো নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না শারীরিক নানা অসুস্থতার জন্য। প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমকে দেখা যায় বিশেষ দিবসের কর্মসূচির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এরকম পরিস্থিতিতে আমির হোসেন আমু নিজেকে এখন পর্যন্ত গতিশীল দেখেছেন। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাকে সরব এবং তৎপর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বয়স তাকে পরাজিত করতে পারেনি। বরং তিনি এই বয়সেও অনেক তৎপর। কোনো কিছু না পাওয়ার বেদনাও তাকে হতাশ করতে পারেনি। কোন কিছু না পেয়েও তিনি রাজনীতির মাঠে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। 

আজ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান হয় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান নেতা উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক আগে আগে তার বক্তব্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং এই বক্তব্যের মধ্যে তিনি কিছু ব্যতিক্রমী তথ্য উপস্থাপন করেন। 

শুধু এই বক্তব্য নয়, নির্বাচনের আগে থেকেই আমির হোসেন আমুকে রাজনীতিতে সক্রিয় এবং সরব দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনের সময় জোটের রাজনীতির মেরুকরণ, আসন বণ্টন ইত্যাদিতে আমির হোসেন আমু অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। এই সময় শাহজাহান ওমরের আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়ে তার ভূমিকা ছিল বলে অনেকে মনে করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমির হোসেন আমুর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভায় জায়গা না পেলেও দলে তিনি এখন অনেক বেশি প্রভাবশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকায় কোন্দল এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানারকম মেরুকরণের ক্ষেত্রে আমির হোসেন আমু আবার ভূমিকা রাখতে শুরু করেছেন। আমির হোসেন আমু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর ছিলেন এক-এগোরার পর্যন্ত। বিশেষ করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন তখন থেকে ২০০৭ এর আগ পর্যন্ত আমির হোসেন আমু ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত রাজনীতিবিদদের একজন। কিন্তু এক-এগারোর সময় হঠাৎ করে তিনি সংস্কারপন্থী হয়ে যান এবং সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে তিনি তার বিশ্বস্ততার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেন। এখান থেকেই তিনি রাজনীতির বিচ্যুত ধারায় চলে যান। এরপর আমির হোসেন আমু আর আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক থাকেননি। প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও তার জায়গায় হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। যদিও ২০১৪ সালের মন্ত্রিসভায় তাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর তিনি রাজনীতিতে তার গুরুত্ব হারান। তবে গত ছয়-সাত মাসে আমির হোসন আমু আবার লাইমলাইটে এসেছেন। দেখার বিষয় যে, জীবন সায়াহ্নে এসে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন কিনা।

আমির হোসেন আমু  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

‘ধোঁকা’ ধাক্কায় গর্তে বিএনপি

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিনকে যখন স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল, তখন কে জানত তার বিএনএম কাহিনি। কে জানত তিনি বিএনপি ছেড়ে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে অভিযুক্ত হতে যাচ্ছিলেন। সাকিব আল হাসানের মতো ক্রিকেট তারকাকেও তিনি বিএনএমে ভিড়িয়েছিলেন। এখন মেজর (অব.) হাফিজ অনেক কিছুই বলতে পারেন। কিন্তু সবকিছুর পরও একটি কথা সত্যি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে (বিএনএম) তার যাওয়ার একটি প্রক্রিয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া বহু দূরে এগিয়েছিল।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত ছবি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এ ঘটনা মেজর (অব.) হাফিজ বেমালুম চেপে গিয়েছিলেন। মেজর হাফিজ এখন যা বলছেন, বিষয়টি যদি তেমনি সাদামাটাই হতো, তাহলে সাকিব নাটক তিনি এতদিন গোপন করতেন না। তিনি যদি তখন এটাকে ‘সরকারের চক্রান্ত’ মনে করতেন, তাহলে তখনই তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দিতেন সরকার তাকে কেনার চেষ্টা করছে। সরকারকে বেইজ্জত করার এমন সুযোগ তিনি হাতছাড়া করবেন কেন? এ নিয়ে হৈচৈ করে তিনি বিএনপিতে তার অবস্থান পোক্ত করতেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে বিএনএম কেলেঙ্কারি, সাকিবের সঙ্গে ফটোসেশনের ঘটনা গোপন কুঠিরে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

এখন যখন দুষ্ট লোকেরা তার এসব গোপন প্রণয়ের দুর্লভ ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে তখন মেজর (অব.) হাফিজ এসবকে চক্রান্ত বলছেন। এখন কেন? যখন এসব খেলা চলছিল তখন কেন হাফিজ মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন? হাফিজ উদ্দিন যখন বিদেশ থেকে এসে স্বল্পমেয়াদে কারাবরণ করে ‘পবিত্র’ হলেন, তখন বিএনপি নেতাদের উল্লাস চাপা থাকেনি। বিএনপির নেতারা মনে করলেন বিএনপিতে আরেক খাঁটি সোনা পাওয়া গেল। নবরূপে আত্মপ্রকাশের পর নব্য জ্যোতিষীর মতো তিনি ঘোষণা করলেন, বিএনপি নাকি খুব শিগগির ক্ষমতায় আসছে। অল্পদিনের মধ্যে সরকার পতনের বিষয়টিও তার জ্যোতিষী বিদ্যায় ধরা পড়ল। বিএনপির আধমরা নেতাকর্মীরা খানিকটা হলেও উদ্ভাসিত হলেন। আবার কিছু একটা হবে, এই স্বপ্ন দেখা শুরু করলেন বিএনপির হতাশাগ্রস্ত কর্মীরা। নির্বাচনের আগে হাফিজ উদ্দিন কী বলেছিলেন, তা ভুলে গেলেন অনেকে।

আসুন একটু পেছনে ফিরে যাই। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিএনপির আন্দোলনের কৌশলের সমালোচনা করেন। বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তও সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন। মেজর (অব.) হাফিজের ইউটার্ন যে দেনা-পাওনার হিসাব না মেলাজনিত, এটা বুঝতে সাকিবের সঙ্গে বিএনপি এই নেতার ছবি ভাইরাল হওয়া পর্যন্ত বিএনপির কর্মীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। ওই ছবি প্রকাশের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা অনুধাবন করতে পারলেন যে, তারা মেজর (অব.) হাফিজের কাছে ধোঁকা খেয়েছেন। ধোঁকা যে শুধু বিএনপি খেয়েছে এমন নয়। মেজর (অব.) হাফিজও ‘ডাবল’ ধোঁকা খেয়েছেন। প্রথম ধোঁকা হলো, যে প্রলোভনে তাকে কিংস পার্টিতে ভেড়ানোর কথা ছিল, শেষ পর্যন্ত সেই উপঢৌকন তাকে দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় ধোঁকা, বিএনপিতে আবার যখন তিনি জাঁকিয়ে বসতে শুরু করলেন, তখনই গোপন তথ্য ফাঁস করে দিয়ে তাকে বেইজ্জত করা হলো। বিএনপির জন্য এ ঘটনা ছোট ধোঁকা। গত কুড়ি বছর ধোঁকায় ধোঁকায় জর্জরিত বিএনপি। বারবার ধোঁকা খেতে খেতে দলটি রীতিমতো গর্তে পড়েছে। ভুল লোককে বিশ্বাস করে বিএনপি ধোঁকা খেয়েছে। ভুল বন্ধুকে বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছে। মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে বিএনপি বিপর্যস্ত হয়েছে।

২০০১ সালের অক্টোবরে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ভূমিধস বিজয় লাভ করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির নেতারা ঘোষণা দিয়েছিলেন, আগামী ৪২ বছর আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ অচিরেই মুসলিম লীগে পরিণত হবে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে বিএনপি নানামুখী পদক্ষেপ নেয়। প্রধান বিচারপতির চাকরির বয়সসীমা বাড়াতে সংবিধানে সংশোধন করে। ভোটার তালিকায় দেড় কোটি ভুয়া ভোটারের নাম সংযোজন করে। ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন তার পুত্রের পরামর্শে সাতজনকে ডিঙিয়ে মঈন ইউ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেন। মঈন ইউ আহমেদ বিএনপিকে চিরস্থায়ী ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য করবে, এমন ভাবনা থেকেই তাকে সেনাপ্রধান করা হয়। কিন্তু এই জেনারেল বিএনপিকে এমন ধোঁকা দেয় যে, দলটির কোমরই ভেঙে যায়।

এখনো ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘ ১৭ বছর থাকা দলটি সেই ভাঙা কোমর আর সোজা করতে পারেনি। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে প্রথমে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু এরকম ব্যক্তিত্ববান রাষ্ট্রপতি বিএনপির পছন্দ নয়। বিএনপি বেছে নিল পদলেহী একান্ত অনুগত ব্যক্তিত্বহীন ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মতো রাষ্ট্রপতি। অধ্যাপক বদরুদ্দোজাকে সরিয়ে ইয়াজউদ্দিনের মতো জি হুজুর মার্কা রাষ্ট্রপতি বানিয়ে বিএনপি খুশিতে আত্মহারা। এরকম একান্ত বাধ্যগত রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান ক্ষমতার সুবাস পেতে শুরু করলেন। কিন্তু ইয়াজউদ্দিন তাদের ধোঁকা দিলেন। বড় ধোঁকা। এই ধোঁকায় বিএনপির সাজানো বাগান তছনছ হয়ে গেল। বিএনপি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইয়াজউদ্দিনের মতো ব্যক্তিত্বহীনরা যে কঠিন সময়ে কোনো সাহায্য করতে পারে না, এটা বুঝতে বিএনপি অনেক দেরি করে ফেলেছিল। বিএনপির ‘ধোঁকা’ গল্পের এখানেই শেষ নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর দলটি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে পাঁচ সিটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। এ সময় ব্যাকফুটে থাকা আওয়ামী লীগ, নির্বাচনকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে বিএনপি। সিটি নির্বাচনে বিপুল সাফল্যের পর বিএনপি কেন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করল? সেই ‘ধোঁকা’। বিএনপিকে কেউ কেউ বুঝিয়েছিল, কোনোভাবেই নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। নির্বাচনে না গেলেই সরকারের পতন ঘটবে। একতরফা নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। ব্যস। নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার খোয়াব দেখে, বিএনপি আন্দোলন শুরু করল। অগ্নিসন্ত্রাস, গাড়ি ভাঙচুর, গান পাউডার দিয়ে গণপরিবহনে আগুন দিয়ে একটা ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করল। জাতীয় পার্টিও মনে করল, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন হবে না। এরশাদও নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেন। রওশন এরশাদ থাকলেন নির্বাচনের পক্ষে। ১৫৩ আসনে বিনা ভোটে নির্বাচিত হলেন সংসদ সদস্যরা। কিন্তু সরকারের পতন হলো না। আওয়ামী লীগ দিব্যি পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করল।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এক বছর পর আবার ধোঁকা খেল বিএনপি। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার অবরোধের ডাক দিলেন খালেদা জিয়া। তিনি নিজেও ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অবস্থান করে তিনি ধমক দিলেন, গাড়ি পোড়ালেন, বোমাবাজি আর আগুন সন্ত্রাস করে জনজীবন বিপর্যস্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু জনগণ প্রত্যাখ্যান করল এই সহিংস রাজনীতি। একপর্যায়ে বিএনপির সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল সাধারণ জনগণ।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল এক-এগারো সরকারের সময়। ড. ফখরুদ্দিনের সরকার ২০০৭ সালে এই মামলা করে। বিএনপির আইনজীবীরা এই মামলা নিয়ে খালেদা জিয়াকে ধোঁকা দিলেন। বারবার মামলার তারিখ নেন, কথায় কথায় হাইকোর্টে যান। মামলাটি বিএনপির আইনজীবীরা এমন নাজুক জায়গায় নিয়ে যান যে, খালেদা জিয়ার শাস্তি পাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। ২০১৮ সালে মামলার রায়ের আগে তিনি লন্ডনে গেলেন পুত্রের সঙ্গে দেখা করতে। শুভাকাঙ্ক্ষী অনেকে পরামর্শ দিলেন মামলার রায় পর্যন্ত তিনি (খালেদা জিয়া) যেন লন্ডনেই অবস্থান করেন। রায়ে দণ্ড হলে একটা সমঝোতা করে দেশে ফেরার পরামর্শ দিলেন তারা। কিন্তু ধোঁকাবাজরা খালেদা জিয়াকে দিলেন ভুল পরামর্শ। তারা বললেন, দেশেই ফিরতে হবে। সরকার খালেদা জিয়াকে ৪৮ ঘণ্টাও জেলে রাখতে পারবে না। এর মধ্যেই সরকারের পতন ঘটবে। খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করলেই নাকি জনবিস্ফোরণ ঘটবে। খালেদা জিয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথা শুনলেন না, শুনলেন ধোঁকাবাজদের কথা। দেশে ফিরলেন। মামলার রায়ে দণ্ডিত হলেন। তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হলো টানা দুই বছর। বিএনপি একটা টুঁ শব্দ করতে পারল না। আইনি লড়াইয়েও খালেদা জিয়া হেরে গেলেন। ধোঁকাবাজদের খপ্পরে পরে খালেদা জিয়ার রাজনীতি আজ শেষ হয়ে গেছে। এখন খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আবেদন-নিবেদন হচ্ছে। তার ভাই সরকারের কাছে অনুকম্পা ভিক্ষা করছেন। বিএনপির আন্দোলন বা আইনি লড়াইয়ে নয়, সরকারের করুণায় খালেদা জিয়া এখন তার সব রাজনৈতিক অর্জন বিসর্জন দিয়ে ফিরোজায় থাকছেন। এই ধোঁকা বিএনপিকে কোমায় নিয়ে গেছে।

২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে ধোঁকা খেয়েছিল বিএনপি। আর ২০১৮ সালে ধোঁকা খায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি কোনো শর্ত ছাড়াই। এমনকি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও বিএনপি নেতারা উচ্চারণ করেননি সরকারের সঙ্গে সংলাপে। ওই নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করা হয়। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে লাথি দিয়ে বিদায় করে সারা জীবন ‘বঙ্গবন্ধু’র আদর্শে বিশ্বাসী ড. কামাল হোসেনকে নেতা মানে বিএনপি। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে। ওই নির্বাচনে মাত্র ছয় আসন পেয়ে লজ্জায় ডুবে যায় দলটি। বিএনপি নেতারাই বলেন, এটা ছিল স্রেফ ধোঁকা। আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে সাজানো নাটকে বিএনপিকে বলির পাঁঠা করা হয়েছিল, এমন কথা বিএনপি নেতারাই প্রকাশ্যে বলেন। ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে কীভাবে ধোঁকা দিল এ গল্প করে বিএনপি নেতারাই লজ্জায় মুখ লুকান।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর বিএনপি ‘তওবা’ করে। দলীয় সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়। ২০২১ সালের শেষ থেকে শুরু করে আবার আন্দোলন। এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির প্রতি সহানুভূতি দেখায়। আস্তে আস্তে পশ্চিমাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক গাঢ় হয়। বিএনপি নেতারা সকাল-সন্ধ্যা কূটনীতিকপাড়ায় ঘোরাঘুরি করেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রাতরাশ সারেন, নৈশভোজে যান ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দূতের বাসায়। বিএনপি ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। একতরফা নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবে না ইত্যাদি নানা আতঙ্ক বাণী চারদিকে উচ্চারিত হতে থাকে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, স্যাংশন ইত্যাদি নিয়ে চলে তুলকালাম তর্কবিতর্ক। বিএনপি নেতারা খুশিতে আত্মহারা। চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। অতি আত্মবিশ্বাসে ২৮ অক্টোবর সহিংস হয়ে ওঠে তারা। তারপর নির্বাচন। আবার ধোঁকা খায় বিএনপি। বিএনপি মনে করেছিল, একতরফা নির্বাচন করলেই মার্কিন অ্যাকশন শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞা আসবে। কিন্তু কোথায় নিষেধাজ্ঞা। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ সব দেশ অভিনন্দন বাণীতে ভরিয়ে তুলল নতুন সরকারকে। একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ জানাল বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী দেশ। বিএনপি ধোঁকা খেল আবারও। এবার ধোঁকায় একেবারে গর্তে পড়ে গেছে দলটি। উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বারবার কেন ধোঁকা খায় বিএনপি? এর কারণ একটাই, আদর্শহীন রাজনীতি এবং যে কোনো ধরনের ক্ষমতায় যাওয়ার উদগ্র বাসনা। বিএনপিতে যদি ন্যূনতম আদর্শ চর্চা থাকত, তাহলে এভাবে বারবার প্রতারিত হতো না। ভুল মানুষের হাত ধরে ভুল পথে পা বাড়াত না। আদর্শহীন রাজনীতির পরিণতির উদাহরণ বিএনপি।



লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com


বিএনপি   বিএনএম   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগে সুবিধাবাদীদের ভীড় এবং সাকিব

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ২২ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর এখন সবচেয়ে সুসময় কাটাচ্ছে। টানা ১৫ বছরের বেশী সময় ক্ষমতায়। বাঁধাহীন ভাবে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। মাঠে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করার মতো কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই। সংসদেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ। কোথাও আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কেউ নেই। আওয়ামী লীগের কোন চাপ নেই, নেই উৎকণ্ঠা। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলটি আরো নির্ভার। কিন্তু এই সুসময়ে আওয়ামী লীগের দিকে তাকালে একটু ভয়ও হয়। এই আওয়ামী লীগ কি সেই আওয়ামী লীগ? এই আওয়ামী লীগ কি জাতির পিতার আদর্শের দল? এই আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা কি শেখ হাসিনার মতো সবকিছু উজাড় করে দিচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের জন্য? নাকি আওয়ামী লীগকে এখন গ্রাস করছে সুবিধাবাদী, চাটুকাররা। আওয়ামী লীগে অতিথি পাখিদের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে দুঃসময়ের কান্ডারীরা? এই প্রশ্নগুলো নতুন করে সামনে এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বহুরূপী নেতা মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের ছবি দেখে। 

মেজর (অবঃ) হাফিজ নির্বাচনের আগে বিএনপি ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন এই তথ্য পুরোনো। বিএনএম নামে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা একটি কিংস পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের কথা ছিলো তার। এজন্য বিভিন্ন দলের লোকজনকে জড়ো করার কাজেও হাত দিয়েছিলেন বিএনপির এই নেতা। তারই অংশ হিসেবে সাকিব আল হাসানকে তার বাসায় ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন মেজর (অবঃ) হাফিজ। নতুন এই দলে যোগও দিয়েছিলেন সাকিব। তাদের যুগল বন্দী ছবিতে কাউকে দুঃখিত মনে হয়নি। দু’জনের কেউই ইচ্ছার বিরুদ্ধে ফটোফ্রেমে বন্দী হয়েছেন বলেও মনে হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হিসাব নিকাশ মেলেনি। দেনা পাওনার হিসেব না মেলায় মেজর (অবঃ) হাফিজ বিএনএমের নেতৃত্ব নেননি। সাকিবও ক্ষমতাহীন এই দলে গিয়ে নিজের সদ্য শুরু রাজনৈতিক ক্যরিয়ারকে বিসর্জন দিতে চাননি। সাকিব যখন বুঝতে পেরেছেন, আওয়ামী লীগই আবার ক্ষমতায় আসছে, তখন তিনি আওয়ামী লীগের দরজায় টোকা দিয়েছেন। নিজের ‘ব্রান্ড’ ভেল্যুকে কাজে লাগিয়ে এমপিও হয়েছেন। অন্য দিকে আদর্শহীন পতিত রাজনীতিবিদ হতে হতে ফিরে আসা মেজর (অবঃ) হাফিজ নিজেকে ‘বীরপুরুষ’ হিসেবে জাহির করার সুযোগ পেয়েছেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে স্বল্পমেয়াদে কারাবরণ করে, নিজের সুবিধাবাদী পাপস্খলন করেছেন। এরপর রীতিমতো ইউটার্ন নিয়ে তারেক বন্দনায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। ব্যারিস্টার শাজাহান ওমরের শূণ্য স্থান পূরণের জন্য বিএনপিতে একজন নির্লজ্জ তেলবাজ চাটুকার দরকার ছিলো। প্রয়োজন ছিলো একজন ভাঁড় জ্যোতিষীর। মেজর (অবঃ) হাফিজ এখন বিএনপির সেই ভাঁড় ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। যিনি জ্যোতীষ সাধনার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছেন বিএনপি খুব শীঘ্রই ক্ষমতায় আসছেন। হতাশার সাগরে ডুবে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরাও মেজর (অবঃ) হাফিজের কথায় ‘হতবাক’। নির্বাচনের আগে যে লোকটি, বিএনপির আন্দোলনের কৌশলের কট্টর সমালোচক ছিলেন। যিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনে না যাওয়ার বিএনপির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেন, তিনিই কিনা তারেকের ‘কাছের মানুষ’ হবার জন্য নিজেকে একজন রাজনৈতিক ক্লাউন হিসেবে উপস্থাপন করলেন। আমি মেজর (অবঃ) হাফিজকে নিয়ে কথা বলতে চাই না। ৭৫ এর পর বাংলাদেশে যে অপরাজনীতির ধারা সেই ধারার রাজনীতিতে মেজর (অবঃ) হাফিজের মতো বহু পরগাছা আবর্জনা তৈরী হয়েছে। রাজনীতি মানে যাদের কাছে স্রেফ ক্ষমতার হালুয়া রুটির হিস্যা পাওয়া। বিএনএমে তিনি যোগ দিন বা না দিন, তার লোভাতুর, ক্ষুধার্ত চেহারা জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। মেজর (অবঃ) হাফিজের মতো নিজের স্বার্থে রং বদল করা রাজনীতিবীদের কাছে শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে গিয়েছিলেন, একদা দেশে সেরা ক্রিকেট অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসান। কি চমৎকার! রতনে রতন চেনে। 

সাকিব অবশ্য বৈষয়িক হিসেব নিকেশে মেজর (অবঃ) হাফিজের চেয়ে পাকা খেলোয়াড়। ক্রিকেট কেবল খেলা নয়, এটি বড় লোক, ক্ষমতাবান হবার একটা ম্যাজিক সিড়ি-এই ভাবনার আবিষ্কারক সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটকে সামনে রেখে তিনি বহুমাত্রিক বাণিজ্যে নিজের বিপুল প্রতিভাকে জাতির সামনে দেখিয়েছেন। কুমিরের ব্যবসা থেকে সোনা। হোটেল ব্যবসা থেকে কসমেটিকস সব জায়গায় তার বিচরণ। যে ক্রিকেট তাকে সবকিছু দিয়েছে, সেই ক্রিকেটকেই তিনি উপেক্ষা করেছেন নিজের আখের গোছোতে। এরকম সুবিধাবাদীরা ভয়ংকর। যেকোন রাজনৈতিক দলের জন্যই বিপদজ্জনক। এই ঝুঁকিপূর্ণ প্রচন্ড উচ্চাভিলাষী তরুণকে আওয়ামী লীগ আলিঙ্গন করেছে। মনোনয়ন দিয়েছে এবং এমপিও বানিয়েছে। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় নিয়ে কোন সংশয় ছিলো না। আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ ছিলো ভোটার উপস্থিতি, উৎসব মুখর, বিতর্কহীন নির্বাচন। এই নির্বাচনে সাকিবের মতো এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি করা ব্যক্তি কতটা প্রয়োজন, সে এক প্রশ্ন বটে। অনেকে বলবেন, গ্লামার বাড়াতে সাকিব, ফেরদৌস এর মতো তারকাদের নির্বাচনের মাঠে দরকার ছিলো। এতে সাধারণ মানুষের নির্বাচনের ব্যাপারে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু তথ্য উপাত্ত এই বক্তব্য সমর্থন করেনা। 

চিত্রনায়ক ফেরদৌসের ধানমন্ডি আসনের চেয়ে অনেক বেশী ভোট পেয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক তার মোহাম্মদপুর আসনে কিংবা বাহাউদ্দিন নাছিম মতিঝিলে। মাগুড়াতেও সাকিব কোন ভোট বিপ্লব করতে পারেন নি। বরং নির্বাচনের পর সাকিবকে ঘিরে নিত্য নতুন বিতর্ক তৈরী হচ্ছে। তার বোন একটি বেটিং অ্যাপের মালিকানায় আছে, এমন সংবাদ নিয়ে কদিন হৈ চৈ হলো। এর রেশে কাটতে না কাটতেই তখন সাকিব-হাফিজের বিএনএম কেলেংকারী। কেউ কেউ বলেছেন, সাকিব নাকি তারেকের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। এটা নিশ্চয়ই রটনাকারীদের অপপ্রচার। তবে, সাকিব যখন থেকে জন পরিচিতি পেয়েছেন, তখন থেকে তার মধ্যে এক লোভাতুর অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। বিত্ত, বৈভব ক্ষমতা, নাম যশের জন্য সাকিব সবকিছু করতে পারেন-এরকম একটা ভাবমূর্তি সাকিব তৈরী করেছেন। তাকে কখনো মাশরাফি বিন মর্তুজার মতো আদর্শবান, নীতিবান একজন ব্যক্তিত্ব মনে হয়নি। আওয়ামী লীগে এখন সুবিধাবাদীদের জন্য দরজা যে খুলে দেয়া হয়েছে, সাকিবের সংসদ সদস্য হওয়া তার প্রমাণ। 

মেজর (অবঃ) হাফিজ-সাকিব কান্ডের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন, তা আরো উদ্বেগজনক এবং আতংকের। সাকিব কান্ড নিয়ে যখন মিডিয়ার তোলপাড় তখন ওবায়দুল কাদের বললেন, মনোনয়ন পাবার আগে সাকিব আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এর আগে সাকিব কি করেছেন, সেটি নাকি তার (আওয়ামী লীগের) দেখার বিষয় না। কি সাংঘাতিক কথা! তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীদের আত্মীয় আত্মীয় স্বজন, জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করলেই সেই ব্যাক্তি পূত-পবিত্র হয়ে যাবেন? লুটেরা, দুর্নীতিবাজ অর্থ-পাচারকারীরা অবলীলায় আওয়ামী লীগে ঢুকে যেতে পারবেন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য কি দলটি নীতি-আদর্শিক অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক নয়? 

আওয়ামী লীগে অবশ্য সাকিবের মতো সুবিধাবাদীদেরই ভীড় এখন বেশী। তারাই এখন ক্ষমতার মধু খাচ্ছেন। হালুয়া-রুটির ভাগ বাটোয়ারাতেও তাদের হিস্যা বেশী। সাকিব জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে আসন থেকে জয়ী হয়েছেন সেটির আগের এমপি ছিলেন একজন ত্যাগী পরীক্ষিত তরুন। যার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের দুঃসময় কষ্ট করেছে, সংগঠনকে আগলে রাখার জন্য অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। ঐ তরুণের রাজনৈতিক জীবনে কোন বিচ্যুতি নেই। আদর্শ থেকে সরে আসেননি কখনো। এমনকি এবার নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়েও প্রতিবাদ করেননি বিনয়ী এই রাজনীতিবিদ। কারো কাছে প্রশ্ন করেন নি-‘কি আমার অপরাধ’? উন্মুক্ত নির্বাচন সত্বেও অনেকের মতো স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনে প্রার্থী হননি। এই তরুণ বয়সে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতিতে আদর্শ নিয়ে টিকে থাকাই আসল জয়। কিন্তু সাকিবের মতো সুসময়ের অতিথি পাখিদের কাছে আপাততঃ কোণঠাসা, দুঃসময়ের যোদ্ধা শিখর’রা। এটি শুধু মাগুরার এই আসনের চিত্র নয়। সারা দেশে এরকম বহু ত্যাগী সংগ্রামী, দুঃসময়ে দলের জন্য সবকিছু উজাড় করা আদর্শবান নেতা কর্মীরা আজ উপেক্ষিত। আওয়ামী লীগের সুসময় তারা পরিত্যন্ত। অনাহুত। অপাংক্তেয়। তাহলে কি আওয়ামী লীগের আদর্শবানরা শুধু দুঃসময়ে নির্যাতিত হবার জন্য? দলকে বাঁচাতে জীবন, যৌবন বিসর্জন দেয়ার জন্য? সুসময়ে তারা থাকবেন রিজার্ভ বেঞ্চে। বুক ভরা দুঃখ চেপে শুধু নীরবে গুমড়ে কাঁদার জন্যই কি আওয়ামী লীগের আদর্শবানদের দরকার? 

ইতিহাস বলে, সুবিধাবাদী, চাটুকাররা দুঃসময়ে থাকে না। বঙ্গবন্ধুকে যারা স্তুতির বন্যায় ভাসিয়ে রাখতো তারা ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর দলের পাশে দাঁড়ায় নি, প্রতিবাদ করেনি। সাকিবের চেয়েও বড় তারকা ড. কামাল হোসেন ৭৫ এর পর কি করেছে, ইতিহাস তার সাক্ষী। ৯১ এর দুঃসময়েও ভাড়াটে সুবিধাবাদীরা সটকে পড়েছে। এক-এগারোর সময় আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদীরা তারকারা ভোল পাল্টাতে সময় নেয়নি। প্রয়াত জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফ, মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, ব্যরিস্টার শফিক আহমেদের মতো উপেক্ষিতরাই আওয়ামী লীগ সভাপতির পাশে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে দল রক্ষায় সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন তেল চিটচিটে পাঞ্জাবী আর রং চটা মুজিব কোট পরা নির্ভীক তৃণমুল। যাদের গায়ে ঘামের গন্ধ, কাঁদা মাটি মাখা গায়ে রক্ত ঝরিয়ে তারাই বঙ্গবন্ধুর কথা বলেছেন, শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার দুঃসময়ে তারাই আওয়ামী লীগকে রক্ষায় রুখে দাঁড়াবে। তাহলে সুসময়ে কেন সুবিধাবাদীরা লুটেপুটে খাবে? আরেকটি দুঃসময় ডেকে আনার জন্য? এই স্বস্তির সুসময়ে আওয়ামী লীগ কেন মূল্যায়ন করে না দুঃসময়ের কান্ডারীদের?   

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের অনাহূতরা

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী তারা। ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। কঠিন সময়ে লড়াকু ভূমিকা পালন করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে তাদের কখনও পিছপা হতে দেখা যায়নি। আদর্শের প্রশ্নে তারা কখনও আপস করেননি। কিন্তু তারপরেও আওয়ামী লীগে অনাহূত। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারা জায়গা পান না, এমপি হতে পারেন না। মন্ত্রিসভা তো অনেক দূরের কথা। অথচ তাদের চেয়ে কম উজ্জ্বল নেতারা এখন মন্ত্রী হয়েছেন, এমপি হয়েছেন। দলে এবং সরকারে প্রভাবশালী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাদের কি অপরাধ কেউ জানে না। অথচ কর্মীদের মধ্যে তাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়েই তারা থাকতে চান এবং আওয়ামী লীগের পরিচয় নিয়ে তারা গর্ববোধ করেন। হৃদয়ে ক্ষোভ হতাশা থাকলেও মুখে তাদের হাসি থাকে। তারা তাদের দুঃখ হতাশার কথা কাউকে বলেন না।

এরকম ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের কথা সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য তাদের মধ্যে রয়েছেন;

লিয়াকত শিকদার: লিয়াকত শিকদার ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী। দুঃসময়ে একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছিলেন। শেখ হাসিনার প্রশ্নে তাকে কখনও আপোষ করতে দেখা যায়নি। কর্মীদের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু তারপরেও লিয়াকত শিকদার আওয়ামী লীগে অনাহূত।

ইসহাক আলী খান পান্না: ইসহাক আলী খান পান্না ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সভাপতি এনামুল হক শামীম মন্ত্রী-এমপি হলেও ইসহাক আলী পান্নার কপালে কিছু জোটেনি। কি তার অপরাধ কেউ বলতে পারে না। 

মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী: মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। একজন পরিচ্ছন্ন মেধাবী ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে তার যথেষ্ট সুনাম ছিল। কিন্তু মাঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী এখন অপাংক্তেয়। তাকে কোথাও দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও তিনি নেই। সংসদ সদস্য হিসেবেও তার তিনি জায়গা পাননি। আর মন্ত্রী হওয়া তো অনেক দূরের কথা। মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরীর অপরাধ কি কেউ বলতে পারে না। তার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছিল, তার যারা অনুগত কর্মী ছিল তাদেরও কেউ কেউ এখন মন্ত্রী হয়েছেন, অনেকেই এমপি হয়েছেন। কিন্তু মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী সেই জায়গাতেই রয়ে গেছেন।

বাহাদুর বেপারী: আওয়ামী লীগের আরেকজন মেধাবী ছাত্র নেতার নাম বাহাদুর বেপারী। বিভিন্ন সময় তার মেধা এবং যোগ্যতা নিয়ে ছাত্রলীগের মধ্যে চর্চা হয়। ছাত্রলীগের যে কয়েকজন মেধাবী নেতা এসেছিলেন, তাদের মধ্যে বাহাদুর বেপারী অন্যতম। কিন্তু বাহাদুর বেপারীও এখন আওয়ামী লীগের মূল রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছেন। তিনিও এখন প্রায় অনাহূত। তাকে নিয়েও এখন আওয়ামী লীগের মধ্যে খুব একটা চর্চা হয় না। বাহাদুর বেপারী ভবিষ্যতের রাজনীতিতে বড় ধরনের লিড পাবেন বা তার তিনি পাদপ্রদীপে আসতে পারবেন এমনটিও মনে করেন না অনেকে।

অজয় কর খোকন: অজয় কর খোকনও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী এবং কঠিন সময়ে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু অজয় কর খোকনও এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অপাংক্তেয়। তার কমিটিতে থাকা অনেকেই আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু অজয় কর খোকন যেন পরিত্যক্ত বাসের মতো আওয়ামী লীগে অপাংক্তেয় হয়ে আছেন।

দুঃসময়ের এসমস্ত ছাত্রলীগের নেতাদেরকে কেন টেনে তোলা হচ্ছে না, কেন তারা পরিত্যক্ত অবস্থায়, অনাহূত অবস্থায় আছেন এটি আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি বড় প্রশ্ন। তবে এদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও যারা ছাত্রলীগ করে এসেছেন, এখন ভালো জায়গায় আছেন তারাও খুব একটা কথা বলতে রাজি হননা। কারণ পাছে তাদের নিজেদের সুবিধাগুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কেউই এ সমস্ত অনাহূত, ত্যাগী, পরীক্ষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের জন্য কথা বলতে আগ্রহী নন। কেন? সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন।

আওয়ামী লীগ   ছাত্রলীগ  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

ড. ইউনূস জেলে যাবেন কবে?

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

ড. ইউনূসের মামলা এবং তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত নিয়ে এখন আলোচনা চলছে নানা পর্যায়ে। এই সমস্ত আলোচনার মোদ্দা কথা যেটা বেরিয়ে আসছে সেটা হল শেষ পর্যন্ত হয়তো ড. ইউনূসকে জেলে যেতেই হবে। এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ড. ইউনূস জেলে যাবেন কবে?

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসসহ গ্রামীণ টেলিকমের চার শীর্ষ কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্তকরণ অর্থাৎ কনভিকশন অর্ডার স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। হাইকোর্ট বলেছে, কোন মামলায় জামিন দেওয়া মানেই দণ্ড স্থগিত হয়ে যাওয়া। আর কনভিকশন বা দোষী সাব্যস্তকরণ কখনও স্থগিত করা যায় না। আর এই রায়ের মধ্য দিয়ে শ্রম আদালতের মামলাটি নতুন মাত্রা পেল এবং এটির একটি নতুন তাৎপর্য তৈরি হল। এই শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে আরও কিছু মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তাছাড়া হাইকোর্টেও ড. ইউনূস যে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। কাজেই হাইকোর্ট যদি শেষ পর্যন্ত ড. ইউনূসকে শ্রম আদালত যে দণ্ড দিয়েছে তা বহাল রাখে তাহলে তাকে আদালতে যেতে হবে। তাছাড়া হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন নিয়ে আছেন। এই জামিনের মেয়াদ রয়েছে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত। এই জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর ড. ইউনূসকে যদি আবার নতুন করে জামিন না দেওয়া হয় তাহলে তাকে জেলে যেতে হবে। 

শ্রম আদালতের এই মামলাটি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে চলতি বছরেই মাঝামাঝি সময় নাগাদ ড. ইউনূসের কারাবরণের ব্যাপারে একটি চূড়ান্ত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। কারণ যে ছয় মাসের দণ্ড এই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল এবং তার জামিন ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত বহাল। এই দুটির যে কোনো একটি পর্যায়ে শেষ পর্যন্ত হয়তো ড. ইউনূসের বিষয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সেই সিদ্ধান্তটি ড. ইউনূসের পক্ষে না গেলে তাকে কারাগারে যেতে হবে। 

তবে এটি ইউনূসের কারাগারে যাওয়ার একমাত্র উপলক্ষ্য নয়। ইতোমধ্যে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এই চার্জশিট দাখিলের পরও ড. ইউনূস আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। এখন এই জামিন যতদিন বহাল থাকবে ততদিন অর্থপাচার মামলায় ড. ইউনূসকে কারাগারে যেতে হবে না। কিন্তু যে কোন কারণে যদি এই জামিন বাতিল হয়ে যায় তাহলে এই অর্থ পাচার মামলাতেও ড. ইউনূসকে কারান্তরীণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অন্য যে মামলা গুলো আছে সেগুলো মূলত আয়কর ফাঁকি দেওয়ার মামলায় এবং টাকা ট্যাক্স এর টাকা পরিশোধের মামলা। যে মামলাগুলোতে ইউনূস পরাজিত হচ্ছেন সে মামলাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি আদালতে দিচ্ছেন। যদিও এখন আদালতে রায়ের পর তার আয়কর ফাঁকির অর্থ পরিশোধ করতেও তিনি উস্ম প্রকাশ করছেন। কিন্তু এই মামলাগুলোতে তার কারাগারে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। মূলত দুটি মামলায় ড. ইউনূসের কারাগারে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তা খুব শিগগির বোঝা যাবে। একটি হল শ্রম আদালতে তার যে দণ্ড হয়েছে সেটি এবং অন্যটি অর্থপাচার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলা। এখন দেখার বিষয় যে এই সমস্ত মামলা থেকে জামিন নিয়ে ড. ইউনূস কতদিন বাইরে থাকেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস   শ্রম আদালত   হাইকোর্ট  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন