রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফর করার কথা ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তের এই সফর বাতিল করা হয়েছে। সফর বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যুদ্ধ নিয়ে তিনি অত্যন্ত ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। সফর বাতিল করলেও তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল কাঙ্ক্ষিত জাপান সফর গতকাল স্থগিত হয়েছে। এই সফর স্থগিত হবার কোনো কারণ বলা হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন যে, তারিখ পুন:নির্ধারণ করা হবে।
পরপর দু’টি সফর বাতিল কেবল কি কাকতালীয় নাকি এর পেছনে কোনো কূটনৈতিক ব্যর্থতা রয়েছে? বিশেষ করে এমন এক সময় এই দু’টি সফর বাতিল হলো যখন বাংলাদেশ কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকটাই একাকীত্বে ভুগছে এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা করার জন্য সমর্থন এবং সহযোগিতা দরকার। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশে আসার কথা ছিলো একটি সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য। তার সফর সূচিও চূড়ান্ত হয়েছিলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার বৈঠকের কথা ছিলো। দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করার কথা ছিলো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের অনেক ইতিবাচক অর্জন হতো যেটি বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং কূটনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারতো। কারণ রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান গম উৎপাদনকারী দেশ। তাছাড়া রাশিয়া থেকে জ্বালানি আনার বিষয়টিও সরকার বিবেচনা করছিলো। এরকম প্রেক্ষাপটে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ হয়তো খাদ্য সহায়তা এবং জ্বালানি সহায়তার ক্ষেত্রে কিছু ছাড় পেতো। তাছাড়া এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদশের মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব আরেকটু প্রগাঢ় হতো। যেটা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বাংলাদেশের জন্য ভারসাম্য রক্ষায় কাজে লাগতো। কিন্তু যুদ্ধের কারণে শেষ পর্যন্ত সফরটি বাতিল হয়েছে।
তবে, একাধিক কূটনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন এই সফর বাতিল সাপে বর হয়েছে। কারণ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এই সময় বাংলাদেশ সফর করতো তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ আরও বাড়াতো। কারণ রাশিয়ার ওপর এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত কোন আন্তর্জাতিক ফোরামেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেয়নি। এটা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের এক রকম অস্বস্তি রয়েছে। অনেকে মনে করেন বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলো কিছুটা অসন্তুষ্ট বটে। তাই রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি বাংলাদেশ সফর করতো এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা পেতো তবে দুই দেশের সম্পর্কের প্রগাঢ়তা পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশ্যে একটা ভুল বার্তা দিতো। সেদিক থেকে সফর না হওয়াটাই মন্দের ভালো হয়েছে। এখানে বাংলাদেশ কূটনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘদিনের পরীক্ষীত বন্ধু ও সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক মিত্র। যতবারই প্রধানমন্ত্রী জাপানে গিয়েছেন, ততবারই কিছু না কিছু এনেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে জাপানের সহায়তা সর্বজন বিদিত। এরকম একটি সময়ে জাপান সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার পর জাইকা থেকে ঋণ প্রাপ্তি এবং বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রকল্পে জাপানের সহায়তা প্রাপ্তিটি বাংলাদেশের এই সংকটের জন্য ইতিবাচক হতো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জাপান সফর করার আগেই জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচন সম্পর্কে একটি মন্তব্য করেন। এই মন্তবের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অত্যন্ত ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এর সমালোচনা করেন। পররাষ্ট্র সচিব জাপানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তার সাথে কথা বলেন। এরকম একটি প্রেক্ষাপটের মধ্যে হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর বাতিল হওয়ার পেছনে অন্য কোন কারণ আছে কি না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে, কূতনৈতিকরা বলছেন যে, জাপান সফর বাতিল হয়নি বরং পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই একটি নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জাপান সফর স্থগিত করা হয়েছে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যগত কারণে। কারণ সেখানে করোনার প্রকোপ হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান যাওয়াটা নিরাপদ নয় বিবেচনা করে সফর পেছানো হয়েছে। কাজেই এই দু’টি সফর বাতিল বাংলাদেশের কূটনীতির জন্য কোন বিপর্যয় নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে বলেও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানক ড. হাছান মাহমুদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।
আওয়ামী লীগে নীরবে নিভৃতে পালাবদল ঘটছে। এক সময় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা মানে ছিলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ সেলিম, মতিয়া চৌধুরী। এখন তাদের অধ্যায় আস্তে আস্তে যবনিকা ঘটেছে। শারীরিক ভাবে তারা অনেকেই অসুস্থ। অনেকে এখন রাজনীতিতে অপাঙ্ক্তেয় হয়ে গেছেন। বরং একটি নতুন প্রজন্মকে আওয়ামী লীগ সভাপতি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদেরকে নীতি নির্ধারক হিসেবে জায়গা করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এই পালাবদলটি শেখ হাসিনার দূরদর্শী রাজনীতির একটি অংশ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
বাংলাদেশে এখন সংবাদপত্রের লোডশেডিং চলছে। গত বুধবার থেকে সংবাদপত্র বের হচ্ছে না। টানা ৬ দিন সংবাদপত্র বন্ধের বিশ্ব রেকর্ড করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। না কোন প্রতিবাদে নয়, দাবী আদায়ের জন্য নয়। ছুটির ফাঁদে সংবাদপত্র বন্ধ আছে। সংবাদপত্রকে বলা হয় জরুরী সেবা। চিকিৎসক, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা যেমন জরুরী সেবা দেন, তেমনি সংবাদকর্মীদের কাজও হলো দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে সঠিক, বস্তুনিষ্ঠ তথ্য দেয়া। বিশেষ করে ছুটির সময় এটার প্রয়োজন আরো বেশী। এবার দেশে একটা দীর্ঘ ছুটি। এসময় সংবাদপত্র অনেক জরুরী। আচ্ছা ভাবুন তো, ছয়দিন যদি হাসপাতালে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি বলতো ছয়দিন তারা দায়িত্ব পালন করবে না। তাহলে কি হতো? আমিতো মনে করি, সংবাদপত্র বন্ধ রাখার বিষয়টিও তেমনি আঁতকে ওঠার মতো। কিন্তু সংবাদপত্রের মালিকদের এনিয়ে বিকার নেই।
প্রথম তিন মাস বর্তমান সরকারের জন্য ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বিরোধী দল অংশগ্রহণ না করার ফলে এই নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হয়, নির্বাচনের পর কী ধরনের প্রভাব এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় সেটি ছিল সকলের কাছে একটি দেখার বিষয়। তবে সরকার প্রথম তিন মাসে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সংকট গুলোকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছি। এখন পর্যন্ত সরকারের চেষ্টা নিয়ে সাধারণ মানুষের কোন রকম অভিযোগ নেই।
তোফায়েল আহমেদ কি রাজনীতিতে এক অস্তমিত সূর্য? তিনি কি নিভে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে তিনি কি নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন—এমন প্রশ্নগুলো এখন খুব বড় করে সামনে এসেছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে যারা তোফায়েল আহমেদকে দেখেছেন তারা আগের তোফায়েল আহমেদের ছায়াকেও দেখতে পারেননি। যে তোফায়েল আহমেদ ছিল সরব, যার ভরাট কণ্ঠস্বরে জাতীয় সংসদ প্রকম্পিত হত, যিনি সবসময় সবাইকে চমকে দিতেন বিভিন্ন দিন তারিখের হিসেব মুখস্থ বলে দিয়ে, যার সবসময় শত শত টেলিফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ থাকত, যা স্মৃতিশক্তি নিয়ে সকলে প্রশংসা করত, রাজনীতিতে যিনি একজন যুবরাজের মত পদচারণা করতেন, নানা রকম বিতর্কের পরও তিনি স্বমহিমায় উজ্জ্বল ছিলেন সেই তোফায়েল আহমেদ এখন কোথায়?