এডিটর’স মাইন্ড

অভিযান শুরু হলেই, দুর্নীতিবাজরা ‘নিখোঁজ’ হয়

প্রকাশ: ১০:৩০ পিএম, ২৮ জুন, ২০২৪


Thumbnail

ছোট বেলায় অনেকগুলো প্রবাদের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম। ইংরেজি অনুবাদ করার জন্য কিছু পরিচিত বাক্য দেয়া হতো। সে বাক্যগুলো ছিলো বেশ মজার। ছোট বেলার দুষ্টুমি ভরা অবসরে সে বাক্যগুলো নিয়ে নানারকম চর্চা হতো। ‘ডাক্তার আসিবার পূর্বে রোগী মারা গেল’ এমন বাংলার ইংরেজি কি হবে তা নিয়ে শিক্ষকের কানমলা খায়নি এমন বালক খুবই কমই ছিলো আমাদের সময়। সেসময় বিভিন্ন প্রবাদের সঙ্গেও আমাদের পরিচিত ঘটেছিল। প্রবাদগুলোর মধ্যে আজ একটি বেশ মনে পড়ছে। প্রবাদটি হলো ‘চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে’। তবে, এখন যদি কেউ প্রবাদ-প্রবচন লেখেন তাহলে লিখতে পারেন ‘অভিযান শুরু হলেই দুর্নীতিবাজরা নিখোঁজ হয়।’ 

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক ধরনের জাগরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের পাতা জুড়ে দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্তদের অপকর্মের ফিরিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে। কার কত সম্পদ সেই হিসেব কষতে গিয়ে অনেকে হিমশিম খাচ্ছেন। একজন মানুষ এক জীবনে কীভাবে এতো সম্পদের মালিক হতে পারে তা নিয়েও অনেকের কপালে চোখ উঠে গেছে। কিন্তু এ সমস্ত দুর্নীতিবাজদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। কেউই আইনের আওতায় আসেনি। তারা এখন দূর দেশে অবস্থান করছেন। কেউ মাথা ন্যাড়া করে পালিয়েছেন, কেউ বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেখানে বহাল তবিয়তে নতুন পরিচয় নিয়েছেন। এখান থেকেই ধারনা করা যায়, দেশে তাদের যে সম্পদ ছিলো তা খুবই নগন্য, তুচ্ছ এবং এই পরিমাণ সম্পদ ফেলে দিলেও তাদের কোন ক্ষতি হতো না। বরং বিদেশে যে সম্পদ আছে সেই সম্পদই তাদের আসল সম্পদ। সেই সম্পদ থেকে জনগণের দৃষ্টি আড়ালের জন্যই তারা দেশে কিঞ্চিত সম্পদ রেখেছিলেন। বিদেশে পাচার করা অর্থ-সম্পদ দিয়ে তারা এবং তাদের চৌদ্দ পুরুষ আরাম আয়েশে খেতে পারবে। এখন তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

বেনজীরকে নিয়ে কথা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। প্রথমে ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকা বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ করে। তাও মাস তিনেক আগে। এই সংবাদ প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কিছুই করেনি। হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলো। যেন এধরনের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করাটা এক ধরনের অন্যায়। কেউ কেউ সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ধৃষ্টতার সীমা লঙ্ঘন করলো কিনা সে প্রশ্নও তুলেছিল। এনিয়ে কোন মহলেরই কোন ধরনের তৎপরতা না দেখে আমরা বিস্মিত হয়েছি। আমরা মনে করেছি, এটিও আর দশটি খবরের মতো একটি খবর, যে খবর কাউকে স্পর্শ করবে না, কাউকে তাড়িত করবে না। কিন্তু বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালো। প্রথমবারের এমপি ব্যারিস্টার সুমন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন। তিনি এব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত দাবি করলেন। ব্যারিস্টার সুমনের সাহসী উদ্যোগের ফলে হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিলেন, দুদক যেন দ্রুততম সময়ে এবিষয়টি তদন্ত করে। দুই মাস সময়ের মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেয়া হলো। হাইকোর্টের এই নির্দেশের পরই দুর্নীতি দমন কমিশন নড়ে-চড়ে বসলো। তাহলে দুদকের কাজটা কি? যখন কালের কণ্ঠে সিরিজ প্রতিবেদনগুলো প্রকাশিত হলো তখন কেনো দুর্নীতি দমন কমিশন চুপচাপ বসে থাকলো, তারা কেন কিছুই করলো না? দুর্নীতি দমন কমিশন কি চোখ-কান বন্ধ রেখে  কাজ করে? কারণ বেনজীর আহমেদের এই দুর্নীতির খবর সকলেই জানতো। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবার আগে থেকেই জানা ছিলো যে, চাকরী জীবনে বেপরোয়াভাবে লুণ্ঠন করেছেন সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা। তার প্রতারণা মূলক পরিচয়ে নেয়া একাধিক পাসপোর্ট জালিয়াতির খবরও দুর্নীতি দমন কমিশন রাখতে পারেনি। তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজটি কি সেটি একটি বড় প্রশ্ন। পাসপোর্ট অধিদপ্তর বা অন্যরাও কি ঘুমিয়েছিলো? যতক্ষণে দুর্নীতি দমন কমিশন নড়ে-চড়ে বসলো, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তদন্ত শুরু করলো। ততক্ষণে ‘চোর’ পালিয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন তার সম্পত্তি ক্রোক করলো। ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করলো। ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করে দেখা গেলো ব্যাংক একাউন্ট খালি। সব টাকা তিনি আগেই উঠিয়ে নিয়েছেন। এরপর শুরু হলো বেনজীর আহমেদকে সমনের নাটক। তাকে ডাকা হয় তিনি আসেন না। দুই বার দুর্নীতি দমন কমিশনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি লাপাত্তা হয়ে থাকলেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি জানতো না যে বেনজীর আহমেদ পালিয়ে গেছেন? প্রথমেই তাকে আইনের আওতায় আনা হলোনা কেন? তার বিদেশ যাবার পথ কেন বন্ধ করা হলোনা?

যা কিছু হচ্ছে তার সবই কি আসলে নাটক? বেনজীর আহমেদ যখন বুঝতে পেরেছেন তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে, তার অবৈধ সম্পদের খবর সকলেই জেনে ফেলেছে, তার গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছে তখন তিনি সটকে পরেছেন। শুধু সটকেই পরেননি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উঠিয়েছেন, সরিয়েছেন। হুন্ডির মাধ্যমে সেই টাকা তিনি বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন, স্বপরিবারে বিদেশেও চলে গেছেন। তাহলে দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কি করলো? তারা কি প্রকারান্তরে বেনজীরকে পালাতে সহযোগিতা করলো না? চোর পালিয়ে যাওয়ার পর এখন আলোচনা, উত্তেজনা, সাজ-সাজ রব করে কি হবে? এখন কি বেনজীরকে ধরা যাবে? বেনজীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে? বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে বেনজীর এখন তুরস্কে অবস্থান করছে। কেউ বলছেন, সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। কারও কারও মতে তিনি দুবাইয়ে । যেখানেই থাকুন না কেন তিনি বিদেশি পাসপোর্ট যে নিয়েছেন তা হলফ করেই বলা যায়। কারণ বেনজীর আহমেদ বিদেশি পাসপোর্ট এবং বিদেশি নাগরিকত্ব নেয়ার জন্যই তার চাকরি জীবনেও কখনো সরকারি পাসপোর্ট গ্রহণ করেননি। নিজের পেশাগত পরিচয় নিয়েও তিনি প্রতারণা করেছেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি জালিয়াতি করেছেন। সংশ্লিষ্ট সবাই শুধু তামাশা দেখেছে।

আমাদের দেশের পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে নিয়ে অনেক কথাই শুনি। কিন্তু এসব কথা আমলে নিতে ইচ্ছে করে না। পাসপোর্ট অধিদপ্তর কীভাবে একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাকে বেসরকারি চাকরিজীবি হিসেবে পাসপোর্ট দেয়। এই যদি হয় আমাদের ‘সিস্টেম’ তাহলে পুরো সিস্টেমটিই পঁচে গেছে, ঘুঁণে ধরে গেছে। এটা একটা ভয়ংকর ব্যাপার। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যপারে অনাস্থা তৈরি হবে। যা হচ্ছেও। 
মতিউরকে নিয়েও একই অবস্থা। ‘ছাগলকাণ্ডে’ মতিউর যখন হুংকার দিয়ে উঠলেন, বললেন ‘ইফাত আমার ছেলে নয়’ তখনই বোঝা গিয়েছিলো ‘ডালমে কুছ কালা হ্যায়’। মতিউরের নিশ্চয়ই অন্য কোন দুরভিসন্ধি আছে। এরপর মতিউরকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখা শুরু হলো। একসময় জানা গেল মতিউর রহমান দেশে নেই। কেউ বলছেন তিনি মাথা ন্যাড়া করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। কেউ বলছেন বহাল তবিয়তেই বীরের বেশে তিনি তার স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন। বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য তার কোন বাঁধা ছিলো না। কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একজন ব্যক্তিকে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রদান না করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি বিদেশে যেতে পারবেন। তবে সরকারি চাকরিজীবি বলে কথা। মতিউর রহমান যদি বিদেশে যেতে চান তাহলে তাকে সরকারের অনুমতি নিতে হবে, তার বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হতে হবে এবং সবচেয়ে বড় কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি বা কোন সরকারি কর্মচারীই বিদেশ যেতে পারবেন না। মতিউর রহমান সেরকম কোন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছেন বলে জানা যায়নি। তাহলে তো আমরা জানতাম। এতো বড় পদের একজন কর্মকর্তা সরকারের অনুমোদন ছাড়া যদি দেশ ত্যাগ করতে পারেন, তাহলে এদেশে সব সম্ভব।

বেনজীরের সাথে মতিউর রহমানের একটি মৌলিক পার্থক্য আছে। বেনজীর চাকরি থেকে অবসরে গেছেন। তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। তিনি যেকোন সময়, যেকোন ভাবে বিদেশ যেতে পারেন। তার বিদেশি পাসপোর্ট ছিলো বিদেশি পাসপোর্ট নিয়েও তিনি বিদেশে যেতে পারেন। কিভাবে তিনি বিদেশে গেছেন তা তদন্তের দায়িত্ব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। কিন্তু মতিউর রহমান একজন সরকারি চাকরিজীবি। উচ্চপদে আসীন ব্যক্তি। তিনি দেশত্যাগ করেন কিভাবে? তাহলে কি মতিউর রহমানও কি জালিয়াতি করে পাসপোর্ট গ্রহণ করেছিলেন? সেই পাসপোর্ট দিয়ে কি তিনি সটকে পড়েছেন? মতিউর রহমান যদি শেষ পর্যন্ত বিদেশ গিয়ে থাকেন তাহলে এটি হবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের আরেকটি পরাজয়। নাকি সরকারের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজরা তার পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করছে? এরকম দুর্বৃত্তরা যদি বিচারের আগে এভাবে দেশ থেকে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে সেক্ষেত্রে সেটি এটি খারাপ উদহারণ হবে। এধরনের খারাপ উদহারণ অবশ্য আমাদের সামনে আগেও এসেছে। পি কে হালদারের কথা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলো, পি কে হালদারের সম্পত্তি যখন ক্রোক করার নির্দেশ দেয়া হলো তার আগেই তিনি দেশত্যাগ করলেন। পরবর্তীতে তথ্য উদ্ধার করা হয় কিভাবে এবং কার সহযোগিতায় তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। পি কে হালদারের দেশত্যাগের বিষয়টি তাও জানা গিয়েছিল, কোন বর্ডার দিয়ে তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন সে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু বেনজীর এবং মতি যেন ‘ইনভিজিবল ম্যান’। তারা ‘অদৃশ্য মানব’ হয়ে গেছেন। তারা কিভাবে দেশত্যাগ করেছিলেন সে খবর কারো কাছে নেই। আমাদের দেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। এ দেশ থেকে একজন নাগরিকের বাইরে যেতে হলে সুনির্দিষ্ট কতোগুলো নিয়ম-কানুন মানতে হয়। সীমান্ত পার হতে গেলে ইমিগ্রেশনের শরণাপন্ন হতে হয়। তাহলে এই সবকিছু ফাঁকি দিয়ে বেনজীর-মতিউররা কিভাবে দেশত্যাগ করেন সেটি একটি বড় প্রশ্ন। নাকি একটি সংঘবদ্ধ চক্র দুর্নীতিবাজদের লালন করে বা দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে একটি যোগসূত্র রয়েছে বিভিন্ন মহলের। এখন যা হচ্ছে, বেনজীর ও মতিউরের সম্পদের হিসেব গ্রহণ করা বেনজীর-মতিউর রহমানের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা, তার বিদেশ যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা সে সবই সাজানো নাটক কিনা বা পাতানো খেলা কিনা তা প্রমাণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। কারণ যেসমস্ত ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদের বিবরণ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সেসমস্ত ব্যক্তিরা কেউই দেশে থাকছেন না। এ যেন এক অদ্ভুত ম্যাজিক। যখনই কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা যাচ্ছে দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা রয়েছে, তখনই তিনি ‘উধাও’ হয়ে যাচ্ছেন। এই উধাও কিভাবে হচ্ছেন, কারা করছেন ‘উধাও’ সেটি খুঁজে বের করা দরকার। কারণ একজন এরকম দুর্নীতিবাজ ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের জন্য অত্যন্ত জরুরী। না হলে কদিন পর মানবাধিকার ব্যবসায়ীরা দাবী করবেন বেনজীর-মতিকে গুম করা হয়েছে। গুম দিবসে তাদের ছবি দিয়ে পোষ্টার হবে। মতি এবং বেনজীররা যদি আইনের ফাঁক-ফোঁকড় দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যেতে পারে তাহলে অন্যদের মধ্যেও একই প্রবণতা দেখা যাবে। আরেকটি আতংকের দিক রয়েছে। এর ফলে অর্থ পাচার বাড়বে। যারা দুর্নীতিবাজ, যারা এখন বিপুল বিত্তের মালিক তারা দেশে সম্পদ কেনার দিকে আর মনোযোগী হবে না। সব টাকা বিদেশে পাচার করবেন। তারা বেনজীর এবং মতির পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন। তারা বুঝবেন যে, টাকা দেশে রাখলে বিপদ আছে, টাকাগুলো বাজেয়াপ্ত হতে পারে, দুর্নীতি দমন কমিশন তার হিসেব তলব করতে পারে। নানা রকম ঝুট ঝামেলা। এসব ঝুট-ঝামেলার থেকে টাকা সরিয়ে দিবেন তারা দুবাই, সিঙ্গাপুর অথবা মালয়েশিয়াতে, কিংবা বেগম পাড়ায়। ঝামেলা হলেই তারা সটকে পড়বেন নিরাপদ স্থানে। ইদানিং অনেক আমলা স্বেচ্ছা নির্বাসনে বিদেশে স্থায়ী হয়েছেন। এরা দাপুটে সচিব ছিলেন। এখন এদের কেউ কানাডা, কেউ ইংল্যান্ডে অবসরে বিলাসী জীবন কাটাচ্ছেন। দুর্নীতিবাজরা দেশ ত্যাগ করছেন, এ খবরে খুশী হতে পারছি না। কারণ তারা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের রত্ন ভান্ডার। মতি এবং বেনজীরের ঘটনা দুর্নীতিবাজদের নিরুৎসাহিত করবে না করছেও না। দুর্নীতিবাজদের বরং এটি উৎসাহিত করবে। দুর্নীতিবাজরা এখন মনে করছে টাকা লুণ্ঠন করে দেশে রাখা নিরাপদ নয়, বিদেশে পাচার করাটা সর্বোত্তম। আর এই সর্বনাশী তৎপরতার ফলে দেশের অর্থনীতির আরো বারোটা বাড়বে। ধরার আগেই যদি চোর পালিয়ে যায় তাহলে সেই চোর হয়ে উঠে বিপদজ্জনক। আমরা সেইরকম বিপদজ্জনক চোরদেরকে নিজের অজান্তে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি কিনা তা ভেবে দেখতে হবে আমাদেরকে। অন্তত একজন স্বীকৃত দুর্নীতিবাজের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। 
 
সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

উপসর্গ পুরোনো, লক্ষণ ভালো নয়

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০২ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের আগে দুর্নীতি নিয়ে হৈচৈ একটি প্রচলিত পদ্ধতি। ক্ষমতার পালাবদলের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে হাহাকার হয়। জনগণের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়। সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করার একটা চেষ্টা চলে। আন্দোলন বা ষড়যন্ত্র যেভাবেই সরকার বদল হোক, তার আগে দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য সন্ত্রাস ইত্যাদি ইস্যু বড় হয়ে সামনে আসে।

১৯৭৪ সালে সাজানো দুর্ভিক্ষ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, গণবাহিনীর পরিকল্পিত সন্ত্রাস আগস্ট ট্র্যাজেডির পটভূমি তৈরি করেছিল। সময় সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় ছিল খাদ্য সংকটের ফুলানো-ফাঁপানো খবর। কালোবাজারি, মজুতদারদের কাহিনি ছাড়া কোনো সংবাদপত্রই প্রকাশিত হতো না। সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ৭৪-এর জানুয়ারি থেকে ৭৫-এর আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি প্রতিটি বক্তব্যেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। ১৯৭৪ সালের ১৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার কৃষক, বাংলার দুঃখী মানুষএরা কিন্তু অসৎ নয়। ব্ল্যাক মার্কেটিং কারা করে? যাদের পেটের মধ্যে দুই কলম বিদ্যা হয়েছে তারাই ব্ল্যাক মার্কেটিং করে। স্মাগলিং কারা করে? যারা বেশি লেখাপড়া করেছে তারাই বেশি করে। হাইজ্যাকিং কারা করে? যারা বেশি লেখাপড়া শিখছে তারাই করে। ইন্টারন্যাশনাল স্মাগলিং তারাই করে। বিদেশে টাকা রাখে তারাই।

১৯৭৫-এর ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আপনারা একবার আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা দুর্নীতির ঊর্ধ্বে থাকব। প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা দুর্নীতিবাজদের খতম করব। প্রতিজ্ঞা করুন, আমরা দেশকে ভালোবাসব, দেশের মানুষকে ভালোবাসব।

কিন্তু সরকারের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজরা জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দেননি। আর কারণেই তিনি তাদের প্রতিহত করার উদ্যোগ নেন। কয়েকজন খারাপ লোক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে আরও দুর্দশাগ্রস্ত করেছিলেন। তাদের কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিবাজদের ষড়যন্ত্রের কাছেই পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঘটে ইতিহাসের বর্বরোচিত নারকীয় ঘটনা। সারা দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে, দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশজুড়ে অস্থিরতাএমন একটি আবহ সৃষ্টি করেই ৭৫-এর খুনি, ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছিল। আর অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণের পক্ষে তাদের যুক্তি ছিল দুর্নীতি, দুর্ভিক্ষ। গণতান্ত্রিক আন্দোলন বা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের আগে দেশে দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কারা বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮০ সালের শেষ দিক থেকেই শুরু হয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর সিমেন্টের মূল্য বৃদ্ধি হয়, সেপ্টেম্বর দাম বাড়ে গুঁড়া দুধের। ১৮ সেপ্টেম্বর রেশনে চিনির দাম বাড়ে ৫০ শতাংশ, অক্টোবরে নিউজপ্রিন্টের দাম বাড়ানো হয়। ১৯৮১-এর এপ্রিলে রেশনে চাল গমের দাম বাড়ে। লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে স্বৈরাচারের শক্ত শিকলও আলগা হয়ে যায়। ১৯৮০ সালে রংপুর কারাগারে বিদ্রোহ শুরু হয়, পরে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন কারাগারে। জিয়া নিহত হওয়ার অল্প দিন আগে ১৯৮১ সালের এপ্রিল দুর্নীতির দায়ে এক মন্ত্রী তিন প্রতিমন্ত্রীকে সরিয়ে দেন। এর পরই ঘটে চট্টগ্রামে সেনা অভ্যুত্থান। ১৯৮১-এর ৩০ মে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান নিহত হন। যেভাবে এবং যে পথে জিয়া ক্ষমতায় এসেছিলেন সেই পথেই তিনি বিদায় নেন।

জিয়াউর রহমানের বিদায়ের পর ক্ষমতায় আসে বিচারপতি সাত্তারের নেতৃত্বে বিএনপি সরকার। বিচারপতি সাত্তারের সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই শুরু হয় দুর্নীতির নানারকম আলোচনা। দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসের অভিযোগ আসে বিচারপতি সাত্তারের সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সময় ইমদাদুল হক ইমদুর ঘটনায় সরকারের ভিত নড়ে যায়। ইমদাদুল হক ইমদু একসময় জাসদ করতেন। তিনি ঢাকার কালীগঞ্জ থানা গণবাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন। পরে বিএনপিতে যোগ দেন। কালীগঞ্জে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অন্ত ছিল না। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সম্পত্তি দখল, অপহরণ, খুনের অভিযোগ ছিল অনেক। যুব উন্নয়নমন্ত্রী আবুল কাশেম সরকারের বাসা থেকে ইমদুকে গ্রেপ্তার করা হয়। কাশেমের বিরুদ্ধে ইমদুকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ঘটনা গোটা সরকারকে বিব্রত করে। একজন মন্ত্রীর বাসায় দাগি খুনি এবং আসামি কীভাবে থাকে, সে নিয়ে হৈচৈ হয়। অনেকে মনে করেন, ১৯৮২ সালে ইমদুর ঘটনায় বিচারপতি সাত্তারের সরকারের পতন ডেকে আনে। এর আগে যুবমন্ত্রী কাশেম ১১ ফেব্রুয়ারি সাত্তারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। পত্রিকাগুলোয় ইমদুর অপরাধের লোমহর্ষক ঘটনাগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বাড়ে ব্যাপকভাবে। আর এরই ধারাবাহিকতায় পতন ঘটে সাত্তার সরকারের। অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণ করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দেশে জারি করা হয় সামরিক শাসন। স্থগিত করা হয় সংবিধান।

এরশাদের বছরের স্বৈরশাসন যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখব তার দুর্নীতির আগ্রহ ছিল শুরু থেকেই। সাইকেল চালিয়ে অফিসে গিয়ে তিনি সততা প্রমাণ রাখতে চান। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করে শুরু করেন দুর্নীতির মহোৎসব। বাংলাদেশের গণমাধ্যম সে সময় শৃঙ্খলিত ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এরশাদ সরকারের দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হতে থাকে। সে সময় বিদেশি প্রভাবশালী গণমাধ্যমে দরিদ্র দেশের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রপতি কিংবা মরিয়ম মমতাজের সঙ্গে এরশাদের প্রেমকাহিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ফেয়ার ফ্যাক্স রিপোর্টে আসে এরশাদের দুর্নীতির আদ্যোপান্ত। চিনি চুরি, গম লুট করে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেওয়া হয় সারা দেশে। উপজেলা পদ্ধতি করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এরশাদ সার্বজনীন দুর্নীতির স্কিম চালু করেন। তৈরি হয় উপজেলা টাউট দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠী। সময় এরশাদের বান্ধবী বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান পত্নী জিনাত হোসেইনের ক্ষমতার দাপট, দুর্নীতি, বিভিন্ন মন্ত্রী এবং এরশাদের একান্ত অনুগতদের অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। এমন একটি প্রেক্ষাপট তৈরি হয় যে, জনগণ এরশাদকে একজন দুর্নীতিবাজ এবং লম্পট হিসেবেই স্বীকৃতি দেয়। ৯০- কুয়েত যুদ্ধের পটভূমিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ে হুহু করে। সঙ্গে বাড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। দুর্নীতির জন্যই এসব মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে বলে মানুষ বিশ্বাস করে। তারা রাজপথে নেমে আসে। স্বৈরাচারের পতন ঘটায়।

১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর বিএনপি ক্ষমতায় আসে নাটকীয়ভাবে। বিএনপি আমলে দুর্নীতির বিভিন্ন খবর আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। বিশেষ করে ড্যান্ডি ডায়িং কেলেঙ্কারি, কোকো লঞ্চ কেলেঙ্কারি, সোনালী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি, সাইদ ইস্কান্দারের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নিয়মবহির্ভূত ঋণ নেওয়া, সার কেলেঙ্কারি ইত্যাদি নানা দুর্নীতির খবর বিএনপি সরকারকে দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত করে। জনগণও বিএনপি সরকারের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। দুর্নীতিতে খালেদা জিয়া আর এরশাদ সমান হয়ে যান। খালেদা জিয়ার ভাই-বোনদের দুর্নীতির চর্চা হয় চায়ের আড্ডায়। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে বিএনপির পরাজয়ের প্রধান কারণ ভোট চুরি আর দুর্নীতি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে দীর্ঘ ২১ বছর পর। আওয়ামী লীগের দেশ পরিচালনার প্রথম দিকের দিনগুলো ছিল অত্যন্ত চমৎকার। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে একটি নতুন উন্নয়নের ধারা সূচনা করেছিল। বিশেষ করে পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গার পানি চুক্তি বণ্টন, দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের সাফল্য ছিল অসাধারণ। একটি বাড়ি, একটি খামার, আশ্রয়ণ প্রকল্প, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী উন্নয়নের ছোঁয়া পায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে এসে নানারকম দুর্নীতির কেচ্ছা-কাহিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে বেশ ফলাও করে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যক্তির দুর্নীতি সন্ত্রাসের গল্প আলোচিত হতে থাকে পাড়ায়-পাড়ায়, মহল্লায়-মহল্লায়। সময় আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার ছেলের জমি দখল, ঢাকা থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এক এমপির অস্ত্র হাতে মিছিলের ছবি। ফেনীতে জয়নাল হাজারী, লক্ষ্মীপুরের তাহের, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমানের নানারকম খবর গণমাধ্যমে আসতে থাকে রং মাখিয়ে। বিব্রত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। এসব অর্ধেক সত্য, অর্ধেক কল্পিত সংবাদ অনেকে বিশ্বাস করে। এর প্রভাব পরে ২০০১-এর অক্টোবরের নির্বাচনে।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে অবশ্য আর অপেক্ষা করেনি। প্রথম দিন থেকেই হাওয়া ভবনের দুর্নীতি সারা দেশে টক অব দ্য কান্ট্রি-তে পরিণত হয়েছিল। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে লুণ্ঠন এবং অনিয়মের এক নজিরবিহীন ঘটনা বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করে। দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় সময়। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব অপসারিত হন শুধু দুর্নীতির তথ্য অনুসন্ধান করতে চেয়ে। সরকারি চাকরিতে বদলি-নিয়োগ, টেন্ডার ইত্যাদি সবকিছু দুর্নীতিতে আক্রান্ত হয়। সিএনজিচালিত অটোরিকশা কেলেঙ্কারি, খাম্বা কেলেঙ্কারিসহ হাজারো দুর্নীতির কাহিনি প্রকাশিত হতে থাকে। বিএনপি অবশ্য এসব মোটেও আমলে নেয়নি, পাত্তাও দেয়নি। ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার বিএনপি সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়। হারিস চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী ফালু, গিয়াস উদ্দীন আল মামুনের মতো দুর্নীতির শিরোমণি দুর্বৃত্তরা জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত হয়েছিলেন এবং সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারই দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকএরকম একটি বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়েছিল মানুষের মধ্যে। সময় বাজারে প্রথম সিন্ডিকেট চালু হয়। সয়াবিন, লবণ কিংবা চিনি বাজার থেকে উধাও করে দাম বৃদ্ধির এক কৌশল শুরু হয়। কারসাজি করে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে ফুঁসে ওঠে মানুষ।

২০০৭ সালে নানা নাটকের পর . ফখরুদ্দীনের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের আগে আওয়ামী লীগ, বিএনপি উভয় দলের নেতাদের দুর্নীতির সত্য-মিথ্যার মিশেলে রগরগে কাহিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে। বিশেষ করে বহুল প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোতে রাজনীতিবিদদের চরিত্র হননের এক খেলা শুরু হয়। এই চরিত্র হননের মিশনের মধ্য দিয়েই এক-এগারো সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল। রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজএটি প্রমাণের চেষ্টা চলে ফখরুদ্দীন সরকারের দুই বছর। এই অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে নিজেরাই দুর্নীতির নেশায় আসক্ত হন। ব্যবসায়ীদের ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদাবাজি, জোর করে অর্থ আদায় সীমাহীন পর্যায়ে চলে যায়। রীতিমতো লুটেরা শাসন কায়েম করেছিল . ফখরুদ্দীন-মইন সরকার। জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে হুহু করে। পণ্যের বাজারে সৃষ্টি হয় নজীরবিহীন সংকট। গণআক্রোশের আঁচ পেয়ে নির্বাচন দিয়ে কোনোমতে বিদায় নেয় এই সরকার।

টানা চতুর্থবারের মতো সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটি তার নির্বাচনী ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। কিন্তু পণ্যের বাজারে যেন আগুন লেগেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্য নেই এখনো। এর মধ্যে মতি, বেনজীরদের কাহিনি নিয়ে চর্চা হচ্ছে সর্বত্র। তাদের অপকর্মের দায় সরকারের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা চলছে। কেউ কেউ এর মাধ্যমে সরকারকেই দুর্নীতিবাজ প্রমাণের চেষ্টা করছে। ব্যক্তির দুর্নীতির দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও লক্ষণীয়। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন সরকার এর দায় এড়াতে পারে না। অথচ দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থাগুলো নেওয়া হচ্ছে সে ব্যবস্থাগুলো ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে না। কেউ বলছে না, অতীতে কোনো সরকার এভাবে দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কিংবা দলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সরকারের শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিকে প্রশংসা করা হচ্ছে না। এর ফাঁকফোকর আবিষ্কারে রীতিমতো গবেষণা হচ্ছে। অগণতান্ত্রিক শক্তি বিরাজনীতিকরণের জন্য সবসময় এই পথই বেছে নেয়। আর কারণেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এখনই। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে সরকারকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। থাকতে হবে পক্ষপাতহীন। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান যেমন চলবে, তেমনি দুর্নীতির যে কল্পকাহিনিগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তারও উৎসমুখ বন্ধ করতে হবে। কারণ এই উপসর্গ পুরোনো, লক্ষণগুলো ভালো নয়।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com


দুর্নীতি   দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি   সরকার   লক্ষণ   ষড়যন্ত্র  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আমলাদের দুর্নীতি কেন হিসেবের বাইরে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ জুন, ২০২৪


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হচ্ছে, তাদের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের বিবরণ দেখিয়ে জনগণ শীর্ষে উঠছে। সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, এনবিআরের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতির বিবরণে মানুষ হতবাক। তাদের যে অঢেল সম্পদ রয়েছে সেই সম্পদের হিসেব কষতে কষতে মানুষ যেন অঙ্কই ভুলে গেছে। এরকম বাস্তবতায় প্রশ্ন উঠেছে যে, সরকারি কর্মচারী বা সরকারি চাকরি কি তাহলে সোনার হরিণ? সরকারি চাকরি পেলেই কি তাহলে আলাদিনের চেরাগ পাওয়া যায়? 

কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন ক্যাডারে কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশিত হলেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিষয়টি আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ তাদের দুর্নীতির কথা গণমাধ্যমে আসছে না। এটির একাধিক কারণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হল যে, প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা এবং প্রভাব। দুর্নীতি দমন কমিশন এখন নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের দ্বারা এবং অন্যান্য জায়গায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি এতটাই যে তাদের দুর্নীতির কাহিনী গণমাধ্যমে আসছে না। অথচ অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে, বেনজীর আহমেদ বা মতিউর রহমানের দুর্নীতি প্রশাসন ক্যাডারের অনেক সাবেক কর্মকর্তার দুর্নীতি তার চেয়েও বেশি। তারা কৌশলে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র গুলো বলছেন, সাবেক একজন সচিব যিনি সরকারি গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, পরবর্তীতে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। তিনি এখন স্থায়ীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন। সেখানে তার বিপুল বিত্ত এবং বিনিয়োগের খবর পাওয়া যায়। 

সরকারি আরেকজন কর্মকর্তা যিনি ব্যাংকিং সেক্টরের দায়িত্ব পালন করতেন, তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন তিনি লন্ডনে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনিও সেখানে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। 

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন মন্ত্রী থাকাকালীন সময় বলেছিলেন যে, কানাডার বেগম পাড়ায় আমলাদের বাড়ি-ঘর বেশি। রাজনীতিবিদের বাড়ি-ঘর কম। 

বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অন্তত ১৭ জন সাবেক আমলার বাড়ি-ঘর রয়েছে কানাডার বিভিন্ন রাজ্যে। এই সমস্ত সম্পদগুলো তারা বৈধ ভাবে তৈরি করেছেন এমন তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় না। অন্তত ৩ জন সাবেক আমলার খবর পাওয়া গেছে যারা দুবাইতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ বানিয়েছেন এবং সেখানে তারা বিভিন্ন রকম ব্যবসা করছেন। বাংলাদেশে তারা খুব কম সময় থাকেন। বেশির ভাগ সময় বিদেশে অবস্থান করেন। তবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মধ্যে একটা অদ্ভূদ জিনিস লক্ষ্য করা যাচ্ছে তারা দেশে কম সম্পদ রেখেছেন। তাদের বিত্ত সম্পদের একটা বড় অংশ বাইরে পাচার করে দিয়েছেন।

অনেকে মনে করেন বেনজীর আহমেদ বা মতিউর রহমান যেমন দেশে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের আমলারা তেমনটি করেননি। বরং তারা তাদের সমস্ত সম্পদ পুঞ্জীভূত করেছেন বিদেশের মাটিতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে সাবেক আমলাদের। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলছেন না, তাদের সম্পদ নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে না।

আমলা   দুর্নীতি   কানাডা  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আবার চুক্তির হিড়িক: প্রশাসনে অস্বস্তি

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৬ জুন, ২০২৪


Thumbnail

টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংস্কৃতি থেকে সরে এসেছিল। বেশ কয়েক জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অবসরের পর তাদের স্থলে নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংস্কৃতিতে ফিরে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। চলতি মাসে অন্তত দুটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। আরেকটি প্রজ্ঞাপন খুব শিগগিরই জারি হবে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে গত ৯ জুন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকারকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে তার এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কার্যকর হবে বলে দায়িত্বশীল সুযোগ নিশ্চিত করেছে। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে এক বছরের জন্য আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি হবে তার জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমনিতেই নেতিবাচক একটি মনোভাব রয়েছে। বিনা কারণে বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ফলে একদিকে যেমন প্রশাসনের জট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে মেধাবী এবং তরুণরা পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও মনে করেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, একজন সচিবের যখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেই ধারাবাহিকতায় অন্তত ৭ থেকে ১০ জনের পদোন্নতি ব্যাহত হয়। এইভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রশাসনের তরুণ ক্যাডাররা। 

উল্লেখ্য যে, ১৫ তম ব্যাচের একজন দু জনকে ইতোমধ্যে সচিব করা হয়েছে। ১৫ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এখন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্যদিকে ১৫ তম ব্যাচের একজন এবার সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে আরও কয়েকজনের সচিব হওয়ার কথা। কিন্তু এইভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জট আবার নতুন করে তৈরি হওয়ায় তাদের পদোন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। এটি তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। 

প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা মোটা দাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে। আবার যখন একজন সরকারি কর্মকর্তা তার চাকরির শেষ প্রান্তে উপনীত হচ্ছেন তখন তিনি চুক্তির জন্য মরিয়া হচ্ছেন। 

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বিষয়টি আলাদা। এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়াধীন বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাজের ধরন একটি বিশেষায়িত এবং এই কাজের অভিজ্ঞতা দরকার। বাইরে থেকে হুট করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হলে তিনি যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে নাও পারেন। এ রকম বিবেচনা থেকেই হয়তো তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক বছর এই ‍চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, যিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি স্বাভাবিকভাবে মুখ্য সচিব হবেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাজের গতিতে কোন সমস্যা হবে না। কারণ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ রকম বিবেচনা থেকে হয়তো তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে অবসর দিয়ে বাইরে থেকে নতুন কাউকে মুখ্য সচিব করার ঝুকি নিতে চায়নি সরকার। কিন্তু অন্যান্য সচিবদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তুলেছে। এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে প্রশাসনে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ   প্রশাসন  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

মতির রত্নভান্ডারে ছাগলের অনুপ্রবেশ

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ জুন, ২০২৪


Thumbnail

দরিদ্র বাবা অর্থাভাবে সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছেন, অভাবের তাড়নায় সন্তানকে হাসপাতালে রেখে পালিয়েছেন মা—এমন খবর মাঝেমধ্যে আমরা গণমাধ্যমে পাই। এসব খবরে আমরা উদ্বিগ্ন হই, আতঙ্কিত হই। অনেকেই নানা টানাপোড়েনের কারণে সন্তানকে ফেলে দেন ডাস্টবিনে অথবা রেলস্টেশনে। অজ্ঞাতপরিচয় শিশুকে কুড়িয়ে পাওয়ার খবর আমাদের ব্যথিত করে। দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিতরা তাদের প্রাণের ধন বিক্রি করে দেন বা অস্বীকার করেন। এটি একটি নির্মম বাস্তবতা। এটি হওয়া উচিত নয়। এ ধরনের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি কাম্য নয়। কিন্তু অবৈধভাবে ফুলেফেঁপে ওঠা ধনাঢ্য ব্যক্তিরাও যে তাদের অবৈধ সম্পদ রক্ষা করার জন্য সন্তানকে অস্বীকার করেন—এ গল্প আমাদের অনেকেরই অজানা ছিল। মানুষ মাঝেমধ্যে অর্থলোভে পৈশাচিক, বীভৎস হয়ে যায়। তারা এত মানবিক বোধশূন্যহীন হয় যে, নিজের সন্তানকেই অস্বীকার করে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা এ রকম একটি ঘটনা প্রত্যক্ষ করলাম।

ঘটনার সূত্রপাত একটি ছাগলকে ঘিরে। ‘ছাগলকাণ্ডে’ এক দুর্নীতিবাজের মুখোশ উন্মোচন হয়ে গেল। ঈদুল আজহার আগে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হন মুসফিকুর রহমান ইফাত। শুরু হয় খোঁজ, কার ছেলে সে? শেষ পর্যন্ত দেখা যায় তিনি এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে। এ নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা রকম চর্চা হচ্ছে, ঠিক সে সময় বোমা ফাটান এনবিআরের এই কর্মকর্তা নিজেই। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, মুসফিকুর রহমান ইফাত নামে তার কোনো ছেলে নেই। ইফাতকে তিনি চেনে না বলেও হুংকার দেন। এ কথার পর চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। মতিউর রহমান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন, যারা অপপ্রচার করছেন তাদের বিরুদ্ধে তিনি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তখন সবার দৃষ্টি যায় ইফাতের দিকে। ছাগল নিয়ে থাকা এই মিষ্টি ছেলেটির বাবা তাহলে কে?

একজন বাবা তার সন্তানকে অস্বীকার করতে পারেন—এমন নির্মমতা আমাদের সমাজে খুব একটা দেখা যায় না। আমাদের বাবারা প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যেও নিজের জীবন উৎসর্গ করেন সন্তানদের জন্য। নিজেদের সব আনন্দ-বিলাসিতা ত্যাগ করে সন্তানকে মানুষ করতে চান। সন্তানের মুখে হাসি ফোটাতে নিজেদের সব কিছু উজাড় করে দেন। সেখানে একজন বাবা সন্তানকে অস্বীকার করবেন কী করে? তাই শুরুতে মতিউরের কথাই সত্য বলে ধরে নিতে হয়। সন্তানকে কি কেউ অস্বীকার করে? আমরা মতিউরের ওপরই আস্থা রাখি। কিন্তু দুষ্ট ছাগলের ক্রেতা খুঁজতে খুলে যায় মতিউরের রত্নভান্ডার। এখন গণমাধ্যম নিশ্চিত করেছে যে, ইফাত মতিউর রহমানের সন্তান। তার দ্বিতীয় সংসারের প্রথম সন্তান ইফাত। ইফাতের মাধ্যমিক পরীক্ষার যে নম্বরপত্র, তাতেও দেখা যাচ্ছে তার বাবার নাম মতিউর রহমান। মতিউর রহমান তাহলে কেন অস্বীকার করলেন তার প্রিয় সন্তানকে? ছাগলকাণ্ডে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য বেরোচ্ছে, সেগুলো ভয়ংকর। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীরকেও হার মানিয়েছে তা। তার এই গুপ্তধনের খোঁজ যেন আমরা না পাই, সেজন্যই কি তিনি এই কাণ্ড করলেন?

আমি মতিউরের অবৈধ সম্পদের ফিরিস্তি দিতে যাব না। কারণ, এটি ইতোমধ্যে কালবেলাসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হচ্ছে। ১৫ লাখ টাকা দিয়ে যে কিশোর ছাগল কিনেছে, তা নিয়েও ঠাট্টা, রসিকতা আমি করব না। আমি শুধু একটি বিষয় নিয়ে বিব্রত, হতাশ, বিস্মিত। তা হলো একজন বাবা কতটা বর্বর, পৈশাচিক হলে তার অর্থ এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড গোপন করার জন্য নিজের সন্তানকে অস্বীকার করতে পারেন। টাকা থাকলে মানুষ কী না করে। একাধিক বিয়ে করে, উপপত্নী, বান্ধবী রাখে, বেপরোয়াভাবে সম্পদ ক্রয় করে দেশে-বিদেশে। মতিউর রহমান যেন সেরকমই একটি চরিত্র। তার প্রথম স্ত্রীর ঘরে সন্তানাদি আছে। তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। তার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন ধানমন্ডিতে। সেখানে তিনি মাঝে মাঝে যান। ভাগ্যিস তিনি তৃতীয় বিয়ে করেননি। অথবা তিনি তৃতীয় বিয়ে করেছেন কি না, তা আমরা জানি না। এ রকম কত বৈধ-অবৈধ স্ত্রী তার আছে, সে বিতর্কেও আমি যাব না। আমার শুধু একটিই প্রশ্ন, মতিউর রহমান তার ছেলেকে কেন অস্বীকার করলেন? এর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা কী? মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা অনেক রকম হতে পারে। আমরা যদি খুব সরলীকরণ ব্যাখ্যা দিতে যাই, তা হলে ব্যাখ্যাটি এ রকম দাঁড়ায়—মতিউর রহমান তার ছেলেকে বাঁচানোর জন্যই পিতৃত্ব অস্বীকার করেছেন। মতিউর রহমান হয়তো ভেবেছেন, সব কিছু ম্যানেজ করা যাবে। তার যেসব কেচ্ছা-কাহিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে প্রমাণিত হয়, তিনি অতীতে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আগেও তার অবৈধ সম্পদ খুঁজেছে। সেটা ম্যানেজ করেছেন তিনি টাকার জোরেই। কাজেই তার সন্তান যে ছাগলকাণ্ড করেছেন, সেটাও তিনি ম্যানেজ করতে পারবেন বলে তার বদ্ধমূল ধারণা ছিল। এ কারণেই তিনি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি সামাল দিতে সব কিছু অস্বীকার করেছেন। মানুষের দৃষ্টি সাময়িকভাবে আড়াল করার জন্যই তিনি সন্তানকে অস্বীকার করেছিলেন। এর দ্বিতীয় আরেকটি ব্যাখ্যা থাকতে পারে। তা হলো সন্তানকে যদি তিনি অস্বীকার করেন, তাহলে তার অবৈধ সম্পদের খোঁজ-খবর কেউ নেবে না। তাকে নিয়ে কেউ খোঁচাখুঁচি করবে না। ছাগলকাণ্ডেই বিষয়টি শেষ হবে। সবাই নতুন ইস্যুতে ঝুঁকবে। কিন্তু মানুষ যখন প্রচণ্ড দুর্নীতিবাজ হয়ে যায়, বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হন, তখন তিনি বেপরোয়া হন। হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে যান। বাস্তবতা থেকে তিনি নিজেকে অনেক দূরে সরিয়ে ফেলেন। এ কারণেই তিনি অনুভব করতে পারেন না কোনটা ভুল আর কোনটা সঠিক। মতিউর রহমান মনে করেছিলেন, টাকা থাকলেই বোধহয় সব কিছু সামাল দেওয়া যায়। এ কারণেই তিনি ছেলেকে অস্বীকার করে সবাইকে ধোঁকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ যুগে তথ্য গোপন আদৌ কি রাখা যায়! তথ্য গোপন রেখে বাঁচা যায়! মতিউর রহমান যে বিপুল সম্পদ-বিত্ত বানিয়েছেন সে বিপুল সম্পদ যে বৈধ পথে উপার্জন করেননি, তা সন্তানকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে। মতিউর যদি বৈধ পথে অর্থ উপার্জন করতেন, তাহলে তার সন্তানের ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনা নিয়ে তিনি গর্বিত হতেন। যেভাবে তিনি অবলীলায় শেয়ারবাজারে তার অর্থপ্রাপ্তির বিবরণ দিচ্ছিলেন একটি টেলিভিশনে, সেভাবেই তিনি ১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার একটা ব্যাখ্যা দিতেন। আম্বানির ছেলের বিয়েতে বিত্তের উৎসব হলো না, কার কী? এই ঢাকা শহরে কেউ কেউ বিয়ের অনুষ্ঠানে ভারতীয় তারকাদের নিয়ে এসে ফুর্তি করেন। এসব তো এখন সমাজে ‘জায়েজ’ হয়ে গেছে। এবার ঈদে কেউ কেউ কোটি টাকার গরু কিনেছে। অনেক বিত্তশালী অরুচিকরভাবে তাদের বিত্তের প্রকাশ ঘটান। এসব বিত্তের উৎকট বিলাস মানুষ নীরবে সহ্য করে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা অদ্ভুত কিছু ব্যাপার লক্ষ করছি। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেন চাকরির নামে আলাদিনের চেরাগ পাচ্ছেন। সরকারি চাকরি পাওয়া মানে যেন দুর্নীতির লাইসেন্স পাওয়া। বিপুল বিত্তের মালিক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ যেন এখন সরকারি চাকরি। কেউ কেউ সরকারি চাকরিতে যাচ্ছেনই যেন বিত্তবান হওয়ার জন্য। অবৈধ পন্থায় সীমাহীন সম্পদের মালিক হওয়ার লোভে। ইদানীং সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রবল আগ্রহ দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য যেন সরকারি চাকরি পাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির সামনে গেলে দেখা যায়, লাইন ধরে শিক্ষার্থীরা সেখানে প্রবেশ করছেন। খুব আগ্রহ নিয়ে যদি আপনি তাদের জিজ্ঞেস করেন, কেন তারা লাইব্রেরিতে গেছেন? দেখবেন প্রায় সবাই লাইব্রেরিতে যাচ্ছেন বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখন উদ্যোক্তা হতে চান না, করপোরেট চাকরি করতে চান না, সৃজনশীলতা চান না। কবি, লেখক, গবেষক হওয়ার আগ্রহ খুব কম শিক্ষার্থীর। আমাদের তারুণ্যের মধ্যে সরকারি চাকরির প্রবণতা ভয়ংকরভাবে বেড়ে গেছে। এটির একটি বাস্তবভিত্তিক কারণও আছে। আমাদের দেশে সরকারি চাকরিগুলো নিরাপদ, চিন্তামুক্ত জীবন দেয়। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মাইনে, একটি রুটিন জীবন এবং ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা প্রদান করে। সে কারণেই হয়তো অনেকেই সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। বাংলাদেশের তরুণদের মধ্যে একটি অংশ বর্তমানে এখন বিদেশ চলে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় অংশ চাকরির জন্য হামলে পড়ছেন। হোক না তিনি ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার কিংবা কৃষিবিদ। তার শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য সরকারি চাকরি। সরকারি চাকরিতে ঢুকলেই যেন তার জীবন ধন্য হয়ে যায়। মা-বাবা মনে করেন তার সন্তান সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়েছে। আসলে তিনি মানুষ হচ্ছেন নাকি একজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে পুনর্জন্ম নিচ্ছেন, সে বিতর্ক এখানে নাইবা করলাম। কদিন আগে একজন তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার হয়েছেন। ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে নিম্নপদে কেন গেলেন, সেটা বুঝতে পণ্ডিত হওয়ার দরকার নেই। আমরা লক্ষ্য করি মেধাবী পরীক্ষার্থীরা যারা বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন, তাদের কেউ কেউ কাস্টম, আয়কর, এনবিআরের মতো জায়গাগুলোয় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। প্রশাসন ক্যাডারের চেয়ে এ ধরনের ক্যাডার সার্ভিসগুলোয় মেধাবীদের ঝোঁক যে কাউকে প্রশ্নবিদ্ধ করবেই। কেন তারা এনবিআরের চাকরি চান, কেন কাস্টমের চাকরি চান, কেন একজন তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা সাব-রেজিস্ট্রার হতে চান? মতিউর রহমানের ঘটনায় সব প্রশ্নের উত্তর এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিয়েছে। যে তরুণটি তথ্য ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে সাব-রেজিস্ট্রারে যোগদান করেছেন, তিনি মতিউর রহমান হতে চান। প্রচণ্ড বিত্তশালী একজন দুর্নীতিবাজ সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। যে তরুণরা এখন প্রশাসন ক্যাডার, তথ্য ক্যাডার, কৃষি ক্যাডার, স্বাস্থ্য ক্যাডারের চেয়ে কাস্টমস কর্মকর্তা, এনবিআর কর্মকর্তা হতে বেশি আগ্রহী, তাদের উদ্দেশ্য মতিউর রহমান হওয়া। এখন মতিউর রহমানরাই হচ্ছেন অনেকের অনুকরণীয়। এখন দুর্নীতিবাজদের দেখলে কেউ ঘেন্না করে না। দুর্নীতিবাজদের উদহারণ মনে করেন। এখন যার যত সম্পদ তিনিই সমাজে তত প্রতিপত্তিশালী। এখন যিনি যেই পরিমাণ বিত্তশালী, তা হোক বৈধ পথে কিংবা অবৈধ পথে, তিনিই সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান। টাকা থাকলে এখন সব কিছু হয়। মতিউর রহমান টাকার জোরে এখন দুই স্ত্রীকে আনন্দে রাখছেন। তার এক স্ত্রী রাজনীতিতেও নেমেছেন। মতিউর রহমান ভবিষ্যতে যে রাজনীতি করবেন না, তা কে নিশ্চিত করে বলবে। মতিউর রহমানের টাকা আছে। তাই টাকা দিয়ে তিনি ভবিষ্যতে মনোনয়ন কিনবেন। এমপি হবেন। মতি মন্ত্রী হলেও জাতি অবাক হবে না। কাজেই মতিউর রহমান কিছু তরুণকে উৎসাহী করবেন। যে তরুণ শিক্ষাজীবন শেষ করে সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকছেন, তাদের কেউ কেউ নিশ্চয়ই একজন মতিউর রহমান হতে চাইবেন। তারা ড. আকবর আলী খান হতে চাইবেন না, ড. সাদাত হোসেন হতে চাইবেন না। কারণ মতিউর রহমানরা বিত্তশালী, দেশে-বিদেশে তার অঢেল সম্পদ। বেহেশতি সুখে টইটম্বুর তার জীবন। একজন ব্যবসায়ীকে টাকা উপার্জন করতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়। ঝুঁকি নিতে হয়। শ্রমিক সামাল দিতে হয়। প্রতিযোগিতা করতে হয়। কিন্তু মতিরা শুয়ে-বসে বাতাস থেকে টাকা উপার্জন করেন। বর্ষাকালে আমরা বৃক্ষরোপণ করি, কেউ ঔষধি গাছ রোপণ করি, কেউ ফলের চারা। মতিউর রহমান রোপণ করেছিলেন টাকার গাছ। একটা না অনেক টাকার গাছ। গাছ থেকে পাতার বদলে মতি টাকা পারেন। সেই টাকা দিয়ে হাজার কোটি টাকার সম্পদ বানিয়েছেন। গড়েছেন রত্নভান্ডার। কিন্তু মতির রত্নভান্ডারে ঢুকেছে দুষ্ট ছাগল। আর সবাই বিত্ত-বৈভবের কথা জেনে ফেলেছে তাতে। তবে মতিউর রহমানের বিশেষ কিছু হবে বলে আমি মনে করি না। বিত্তশালী হলে সব কিছুকে অস্বীকার করা যায়। আইনকে অস্বীকার করা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনকে বাগে আনা যায়, প্রশাসনকে ম্যানেজ করা যায়, এমনকি গণমাধ্যমের মুখও বন্ধ করা যায়। কিছুদিন পর মতিউর রহমানকে নিয়ে হুলুস্থুল হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে। মতিউর রহমান হয়তো সব কিছু ম্যানেজ করে ফেলবেন। তার দ্বিতীয় ঘরের সন্তানরাও বিদেশে স্থায়ী হবেন। মতির রত্নভান্ডারের সন্ধান দিল যে ছাগল, এর কী হবে?


মতিউর রহমান   ছাগল  


মন্তব্য করুন


এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগের ইতিহাসই বাংলাদেশের ইতিহাস

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৩ জুন, ২০২৪


Thumbnail

২৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অনন্য, অসাধারণ দিন। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আওয়ামী লীগ তার অভিযাত্রার ৭৫ বছর পূর্ণ করল। শুধু বাংলাদেশে নয়, এই উপমহাদেশে অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই ৭৫ বছর আওয়ামী লীগ যেমন সুসময় পার করেছে, তেমনি পাড়ি দিয়েছে প্রতিকূলতার ঝঞ্ঝা। সবকিছু সামাল দিয়ে আওয়ামী লীগ স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। একটি শক্তিশালী, বর্ণাঢ্য এবং চিরসবুজ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে নিজেকে।

আওয়ামী লীগ যেন অমলিন, আওয়ামী লীগ যেন চিরসজীব, প্রাণস্পন্দনে ভরপুর। এই ৭৫ বছরে আওয়ামী লীগের ইতিহাস যদি আমরা নির্মোহভাবে মূল্যায়ন করি, তাহলে দেখব, আওয়ামী লীগের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের ইতিহাস একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাসই যেন বাংলাদেশের ইতিহাস। ইতিহাসের দুটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায় সংগ্রামের ইতিহাস আর দ্বিতীয় অধ্যায়টি হলো বিনির্মাণের ইতিহাস। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের জাতীয় পতাকা, মানচিত্র এবং ভূখণ্ড। আওয়ামী লীগর মাধ্যমেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা। আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের উন্নয়নের কান্ডারি।

১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পাকিস্তানি শাসক-শোষকদের বঞ্চনা, লাঞ্ছনা এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে। মুসলিম লীগের প্রতি মানুষের আক্রোশ এবং আশাহতের বেদনা থেকেই জনগণের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের ভালোবাসার এক সামষ্টিক রূপ ছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ তার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাঙালির মুক্তির অবিচল সংগঠন হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল।

অভিযাত্রায় আওয়ামী লীগ বারবার বাধা পেয়েছে। সংগ্রাম করতে হয়েছে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার জন্য। আর এটি করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, নিপীড়িত হয়েছেন। দলটি বিভিন্ন সময় অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। কিন্তু তার পরও আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা বুকে ধারণ করেছে এবং স্বাধীনতার সুপ্ত বাসনাকে ধীরে ধীরে প্রস্ফুটিত করেছে। এই দল কখনো লক্ষ্যচ্যুত হয়নি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পরই আওয়ামী লীগের নবযাত্রার সূচনা হয়। তিনিই আওয়ামী লীগকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন। জাতির পিতাই আওয়ামী লীগকে গণমানুষের সংগঠনে পরিণত করেছিলেন। তিনি গ্রামগঞ্জে প্রত্যন্ত এলাকায় মানুষের কাছে গিয়েছিলেন। মানুষের অধিকারের বার্তা দিয়েছিলেন, দিয়েছেন মুক্তির বার্তা।

সে কারণেই আওয়ামী লীগ জনমানুষের প্রাণের দলে পরিণত হয়েছে। আর গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা ধারণ করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তিল তিল করে বাংলাদেশকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন।৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং৭০-এর নির্বাচন প্রতিটি ধাপে আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আরও বিকশিত হয়েছে। বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে দীপ্ত হয়েছে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। জনগণের ঐক্যের শক্তিতেই আওয়ামী লীগ বলীয়ান।

৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ইতিহাসের পথ ধরেই বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস একই সূত্রে গাঁথা। দুটি নদী যেমন এক মোহনায় মিলিত হয় ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সংগ্রামের ইতিহাস আর আওয়ামী লীগের ইতিহাস এক মোহনায় মিলিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে। শহীদের রক্তে রঞ্জিত পবিত্র স্বাধীনতা এসেছে, পথ দিয়েই।

স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের সংগ্রাম শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শুরু করেন সোনার বাংলা বিনির্মাণের এক কঠিন যুদ্ধ। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এবং৭১-এর পরাজিত শক্তিরা নতুন করে ষড়যন্ত্র করে। সেই ষড়যন্ত্রে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। পথ হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর এক নীল নকশা বাস্তবায়ন শুরু করে। এমন একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ধূসর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায়। সেখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর যে গল্প সেই গল্পের নায়কশেখ হাসিনা তার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ পুনরুজ্জীবিত হয়। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ আবার জেগে ওঠে। অধিকারহারা মানুষ আবার আশার আলো দেখে। অন্ধকার টানেল থেকে বাংলাদেশের জনগণ এক নতুন যুদ্ধের সূচনা করে।

১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগ তার অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ওই কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয় সর্বসম্মতভাবে। তখন আওয়ামী লীগ একটি বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত রাজনৈতিক দল। অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। এরকম এক অবস্থায় দলটির হাল ধরেন শেখ হাসিনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এখান থেকেই শুরু হয় আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানোর সূচনা আর এখান থেকেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামের নবযাত্রা।

শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সংগ্রামের দ্বিতীয় অধ্যায়ের সূচনা হয়। একই সময় শুরু হয় বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য এক নতুন যুদ্ধের। যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র জয়ী হয়। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে বিজয়ী হন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর শুরু হয় বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম।সোনার বাংলা বিনির্মাণেরউন্নয়নের অভিযাত্রার গল্প এখান থেকেই শুরু হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর যে দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়েছিল, যে দেশটি টিকবে কি না, তা নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে রীতিমতো গবেষণা হতো, সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করে। স্বাধীন-সার্বভৌম, আত্মনির্ভর, আত্মপ্রত্যয়ী এবং আত্মমর্যাদাশীল একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, মাত্র পাঁচ বছরে তিনি বাংলাদেশকে বদলে দেন। আশার প্রদীপ জ্বালান দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনি একদিকে যেমন গঙ্গার পানি চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেন, তেমনি অন্যদিকে তিনি বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক, আশ্রয়ণ, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের অংশীদার করেন। স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের জন্য। স্বাধীনতার সুফল যেন সব মানুষ পায় তা নিশ্চিত করার জন্য এক অনবদ্য অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকৌশল গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর আবার ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে বাংলাদেশের। আবার ক্ষত-বিক্ষত হয় আওয়ামী লীগ। সারা দেশে দলটির ওপর জুলুম-নিপীড়ন চলে সীমাহীনভাবে। আওয়ামী লীগ নিধন যেন একটি রাষ্ট্রীয় কর্তব্যে পরিণত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার দেশব্যাপী শুরু করে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন। আর কর্মসূচির কারণে ঘরহারা হয়ে পড়ে বহু মানুষ। বহু মানুষ প্রাণ দেয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ নিধনের চূড়ান্ত নীল-নকশা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য আওয়ামী লীগের জনসভায় চালানো হয় নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা। কিন্তু তার পরও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি, বেঁচে যায় বাংলাদেশ।

২০০৭ সালে আওয়ামী লীগকে নিয়ে আবার ষড়যন্ত্র হয়, ষড়যন্ত্র হয় গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। সংস্কারপন্থিরা আওয়ামী লীগকে আবার বিভক্ত করার চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ নিয়ে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার অপচেষ্টা শুরু হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূল শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করে সফলভাবে।

২০০৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় বিপুলসংখ্যক গরিষ্ঠতা নিয়ে। এর পরই শুরু হয়েছে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। বাংলাদেশের ইতিহাস উন্নয়নের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস অগ্রযাত্রার ইতিহাস। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অনুকরণীয় উদাহরণ। শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি শাসনকালে বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে একটি উদাহরণ হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। একদিকে যেমন তিনি মেগা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছেন; পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে তিনি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন, ঠিক তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা দেশে। যার সুফল ভোগ করছে প্রতিটি নাগরিক।

বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের সুফল পেয়েছে প্রতিটি মানুষ। আর কারণে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। প্রান্তিক মানুষ পাচ্ছে নানা সুযোগ-সুবিধা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার মতো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলো আজ ছড়িয়ে গেছে গোটা দেশে। গৃহহীনরা ঘর পাচ্ছে, কোনো মানুষ কর্মহীন থাকছে না।

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রতিটি ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশের সাফল্যের গল্পগুলো চর্চা হচ্ছে সারা বিশ্বে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আজ বাংলাদেশ অনুকরণীয় মডেল। সারা বিশ্বকে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিয়েছে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়এটি স্রেফ কথার কথা নয়, এটি বাস্তবতা। আর সবকিছুই শেখ হাসিনার প্রজ্ঞায় হয়েছে। নির্মোহভাবে বাংলাদেশের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার সবকিছুই আওয়ামী লীগের হাত ধরেই। আওয়ামী লীগ বিগত নির্বাচনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে।

স্মার্ট বাংলাদেশ মানে মুক্ত মনের বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে আধুনিক প্রগতিশীল এক বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে শিক্ষিত-উদ্দীপ্ত, অগ্রসর এক বাংলাদেশ। আর এরকম একটি বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে বিশ্বে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে আমাদের দেশ। আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশের জন্ম, আওয়ামী লীগের হাত ধরেই বাংলাদেশের বিকাশ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর বাংলাদেশের ইতিহাস যেন একাকার হয়ে গেছে, মিলেছে একবিন্দুতে।


লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত

ইমেইল: poriprekkhit@yahoo.com


আওয়ামী লীগ   ইতিহাস   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন