নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:২২ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০১৯
‘৬৪তম ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড’ আসর বসেছে আজ। চলছে পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। ভারতের সিনেমা জগতের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান এই ‘ফিল্মফেয়ার’। সিনেমায় শুধু অভিনয়ই নয়, এখানে অস্কারের মতো বলিউড সিনেমার সকল শাখায় পুরস্কিত করা হয়। সেই ১৯৫৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু এই অ্যাওয়ার্ডের। বলিউডের সবচেয়ে পুরোনো ইভেন্ট ‘ফিল্মফেয়ার’। ভারতের জাতীয় পুরস্কারের এই অ্যাওয়ার্ডের স্থান।
যেভাবে ফিল্মফেয়ার শুরু:
যতদূর জানা যায় ১৯৫৪ সাল থেকে এই পুরস্কারকে ‘দ্য ক্লেয়ার’ বলা হত। যে পুরস্কারের শুরুটা টাইমস অব ইন্ডিয়ার সমলোচক ক্লেয়ার ম্যান্ডোঙ্কার হাত ধরে। প্রথম বছরই নাকি ২০ হাজার পাঠক ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের কলাকুশলিকে জয়ী করেন। সেই বছরের ২১ মার্চ মুম্বাইয়ের একটি থিয়েটারে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমবার মাত্র পাঁচটি শাখায় পুরস্কার দেয়া হয়। সেরা অভিনেতা, অভিনেত্রী, সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক এবং সেরা সঙ্গীত পরিচালক। অভিনেতা হিসেবে দীলিপ কুমার প্রথম এই পুরস্কার পান। নায়িকাদের মধ্যে ছিলেন মীনা কুমারী। সেরা চলচ্চিত্র ছিল বিমল রায় পরিচালত ‘দো বিঘা জমিন’। এরপর থেকে নিয়মিতই এই পুরস্কারের আসর বসে। তবে মাঝে ১৯৮৬ এবং ১৯৮৭ সালে এই অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। এই দুই বছর ভারতীয় মহারাষ্ট্র সরকারের আন্দোলনের জন্য নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্থগিত রাখা হয়। এখন প্রতি বছর নানা পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান হয় ভারতে। তবে এখনো সবচেয়ে নিরপেক্ষ ধরা হয় এই ফিল্মফেয়ারকেই। আর তাই ৬৫ বছর ধরে এই পুরস্কারের সম্মান একই রকম বহাল রয়েছে। শুধু বলিউডেই নয়। ভারতের আঞ্চলিক সিনেমার জন্যও বসে এই আসর। ‘ফিল্ম ফেয়ার সাউথ’, ‘ফিল্ম ফেয়ার মারাঠি’, ‘ফিল্ম ফেয়ার ইস্ট’, ‘ফিল্ম ফেয়ার পাঞ্জাবি’র আসরও বসে ভারতে। এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘দ্যা টাইমস গ্রুপ’।
পুরস্কার:
অনুষ্ঠানে ‘ব্ল্যাক লেডি’ বা ‘কৃষ্ণ নারী’ প্রদান করা হয়। এই নামেই বেশি পরিচিত। বিজয়ীকে প্রদান করা পদকটির ডিজাইন করেছিলেন এন জি পানসারি। তবে তাকে ডিজাইনে নির্দেশনা দিয়েছেন টাইমস অব ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ওয়াল্টার লাংঘামার। ব্রোঞ্জের তৈরি এই ভাস্করটির উচ্চতা ৪৬.৫ সে.মি। মজার ব্যাপার হলো শুরুর ২৫ বছর পর এটাকে রুপায় প্রস্তুত করা হয়। ৫০ বছরের আয়োজনে মূর্তি তৈরীতে স্বর্ণ ব্যবহৃত হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত মাত্র ৫ বার মূর্তিটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হয় ২০১৩ সালে। সেবছর ট্রফিটিতে থ্রিজি লুক দেয়া হয়। আয়োজকরা জানান, প্রযুক্তির ছোয়া যেমন সিনেমায় এসেছে তেমনি পুরস্কারেও। আসন্ন বছরগুলোতে আরও পরিবর্তনের আশা করেন আয়োজকেরা।
একনজড়ে দেখে নেয়া যাক ফিল্ম ফেয়ারের রেকর্ড:
ফিল্মফেয়ারের মঞ্চে যে সমস্ত চলচ্চিত্র, অভিনেতা, অভিনেত্রী, এবং নির্মাতারা একাধিকবার পুরস্কার জিতে রেকর্ড গড়েছেন, এক নজরে দেখে নিন তালিকাটি।
সেরা চলচ্চিত্র
ব্ল্যাক (২০০৫)- ১১টি
দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে (১৯৯৬) , দেবদাস (২০০৩)- ১০টি
এছাড়া ৯ টি পুরস্কার পেয়েছে,‘মধুমতি’,‘১৯৪২: এ লাভ স্টোরি’, ‘কাহো না পেয়ার হে’,‘ওমকারা’,‘বাজিরাও মাস্তানি’।
সেরা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে নমিনেশণ পেয়েছে সর্বোচ্চ-‘পদ্মাবত’-১৮ টি, দেবদাস-১৭ টি, হাম দিল দে চুকে সনম- ১৬ টি ক্যাটাগরিতে।
সবচেয়ে বেশিবার এ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন (পুরুষ):
গুলজার পেয়েছেন ২০ বার। এর মধ্যে বেস্ট সংলাপ (৪), সমলোচকদের মতে সেরা চলচ্চিত্র (১), সেরা পরিচালক (১), সেরা গীতিকার (১১), সেরা ডকুমেন্টরি (১), সেরা গল্প (১), লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট (১) বার।
এছাড়া এ আর রহমান, অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানরা এ পুরস্কার পেয়েছেন ১৫ বার।
সবচেয়ে বেশিবার এ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন (নারী):
আশা ভোশলে ও জয়া বচ্চন পেয়েছেন ৯ বার, সরোজ খান ৮ বার। লতা মুঙ্গেশকার, অলকা ইয়াগনকি, রানী মুখার্জির ভাগ্যে এ পুরস্কার জুটেছে ৭ বার।
সেরা পরিচালক:
বিমল রায়- ৭ বার
রাজ কাপুর, যশ চোপড়া- ৪ বার
সঞ্জয় লীলা বানসালি- ৪ বার
সেরা অভিনেতা:
দিলীপ কুমার, শাহরুখ খান - ৮ বার
সেরা অভিনেত্রী:
নুতন, কাজল - ৫ বার
মীনা কুমাড়ি, মাধুরি দিক্ষীত, বিদ্যা বালান- ৪ বার
সেরা পার্শ্ব অভিনেতা:
প্রাণ- ৩ বার
অমিতাভ বচ্চন, অমরিশ পুরি, অনিল কাপুর, অভিষেক বচ্চন - ৩ বার
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী:
জয়া বচ্চন ,ফরিদা জালাল, নিরুপা রায়, রানি মুখার্জী, সুপ্রিয়া পাঠক - ৩ বার
সেরা সঙ্গীত পরিচালক:
এ আর রহমান- ১০ বার
শঙ্কর জয়কিষান- ৯ বার
সেরা গায়ক:
কিশোর কুমার- ৮ বার
মোহাম্মদ রাফি- ৬ বার
সেরা গীতিকার:
গুলজার- ১১ বার
জাভেদ আখতার- ৮ বার
সেরা গায়িকা:
আশা ভোসলে, অলকা ইয়াগনিক - ৭ বার
শ্রেয়া ঘোষাল- ৫ বার
বেস্ট কোরিওগ্রাফি:
সরোজ খান: ৮ বার
ফারাহ খান: ৬ বার
সমলোচকদের মতে সেরা অভিনেতা: অমিতাভ বচ্চন, মনোজ বাজপায়ী- ৩ বার।
সমলোচকদের মতে সেরা অভিনেত্রী: টাবু-৪ বার, মনীষা কৈরালা-৩ বার।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকটি বাংলা সংস্কৃতির ভবিষ্যত ধারক-বাহকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই দশকেই জন্মগ্রহণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের তিন মহারথী।
১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়, ১৯২৩ সালে মৃণাল সেন এবং ১৯২৫ সালে ঋত্বিক ঘটক।
বাংলা চলচ্চিত্রের এই তিন মহারথীর একজন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেনের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা ‘পদাতিক’ অবশেষে বড়পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে।
মৃণাল সেন পরিচালিত ‘পদাতিক’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। একই নামে এবার খোদ মৃণাল সেনের জীবন ও সময় নিয়ে সৃজিত মুখার্জী পরিচালিত সিনেমা 'পদাতিক' দেখতে উদগ্রীব দুই বাংলার দর্শক।
মৃণাল সেনের ভূমিকায় এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। গল্পে মৃণাল সেনের স্ত্রী গীতা সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনামি ঘোষ। ছবিটির প্রথম লুক ও টিজার প্রকাশের পর থেকেই দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। চঞ্চল চৌধুরীর এমন রূপ দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন, যেন চঞ্চল নিজেই মৃণাল সেন হয়ে উঠেছেন। কবে ছবিটি মুক্তি পাবে তা নিয়ে আগে থেকে কিছু জানানো না হলেও, গতকাল (২ জুলাই) সন্ধ্যায় পরিচালক সৃজিত মুখার্জী একটি পোস্টার শেয়ার করে জানিয়েছেন যে ছবিটি এই আগস্টে মুক্তি পাবে। ছবি মুক্তির তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা দিবস, অর্থাৎ ১৫ আগস্ট।
মৃণাল সেন জন্মেছিলেন বাংলাদেশের ফরিদপুরে। ১৭ বছর বয়সে চলে যান কলকাতায়। সেখানেই তাঁর বেড়ে ওঠা, রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া, গণনাট্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং পরে চলচ্চিত্রে আগমন।
তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘রাতভোর’। অভিনয় করেছিলেন উত্তম কুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ আর মৃণাল সেনের ‘রাতভোর’ একই বছর কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পেলেও ‘পথের পাঁচালী’র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ‘রাতভোর’কে সেইভাবে আলোচনায় আনতে পারেনি।
সৃজনশীল মানুষ আসলে অন্যের প্রত্যাশা অনুযায়ী পথ হাঁটতে পারেন না। তাঁরা পথ হাঁটেন মহাজগতের দূরপ্রান্তের দিকে চোখ রেখে। শিল্পসৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায় নিজের গড়া চরিত্রে হয়তো নিজেই বাস করেন অনেকটা জুড়ে। কে জানে, চিত্রনাট্যের আড়ালে মৃণাল সেন নিজেই হয়তো ছিলেন তাঁর নির্মিত ‘পদাতিক’-এর বিপ্লবপ্রত্যাশী তরুণ।
তাঁর চলচ্চিত্রে রাজনীতি আসে সরাসরি, মূল বিষয়বস্তু হিসেবে। অনেকে এই অভিযোগও করেছেন, রাজনীতি ও সামাজিক বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে প্রায় রোমান্টিকতার পর্যায়ে তিনি নিয়ে গেছেন কি না। তবু দর্শক হিসেবে তাঁর চলচ্চিত্রে সমাজভাবনার যে চিত্র দেখা যায়, যে জীবনভাবনার খোরাক পাওয়া যায়, তা অতুলনীয়।
যে বছর, ১৯৬৭ সালে, বামফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়, সেই বছরই নকশালবাড়িতে সংগঠিত হয় সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের আগুন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরাঞ্চল, কেরালা ও পূর্ব উড়িষ্যায়। এই সময়ে ভারতে বিভিন্ন ভাষায় বিদ্রোহ ও রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে যেমন সাহিত্য রচিত হয়, তেমনি কলকাতাতেও ছবি বানান মৃণাল সেন। নির্মাণ করলেন একে একে তিনটি ছবি: ইন্টারভিউ [১৯৭০], কলকাতা ৭১ [১৯৭২] ও পদাতিক [১৯৭৩]— যা কলকাতা ত্রয়ী নামে পরিচিতি পায়।
একই সময়ে চলচ্চিত্রের তিন মহারথী সমান দক্ষতা ও গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করে গেলে কিছুটা তুলনা চলেই আসে। তবু সত্যজিৎ, মৃণাল ও ঋত্বিকের মধ্যে মিলের জায়গা যেটুকু ছিল, তা হলো বাণিজ্যচিন্তাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইতালিয়ান নিউ রিয়েলিজম, তথা নব্যবাস্তববাদের ধারায় বিশ্বাস রেখে স্বল্প বাজেটে সৃজনশীল ও আপোসহীন নির্মাণ।
তবে তিনজনের মধ্যে মৃণাল সেনের কিছু বাড়তি যোগ আছে। তিনি বাংলা ও হিন্দি ছাড়াও তেলেগু এবং ওড়িয়া ভাষায়ও চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। টেলিভিশনের জন্য নির্মাণ করেছেন আলাদা ১২টি গল্প নিয়ে ১২ পর্বের ধারাবাহিক। মৃণাল সেনই একমাত্র নির্মাতা, যিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তিনটি চলচ্চিত্র উৎসব—কান, বার্লিন ও ভেনিস উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
চঞ্চল চৌধুরী এই ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে বলেন, "মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করা একটি দুঃসাহসিক ব্যাপার। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সাহস এবং যোগ্যতা প্রয়োজন, যা আমার আছে কিনা তা তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তবুও দুঃসাহস এবং কাজের প্রতি ভালোবাসার কারণে এই চরিত্রে অভিনয় করেছি।"
মৃণাল সেনের চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরীকে নেয়া প্রসঙ্গে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সৃজিত বলেন, দুইজনের মুখের মিল আছে। মৃণাল বাবুর মতোই চঞ্চলের চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত ধারালো ও সজাগ। তাছাড়া মৃণাল বাবুর রাজনীতি চেতনা, তার যাপন ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও চঞ্চলের প্রচুর মিল।
গত বছর ১৫ জানুয়ারি শুরু হয় পদাতিক-এর শুটিং। কলকাতা, মুম্বাইসহ বেশ কিছু স্থানে শ্যুটিং হয়। দেশের বাইরেও কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে। গত বছর মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী ছিল। তাকে শ্রদ্ধা জানাতেই প্রয়াত পরিচালকের জীবন, কর্ম ও সময়ের গল্প নিয়ে সৃজিত মুখার্জি তৈরি করছেন ‘পদাতিক’।
মৃণাল সেন বাংলা সিনেমার আইকোনোক্লাস্ট। কালাপাহারের মতই চলচ্চিত্রের প্রচলিত প্রথাকে সিনেমার প্রয়োজনে তিনি বারবার ভেঙেছেন। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলেছেন তিনি। বদলেছেন তাঁর সিনেমার ভাষা। ‘পদাতিক’ সিনেমাতে কতটুকু ‘মৃণাল সেন’ হয়ে উঠতে পেরেছেন চঞ্চল চৌধুরী, মৃণাল সেনের জীবনীকে কতটা ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন পরিচালক সৃজিত মুখার্জি, এই প্রশ্ন সকল চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের মনে। চঞ্চল-সৃজিত কি পারবে পূর্ণাঙ্গ ‘মৃণাল সেন’কে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে সবাই মুখিয়ে আছেন ১৫ আগস্ট ‘পদাতিক’ মুক্তির অপেক্ষায়।
পদাতিক মৃণাল সেন চঞ্চল চৌধুরী সৃজিত মুখার্জী
মন্তব্য করুন
পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতিমান পরিচালক সৃজিত মুখার্জি গত বছর নির্মাণ করেছেন একটি নতুন ছবি, যার নাম 'পদাতিক'। এই ছবিটি বরেণ্য চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেনের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত। মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী।
ছবিটির প্রথম লুক ও টিজার প্রকাশের পর থেকেই দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। চঞ্চল চৌধুরীর এমন রূপ দেখে অনেকে বিভ্রান্ত হয়েছেন, যেন চঞ্চল নিজেই মৃণাল সেন হয়ে উঠেছেন। কবে ছবিটি মুক্তি পাবে তা নিয়ে আগে কিছু নিশ্চিত করা হয়নি, কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় পরিচালক সৃজিত মুখার্জী একটি পোস্টার শেয়ার করে জানিয়েছেন যে ছবিটি এই আগস্টে মুক্তি পাবে। ছবির মুক্তির তারিখ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ভারতের স্বাধীনতা দিবস, অর্থাৎ ১৫ আগস্ট। পোস্টারে চঞ্চলের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ছবি রয়েছে। চঞ্চল ছাড়া পোস্টারে অন্য ব্যক্তিটিকে দেখে অনুমান করা যায় যে এটি মৃণাল সেনের শৈশবের চরিত্র, যা একজন তরুণ অভিনেতা অভিনয় করেছেন।
চঞ্চল চৌধুরী কিছুদিন আগে এই ছবিতে অভিনয়ের বিষয়ে বলেন, "মৃণাল সেনের চরিত্রে অভিনয় করা একটি দুঃসাহসিক ব্যাপার। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সাহস প্রয়োজন, যা আমার আছে কিনা এবং যোগ্যতা আমার আছে কিনা তা তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তবুও দুঃসাহস এবং কাজের প্রতি ভালোবাসার কারণে এই চরিত্রে অভিনয় করেছি। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা ছিল, কারণ তার কাজগুলো দেখে আমি মুগ্ধ।"
মৃণাল সেন হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে চঞ্চল বলেন, "আমাকে কিছু বই ও ভিডিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের অন্তরটা, দৃঢ়তা তো দেখা যায় না, সেগুলো অনুভব করতে হয়।"
চঞ্চল চৌধুরী সৃজিত মুখার্জি পদাতিক মৃণাল সেন
মন্তব্য করুন
ছোট পর্দার অভিনেত্রী হুমায়রা হিমুর মৃত্যু নিয়ে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে এবং তার এক বন্ধুকে আটক করা হয়েছে। হুমায়রা হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়ে আগামী ১ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন আদালত।
সোমবার (১ জুলাই) শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ নুরুল হুদা চৌধুরীর আদালত এই তারিখ নির্ধারণ করেন। এদিন মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিল, কিন্তু পুলিশ তা দাখিল করতে পারেনি। এজন্য বিচারক নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ঘটনার দিন হিমুর বাসায় তার প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফি (৩৬) এবং মেকআপম্যান মিহির ছিলেন। মিহির হিমুর বাসাতেই থাকতেন এবং রুফি ছয় মাস ধরে নিয়মিতভাবে সেখানে যাতায়াত করতেন এবং মাঝে মাঝে রাত্রীযাপন করতেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১ নভেম্বর হিমু রুফির মোবাইল নম্বর ও ভিগো আইডি ব্লক করে দেন, যা নিয়ে তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়। ২ নভেম্বর বিকাল ৩টার দিকে রুফি বাসায় এসে কলিং বেল বাজালে মিহির মেইন দরজা খুলে দেন এবং রুফি বাসায় প্রবেশ করেন। মিহির তার রুমে চলে যান। ৫টার দিকে রুফি মিহির রুমে এসে চিৎকার করে জানান হিমু আত্মহত্যা করেছে।
পরে মিহির জিজ্ঞাসা করলে রুফি জানান তিনি বাথরুমে ছিলেন। এসময় হিমু সিলিং ফ্যানের হুকের সঙ্গে রশি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন। মিহির হিমুর রুমে গিয়ে তাকে ফাঁস নেওয়া অবস্থায় পান এবং রুমে দুটি কাঁচের গ্লাস ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তারা দুজন হিমুকে নামিয়ে উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রুফি হিমুর মোবাইল ফোন দুটি নিয়ে কৌশলে চলে যান।
গত বছরের ২ নভেম্বর ছোট পর্দার অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু মৃত্যুবরণ করেন। রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হয়।
হিমুর মৃত্যুর ঘটনায় তার খালা নাহিদ আক্তার ২ নভেম্বর রাতে জিয়াউদ্দিন ওরফে রুফিকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পর রুফিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা গ্রেফতার পুলিশ
মন্তব্য করুন
এবারের ঈদে নির্মাতা রায়হান রাফি ‘তুফান’ সিনেমা দিয়ে তুমুল সাড়া ফেলেছেন। সেই উচ্ছ্বাস থামতে না থামতেই নতুন প্রজেক্টে হাত দিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, দেশের জনপ্রিয় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ’-এ আসছে রাফির নতুন ওয়েব সিরিজ ‘ব্ল্যাক মানি’। সম্প্রতি বঙ্গর অফিসে পরিচালক রায়হান রাফি ও বঙ্গের চিফ কন্টেন্ট অফিসার মুশফিকুর রহমান মঞ্জুর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে এই সিরিজে কোন তারকারা অভিনয় করবেন তা এখনও প্রকাশ করেননি নির্মাতা বা প্ল্যাটফর্ম।
বিংশ শতাব্দীর ত্রিশের দশকটি বাংলা সংস্কৃতির ভবিষ্যত ধারক-বাহকদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই দশকেই জন্মগ্রহণ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের তিন মহারথী। ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন সত্যজিৎ রায়, ১৯২৩ সালে মৃণাল সেন এবং ১৯২৫ সালে ঋত্বিক ঘটক। বাংলা চলচ্চিত্রের এই তিন মহারথীর একজন বিশ্ববরেণ্য পরিচালক মৃণাল সেনের জীবনী অবলম্বনে নির্মিত সিনেমা ‘পদাতিক’ অবশেষে বড়পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে।