নিজের বুকে সজোরে চাপর মারতে মারতে আর 'ইয়া হোসেন ইয়া হোসেন' শ্লোগান দিতে দিতে সরু গলিটি ধরে এগিয়ে যাচ্ছিল একদল যুবক।
তাদের খালি পা। পরনে কালো পোশাক। পুরান ঢাকার গলি দিয়ে যাচ্ছিল মিছিলটি । এটাই আশুরা বা মহররমের ঐতিহ্যবাহী মিছিল।
ইসলামের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন আশুরা। প্রতি বছর মহররম মাসের ১০ তারিখ কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণে দেশব্যাপী শিয়া মুসলিমরা তাজিয়া মিছিল বের করে।
শুধু দেশেই নয় মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশেও যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে পবিত্র আশুরার দিনটি পালিত হয়।
এদিন সকালেই পুরান ঢাকার হোসাইনি দালানের ইমামবাড়া থেকে প্রধান তাজিয়া মিছিল শুরু হয়। এছাড়াও রাজধানীর মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও লালবাগ থেকেও হায় হোসেন, হায় হোসেন মাতমে বুক চাপড়ে তাজিয়া মিছিলে কারবালা প্রান্তরের মর্মান্তিক ঘটনার স্মরণ করেন শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মহররম ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন হযরত মুহাম্মদ (স.) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.)।
ইসলামের ইতিহাসে পবিত্র এ দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছিলো আসমান ও জমিন।
সৃষ্টি করা হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ.) কে। এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত আছে, এ তারিখেই কেয়ামতও সংঘটিত হবে।
তবে বিগত দিনগুলোতে তাজিয়া মিছিলে ছুরি, ধারালো অস্ত্রসহ শিয়া অনুসারীদের ইমাম হোসেনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মরণে নিজের শরীরে আঘাত করে মাতম করতে দেখা গেলেও ২০১৫ সালের পর থেকে এ আয়োজনে আসে আইনী কড়াকড়ি। ২০১৫ সালে ইমামবাড়ায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকেই আশুরায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়। ঢাকা মহানগরে তাজিয়া মিছিলে নিষিদ্ধ করা হয় ধারালো অস্ত্র বহন।
আগে মহররমের দিন হোসাইনি দালানের আশপাশে রীতিমত মেলা বসে যেত, শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসবে মেতে উঠত। এখন আর কোন দোকানপাটই বসতে দেয়া হয়না। মহররমের কয়েকদিন আগের থেকে যে প্রস্তুতি শুরু হত তা ও ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। মানুষ এখন আর আগের মতন যেতে চায় না ভয় পায়।
এরপর থেকেই ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন হয়ে যায় কিছুটা বিবর্ণ।
প্রতিবারের মতো এবারও উড়বে লাল আর সবুজ নিশান, মাথায় থাকবে শোকের কালো কাপড়। কারবালার স্মরণে কালো চাঁদোয়ার নিচে বহন করা হবে ইমাম হোসেনের প্রতীকী কফিন। মিছিলের সামনে থাকবে ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়া। সবশেষে শান্তির আশায় মোনাজাত করে শেষ হবে তাজিয়া মিছিলের আনুষ্ঠানিকতা।
তবে ২০১৫ এর সেই অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর থেকেই তাজিয়া মিছিলে কমে গেছে জনসাধারণের অংশগ্রহণ। অনেকের মাঝেই জন্মেছে ভীতি। এবার আশুরায় দেশব্যাপী তাজিয়া মিছিল ঘিরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ঢাকা ও চট্রগামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে আতশবাজি, যেকোনো ধরনের অস্ত্র বহন। এমনকি রাজশাহীতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাজিয়া মিছিল। অনেকেই আবার তাজিয়া মিছিলে দীর্ঘাকৃতির আলম বহন করেন। তবে ইদানিং আলমের দৈর্ঘ্যেও এসেছে পুলিশি অনুশাসন।
আর এসব কারণেই গত কয়েক বছরে বিখ্যাত এই তাজিয়া হারিয়েছে তার পুরোনো যশ।
নিরাপত্তা আর আইনের বেড়াজালে হয়েছে ঐতিহ্যবাহী এই মিছিল হয়ে গেছে অনেকটাই বিবর্ণ ।
মন্তব্য করুন
মাধ্যপ্রাচ্য শেখ হাসিনা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রামাদান
মন্তব্য করুন
কাতারের আমির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি
মন্তব্য করুন
চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হিট এলার্ট জারি
মন্তব্য করুন
নাটোর সিংড়া উপজেলা পরিষদ ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি জুনায়েদ আহমেদ পলক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন