ইনসাইড বাংলাদেশ

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নজরুল

প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ২৫ মে, ২০২৪


Thumbnail

‘মরিছে হিন্দু, মরিছে মুসলিম, এ উহার ঘায়ে আজ

বেঁচে আছে যারা মরিতেছে তারা, এ মরণে নাহি লাজ।’ 

কেউ তাকে বলে হিন্দুদের কবি, কেউ আবার বলে মুসলমানের কবি। কিন্তু বস্তুত তিনি ছিলেন সাম্যের কবি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুক্ত প্রদীপ গড়েন তিনি। সাম্যবাদী চিন্তা ছিল তার মননে মস্তিষ্কে। তাই হয়তো তিনি বলে গেছেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।' 

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে তার জন্ম। তার জন্ম ভারতে হলেও তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। সাহিত্যে রয়েছে তার অনন্য অবদান। দিয়েছেন সাম্যবাদী, মরুভাস্কর, অগ্নিবীণার মত অসাধারণ সব উপহার। তার এই সব সৃষ্টির জন্য তাকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে তার লেখার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার, কুসংস্কার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।

সাহিত্যে অগ্নিবীণা হাতে প্রবেশ এবং ধুমকেতুর মতো প্রকাশ এই কবির। তবে তিনি সমাজের প্রতি যে অসম্প্রদায়িক বার্তা দিয়ে গেছেন সেটি করা তার পক্ষে মোটেই সহজ কাজ ছিল না। কেননা অসাম্প্রদায়িক চেতনার নজরুলের জন্মস্থানে ছিল সাম্প্রদায়িকতার জয়জয়কার। যার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায় এবং যে জীবনের তাগিদে মসজিদের ইমামতির কাজও করেছেন সে ব্যক্তি আবার বলেন, মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।'

নজরুলের বেড়ে ওঠার সময়টি ছিল তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য উত্তম সময়।দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন নজরুল। ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়ে, ইমামতি করে তিনি যেমন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, ঠিক তেমনি লেটো গানের দলে যোগ দিয়ে রপ্ত করেছিলেন রামায়ণ, মহাভারত আর পুরান।  লেটো দলে থাকাকালীন নজরুলের দুই বন্ধু ছিল এদের মধ্যে স্বৈরজা নন্দন মুখোপাধ্যায় ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ আর শৈলেন্দ্র কুমার ঘোষ ছিলেন খ্রিষ্টান। তিন বন্ধুর একত্রে মেলামেশা এবং ঘনিষ্ঠতার কারণে কৈশোর থেকেই নজরুলের মনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা দাগ কাটে।  তাছাড়া কবির বেড়ে ওঠার সময় বিশ্ব রাজনীতিতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারাকে  পিছনে ফেলে সামনে এসেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের বিপ্লব। তাছাড়া সে সময় ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা কিংবা বলা যায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এই সব কিছুকেই নজরুল মনে প্রাণে ধারণ করেছিলেন। সেজন্য আমরা তাকে দেখি কখনো বিদ্রোহী, কখনো সংস্কারবাদী আবার আবার তাকে কখনো দেখা যায় হামনাদ গাইতে বা আবার কখনো কখনো শ্যামা সঙ্গীত সৃষ্টি করতে। 

কাজী নজরুল ইসলাম বারবার লক্ষ্য করেছেন সাম্প্রদায়িক কলসের বীভৎস রূপ। তাকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কবি মানে এটি গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আর তা আমরা তার বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে খুঁজে পাই। দাঙ্গায় যে হিন্দু মুসলিম উভয় পক্ষেরই দায় রয়েছে তা তিনি পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে উপলব্ধি করেছেন। আর তাই সংকীর্ণ মানসিকতায় আচ্ছন্ন উগ্রপন্থীরা তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার। কিন্তু নজরুল দৃঢ়চেতা, তাকে থামানো যায়নি। শত জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেও তিনি সারাজীবন গেয়ে গেছেন সাম্যের গান। মানুষকে শিখিয়েছেন মানুষ হতে। 

নজরুল মনে করতেন সাম্প্রদায়িকতা ভারতীয় উপমহাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মূল সমস্যা। তিনি বিশ্বাস করতেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি এদেশের স্বীকৃত  মধ্যবিত্তের বই রিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তিনি বাঙালি কে কেবল বাঙালি বলেই চিহ্নিত করতেন। মনুষ্যধর্ম ছিল তার কাছে মূল ধর্ম। তাই তিনি বলে গেছেন, 'গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।'


কাজী নজরুল ইসলাম   জন্ম জয়ন্তী   জাতীয় কবি   অসাম্প্রদায়িতক চেতনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

পাহাড়ি ঢল-ভারী বর্ষণে দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

দেশজুড়ে কিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বেশিরভাগ বন্যাকবলিত জেলাগুলোর অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র দেশের নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস তুলে ধরে জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।

বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলেছে,  দেশের ১১০টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৯০টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ১৯টি ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১টি স্টেশনে। বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৯টি স্টেশনে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৫টি নদীর পানি।

এদিকে, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৯৮, জাফলংয়ে ৩০৯, ছাতকে ২৩০ ও লালাখালে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জে ৩০০, মহেশখালিতে ১৯৪ ও লরেরগড়ে ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নেত্রকোনার জারিয়াজাঞ্জাইলে ১৭৫ ও দুর্গাপুরে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কুড়িগ্রামে ১১৯, পাটেশ্বরীতে ১৪২ ও চিলমারীতে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌলভীবাজারে ১৮৩, চট্টগ্রামের রামগড়ে ১৬৯ ও নারায়নহাটে ১২৯, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ ও সিলেট
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আবারো প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। এদিকে সুরমাসহ সব নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো তলিয়েছে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের বিভিন্ন এলাকা। জানা যায় এ অঞ্চলে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ডুবেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ওয়ার্ড। নদ-নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সিলেটবাসীর এই ভোগান্তি চলতি জুলাইজুড়ে থাকার শঙ্কা রয়েছে। জুলাই মাস পুরোটাজুড়েই বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে জুলাই মাসে।

অতিবৃষ্টিতে সিলেট নগরীর উপশহর, তালতলা, মেজরটিলা, বাগবাড়ি, পায়রাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক তলিয়ে হয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় আবারো ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। কুশিয়ারার অমলশীদে ৭১ সেন্টিমিটার, শেওলায় ২২ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার ও মারকুলি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মনু নদীর মৌলভীবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

ফেনী
ফেনীর মুহুরি নদীর বাধ ভেঙে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আকস্মিক বন্যার কারণে স্থগিত করা হয় ফুলগাজী ও পরশুরামে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা। তবে ফেনীর  ফুলগাজী ও পরশুরামে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ক্রমেই ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা।

এর আগে গত রবি ও সোমবার পাহাড়ি ঢলের চাপে মুহুরী নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় ওই এলাকার ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মাছের খামার ও বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাঁচটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কার কাজ করা হবে।

ফেনীর মুহরি নদীর পানি কমতে শুরু করলে ফুলগাজীতে উন্নতি হলেও পরশুরামে অবস্থা  অপরিবর্তিত রয়েছে। শালধরের ভাঙন দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি এখন নেই। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের একটি বন্যায় পরশুরামে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং কাজও শুরু করেছিলেন। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই কাজ বন্ধ করে দিলে এ অঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এ অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ১০ লাখ টাকা, ২শ’ টন চাল এবং ২শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

চৌদ্দগ্রাম

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বীজতলা, ফসলি জমি ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খাল ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমি, পুকুর ও খাল ডুবে গেছে। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চৌদ্দগ্রাম নজমিয়া কামিল মাদ্রাসা, গুণবতী খাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। এ ছাড়া পৌর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ চেয়ারম্যান বাইপাস সড়ক, লক্ষ্মীপুর সড়ক, পশ্চিম ধনমুড়ি হায়দারপুল সড়কে পানি জমে থাকার কারণে কয়েকটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার আমন ধানের আগাম বীজতলা।

কৃষকের ঘরে নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজ। দিশাহারা কৃষক। পানি নিষ্কাশনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আগামী কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে কৃষকরা জানান।

বাতিসা ইউনিয়নের পাটানন্দী গ্রামের মমতাজ উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টির কারণে বীজতলাসহ শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পৌর এলাকার ফালগুনকরা গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আমন মৌসুমে ৩০ কেজি ধান কিনে বীজতলা তৈরি করে বীজ ফলানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ কেজি ধানের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে পানি জমেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি, সাজেক ও লংগদু
পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালাসহ নিম্নাঞ্চল। চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানিবন্দি হাজারো পরিবার। দীঘিনালার মেরুং, কবাখালী ও শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জানা যায়, মেরুং ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। এছাড়া কবাখালি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের পানি এখনো নামেনি। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পাশপাশি তলিয়ে গেছে মেরুং বাজার। বৃষ্টি চলতে থাকায় পাহাড় ধস ও বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির শঙ্কা রয়েছে এ অঞ্চলে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এর আগে মাটিরাঙার সাপমারায় ভোরে পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। পরে চার ঘণ্টার চেষ্টায় স্বাভাবিক হয় সড়ক যোগাযোগ। শহরের শালবাগান, হরিনাথপাড়া, রসুলপুর ও মেহেদিবাগে পাহাড় ধসে কয়েকটি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো মধ্য বোয়ালখালি গ্রাম থেকে সোবাহানপুর পর্যন্ত ২০টি গ্রাম পানি বন্দি। বন্যা দুর্গতদের আমরা সাহয়তা দিচ্ছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি বাড়ারসম্ভাবনা রয়েছে। মেরুংয়ের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনিত ঘটেছে। বুধবার (৩ জুলাই) স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সকাল ৯টায় জানায়, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর
বৃষ্টি না থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উজানের পানি নেমে গিয়ে ভাটি এলাকার নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

জানা যায়, আকস্মিক এই ঢলে অনেক রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে বৃষ্টি না হলেও শেরপুরের আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভাঙা বাঁধ ও নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর ভাঙা বাঁধের মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ২০ হেক্টর রোপা আমনের বীজ তলা, ১৫ হেক্টর আউশ এবং ৯৮ হেক্টর সবজি খেত আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ১৩৫ হেক্টর আউশ ও ১২৬ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫ হেক্টর রোপা আমন বীজলা আংশিকভাবে এবং ২০ হেক্টর রোপাআমন বীজতলা সম্পূর্ণভাবে পানিতে ঢুবে গেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, উজান থেকে পানি নেমে এখন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে যে সব রাস্তাঘাট, বাধ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া শেরপুরের শহর রক্ষা বাধ ভেঙে শহরসহ শেরপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নেত্রকোনা ও কলমাকান্দা  
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

রোববার রাত থেকে এ সব গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু সড়ক ও ঘরবাড়ি। পানি ঢুকছে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এছাড়া ঢলের পানিতে কলমাকান্দার প্রধান উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে গণেশ্বরী, মহাদেও, বাখলা, আত্রাখালী, ধলেশ্বরী, মঙ্গেলশ্বরী, বৈঠাখালী নদীর পানি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও, উদয়পুর-বড়খাপন, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়াসহ আরও বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে এ সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান উব্দাখালী নদীসহ সবকটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

জানা গেছে, এই পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্লাবিত হয়েছে বিশরপাশা, নাগডড়া, হরিণধরা, বাসাউড়া, কেশবপুর, চিনাহালা, চান্দুয়াইল, ডোয়ারিয়াকোনা, পাচকাঠা, সন্ধ্যাহলা, গণিয়ারগাও, কয়ড়া, ধনুন্ধ, মঙ্গলশীদ, মাকৈলুন্দ, গোয়াতলা, মূল পোগলা, ভাটিভাড়া, বড়ইউন্দ, কেশবপুর, কান্দাপাড়া, চৌহাট্টা, রাজনগর, জয়নগর, গৌরীপুর, লক্ষ্মীপুর, বিষ্ণুপুর, বাঘেরপাড়া, বাউসাম, বেনুয়া, চানকোনা, জামসেন, বাহাম, সাকুয়া ইন্দ্রপুর, রামভদ্রপুর, কালাইকান্দি, মুন্সিপুর, মনিপুরপাড়া, বিশাউতিসহ শতাধিক গ্রাম।  

বন্যার পানি ঢুকেছে, বাহাদুরকান্দা, বাসাউড়া, মাইজপাড়া, গোবিন্দপুর, চামারচানী, বেতুয়া-লাইয়া, মধ্যচকপাড়া, চকপাড়া, বাউসারী, কেশবপুর, নানিয়া, গণকপুঞ্জি, বাউসাম, খারনৈ, রুদ্রনগর, উত্তররানীগাও, গোয়াতলা, শুনই, পোগলা, বাদে গোপলা, পনারপারুয়া, ধীতপুর, গঙ্গানগর, ভাটিপাড়া, রানীগাও, কান্দাপাড়া, হরিণধরা, রাজাপুর, হরিপুর, রামনাথপুর, কাকুরিয়া মাছিমসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, কলমাকান্দায় ৪২টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। উপজেলায় ১৭২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয়কে বন্যা আগাম দুর্যোগ মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  

খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের বাউসাম, লক্ষ্মীপুর, শ্রীপুর, খাগগড়া, বিশ্বনাথপুর, সেনপাড়া, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান বলেন, বড়খাপন ইউনিয়নটি নিচু এলাকা। ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর একটু পানি বাড়লে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে। বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, প্রচুর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। আমরা সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজের জন্য নৌকা, ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


বন্যা   সিলেট   সুনামগঞ্জ   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নববধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের

প্রকাশ: ০৬:০৬ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

নড়াইলে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বখাটেদের হাতে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন এক নববধূ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিশে ঘটনার দুইদিন পর ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন অভিযুক্তের বড় ভাই। এরপর তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বুধবার (৩ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে নড়াইলে  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত “নববধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ সোয়া লাখ থেকে কমে ৩০ হাজার টাকা!”- এমন এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই নববধূর পক্ষে অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের সদস্য মোঃ সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত এক সুয়োমটোর আদেশবলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নড়াইল পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। একইসঙ্গে এই আদেশের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, জেলা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা কমিটি, নড়াইল বরাবর প্রেরণের পাশাপাশি পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরও এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

সেই সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২২ জুন বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বের হন এক নববধূ। এ সময় ওই মৎস্য ঘেরে উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের চিহ্নিত বখাটে ও মাদকাসক্ত আহাদ মোল্যা ও একই গ্রামের রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে ধরে দূরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে আহাদ মোল্যা ওই নারীকেও চড়-থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, আইফোন ও নগদ কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আহাদ মোল্যা ও রানা মুসাল্লীকে অভিযুক্ত করে কালিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করলেও অজ্ঞাত কারণে ঘটনার প্রায় ৯দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত বখাটে আহাদ মোল্যা (৩৫) উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মোল্যার ও রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা (৩০) একই গ্রামের মহিদুল মুসাল্লীর ছেলে।

পরে গ্রাম্য এক সালিশে বিষয়টি দফারফা করতে প্রথমে হামলার শিকার নববধূর (১৯) ইজ্জতের মূল্য ধার্য্য করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা! পরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। তারপরও অভিযুক্তের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় দুই দফায় গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও জরিমানার কোন টাকা দেওয়া হয়নি নববধূর পরিবারকে।

জানা যায়, ঘটনার দুইদিন পর ২৪ জুন রাতে চাঁচুড়ী গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান শেখের বাড়িতে প্রথম দফার গ্রাম্য সালিশে এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই গ্রাম্য সালিশে প্রতিপক্ষের সালিশদার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত আহাদ মোল্যার বড় ভাই প্রভাবশালী মো. আশরাফুল ইসলাম জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।

আর এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিষয়টি মীমাংসা করতে পুনরায় কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ডাকা সালিশে সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, চাঁচুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজির হোসেন মোল্যা, কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও স্থানীয় মাতব্বর হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নববধূর ইজ্জতের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩০ হাজার টাকা! কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সালিশের এ রায় প্রত্যাখ্যান করায় ২য় দফায় সালিশি বৈঠক করেও বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হন স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরে মারধর করে শ্লীলতাহানির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা আর কোনো যোগাযোগ করেনি।

পরে বিষয়টি ‘দৈনিক যুগান্তরে’ প্রকাশ হলে তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে ও এর প্রেক্ষিতে এক সুয়োমটো আদেশ জারি করে কমিশন। তাতে বলা হয়, সংবাদ প্রতিবেদনে বর্ণিত শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৪) ধারার অপরাধ এবং উক্ত অপরাধটি ধারা ১৯ অনুযায়ী আমলযোগ্য, জামিন অযোগ্য ও অ-আপসযোগ্য। ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তাছাড়া অপরাধটি অ-আপসযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী জনাব হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক দুই দফা গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের সামিল। উক্ত অভিযোগের বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে।

সুয়োমটোয় আরও উল্লেখ করা হয় যে, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী কর্তৃক থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অভিযোগটি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে, এ মর্মে পুলিশ সুপার, নড়াইল ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টার মতো গুরুতর অ-আপসযোগ্য অপরাধের বিষয়টি একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুন অর রশীদের উপস্থিতিতে সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টিকেও আমলে নিয়ে  তদন্তপূর্বক আগামী ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।


নড়াইল   নববধূ   জাতীয় মানবাধিকার কমিশন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

কোটা আন্দোলন: ট্রেন থামিয়ে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশ: ০৫:৫৭ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে ট্রেন অবরোধ করে অবস্থান করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও দুই দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (৩ জুলাই) দুই দফায় বিক্ষোভ মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল জব্বার মোড়ে রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করে অবস্থান নেন। ওই সময় এক ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ করে রাখা হয়।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে সমবেত হন শিক্ষার্থীরা। পরে সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কে আর মার্কেট হয়ে মুক্তমঞ্চে এসে শেষ হয়। মিছিল শেষে মুক্তমঞ্চের সামনে একটি প্রতিবাদ সভা করেন শিক্ষার্থীরা।

প্রতিবাদ সভা শেষে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড় পর্যন্ত আবারও বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা মোহনগঞ্জগামী মহুয়া কমিউটার ট্রেন আটকে রেখে মিছিল করেন। বেলা ১টা ২০ মিনিট থেকে ২টা ২০ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টা রেললাইন অবরোধ করে রাখার পরে আবার ট্রেন চলাচল শুরু হয়।

আন্দোলন চলাকালে ভেটেরিনারি অনুষদের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মাশশারাত মালিহা বলেন, ‘২০১৮-এর ছয় বছর পরে একই কোটা নিয়ে আবার আন্দোলনে নামতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এটিকে কি দেশের উন্নতি বলা যায়? ঘুরেফিরে আমরা ছয় বছর পিছিয়েই রইলাম। মুক্তিযোদ্ধা কোটা যদি থাকবেই, তাহলে একাত্তরে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রাণত্যাগ অর্থহীন হয়ে যায়। আমরা দেশের বীরদের অবশ্যই সম্মান করি। তবে কোনো ধরনের কোটা–বৈষম্য আমরা মেনে নেব না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, চাকরিতে নিয়োগ ও অন্য সব প্রতিযোগিতার জায়গায় আমরা মেধার শতভাগ মূল্যায়ন চাই।’

অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা আজীবন সর্বোচ্চ সম্মানের যোগ্য। তবে তাঁদের সম্মান দেওয়ার নাম করে কোটাপ্রথার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে চরম বৈষম্যের চেষ্টা করা হচ্ছে।’

প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, প্রথম দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বুধবার ( জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। পরদিন থেকেই ওই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।


বাকৃবি   কোটা আন্দোলন   ট্রেন অবরোধ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি

প্রকাশ: ০৫:৩৩ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

‘বৈষম্য নিপাত যাক-পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি মুক্তি পাক’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বৈষম্য দূরীকরণসহ অভিন্ন চাকুরি-বিধি বাতিলের দাবীতে তৃতীয় দিনের মতো সারা দেশের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেছেন।

 

কর্মবিরতি পালনের অংশ হিসেবে এদিন ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত তিনদিন ধরে সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলছে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।

 

বুধবার (৩ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে শহরের চকবিরাম নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কার্যালয় প্রাঙ্গনে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যকার বিভিন্ন বৈষম্যের প্রতিবাদে অবস্থান নিয়ে এই কর্মবিরতি পালন করা হয়। এসময় নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা ডিজিএম (টেকনিক্যাল) আকিয়াব হোসেনের নেতৃত্বে এজিএম রাজু হাসান ও জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার জাহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এসময় জেলার অন্যান্য উপজেলার নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।

 

আন্দোলনকারীরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদমর্যাদা, ৬মাস পিছিয়ে পে-স্কেল ও ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা প্রদান, এপিএ বোনাস সমহারে না দেওয়া, লাইনম্যানদের নির্দিষ্ট কর্মঘন্টা ও কাজের জন্য প্রয়োজনীয় লাইনম্যান ও বিলিং সহকারী পদায়ন না করা, যথাসময়ে পদন্নোতি না করা, মাঠ পর্যায়ে কর্মচারীদের চুক্তি ভিত্তিক চাকুরি নিয়মিত না করা সহ বিদ্যুতায়ন বোর্ডের বিভিন্ন অনিয়মের শিকার হচ্ছে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

দীর্ঘদিন ধরে চলা এসব শোষন, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ করে স্মার্ট ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গঠনের লক্ষ্যে অভিন্ন চাকুরী বিধি ও সকল চুক্তিভিত্তিক, অনিয়মিত কর্মচারীদের চাকুরি নিয়মিতকরনের দাবি জানান মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণাও দেয়া হয়।


পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি   কর্মবিরতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

পাবনায় আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন

প্রকাশ: ০৫:০৮ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনকে আসামি করার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেন নেতাকর্মীরা। বুধবার দুপুরে পাবনার সুজানগর উপজেলার চিনাখড়া এলাকায়।

পাবনা সুজানগরে আওয়ামী লীগ কর্মী মোজাহার বিশ্বাসকে হত্যা মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনকে আসামি করার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছের নেতাকর্মীরা।

 

বুধবার (০৩ জুলাই) দুপুরের দিকে ঢাকা-পাবনা মহাসড়কের চিনাখড়া বাজারে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে ঘন্টা ব্যাপি বিক্ষোভ, অবরোধ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের।

 

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সুজানগর পৌর মেয়র রেজাউল করিম রেজা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফেরদৌস আলম ফিরোজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রাজু আহমেদ, দুলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

 

এসময় বক্তারা বলেন, বর্তমান সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাব নির্বাচনে জয়ী হয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীনের সমর্থকদের উপরে নানাভাবে হামলা মামলা দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করছে।

 

 নির্বাচন পরবর্তী উপজেলার রানীনগর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আল আমিন হত্যা মামলায় চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাবের জড়িত থাকার বিষয়কে ধামাচাপা দিতে প্রতিপক্ষ সাবেক চেয়ারম্যান শাহীনকে মিথ্যা হত্যা মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। তাই এই মিথ্যা মামলা থেকে শাহীনের নাম দ্রুত প্রত্যাহার করে প্রকৃত আসামীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।

 

পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে নেতাকর্মীরা মহাসড়ক থেকে কর্মসূচি সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

 

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল ওহাব বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে তোলা এসব অভিযোগ বানোয়াট ছাড়া কিছু নয়। বরং নির্বাচনের পর থেকে শাহীনের লোকজন একের পর এক হামলা ভাঙচুর চালিয়ে আমার সমর্থকদের মারধর করছে। তার লোকজনের হামলায় আ.লীগ কর্মী মোজাহার বিশ্বাস মারা গেছে। সেই মামলায় যদি শাহীন আসামী হয় আমার কি করার আছে। এটি মামলার বাদির বিষয়।'

 

উল্লেখ্য, বিগত উপজেলা নির্বাচনের পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীনের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।

 

এ ঘটনার জেরে গত ২১ জুন উপজেলার রানীনগর এলাকায় ওহাব ও শাহীনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আল আমিন মিয়া (৩৫) নামে শাহীন গ্রুপের একজন কর্মী নিহত হয়। এ ঘটনায় জের ধরে ওইদিন রাতেই শাহীন গ্রুপের লোকজন আব্দুল ওহাব গ্রুপের সমর্থক মোজাহার বিশ্বাসকে এলোপাথারী কোপায়। পরে তিনি ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৭ জুন মারা যান।

 

এ ঘটনায় নিহত মোজাহার বিশ্বাসের ছোট ভাই জামাল বিশ্বাস বাদী হয়ে গত ৩০ জুন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুজ্জামান শাহীন কে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-২৭, জিআর ১২২/২৪।


মানববন্ধন   হত্যা মামলা   মিথ্যা অভিযোগ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন