সারাদেশের চলমান বন্যা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি দেশের বিভিন্ন জেলায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বেশিরভাগ বন্যাকবলিত জেলাগুলোর অবস্থা এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে দেশব্যাপী সৃষ্ট বন্যার ফলে নিকটবর্তী বাঁধে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যাচ্ছেন অসহায় মানুষ।
বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শনিবার (৬ জুলাই) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বএলছিলেন, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ১৫ জেলা বন্যার কবলে পরেছে। এসময় তিনি জানান, বন্যায় দেশের ২০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রংপুর, জামালপুর, গাইবান্ধা, ফেনী, রাঙামাটি, বগুড়া, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট ও কক্সবাজার জেলা রয়েছে। এদিকে বন্যার ফলে দেশের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা ও মেঘনার উজানে বন্যা দীর্ঘ হতে পারে জুলাই-আগস্টেও। বন্যা ব্যবস্থাপনা গবেষকরা বলেন, ১০ বছরে এই দুই অববাহিকায় বন্যার প্রবণতা বেড়েছে। এ বছরও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যার ভোগান্তি থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রও। জুলাইয়ের শেষে তিস্তার তীরেও হতে পারে বন্যা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী মাসে (আগস্ট) আরেকটি মৌসুমি বন্যার ঝুঁকি আছে। তবে, এখনই পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
সিলেট
দীর্ঘমেয়াদি বন্যার ফলে সিলেটের সদর উপজেলাসহ বিশ্বম্ভরপুর, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, দুয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে এ অঞ্চলের প্রায় ৫ লাখ মানুষ ক্ষতির কবলে পড়েছেন। নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাসহ অনেকেই এখন পানিবন্দি অবস্থায়ু দিন কাটাচ্ছেন। বন্যার পানিতে এ অঞ্চলের রাস্তাঘাট তলিয়ে যেতে দেখা গেছে। মানুষের পাশাপাশি হাঁস-মুরগী ও গৃহপালিত পশুগুলোকেও এসময় দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে থাকতে দেখা যায়। এদিকে বন্যার ফলে সিলেট ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সুনামগঞ্জের নদী ও হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে পড়ায় পানি এ অঞ্চলে খুব দ্রুত প্রবেশ করছে।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল এ অঞ্চলে ত্রাণ সরবরাহের ব্যাপারে আশ্বস্ত করে বলেন, ত্রাণ সহায়তার কোনো ঘাটতি নেই। প্রয়োজন ও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বেড়েছে তিস্তার পানিও। এদিকে বন্যার পানি ওঠায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে ৭ দিন ধরে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এদিকে এ এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যা কবলিতরা। পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বানভাসী মানুষের মাঝে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ সহয়তা লক্ষ্য করা গেলেও বেসরকারি ভাবে তেমন ত্রাণ সহয়তা দেখা যায়নি।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সামছুল আলম বলেন, বন্যার পানি ওঠার কারণে ১২১টি মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত নয়, এমন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
লালমনিরহাট
টানা ২৪ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধনে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ২নং সলিডারী স্পার বাঁধের সিসি ব্লক ধসে পড়েছে। বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছে তীরবর্তী মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। রাতে পানি আরও বৃদ্ধি পেলে ভাঙন বেড়ে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হতে পারে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের।
তীরবর্তী মানুষরা জানান, তিস্তার ভাঙন থেকে লালমনিরহাট সদর ও আদিতমারী উপজেলাকে রক্ষা করতে ২০০৪ সালে উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্দ্ধনে ২নং সলিডারী বন্যা নিয়ন্ত্রণ স্পার বাঁধ নির্মাণ করে পাউবো। এরপর একাধিকবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ স্পার-২ এ ধস দেখা যায়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন কোনো পদক্ষেপ নেন নি। ফলে এবারও নতুন করে ধস দেখা দিয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, বাঁধের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ায় জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে । এ বাঁধের জন্য মজুত রয়েছে। প্রয়োজনে আরও জিও ব্যাগ নেওয়া হবে। তীরবর্তী মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সবসময় তাদের পাশে আছি। তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। ফলে নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে।
সিরাজগঞ্জ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের হাট পাঁচিল গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙ্গনে ২৫ বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এছাড়া গত বছরে যমুনার ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত অর্ধশত মানুষের পাশের নিচু সমতল জমিতে নির্মাণ করা বাড়িঘর ৩/৪ ফুট বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ফলে তারা স্ত্রী সন্তান ও পরিবারের অন্যান্য নারী ও শিশুদের নিয়ে চৌকি অথবা মাচায় বাস করছে। গত কয়েকদিনেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি কোনো ত্রাণসামগ্রী বা অর্থ সাহায্য। বন্যার পানিতে চুলা ডুবে যাওয়ায় অনেকের ঘরে ঠিকমতো রান্নাও হচ্ছে না। ফলে তারা একবেলা আধবেলা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
এ বিষয়ে বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে মাচা ও চৌকিতে বাস করা হাট পাঁচিল গ্রামের আজিদা বেগম (৭৫), পরীবানু (৫০), বিউটি খাতুন (৪০), সুরা খাতুন (৪৫) বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে গেছে। এ পর্যন্ত চুলা জ্বালাতে পারিনি। ফলে রান্নাবান্নাও হয়নি। সকালে পান্তা ও চিড়া খেয়েছি। দুপুরে না খেয়ে আছি। রাতে কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।'
তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে তৈরি সিসি ব্লকের স্তূপে ছাউনি তুলে বাস করা বিধবা টুলু বেগম (৬৫) বলেন, যমুনায় বাড়িঘর বিলীন হওয়ার পর বাড়ি করার সামর্থ্য না থাকায় ব্লকের স্তুপের উপর পলিথিনের ছাউনি তুলে বাস করছি। এ ব্লকের স্তুপও বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এটা ডুবে গেলে কোথায় যাব জানি না। এ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।
মোতালেব হোসেন (৫০), ছগির মোল্লা (৫৫), আবু সাঈদ (৫০), সোহেল রানা বলেন, বন্যার পানিতে বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধি মা বাবাকে নিয়ে অতিকষ্টে চৌকি উঁচু করে অথবা মাচা পেতে আমরা ১০/১২টি পরিবার বাস করছি। রাতে ঘুমাতে পানি না ছোট ছোট ছেলে মেয়ে বন্যার পানিতে পড়ে তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে। ঘরে খাবার না থাকায় সেই সকালে খেয়েছি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার উপক্রম হল এখনও খাবার জোটাতে পারিনি। ফলে আমাদের এখানে সবগুলো পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে রয়েছে। তারপরেও আমাদের ভাগ্যে কোনো ত্রাণ সামগ্রী বা সরকারি বেসরকারি কোনো সাহায্য জোটেনি। কেউ আমাদের খোঁজ খবরও নেয়নি। আমরা আশায় বুক বেঁধে পথের দিকে চেয়ে আছি কেউ সাহায্য নিয়ে এদিকে আসে কি না। দুঃখের কথা এখনও কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি।
এদিকে শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাড়ামহোনপুর, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ইউনিয়নের জালালপুর, পাকুরতলা, গুচ্ছোগ্রাম, সৈয়দপুর, কৈজুরি ইউনিয়নের শরিফমোড়, মোনাকষা গ্রামে যমুনা নদীর ভাঙ্গণে আরও ২৫ বাড়িঘর যমুনাগর্ভে বিণিস হয়ে গেছে। অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়িঘর সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এছাড়া গত কয়েকদিনে যমুনার ভাঙ্গণে নিঃস্ব অর্ধশত মানুষ পাশের নতুন নির্মিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের স্লপে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ ছাড়া শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৫০০ বিঘা জমির নেপিয়ার ঘাস বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।
এ বিষয়ে ভাঙ্গণে নিঃস্বা জানায়, যমুনা নদীর ভাঙ্গণরোধে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০২১ সালের জুন মাসে ৪৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগ্রাম হতে হাট পাঁচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। এছাড়া আরও দু‘টি প্যাকেজে শরিফ মোড় হতে মোনাকষা কলেজ পর্যন্ত বালু বোঝাই টিউব ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেন। বার বার প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করেও কাজ শেষ না হলেও গত জুন মাসে এ প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজ বাকি রেখেই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ড আবারও আগামী ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িায়েছে বলে জানা গেছে।
শাহজাদপুর উপজেলার পাকুরতলা গ্রামের লাল মিয়া ও পাঁচিল গ্রামের আলাউদ্দিন, কালাম শেখ, আয়নাল হক অভিযোগ করে বলেন, চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জ পাউবোর ১৪জন ঠিকাদার সমন্বিত ভাবে যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করতো, তাহলে এবার বর্ষায় আমাদের এই সর্বনাশ হতো না।
এদিকে জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ বলেন, এবছরও যমুনার ভাঙ্গণে খুকনি, কৈজুরি ও জালালপুর ইউনিয়নের ভাঙ্গণ কবলিত গ্রাম গুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক দিনে অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ কাজ তিন বছরেও শেষ না হওয়ায় নদীতীরের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: কামরুজ্জামান বলেন, ভাঙ্গণ কবলিত ২০ পরিবারের জন্য ১ বান করে ঢেউটিন বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এছাড়া বন্যায় ডুবে যাওয়া বাড়িঘরের তালিকা তৈরির কাজ চলছে।'
গত ১২ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষাবাঁধের হার্ড পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো') উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এদিন সকাল ৬টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৯১ মিটার। গত ১২ ঘণ্টায় ২১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।
অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬০ মিটার। ১২ ঘণ্টায় ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা ১৪.৮০ মিটার)। সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার আরও বলেন, ‘পানি আগামী ৮ তারিখ পর্যন্ত বাড়বে, তারপর কমার সম্ভাবনা রয়েছে।'
ফেনী
ফেনীর উত্তরের দুই উপজেলায় মুহুরী-কহুয়া-সিলোনিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় মৎস্যখাতে রেণু, বড় মাছ ও পুকুরের অবকাঠামো মিলে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শনিবার (৬ জুলাই) সকাল থেকে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যায় মাছ চাষিদের অন্তত ১ কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি খামারি। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে দুই উপজেলার একক ও যৌথ মালিকানাধীন প্রায় ৩২৫টি পুকুর। এসব পুকুর থেকে ৫৭ লাখ টাকার বড় মাছ এবং ৩৭ লাখ টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে। এছাড়া দুই উপজেলায় খামারিদের প্রায় ২২ লাখ টাকার অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ফুলগাজী উপজেলায় ২৪৫টি পুকুর ভেসে সাড়ে ৪০ লাখ টাকার মাছ ও সাড়ে ৭ লাখ টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে। উপজেলায় মাছ চাষিদের ২০ লাখ টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।
সব মিলিয়ে ফুলগাজীতে ৬৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা হয়েছে। একইভাবে পরশুরাম উপজেলায় ৮০টি পুকুর ভেসে ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার মাছ ও ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে। উপজেলায় মাছ চাষিদের অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ টাকা। সব মিলিয়ে পরশুরামের মৎস্যখাতে প্রায় সাড়ে ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে দুই উপজেলার অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য পাঠানো হয়েছে। কোনো ধরনের সহযোগিতা আসলে তা খামারিদের প্রদান করা হবে।
এদিকে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. তরিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ভারতে বৃষ্টি হচ্ছে, সেহেতু ব্রহ্মপুত্রে বন্যা পরিস্থিতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্রে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ ছাড়া একটি বা দুটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে।
এ অবস্থায় মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতে ফের বন্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সরদার উদয় রায়হান। তিনি বলেন, বর্ষা মাত্র শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা চলমান। তারমধ্যে লা নিনা সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে আগস্টে আরেকটি বন্যার ঝুঁকি আছে।
‘লা নিনা’ হলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঠান্ডা ও অতিবৃষ্টি দেখা দেয়। মূলত লা নিনা চলাকালীন সমুদ্রের গভীর থেকে উঠে ঠাণ্ডা জল সমুদ্রের উপরিভাগে উঠে যায়। যার ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শুরু হয় প্রবল বর্ষণ।