ইনসাইড বাংলাদেশ

‘মতির স্ত্রী লায়লা কানিজকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে’

প্রকাশ: ০৮:২৫ পিএম, ৩০ জুন, ২০২৪


Thumbnail

সাংবাদিকদের নিয়ে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

রোববার এক বিবৃতিতে ডিইউজে সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন এ দাবি জানান। লায়লা কানিজ নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

ডিইউজের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার লায়লা কানিজ সাংবাদিকদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও হীন উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বড় বড় সাংবাদিককে কিনেই তারপর এসেছি। সব থেমে যাবে।’ তাঁর এমন বক্তব্য সাংবাদিক সমাজকে মর্মাহত করেছে। এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করে তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, উদ্দেশ্যমূলক মন্তব্য করে দুর্নীতির সেসব সংবাদ প্রকাশে সাংবাদিকদের বিরত রাখা যাবে না। একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে লায়লা কানিজের এ ধরনের ঔদ্ধত্যমূলক বক্তব্য দেওয়া অন্যায়।

কোনো সাংবাদিক লায়লা কানিজের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ নিলে বা সুবিধা আদায় করে থাকলে তার বা তাদের নামও প্রকাশ করা উচিত উল্লেখ করে ডিইউজে বলছে, ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়।

ঈদের আগে ১৫ লাখ টাকার ছাগলকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হন মুশফিকুর রহমান ওরফে ইফাত। এরপর তাঁর বিলাসী জীবনযাপনের নানা তথ্য প্রকাশ পায়। সেই সূত্রেই আলোচনায় আসেন ইফাতের বাবা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। তখন মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিপুল সম্পদের তথ্যও সামনে আসতে শুরু করে। মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ।


সাংবাদিক   মতি   ছাগলকাণ্ড  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকার কি পঁচা শামুকে পা কাটছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

একদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন অন্যদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলন। সবকিছু মিলিয়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলন জমে উঠেছে। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকার যদি এখনই গুরুত্ব না দেয় তাহলে এসব আন্দোলনগুলো পরবর্তীতে সরকারের জন্য বড় ধরনের মাথা ব্যাথার কারণ হবে। সরকার কি এ আন্দোলনগুলোকে গুরুত্বহীন মনে করছে? সরকার কি পঁচা শামুকে পা কাটছে? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ বড়ভাবেই উঠেছে। 

একথা ঠিক গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনকে সামাল দিয়েছে বেশ দক্ষতার সঙ্গে। কিন্তু এটা অস্বীকার উপায় নেই বিভিন্ন সময় সরকারকে পিছু হটে দাবি মোকাবেলা করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আর এবার শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হয়েছে শিক্ষকরা। আর শিক্ষক এবং ছাত্রদের এই আন্দোলন যে কিরকম ভয়াবহ হতে পারে তা এ সরকারের অজানা থাকার কথা না। কারণ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আন্দোলন যেকোন সরকারের জন্য বড় ধরনের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। 

এই সরকারের ১৫ বছরের বেশি সময়ের মেয়াদে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিলো। গোটা দেশ অচল হয়ে গিয়েছিলো। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছিলেন এবং সমস্ত কোটা বাতিল করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা পুনরায় চালু হয়। সেই কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। 

সেই আন্দোলন যৌক্তিক-অযৌক্তিক সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যে সারাদেশে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। পাশাপাশি শিক্ষকদের সাথে অযাচিতভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে সরকার। এবং সেক্ষেত্রে কিছু কিছু মন্ত্রীর বক্তব্য এতই দায়িত্ব জ্ঞানহীন যে তা শিক্ষকদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। 

এ দু’টি আন্দোলনের মধ্যে কোন যোগসূত্র নেই। কিন্তু দু’টি আন্দোলন যদি একসাথে দানা বেধে ওঠে তাহলে সরকারের জন্য সেটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আর একারণে এখনই সতর্কতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেকোন সংগ্রামের আঁতুড়ঘর। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকে সবসময় সমীহের চোখে দেখতে হবে। অতীতে, এমনকি সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দিনের সরকারকেও এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কাছে ন্যাক্কারজনকভাবে পরাজিত হতে হয়েছিল এবং নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। সেসময় শিক্ষকদের গ্রেপ্তার এবং হয়রানি, শিক্ষার্থীদের দমানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নিশ্চয় সেই পথে যাবে না। তবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এই বিষয়গুলো নিয়ে উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করতে হবে। যাদের উপর শিক্ষকদের আস্থা আছে, যাদের উপর শিক্ষার্থীরা আস্থা রাখেন তাদেরকেই দায়িত্ব দিতে হবে সমঝোতা চেষ্টার জন্য। দায়িত্ব জ্ঞানহীন যে সমস্ত মন্ত্রী সরকারে আছেন তারা যদি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাহলে এর সমাধান হবে না। আর আমলাদের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে এসে সরকার প্রধানকে নির্মোহভাবে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে হবে এবং বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। 

শিক্ষকরা এই পুরো পেনশন স্কিমের জন্য আমলাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। কাজেই আমলাদেরকে দূরে সরিয়ে রেখে, আমলা নির্ভর মন্ত্রীদেরকে আলোচনার টেবিলে না এনে শিক্ষকদের যাদের প্রতি আস্থা রয়েছে তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া উচিত আলোচনার জন্য। এই আন্দোলনকে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। অনেকে এর থেকে রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টা করবে। কাজেই এখনই এই বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।


সর্বজনীন পেনশন স্কিম   কোটা আন্দোলন   সরকার   শিক্ষক   শিক্ষার্থী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

এনজিওর নামে প্রতারণা: ফেনীতে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও

প্রকাশ: ০৭:৪৬ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় হঠাৎ করে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে একটি অফিস খোলেন কিছু ব্যক্তি। ‘ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পরিচয়ে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন প্রায় তিন কোটি টাকা। কয়েক মাসের মধ্যেই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে যান এই আমানত সংগ্রহকারীরা।

ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগই দিনমজুর, রিকশাচালক ও প্রবাসী। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, এনজিও পরিচয়ে ৮ জন তাঁদের কাছ থেকে এই আমানত সংগ্রহ করেন। আমানতের বিপরীতে সহজ কিস্তিতে ঋণ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, মৃত্যুর পর ঋণ মওকুফ, সঞ্চয়ের দ্বিগুণ লাভ, ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার মতো নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সোনাগাজী পৌরসভার চর গণেশ এলাকার হাওয়াই রোডের একটি বাড়ির নিচতলায় দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অফিস খোলা হয়। জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচয় দেন। এলাকাবাসীকে জানান, তাঁদের এনজিওর নিবন্ধন রয়েছে, এবং ঢাকার বনানীতে তাঁদের প্রধান কার্যালয়। এরপর, জসিম উদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা গ্রামের মানুষদের প্রলুব্ধ করে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন।

প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। তার আগেই ২৯ জুন রাতে অফিসে তালা লাগিয়ে জসিম উদ্দিন ও তাঁর ৭ সহযোগী পালিয়ে যান। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে চর গণেশ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে ‘ওপিডি সাপোর্ট সেন্টার’ স্টিকার লাগানো। দরজায় দুটি তালা লাগানো রয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, এর মধ্যে একটি তালা প্রতিষ্ঠানটির কথিত কর্মকর্তারা লাগিয়ে পালিয়ে গেছেন। অপর তালাটি ক্ষতিগ্রস্তরা এসে লাগিয়েছেন।

চর চান্দিয়া গ্রামের আয়েশা আক্তার, আসমা আক্তার, সুমি আক্তার, মো. শাকিল, নুর আলমসহ ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারকেরা তাঁদের কাছে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

গৃহবধূ সুমি আক্তার বলেন, বাড়ির অন্য নারীদের দেখে লাভের আশায় তিনি স্বামীর অজান্তে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তারা উধাও হওয়ার পর তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানান। এখন পারিবারিক কলহে তাঁর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে।

চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, তিনিও ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর মতো আরও পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় বলেন, বিষয়টি শোনার পর পুলিশ গিয়ে তালাবদ্ধ কার্যালয় দেখতে পেয়েছে। যেসব ব্যক্তি টাকা সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, লোভে পড়ে কিছু মানুষ অনিবন্ধিত এনজিওতে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।


এনজিও   প্রতারণা   ঋণ   আইনগত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ঢাকা-সিলেটসহ দেশের ৫ বিভাগ এখন গৃহহীনমুক্ত: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৭:২৭ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা-রাজশাহীসহ দেশের ৫ বিভাগ এখন সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত। এসব জেলা, উপজেলা ও বিভাগে কোন ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ নেই। বুধবার (০৩ জুলাই) জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।

এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আট লাখ ৬৭ হাজার ৯৭৭টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এতে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ লাখ ৩৯ হাজারেরও বেশি। এ পর্যন্ত ৫৮টি জেলা এবং ৪৬৪টি উপজেলা সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হয়েছে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী এ ৫টি বিভাগ এখন সম্পূর্ণভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত। অর্থাৎ এসব জেলা, উপজেলা ও বিভাগে কোনো ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষ নেই।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যারাক হাউজের মাধ্যমে আমরা ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৪৮টি পরিবারকে পুনর্বাসন করেছি। ব্যারাক হাউজ ছাড়াও আমরা ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৩টি পরিবারকে নিজ জমিতে বিনামূল্যে গৃহ নির্মাণ করে দিই। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫টি পরিবারের কাছে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ২ শতাংশ জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা একক ঘর হস্তান্তর করেছি। মুজিববর্ষে উপকারভোগী মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ। ভূমিহীন-গৃহহীন-ছিন্নমূল মানুষকে জমির মালিকানাসহ ঘর করে দেওয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে ৬ হাজার ৯৪৫ একর খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য তিন হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা।

এছাড়া সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী হাইড্রোজেন ও অ্যামেনিয়া থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

ওই সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রোবাংলার অধীন রূপান্তরিত গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে (আরপিজিসিএল) জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন উৎপাদনে টেকসই ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতির ওপর উন্নত বিশ্বের চলমান অধিকতর গবেষণাগুলোর ফলাফল এবং গৃহীত কার্যক্রমের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহরে লক্ষ্যে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। ওই সেল গ্রহণযোগ্য তথ্যাদি প্রাপ্তির পর একটি প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করবে। আশা করা যায় ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশে পরীক্ষামূলকভাবে হাইড্রোজেন জ্বালানি ব্যবহার সম্ভব হবে।

আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, ধনী, গরীব নির্বিশেষে সবার জন্য সমতার ভিত্তিতে সুবিচার নিশ্চিত করা এবং বিচার ব্যবস্থায় দৃশ্যমান উন্নয়ন সাধন করে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার বিচারপ্রার্থী জনগণের ভোগান্তি লাঘবে সঠিক বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

২০০৯ সাল থেকে অধস্তন আদালতে এক হাজার ৪২৯ জন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

সাতক্ষীরা-৪ আসনের এস এম আতাউল হকের প্রশ্নের সংসদ নেতা বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থ বছরের ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা থেকে ৯.১২ গুণ বাড়িয়ে সদ্য গত হওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এক লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। ১১৯টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এ সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা   বাংলাদেশ   সংসদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

পাহাড়ি ঢল-ভারী বর্ষণে দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

দেশজুড়ে কিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বেশিরভাগ বন্যাকবলিত জেলাগুলোর অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র দেশের নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস তুলে ধরে জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।

বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলেছে,  দেশের ১১০টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৯০টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ১৯টি ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১টি স্টেশনে। বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৯টি স্টেশনে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৫টি নদীর পানি।

এদিকে, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৯৮, জাফলংয়ে ৩০৯, ছাতকে ২৩০ ও লালাখালে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জে ৩০০, মহেশখালিতে ১৯৪ ও লরেরগড়ে ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নেত্রকোনার জারিয়াজাঞ্জাইলে ১৭৫ ও দুর্গাপুরে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কুড়িগ্রামে ১১৯, পাটেশ্বরীতে ১৪২ ও চিলমারীতে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌলভীবাজারে ১৮৩, চট্টগ্রামের রামগড়ে ১৬৯ ও নারায়নহাটে ১২৯, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ ও সিলেট
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আবারো প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। এদিকে সুরমাসহ সব নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো তলিয়েছে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের বিভিন্ন এলাকা। জানা যায় এ অঞ্চলে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ডুবেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ওয়ার্ড। নদ-নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সিলেটবাসীর এই ভোগান্তি চলতি জুলাইজুড়ে থাকার শঙ্কা রয়েছে। জুলাই মাস পুরোটাজুড়েই বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে জুলাই মাসে।

অতিবৃষ্টিতে সিলেট নগরীর উপশহর, তালতলা, মেজরটিলা, বাগবাড়ি, পায়রাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক তলিয়ে হয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় আবারো ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। কুশিয়ারার অমলশীদে ৭১ সেন্টিমিটার, শেওলায় ২২ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার ও মারকুলি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মনু নদীর মৌলভীবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

ফেনী
ফেনীর মুহুরি নদীর বাধ ভেঙে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আকস্মিক বন্যার কারণে স্থগিত করা হয় ফুলগাজী ও পরশুরামে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা। তবে ফেনীর  ফুলগাজী ও পরশুরামে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ক্রমেই ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা।

এর আগে গত রবি ও সোমবার পাহাড়ি ঢলের চাপে মুহুরী নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় ওই এলাকার ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মাছের খামার ও বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাঁচটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কার কাজ করা হবে।

ফেনীর মুহরি নদীর পানি কমতে শুরু করলে ফুলগাজীতে উন্নতি হলেও পরশুরামে অবস্থা  অপরিবর্তিত রয়েছে। শালধরের ভাঙন দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি এখন নেই। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের একটি বন্যায় পরশুরামে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং কাজও শুরু করেছিলেন। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই কাজ বন্ধ করে দিলে এ অঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এ অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ১০ লাখ টাকা, ২শ’ টন চাল এবং ২শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

চৌদ্দগ্রাম

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বীজতলা, ফসলি জমি ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খাল ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমি, পুকুর ও খাল ডুবে গেছে। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চৌদ্দগ্রাম নজমিয়া কামিল মাদ্রাসা, গুণবতী খাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। এ ছাড়া পৌর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ চেয়ারম্যান বাইপাস সড়ক, লক্ষ্মীপুর সড়ক, পশ্চিম ধনমুড়ি হায়দারপুল সড়কে পানি জমে থাকার কারণে কয়েকটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার আমন ধানের আগাম বীজতলা।

কৃষকের ঘরে নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজ। দিশাহারা কৃষক। পানি নিষ্কাশনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আগামী কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে কৃষকরা জানান।

বাতিসা ইউনিয়নের পাটানন্দী গ্রামের মমতাজ উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টির কারণে বীজতলাসহ শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পৌর এলাকার ফালগুনকরা গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আমন মৌসুমে ৩০ কেজি ধান কিনে বীজতলা তৈরি করে বীজ ফলানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ কেজি ধানের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে পানি জমেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি, সাজেক ও লংগদু
পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালাসহ নিম্নাঞ্চল। চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানিবন্দি হাজারো পরিবার। দীঘিনালার মেরুং, কবাখালী ও শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জানা যায়, মেরুং ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। এছাড়া কবাখালি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের পানি এখনো নামেনি। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পাশপাশি তলিয়ে গেছে মেরুং বাজার। বৃষ্টি চলতে থাকায় পাহাড় ধস ও বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির শঙ্কা রয়েছে এ অঞ্চলে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এর আগে মাটিরাঙার সাপমারায় ভোরে পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। পরে চার ঘণ্টার চেষ্টায় স্বাভাবিক হয় সড়ক যোগাযোগ। শহরের শালবাগান, হরিনাথপাড়া, রসুলপুর ও মেহেদিবাগে পাহাড় ধসে কয়েকটি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো মধ্য বোয়ালখালি গ্রাম থেকে সোবাহানপুর পর্যন্ত ২০টি গ্রাম পানি বন্দি। বন্যা দুর্গতদের আমরা সাহয়তা দিচ্ছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি বাড়ারসম্ভাবনা রয়েছে। মেরুংয়ের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনিত ঘটেছে। বুধবার (৩ জুলাই) স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সকাল ৯টায় জানায়, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর
বৃষ্টি না থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উজানের পানি নেমে গিয়ে ভাটি এলাকার নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

জানা যায়, আকস্মিক এই ঢলে অনেক রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে বৃষ্টি না হলেও শেরপুরের আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভাঙা বাঁধ ও নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর ভাঙা বাঁধের মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ২০ হেক্টর রোপা আমনের বীজ তলা, ১৫ হেক্টর আউশ এবং ৯৮ হেক্টর সবজি খেত আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ১৩৫ হেক্টর আউশ ও ১২৬ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫ হেক্টর রোপা আমন বীজলা আংশিকভাবে এবং ২০ হেক্টর রোপাআমন বীজতলা সম্পূর্ণভাবে পানিতে ঢুবে গেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, উজান থেকে পানি নেমে এখন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে যে সব রাস্তাঘাট, বাধ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া শেরপুরের শহর রক্ষা বাধ ভেঙে শহরসহ শেরপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নেত্রকোনা ও কলমাকান্দা  
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

রোববার রাত থেকে এ সব গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু সড়ক ও ঘরবাড়ি। পানি ঢুকছে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এছাড়া ঢলের পানিতে কলমাকান্দার প্রধান উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে গণেশ্বরী, মহাদেও, বাখলা, আত্রাখালী, ধলেশ্বরী, মঙ্গেলশ্বরী, বৈঠাখালী নদীর পানি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও, উদয়পুর-বড়খাপন, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়াসহ আরও বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে এ সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান উব্দাখালী নদীসহ সবকটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

জানা গেছে, এই পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্লাবিত হয়েছে বিশরপাশা, নাগডড়া, হরিণধরা, বাসাউড়া, কেশবপুর, চিনাহালা, চান্দুয়াইল, ডোয়ারিয়াকোনা, পাচকাঠা, সন্ধ্যাহলা, গণিয়ারগাও, কয়ড়া, ধনুন্ধ, মঙ্গলশীদ, মাকৈলুন্দ, গোয়াতলা, মূল পোগলা, ভাটিভাড়া, বড়ইউন্দ, কেশবপুর, কান্দাপাড়া, চৌহাট্টা, রাজনগর, জয়নগর, গৌরীপুর, লক্ষ্মীপুর, বিষ্ণুপুর, বাঘেরপাড়া, বাউসাম, বেনুয়া, চানকোনা, জামসেন, বাহাম, সাকুয়া ইন্দ্রপুর, রামভদ্রপুর, কালাইকান্দি, মুন্সিপুর, মনিপুরপাড়া, বিশাউতিসহ শতাধিক গ্রাম।  

বন্যার পানি ঢুকেছে, বাহাদুরকান্দা, বাসাউড়া, মাইজপাড়া, গোবিন্দপুর, চামারচানী, বেতুয়া-লাইয়া, মধ্যচকপাড়া, চকপাড়া, বাউসারী, কেশবপুর, নানিয়া, গণকপুঞ্জি, বাউসাম, খারনৈ, রুদ্রনগর, উত্তররানীগাও, গোয়াতলা, শুনই, পোগলা, বাদে গোপলা, পনারপারুয়া, ধীতপুর, গঙ্গানগর, ভাটিপাড়া, রানীগাও, কান্দাপাড়া, হরিণধরা, রাজাপুর, হরিপুর, রামনাথপুর, কাকুরিয়া মাছিমসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, কলমাকান্দায় ৪২টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। উপজেলায় ১৭২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয়কে বন্যা আগাম দুর্যোগ মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  

খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের বাউসাম, লক্ষ্মীপুর, শ্রীপুর, খাগগড়া, বিশ্বনাথপুর, সেনপাড়া, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান বলেন, বড়খাপন ইউনিয়নটি নিচু এলাকা। ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর একটু পানি বাড়লে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে। বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, প্রচুর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। আমরা সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজের জন্য নৌকা, ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।


বন্যা   সিলেট   সুনামগঞ্জ   বাংলাদেশ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নববধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের

প্রকাশ: ০৬:০৬ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

নড়াইলে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বখাটেদের হাতে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন এক নববধূ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিশে ঘটনার দুইদিন পর ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন অভিযুক্তের বড় ভাই। এরপর তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বুধবার (৩ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে নড়াইলে  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত “নববধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ সোয়া লাখ থেকে কমে ৩০ হাজার টাকা!”- এমন এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই নববধূর পক্ষে অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের সদস্য মোঃ সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত এক সুয়োমটোর আদেশবলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নড়াইল পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। একইসঙ্গে এই আদেশের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, জেলা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা কমিটি, নড়াইল বরাবর প্রেরণের পাশাপাশি পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরও এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

সেই সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২২ জুন বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বের হন এক নববধূ। এ সময় ওই মৎস্য ঘেরে উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের চিহ্নিত বখাটে ও মাদকাসক্ত আহাদ মোল্যা ও একই গ্রামের রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে ধরে দূরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে আহাদ মোল্যা ওই নারীকেও চড়-থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, আইফোন ও নগদ কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আহাদ মোল্যা ও রানা মুসাল্লীকে অভিযুক্ত করে কালিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করলেও অজ্ঞাত কারণে ঘটনার প্রায় ৯দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত বখাটে আহাদ মোল্যা (৩৫) উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মোল্যার ও রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা (৩০) একই গ্রামের মহিদুল মুসাল্লীর ছেলে।

পরে গ্রাম্য এক সালিশে বিষয়টি দফারফা করতে প্রথমে হামলার শিকার নববধূর (১৯) ইজ্জতের মূল্য ধার্য্য করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা! পরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। তারপরও অভিযুক্তের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় দুই দফায় গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও জরিমানার কোন টাকা দেওয়া হয়নি নববধূর পরিবারকে।

জানা যায়, ঘটনার দুইদিন পর ২৪ জুন রাতে চাঁচুড়ী গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান শেখের বাড়িতে প্রথম দফার গ্রাম্য সালিশে এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই গ্রাম্য সালিশে প্রতিপক্ষের সালিশদার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত আহাদ মোল্যার বড় ভাই প্রভাবশালী মো. আশরাফুল ইসলাম জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।

আর এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিষয়টি মীমাংসা করতে পুনরায় কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ডাকা সালিশে সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, চাঁচুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজির হোসেন মোল্যা, কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও স্থানীয় মাতব্বর হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নববধূর ইজ্জতের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩০ হাজার টাকা! কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সালিশের এ রায় প্রত্যাখ্যান করায় ২য় দফায় সালিশি বৈঠক করেও বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হন স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরে মারধর করে শ্লীলতাহানির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা আর কোনো যোগাযোগ করেনি।

পরে বিষয়টি ‘দৈনিক যুগান্তরে’ প্রকাশ হলে তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে ও এর প্রেক্ষিতে এক সুয়োমটো আদেশ জারি করে কমিশন। তাতে বলা হয়, সংবাদ প্রতিবেদনে বর্ণিত শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৪) ধারার অপরাধ এবং উক্ত অপরাধটি ধারা ১৯ অনুযায়ী আমলযোগ্য, জামিন অযোগ্য ও অ-আপসযোগ্য। ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তাছাড়া অপরাধটি অ-আপসযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী জনাব হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক দুই দফা গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের সামিল। উক্ত অভিযোগের বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে।

সুয়োমটোয় আরও উল্লেখ করা হয় যে, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী কর্তৃক থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অভিযোগটি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে, এ মর্মে পুলিশ সুপার, নড়াইল ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টার মতো গুরুতর অ-আপসযোগ্য অপরাধের বিষয়টি একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুন অর রশীদের উপস্থিতিতে সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টিকেও আমলে নিয়ে  তদন্তপূর্বক আগামী ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।


নড়াইল   নববধূ   জাতীয় মানবাধিকার কমিশন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন