ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুন পেনশন স্কিমে কমবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুবিধা

প্রকাশ: ১১:৩২ এএম, ০১ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

নতুন পেনশন ব্যবস্থায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুবিধা ‘কমবে’। শিক্ষকেরা তাই নতুন ব্যবস্থাটি প্রত্যাহারের দাবি করছেন। এ দাবিতে আজ সোমবার থেকে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) শুরুর দিন আজ চালু হচ্ছে সর্বজনীন পেনশনের কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে আজ ১ জুলাই থেকে যাঁরা যোগ দেবেন, তাঁদের জন্য এ কর্মসূচি প্রযোজ্য হবে।

তবে সিদ্ধান্তটিকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করে আসছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বর্তমান পেনশন ব্যবস্থা ও নতুন পেনশন ব্যবস্থার তুলনামূলক একটি চিত্র তৈরি করেছে।


কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদন বলছে, নতুন পেনশন ব্যবস্থায় মাসে মাসে এখনকার চেয়ে ২ দশমিক ৭ গুণ টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু এ জন্য শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন থেকে টাকা কাটা হবে। অবসরের পর কোনো এককালীন টাকা পাওয়া যাবে না, বছর বছর পেনশন বাড়বে না এবং পেনশনারের মনোনীত ব্যক্তি এখনকার মতো আজীবন পেনশন পাবেন না। আরও কয়েকটি সুবিধা না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষকেরা বলছেন, সব মিলিয়ে নতুন ব্যবস্থায় তাঁদের সুবিধা কমে যাবে। এটা বৈষম্যমূলক।

অবশ্য নতুন কর্মসূচি চালু করতে অনড় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অন্য কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে প্রত্যয় চালুর কোনো বিরোধিতা আসেনি বলেও পেনশন কর্তৃপক্ষের দাবি। সংস্থাটির সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল রোববার বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ জুলাই থেকেই প্রত্যয় চালু হবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, যাঁদের জন্য এটি প্রযোজ্য, তাঁরা লাভবানই হবেন। কোনো অসংগতি ধরা পড়লে ভবিষ্যতে সংশোধন করা যাবে। এখনই এ নিয়ে বিরোধিতার কিছু নেই।’

চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা। কর্মসূচিগুলোর আওতায় গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩ লাখ ৩২ হাজার ৭৭৩ জন গ্রাহক হয়েছেন। জমা পড়েছে ৯৭ কোটি টাকা।

নতুন কর্মসূচি প্রত্যয় প্রযোজ্য হবে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশসহ (আইসিবি) সব রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও সরকারি ব্যাংক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআইসহ প্রায় ৪০০ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের নতুন কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য।

এদিকে এবারের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সরকারি চাকরিজীবীদেরও সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আরেকটি কর্মসূচি চালু হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সেটির নাম হবে ‘সেবক’।

শিক্ষকদের সুবিধা কীভাবে কমবে

অর্থ বিভাগ গত ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রত্যয় কর্মসূচি পর্যালোচনার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। কমিটির সদস্যরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক আবুল বারকাত, বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান মাসুদা ইয়াসমীন, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মাসুদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী এবং ফিন্যান্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সজীব হোসেন।

কমিটি একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমান ব্যবস্থায় একজন অধ্যাপক মাসে ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা পেনশন পান। এ জন্য তাঁদের বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না। নতুন ব্যবস্থায় ৩০ বছর বয়সে যোগ দিয়ে ৬৫ বছর বয়সে অবসর নিলে মাসে মাসে বেতন থেকে টাকা কাটার পর পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা। কিন্তু আনুতোষিক বা গ্রাচ্যুইটি বাবদ এককালীন ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা নতুন ব্যবস্থায় পাওয়া যাবে না। এই টাকা পেনশন তহবিল বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা যোগ করলে বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশন দাঁড়ায় মাসে ১ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

কমিটি বলছে, বর্তমান ব্যবস্থায় পেনশনারের (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মী) মৃত্যুর পর তাঁর নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তি (স্বামী/স্ত্রী) আজীবন পেনশন সুবিধা পান। নতুন ব্যবস্থায় পেনশনারের মৃত্যু হলে তাঁর ৭৫ বছর বয়স যেদিন হতো, সেদিন পর্যন্ত পেনশন পাবেন মনোনীত ব্যক্তি, আজীবন নয়। এখন বছর বছর পেনশন বাড়ে, অর্থাৎ ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) হয়। নতুন ব্যবস্থায় পেনশন বাড়বে না। অর্জিত ছুটির বিপরীতে অবসরকালে এখনকার মতো টাকা পাওয়া যাবে না। অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটির (এলপিআর) বিষয়ে নতুন ব্যবস্থায় কিছু বলা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষকেরা ৬৫, কর্মকর্তারা ৬২ ও কর্মচারীরা ৬০ বছর বয়স হলে অবসরে যান। নতুন ব্যবস্থায় ৬০ বছর বয়সের পর পেনশন পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকেরা এখন পেনশনের সঙ্গে বছরে দুটি উৎসব ভাতা ও একটি বৈশাখী ভাতা এবং মাসে মাসে চিকিৎসা ভাতা পান। নতুন ব্যবস্থায় বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা নেই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রত্যয় চালুর মাধ্যমে বিদ্যমান সুবিধা কাটছাঁট করা হচ্ছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী এবং এতে শুভংকরের ফাঁকি আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং পাঁচ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছি। সেখানে দেখিয়েছি যে প্রত্যয় আমাদের জন্য কতটা অবমাননাকর। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি।’

দেশে এখন কার্যক্রমে থাকা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি। সেখানে শিক্ষক রয়েছেন ১৬ হাজারের কিছু বেশি। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪ হাজারের মতো।

ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সাংবাদিকেরা শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর কাছে শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, পেনশন বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সব স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা কিছু করতে হলে সেইভাবেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অচলাবস্থার সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অচলাবস্থার সৃষ্টির বিষয়ে তিনি এখনই কিছু বলছেন না। গণতান্ত্রিক দেশে সবার রাজনীতি ও বাক্স্বাধীনতার অধিকার আছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা নেবেন।

(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, ১ জুলাই ২০২৪)


পেনশন   বিশ্ববিদ্যালয়   কর্মবিরতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

পাবনায় মাদক বিরোধী অভিযানে হামলা, কাউন্সিলরসহ আটক ৩

প্রকাশ: ১০:০৩ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

পাবনা শহরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

 

বুধবার (৩ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে পাবনা শহরের রাধানগরের সিংগা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে এই ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ও অন্যান্য আটককৃতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলী জানান, বিকেলে ওই এলাকায় পাবনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের লোক অভিযানে যায়। এসময় তাদের আটক করে রাখে পাবনা পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান রাজিবসহ তার অনুসারীরা। 

 

খবর পেয়ে পাবনা সদর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধারে গেলে পুলিশের ওপরও হামলা করে তারা। এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৪ জন ও ২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অভিযান চালিয়ে রাজিবসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।


মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পাবনা কার্যালয়ের এসআই জাকির হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে অভিযান চালানো হচ্ছিল। অভিযানের সময় রাজিব কমিশনার ও তার লোকজন হামলা চালায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।


মাদক বিরোধী অভিযান   হামলা   গ্রেপ্তার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগে ইউপি সদস্যকে জরিমানা

প্রকাশ: ০৯:৫৭ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

যশোরের শার্শায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ইউপি সদস্যকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।

 

বুধবার (৩ জুলাই) বিকালে উপজেলার আমলাই গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে এ জরিমানা আদায় করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট নুসরাত ইয়াসমিন।

 

ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্টেট নুসরাত ইয়াসমিন জানান,উপজেলার গোগা ইউনিয়নের আমলাই গ্রামের উত্তরের মাঠে মাছের ঘের থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি ওই গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।আর এই বালু উত্তোলনের ফলে আসপাশের ফসলি জমি গুলো হুমকির মুখে পড়ছে এমন গোপন খরবে আমি সহযোগী ফোর্স  নিয়ে সেখনে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সত্যতা পাই এবং ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে স্বীকার করে। পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তার কাছ থেকে ৬০ হাজার জরিমানা আদায় করা হয়।

 

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ইয়াসমিন আরা জানান, সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে  


অবৈধ বালু উত্তোলন   জরিমানা   ইউপি সদস্য  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ দুর্নীতির মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র বাতিল


Thumbnail

সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা সেই আলোচিত মামলায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুদকের অন্য একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তদন্তে পক্ষপাত অভিযোগপত্র বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায়এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গেল রোববার (৩০ জুন) এই আদেশ দেন।

মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর জুলাই দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা, ঠিকাদার প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে এজাহারভুক্ত ৩৪ জন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন করে যুক্ত করা হয় ছয় জনকে।

এরপর মামলাটি বিচারের জন্য সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটের বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানো করা হয়। ওই আদালতে অভিযোগ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ঠিকাদার আফজালুর রহমান একটি আবেদন জমা দিয়ে দুদকের অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আপত্তি দেন। আদালত তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করলে তিনি হাইকোর্টে একটি রিভিশন মামলা (রিভিশন মামলা নম্বর ৭৬/২০২৩) করেন। গত বছরের ১১ জুলাই হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার প্রাথমিক শুনানি হয় এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করা হয়।

অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় নাম থাকা একজন ঠিকাদার ছিলেন টাঙ্গাইলের আকুর ঠাকুর পাড়ার বাসিন্দা গুডম্যান এন্টারপ্রাইজ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আফজালুর রহমান।

আফজালুর রহমানের আইনজীবী এম আবদুল কাইয়ুম জানান, তাঁরা আবেদনে তদন্ত নিরপেক্ষ বিশ্বাসযোগ্য হয়নি এবং এই অভিযোগপত্রে বিচার হলে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেছিলেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা দুইবার এসে আদালতে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি আদালতকে সন্তুষ্ট করতে পারনেনি। পরে আদালত ওই অভিযোগপত্র বাতিল এবং ছয় মাসের মধ্যে পুনরায় তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেয়ার আদেশ দিয়েছেন।

মামলার বছর পর নোটিশ পেয়ে হাওরে বাঁধ দুর্নীতি মামলার সাক্ষীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ দুদক কর্মকর্তা আদালতে যে অভিযোগপত্র জমা দেন, সেটিতে আসামি হিসেবে ৩৩ জন ছিলেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা দেওয়ানি অপরাধের পাশাপাশি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, ১৯ জন ঠিকাদার পাউবোর ১৪ কর্মকর্তা পরস্পর যোগসাজশে প্রতিবছর বন্যা আসার সময় আশঙ্কা সম্বন্ধে অবহিত থাকা সত্বেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি কোটি ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। তাঁদের অর্থ আত্মসাৎ অবহেলার কারণেই হাওর অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষক জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতি হয়।

মামলার ৬১ আসামির মধ্যে তদন্তে বাদ পড়েন পাউবোর প্রকৌশলী, সেকশন কর্মকর্তা ২৮ জন ঠিকাদার। বাদ পড়া প্রকৌশলীরা হলেন সুনামগঞ্জ পাউবোর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই সাবেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস। সাবেক তিন সেকশন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া জাহাঙ্গীর হোসেনও বাদ পড়েছেন অভিযোগপত্র থেকে।

ঠিকাদারদের মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ বর্তমান চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, সজিব রঞ্জন দাস, খন্দকার শাহীন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, এম হান্নান, কামাল হোসেন, কাজী নাছিমুদ্দিন, খন্দকার আলী হায়দার, আকবর আলী, রবিউল আলম, আবুল হোসেন, শিবব্রত বসু, মোজাম্মেল হক, বাচ্চু মিয়া, বিপ্রেশ তালুকদার, জামিল ইকবাল, চিন্ময় কান্তি দাস, খাইরুজ্জামান, মফিজুল হক, মোখলেছুর রহমান, রেনু মিয়া, শামসুর রহমান, আবদুল মান্নান, মাহতাব চৌধুরী, লুৎফুল করিম, মো. কেফায়েতুল্লাহ, হুমায়ুন কবির ইকবাল মাহমুদ এজাহারে আসামি থাকলেও অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়েন।

দুদকের মামলার পর একই বছরের আগস্ট আরেকটি মামলা করে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি। সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে মামলাটি করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক। মামলায় আসামি করা হয় ১৩৯ জনকে। দুদকের মামলার ৬১ আসামিকে এই মামলারও আসামি রাখা হয়। এর বাইরে ৭৮ জন ছিলেন ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি সাধারণ সম্পাদক। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানোর আদেশ দেন।

কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। পরে বাদী এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন দেন। এই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত গত বছরের ১৯ জানুয়ারি নারাজি গ্রহণ করেন এবং মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

হাওরের বোরো ফসল ডুবির প্রেক্ষাপট ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল অতিবৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। হাওরে ফসলহানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর দুদক ১৩ এপ্রিল হাওরের ফসলহানি বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের তদন্তে দুদকের পরিচালক বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এরপর ১৫ এপ্রিল পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ফসলহানির ঘটনায় ৩০ মে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। মে পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) আবদুল হাই, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান শেষে জুলাই মামলা হয়।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে ওই সময় ১৫৪টি হাওরে লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ কৃষক পরিবার।

যদিও স্থানীয় কৃষকদের দাবি ছিল, সে বছর হাওরের শতভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ওই সময়ের ফসল ডুবির ঘটনায় দৈনিক যুগান্তর বাংলা ইনসাইডারে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সরকার প্রধানের নজরে আসে প্রতিবেদনগুলো। এরপর হাওরবাসীর ওই সময়ে একমাত্র বোরো ফসল ডুবির ঘটনার সরেজমিনে দেখতে সুনামগঞ্জ ছুটে আসেন তৎকালীন সময়ে থাকা প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ প্রথধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


দুদক   অভিযোগপত্র   হাওড় রক্ষা বাঁধ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে আইওয়াশের অভিযান, বিনিময়ে শাস্তি পেল এসআই


Thumbnail

উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় মাদক চোরাচালান বিরোধী বিশেষ অভিযানের নামে থানা পুলিশ আইওয়াশের পর শুধু মাত্র দুই কার্টুন ভারতীয় শেখ নাসির বিড়ি জব্দ করেই অভিযান সমাপ্ত করেছে।  

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নানা নাটকীয়তা সময়ক্ষেপনের পর থানা পুলিশের এমন অভিযান নিয়ে সচেতন মহলে গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমুর্তিকে ফের প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

তাহিরপুর থানায় জব্দ তালিকা এজাহার সুত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৩০ জুন) মধ্য রাত পরবর্তী কোন এক সময়ে থানার এক এসআই সঙ্গীয় অফিসার্স নিয়ে বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের এক কাঠ মিস্ত্রির দোকান কোটার তালা ভেঙ্গে দুই কার্টুন ভারতীয় শেখ নাসির বিড়ি জব্দ করেন।

জব্দ তালিকা তৈরীর পর পরদিন জুলাই অভিযান পরিচালনাকারী এসআই বাদী হয়ে উপজেলার কামড়াবন্দ গ্রামের শেখ গোলাম রব্বানীর ছেলে শেখ মানিককে একমাত্র পলাতক আসামী অজ্ঞাত নামা থেকে জনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।

এর পূর্বে শনিবার সকালে বাদাঘাট বাজারে আসা এক নেটিজেন মসজিদের পেছনে জনৈক ব্যক্তির পাকা মার্কেটে থাকা একটি কক্ষের ভেতর চোরাকারবারীদের ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ শেখ নাসির বিড়ির সারি সারি খাঁচা কয়েক কার্টুন বিদেশি মদের চালান মজুদ করে রাখার ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেন।

তথ্য ওই নেটিজেন জনস্বার্থে থানা পুলিশকে জানানোর পরও তারা অভিযানে সায় দেননি। এরপর বিষয়টি জেলা পুলিশের দায়িত্বশীলদের ভিডিও ফুটেজ প্রেরণ করে অবহিত করা হয়।
রোববার বিকেলে জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল অফিসারগণ থানা পুলিশকে অভিযানের নির্দেশনা দিলেও পুলিশ সময়ক্ষেপন করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে অভিযানের খবর থানা পুলিশের নিকট থেকে চোরাকারবারীরা জেনেও যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কয়েক লাখ টাকার ভারতীয় বিড়ি খাঁচা ও বিদেশি মদের কার্টনগুলো তারা।

এদিকে চোরাচালানীরা নিরাপদে সড়ে যাবার পরই রোববার মধ্যরাত পরবর্তী সময়ে যখন বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী রাতে ঘুমাতে যান ঠিক তখনই চোরাচালানীদের নির্দেশিত কাঠ মিস্ত্রি দোকান কোটার তালা ভেঙ্গে দুই কার্টুন ভারতীয় শেখ নাসির বিড়ি মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ করে অভিযান সমাপ্ত করেন।


এদিকে ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ একাধিক বিড়ি, বিদেশি মাদক চোরাকারবারী, তাদের পেছনে থাকা গড ফাদারদেরকে রক্ষার কৌশল হিসাবে তড়িঘড়ি করে একজনকে পলাতক আসামী দেখিয়ে সোমবার সকালে  থানায় মামলা দায়ের করানো হয় অভিযান পরিচালানাকারী এসআই পার্ডন কুমার সিংহকে দিয়ে।
বুধবার সকালে তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, অভিযানে দুই কার্টুন ভারতীয় বিড়ি জব্দ করা হয়েছে,এক চোরাকারবারীকে পলাতক আসামী দেখিয়ে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, ‘ঊধ্বর্তন অফিসারগণের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে মাদকসহ চোরাচালান বিরোধী অভিযান পরিচালনা না করায় অভিযানের নেতৃত্বে থাকা এসআই পার্ডন কুমার সিংহকে মঙ্গলবার রাতে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।


আইওয়াশ অভিযান   চোরাকারবরি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

মডেল মসজিদ নির্মাণে স্বামীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ স্ত্রীর

প্রকাশ: ০৮:৫৭ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকার ২০১৭ সালে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৬৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পটি দুবার সময়সীমা বাড়ানোর পরও শেষ না হওয়ায়, আরও দু বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়। শুরুতে ৮৪২ কোটি টাকা বাজেট ছিল, তবে পরবর্তীতে এটি বেড়ে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে, যা এটিকে বিতর্কিত করে তোলে। নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তার স্ত্রী রেজওয়ান আহমেদ খুশবু প্রমাণসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

জানা যায়, দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আশরাফুজ্জামান নীলফামারীতে যোগদান করেন। তিনি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে নীলফামারী সদর ও জলঢাকা উপজেলায় নির্মিতব্য মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তদারকির দায়িত্ব পান। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নীলফামারী সদর উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়। সদর উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় শেষ হয়। জলঢাকা উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ এখনও চলমান রয়েছে। এ দুই মসজিদ নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

খুশবু অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২১ সালের জুলাই অথবা আগস্ট মাসে মোবাইল ফোনে আমার স্বামী মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ হতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতার করতে শুনি। ফোনালাপ শেষে আমি তাকে বলি, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখান থেকে তুমি ঘুষ নেবে?’ এতে সে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ সময় গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড রকম অপমানিত বোধ করলেও কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এরপর থেকেই সামান্য ব্যাপারেও কথাকাটাকাটি হতে শুরু হয়। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। খুশবু আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে স্বামীর ঘুষ নেওয়ার তথ্য পেয়ে বারবার অনুরোধ করেও তাকে দুর্নীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। বলে, তুই ও তোর পরিবার আমার কিছুই করতে পারবি না। আমার ক্ষমতা ও টাকার কাছে তোরা ভেসে যাবি। এভাবে বলতে বলতে অনেক মারধর করে। তার ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মেনে নিলে চুপচাপ থাকলে সব স্বাভাবিক থাকত। নির্যাতন করত না। যখন সে সৎ ছিল তখন কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী তাকে বলে যে সে এরকম থাকতে চায় না, বড়লোক হতে হবে। যদি মডেল মসজিদ থেকে ঘুষ নিতে না দিস তাহলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়। সংসারের সুখ-শান্তির কথা বিবেচনা করে নানা অজুহাতে তাকে ৭ লাখ টাকা এনে দেন। এছাড়া বিয়ের সময় তার বাবার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়া হয়। বিয়ের পর বাড়ি সংস্কারের কথা বলে আরও আট লাখ টাকা নেওয়া হয়।

সন্তান জন্মের পর খুশবু একদিন মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করলে আশরাফুজ্জামান উত্তর দেন যে নানা কাজে টাকা-পয়সা লেনদেন করতে হয়, তাই এই প্রতিষ্ঠান। যদিও প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে মূলত অন্য উৎস থেকে।

তিনি আরও বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলার রূপালী ব্যাংকে তার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এবং তার স্বামী জোরপূর্বক ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেন। খুশবু সচিবের কাছে অভিযোগ করেন, এবং সচিব সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।

আশরাফুজ্জামানের বাবা আব্দুল মান্নান একজন পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। পাঁচ বছরে তাদের বাড়ির চেহারা বদলেছে; দুই কক্ষের ঘর থেকে পাঁচ কক্ষের আলিশান বাড়ি হয়েছে। বাড়ির একপাশে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের নামে একটি গুদাম ঘর তৈরি করা হয়েছে। ২০২২ সালে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয় এবং ২০২৩ সালের মে মাসে প্রায় ১১০০ মণ ভুট্টা ক্রয় করে সেই গুদামে রাখা হয়। যদিও প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ভুট্টা বিক্রি হয়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায় জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা জমা হয়েছে এবং ৩৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এফডিআর ক্লোজড বাবদ জমা হয়েছে।

মডেল মসজিদ প্রকল্পের পরিচালক নজিবুর রহমান জানান, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুজ্জামান জানান, উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ ছিল এবং তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর মেয়েপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করে, যার কারণে আশরাফুজ্জামান জামিনে আছেন।

আশরাফুজ্জামান তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সাবেক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে এবং তাকে হয়রানি করার জন্য এই সমস্ত অভিযোগ উত্থাপন করেছে।


মডেল মসজিদ   দুর্নীতি   তদন্ত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন