ইনসাইড বাংলাদেশ

অনিশ্চয়তা আর বহু চ্যালেঞ্জে শুরু নতুন অর্থবছর, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

প্রকাশ: ০১:৫৯ পিএম, ০১ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

২০২০ সালে করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলো তখনও বেশ ভালো ছিল। ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর একে একে খারাপ হতে শুরু করে দেশের অর্থনীতি। এক মার্কিন ডলারেই কাবু হয়ে পড়ে পুরো অর্থনীতি। নিত্যপণ্যের দামে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। নানা সমস্যায় জর্জরিত অর্থনীতি আজ সোমবার নতুন আরেকটি অর্থবছর শুরু করছে।

সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের মতো নতুন অর্থবছরেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ডলার–সংকট, খেলাপি ঋণের বোঝা, ক্ষয়িষ্ণু রিজার্ভ। পুরোনো এসব চাপের পাশাপাশি নতুন চাপ হিসেবে সামনে আসছে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ও ব্যাংক খাতের দুরবস্থা। তবে অর্থনীতির অন্যতম সূচক প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ে কিছুটা স্বস্তি আছে। তবে,সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে, এটাই এখন দেখার বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ এ নিয়ে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহ, ডলার–সংকট, খেলাপি ঋণ ও অর্থ পাচার এখন অর্থনীতির বড় সমস্যা। এ জন্য কৌশল নির্ধারণ করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। একদিকে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি, অন্যদিকে উচ্চ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য; এমন সমন্বয়হীনতা থাকলে সংকট কাটবে না।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, বাজারে তদারকি বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, সেগুলোর দামও বাড়ছে। বাজার তদারকির দুর্বলতার কারণেই এটি ঘটছে। ব্যাংক খাত যেভাবে চলছে, সেভাবে আর চলতে দেওয়া ঠিক হবে না। এখনই এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে পুরো খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার একটা বার্তা যায়।

উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে নাকাল মানুষ

১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। খাদ্য মূল্যস্ফীতিও ১০ শতাংশের ওপরে উঠেছে। এতে কষ্টের মধ্যে আছেন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ। এ জন্য অনেককে বাজারের ফর্দ ছোট করতে হয়েছে, আবার অন্য খরচ কমিয়ে বাজার খরচ সমন্বয় করছেন কেউ কেউ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসের মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসে সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল। ফলে পুরো অর্থবছরেই সাধারণ মানুষকে গড়ে সাড়ে ৯ শতাংশের মতো মূল্যস্ফীতির চাপ সহ্য করতে হয়েছে। এর মানে হলো, কোনো মানুষ আগের বছরের একই সময়ে ১০০ টাকায় যে পণ্য ও সেবা কিনতে পারতেন, এ বছর ১১ মাস ধরে একই পণ্য ও সেবার জন্য তাঁকে খরচ করতে হচ্ছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও আজ শুরু হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী।

ডলারের চাপে অর্থনীতি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্বজুড়ে খাদ্য, জ্বালানি ও পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়। ফলে আমদানি খরচ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়। দেখা দেয় ডলার–সংকট। ডলারের বিনিময় মূল্যও হু হু করে বাড়তে শুরু করে। এতে সংকট আরও প্রকট হয়। এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির সব খাতে।

ডলারের দাম নিয়ে নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর গত মে মাসে ডলারের দাম ও ব্যাংকঋণের সুদহার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি জানিয়েছে, ডলারের দাম ১১৭ টাকার আশপাশে থাকবে, যা যা আনুষ্ঠানিকভাবে ১১৮ টাকা। ২০২২ সালের জুনে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৮ টাকা । ফলে ৮৮ টাকার ডলারের দাম ২ বছরে ৩০ টাকা বা ৩৪ শতাংশ বেড়ে যায়।

কর্মসংস্থানে স্থবিরতা

ডলার–সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্পের মূলধনি যন্ত্র আমদানি। ফলে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। এতে থমকে গেছে কারখানার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ, যার প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে আমদানি খরচ হয়েছে ৪ হাজার ৯২১ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ কম। এ সময়ে শিল্পের মূলধনি যন্ত্রের আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এদিকে সুদের হার বাজারভিত্তিক হওয়ায় ঋণের সুদ উঠেছে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশে। ফলে বেড়েছে ব্যবসা করার খরচ। এ কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, এতে কর্মসংস্থান স্থবির হয়ে গেছে।

নতুন দুশ্চিন্তা বিদেশি ঋণ শোধ

অর্থনীতিতে নতুন দুশ্চিন্তা এখন বিদেশি ঋণ শোধ। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে যত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, তা ১০ মাসেই ফুরিয়ে গেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসেই (জুলাই-মে) বিদেশি ঋণ পরিশোধে খরচ হয়েছে ৩০৭ কোটি ডলার। এর আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এবার ৬০ কোটি ডলার বা ২৫ শতাংশ বেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এ সময় সুদ ও আসল মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ। বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও মেট্রোরেল প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হয়েছে। তাতে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

রিজার্ভ পরিস্থিতি ও আর্থিক হিসাব

ডলারের সংকট না কাটায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে নিয়মিতভাবে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে রিজার্ভ কমে গেছে। ২০২৩ সালের ২৬ জুন মোট রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১১৪ কোটি ডলার বা ৩১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জুনে তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭১৫ কোটি ডলারে। যদিও প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম, প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে চলতি হিসাবে ৩২৯ কোটি ডলার ঘাটতি হলেও ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ৫৭৯ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত হয়েছে। চলতি হিসাবের পরিস্থিতির উন্নতি হলেও আর্থিক হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। গত জুলাই-মার্চে এই ঘাটতি ছিল ৯২৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৯২ কোটি ডলার।

ভালো আছে দুই সূচক

অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচক খারাপ অবস্থায় থাকলেও রপ্তানি ও প্রবাসী আয় কিছুটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় রয়েছে। ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে প্রবাসী আয়ে। জুনের প্রথম ২৩ দিনে ২০০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এদিকে গত জুলাই-মে সময়ে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় দেশে এসেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি।

আয় কম, খরচেও টান

অর্থনীতির গতি কমে আসায় কাঙ্ক্ষিত হারে শুল্ক-কর আদায় হচ্ছে না। এর ফলে সরকারকে খরচের লাগাম টানতে হচ্ছে। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ছিল এনবিআরের। কিন্তু জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত আদায় হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাকি দুই মাসে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে, যা প্রায় অসম্ভব।

এদিকে, সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৭ শতাংশ, যা গত ৩ অর্থবছরে সর্বনিম্ন। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সংশোধিত এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা।

নাজুক ব্যাংক খাত

ব্যাংক খাতের পরিস্থিতিও এখন নাজুক। জোরপূর্বক ব্যাংক একীভূত করতে গিয়ে এ খাতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে কয়েকটি ব্যাংক। আবার দীর্ঘদিন ধরে তারল্য–সংকটে রয়েছে ইসলামি ধারার বেশ কয়েকটি ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতার কারণে প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন ব্যাংক ও তাদের ঋণ অনেকটা তদারকির বাইরে রয়েছে। খেলাপি ঋণ জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসেই বেড়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত মার্চের শেষে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। ব্যাংক খাতের পাশাপাশি ধুকছে শেয়ারবাজারও।

অর্থ পাচার ও দুর্নীতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতি ও অঢেল সম্পদের তথ্য বিষয়টিকে নতুন করে সামনে এনেছে। ফলে অর্থনীতি নিয়ে নতুন অর্থমন্ত্রীর সামনে স্বস্তির চেয়ে চ্যালেঞ্জই বেশি। নতুন অর্থমন্ত্রী এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে মানুষকে কতটা স্বস্তি দিতে পারবেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো, জুলাই ২০২৪)


অর্থবছর   বাংলাদেশ ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

মতিউরের দুর্নীতি নিয়ে দুদকের ধীরে চলো নীতি কেন?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. মতিউর রহমানের দুর্নীতি তদন্ত নিয়ে খুব ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দুর্নীতি দমন কমিশন এখন পর্যন্ত কেবল তার বিদেশযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা এবং তার কিছু সম্পত্তি জব্দ করেছে মাত্র। কিন্তু তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনে হাজির করা বা তার অন্যান্য সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে তেমন কোন উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়। বিশেষ করে, বেনজীর আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের যেমন তদন্তের শুরুতেই দুদকে তলব করা হয়েছিল। ড. মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে সেটি এখন পর্যন্ত করা হয়নি। এটি কেন করা হয়নি এবং তদন্তে কেন ধীর গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

উল্লেখ্য যে, এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশনের চার বার মতিউরের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়েছিল এবং চার বারই দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে শ্বেত-শুভ্রতার ক্লিন শিট দিয়েছিল। আর এই কারণেই দুর্নীতি দমন কমিশন সতর্কতার সঙ্গে এই তদন্ত করছে কি না, সেটি নিয়ে কেউ কেউ ভাবছেন। 

তবে অনেকেই মনে করেন যে, ড. মতিউর রহমান অনেক প্রভাবশালী ছিলেন। প্রশাসন এবং সরকারের অন্দরমহলে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তাদের কারণেই মতিউর রহমানের ব্যাপারে একটি স্থবির তদন্ত হচ্ছে কিনা সেটিও ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে অনেকে মনে করেন৷ বিশেষ করে, মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা যেভাবে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে নানা রকম কথাবার্তা বলছেন, তাতে অনেকেরই সন্দেহ হচ্ছে যে লায়লা এবং মতিউর রহমান হয়তো সরকারের কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। 

বিশেষ করে, মতিউর রহমানের সঙ্গে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছবি ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই সমস্ত ছবিগুলো ব্যাপারে ঐ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য করেননি। তারা বিব্রত হয়েছেন কি না সেই তথ্যটিও জানা যায়নি। আর তারাই শেষ পর্যন্ত মতিউর রহমানকে বাঁচানোর জন্য কোন গোপন চেষ্টা করছেন কিনা সেটা নিয়েও জনমনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। 

বিশেষ করে, দুর্নীতি দমন কমিশনে মতিউর রহমান তার স্ত্রী-পুত্রকে না ডাকার বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মতিউর রহমান কোথায় আছেন সে তা নিয়েও প্রশ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। মতিউর রহমানকে ইতোমধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে সংযুক্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি সেখানে অফিস করেননি। শুধুমাত্র ই-মেইলের মাধ্যমে একটি যোগদানপত্র দিয়েছেন। 

বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে যেমন দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তের একটি সাজ সাজ রব ছিল। সেরকম অবস্থাটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না ড. মতিউর রহমানের ক্ষেত্রে। মতিউর রহমানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পরও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মতিউর রহমানের স্ত্রীকে উপজেলা পরিষদ থেকে অব্যাহতি দেয়নি বা বরখাস্ত করেনি। 

বিভিন্ন সময় আমরা দেখি যে এই ধরনের অভিযোগ আসার সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত শুরু করার পর জনপ্রতিনিধিদের সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয় বা ভাইস চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু এখনও লায়লা রায়পুরা উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার দায়িত্বে থাকার পিছনে স্থানীয় এমপির ভূমিকার কথা শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় এমপির সঙ্গে তার বেশ কিছু ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। 

সাম্প্রতিক সময়ে সরকার যে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেছে তা ব্যাপক ভাবে প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু মতিউর রহমানের তদন্ত যদি প্রভাবশালীদের প্রভাবের কারণে বিঘ্নিত হয় বা শ্লথ হয়ে যায় তাহলে সাধারণ মানুষের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান সম্পর্কে আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে। আর এই কারণে দ্রুত মতিউর রহমান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন। 

সাধারণ মানুষ মনে করেন, মতিউর রহমান যেহেতু চাকরি স্থলে উপস্থিত হচ্ছেন না। সেহেতু তাকে অনতিবিলম্বে সাসপেন্ড করা উচিত। মতিউর রহমানের স্ত্রী রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যানকে অনতিবিলম্বে দায়িত্ব থেকে সাময়িক  দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। আর এই বিষয়গুলো দেরি হলে দুদকের স্বচ্ছতা এবং দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের পক্ষপাতহীনতাকে নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।


মতিউর   দুর্নীতি   লায়লা কানিজ   দুদক   ধীরে চলো নীতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়ার মৃত্যু দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি: পাপন

প্রকাশ: ০৯:৫২ পিএম, ০৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের বিখ্যাত দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।  

শোকবার্তায় মন্ত্রী মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

শোকবার্তায় মন্ত্রী বলেন, ‘বিখ্যাত দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান দেশের একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দাবাড়ু ছিলেন। দেশের দাবার উন্নয়ন তথা গোটা ক্রীড়াঙ্গনে তার অনবদ্য অবদানের জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তার মৃত্যু দেশের ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ’ 

উল্লেখ্য, ২০০২ সালে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করা জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ড মাস্টার।


গ্র্যান্ডমাস্টার   জিয়া   পাপন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

সৌদিতে নিহত প্রবাসীর মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপের দাবি স্বজনদের

প্রকাশ: ০৯:৪৪ পিএম, ০৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

সৌদি আরবের রিয়াদের মুসাসানাইয়া এলাকায় একটি সোফা তৈরির কারখানায় আগুনে পুড়ে চার বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার রয়েছেন তিনজন। বুধবার (৩ জুলাই) সৌদির স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা নাগাদ আগুনের এই ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। নিহতদের তিন পরিবার থেকেই দ্রুত মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা চাচ্ছেন।

 

নিহতদের মধ্যে আত্রাই উপজেলার তেজনন্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে ফারুক হোসেন (৪০), শিকারপুর গ্রামের সাহাদ আলীর ছেলে এনামুল হোসেন (২৫) ও দিঘা স্কুলপাড়া গ্রামের কবেজ আলীর ছেলে শুকবর রহমান 

(৪০) ।

 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে তেজনন্দি গ্রামের ফারুক হোসেনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন,পাড়া প্রতিবেশি এবং আত্মীয় স্বজন ও শুভাকাংখিরা ভিড় করে আছেন। গ্রাম জুড়েই যেন কান্না আর শোকের রোল পরে গেছে। ফারুকের স্ত্রী-দুই সন্তানকে যেন কেউ থামাতেই পারছেননা। বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন। 

 

ফারুকের ভাতিজা পিন্টু আলী জানান, চাচা ফারুক হোসেন গার্মেন্টেসে কাজ করতেন। গত প্রায় ৬বছর আগে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। কিন্তু যাবার পর থেকেই সেখানে নানা সমস্যার মধ্যে পরে যায়। গত প্রায় ৮মাস হচ্ছে স্থায়ীভাবে সোফা তৈরির কারখানায় কাজে যোগদান করেছেন। এরই মধ্যে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ মোবাইল ফোনে জানতে পারেন কারখানায় আগুনে ফারুক নিহত হয়েছেন।

 

উপজেলার দিঘা গ্রামের নিহত শুকবর আলীর জামাই বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, তার শ্বশুড় কৃষি শ্রমিক ছিলেন। গত আড়াই বছর আগে একমাত্র সম্বল ১১শতক জায়গা বিক্রি করে তার সাথে ধার-দেনার টাকায় সৌদি আরবে যান। এখন পর্যন্ত ধার-দেনার টাকা শোধ করতে পারেননি। শুকবরের দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেদের মধ্যে বড় ছেলে শামীম হোসেন প্রতিবন্ধি। তার মাথা গোঁজার একমাত্র বাড়ীর তিন শতক জায়গা ছাড়া আর কোন জমি নেই। কিভাবে শাশুড়ি,শ্যালকদের নিয়ে চলবেন তা নিয়ে ঘোর বিপাকে পরেছেন। শশুড় শুকবর আলীই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি।

 

শিকারপুর গ্রামের নিহত যুবক এনামুলের চাচা জাহিদুল ইসলাম জানান, এনামুল গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন। অনেকটা সুখের আসায় ঘর বাঁধতে ধার-দেনা করে সৌদি আরবে যান। সেখান থেকে কেবলমাত্র রোজগারের টাকায় ধার-দেনা শোধ করে ইটের বাড়ী নির্মান করছেন। বাড়ীর কাজ শেষ হলে আগামী বছর নাগাদ দেশে এসে বিয়ে করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা তার ভাগ্যে সইলো না ।

বুধবার রাত অনুমান সাড়ে ১০টা নাগাদ আগুনে পুরে মারা যাবার খবর আসে। তখন থেকেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোকে বাবা-মা পাথর হয়ে গেছেন। কিছুতেই যেন তাদেরকে বুঝ দিয়ে থামানো যাচ্ছেনা। 

সৌদি আরবে আগুনে পুরে তিনজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্চিতা বিশ্বাস বলেন, ‘একজন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। বাকি দুইজনেরও তথ্য পেয়েছি। জেলা প্রশাসক স্যারের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। সেখান থেকে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমে কাগজ পেলে নিহতদের মরদেহ দেশে ফেরাতে এবং সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা থাকলে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।’


প্রবাসী   মৃত্যু   সরকারের হস্তক্ষেপ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউরের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

প্রকাশ: ০৯:৪২ পিএম, ০৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (৫ জুলাই) জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়নশিপের ১২তম রাউন্ডের খেলা চলাকালীন লুটিয়ে পড়েছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। হাসপাতালে নেয়া হলেও আর ফেরানো যায়নি তাকে। ৪৯ বছর বয়সে ঢলে পড়েন মৃত্যুর কোলে।

দেশের দাবাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারিগর জিয়া। ২০০২ সালে নিয়াজ মোর্শেদের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেন তিনি। ২০০৫ সালে বাংলাদেশি দাবাড়ুদের মধ্যে সর্বোচ্চ ফিদে রেটিং অর্জন করেছিলেন। এছাড়া দেশে-বিদেশে অসংখ্য প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়েছেন জিয়া।

শুক্রবার (৫ জুলাই) গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবের বিপক্ষে জাতীয় দাবা প্রতিযোগিতার ১২তম রাউন্ডে ম্যাচ ছিল গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের। নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় খেলা। তবে খেলার প্রায় ৩ ঘণ্টা পার হওয়ার পর হুট করেই অসুস্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জিয়া। এরপর দ্রুতই শাহবাগের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। চিকিৎসকরাও দ্রুতই চিকিৎসা শুরু করেন। তবে অনেকক্ষণ ধরেই তার কোনো পালসই খুঁজে পান না তারা। কিছুক্ষণ বাদে এই গ্র্যান্ডমাস্টারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন জিয়া।

জিয়ার ম্যাচের সময় তার স্ত্রী লাবণ্যও ফেডারেশনে ছিলেন। তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও এবার জাতীয় দাবা খেলছেন। হুট করে এই দাবাড়ুর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের দাবা অঙ্গনে।

পারিবারিকভাবে জিয়া দাবাড়ু। তার বাবা পয়গাম উদ্দিন আহমেদও ছিলেন একজন দাবাড়ু। তার পথ ধরেই স্কুল জীবন থেকে দাবার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন জিয়া। তার ছেলে তাহসিন তাজওয়ারও পেশাগতভাবে দাবাড়ু। ২০২২ সালে ৪৪তম দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন তাজওয়ার।


গ্র্যান্ডমাস্টার   জিয়াউর   প্রধানমন্ত্রী   শোক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড বাংলাদেশ

নাম পরিবর্তন হচ্ছে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের

প্রকাশ: ০৯:২৩ পিএম, ০৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের নতুন নাম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে বন্দর, নৌপথ ও সমুদ্র পরিবহণ মন্ত্রণালয় করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর সম্মেলন কক্ষে ভোমরা ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আগে স্থলবন্দর দেখতাম কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নাম নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। তাই আমাদের স্মার্ট প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট একটি নাম ঠিক করে দিয়েছেন। তিনি এর নামকরণ করেছেন বন্দর, নৌপথ ও সমুদ্র পরিবহণ মন্ত্রণালয়; যা সবকিছু কাভার করে। এটা এখন আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। খুব দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সুইস কন্ট্রাক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুজিবুল হাসান, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পুলিশ সুপার মতিউর রহমান সিদ্দিকী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাবু, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ, সহ-সভাপতি এজাজ আহমেদ স্বপন, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ হোসেন প্রমুখ।


নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়   নাম পরিবর্তন   প্রতিমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন