প্রশাসন ক্যাডারে আবার চুক্তির মিছিল শুরু হচ্ছে। একের পর এক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই শুরু হয়েছে হতাশা।
সর্বশেষ সড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা কী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তার পাশাপাশি এবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আলী হোসেনকে। আগামী ৩ জুলাই তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল তার চুক্তির মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের এই মিছিল প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যে নতুন করে অস্থিরতা, হতাশা এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছে, এই প্রবণতার ফলে সামনে যারা অবসরে যাবে তারাও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য দেন দরবার করবেন, তদবির করবেন এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের কাছে ধরনা দেবেন।
ফলে সাধারণভাবে অধস্তনদের সচিব হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। ১৫তম ব্যাচের সচিব হওয়া কেবল শুরু হয়েছে। কিন্তু এত চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রবণতার কারণে যে সংখ্যক তাদের এতদিনে সচিব হওয়ার কথা ছিল, সে সংখ্যক তারা হতে পারছেন না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভও তৈরি হয়েছে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বেশ কয়েকজন সচিব অবসরে যাচ্ছেন। এখন তারা আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন, নাকি তারা অবসরে চলে যাবেন, এ নিয়েও এক ধরনের ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আফরিনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী ২৮ অগাস্ট। এছাড়া ট্যারিফ কমিশনের দায়িত্বে থাকা সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে ২৯ আগস্ট। ২৯ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে যুব ক্রীড়া সচিব ড. মহিউদ্দিন আহমেদের চাকরির মেয়াদ। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মোঃ হাবিবুর রহমানের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১০ অক্টোবর। ধর্ম বিষয়ক সচিব এ হামিদ জমাদ্দারের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৫ নভেম্বর। ২৫ নভেম্বর শেষ হচ্ছে ভূমি সচিব খলিলুর রহমানের চাকরির মেয়াদ। এ বছরের ডিসেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য আব্দুল বাকীর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। একই মাসে সংস্কৃতি সচিব খলিল আহমেদের চাকরির মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। ওইদিনই তথ্য সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার চাকরির মেয়াদও শেষ হয়ে যাবে।
এই বছরে এতগুলো সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন তারা যদি তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজনও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তাহলে অন্যদের পদোন্নতি নিয়ে সৃষ্টি হবে অনিশ্চয়তা। এ কারণে প্রশাসন ক্যাডারের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, অক্টোবরে বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে। আগামী ১৪ অক্টোবর তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তার জায়গায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হওয়ার কথা রয়েছে।
কিন্তু একাধিক সূত্র বলছে, এখন মাহবুব হোসেনকেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। মেজবাহ উদ্দিন যদি শেষ পর্যন্ত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব হন, সেক্ষেত্রে তারও চাকরির মেয়াদ বাড়তে পারে। এখন দেখার বিষয়, চলতি বছরে যে বিপুল সংখ্যক সচিব অবসরে যাচ্ছেন তাদের কয়জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান, আর কয়জন অবসরে যান।
সবিচ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশাসন ক্যাডার মন্ত্রণালয় সচিবালয়
মন্তব্য করুন
পাবনা শহরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদকবিরোধী অভিযানের সময় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশের দুই সদস্যসহ ৬ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালিয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
খবর পেয়ে পাবনা সদর থানা পুলিশ তাদের উদ্ধারে গেলে পুলিশের ওপরও হামলা করে তারা। এতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৪ জন ও ২ পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অভিযান চালিয়ে রাজিবসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান ওসি।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পাবনা কার্যালয়ের এসআই জাকির হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে অভিযান চালানো হচ্ছিল। অভিযানের সময় রাজিব কমিশনার ও তার লোকজন হামলা চালায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছালে পুলিশের ওপরও হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদক বিরোধী অভিযান হামলা গ্রেপ্তার
মন্তব্য করুন
যশোরের শার্শায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ইউপি সদস্যকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমান আদালত।
বুধবার (৩ জুলাই) বিকালে উপজেলার আমলাই গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে এ জরিমানা আদায় করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)ও নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট নুসরাত ইয়াসমিন।
ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকারী ম্যাজিস্টেট নুসরাত ইয়াসমিন জানান,উপজেলার গোগা ইউনিয়নের আমলাই গ্রামের উত্তরের মাঠে মাছের ঘের থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি ওই গ্রামের ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।আর এই বালু উত্তোলনের ফলে আসপাশের ফসলি জমি গুলো হুমকির মুখে পড়ছে এমন গোপন খরবে আমি সহযোগী ফোর্স নিয়ে সেখনে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সত্যতা পাই এবং ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে বলে স্বীকার করে। পরে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তার কাছ থেকে ৬০ হাজার জরিমানা আদায় করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ইয়াসমিন আরা জানান, সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত আছে
অবৈধ বালু উত্তোলন জরিমানা ইউপি সদস্য
মন্তব্য করুন
সুনামগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা সেই আলোচিত মামলায় আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্র বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দুদকের অন্য একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে ৬ মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
‘তদন্তে পক্ষপাত ও অভিযোগপত্র বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায়’ এক আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গেল রোববার (৩০ জুন) এই আদেশ দেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জের হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর ২ জুলাই দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
ওই কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এতে এজাহারভুক্ত ৩৪ জন আসামিকে বাদ দেওয়া হয়। নতুন করে যুক্ত করা হয় ছয় জনকে।
এরপর মামলাটি বিচারের জন্য সুনামগঞ্জ থেকে সিলেটের বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে পাঠানো করা হয়। ওই আদালতে অভিযোগ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরুর আগে ঠিকাদার আফজালুর রহমান একটি আবেদন জমা দিয়ে দুদকের অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আপত্তি দেন। আদালত তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করলে তিনি হাইকোর্টে একটি রিভিশন মামলা (রিভিশন মামলা নম্বর ৭৬/২০২৩) করেন। গত বছরের ১১ জুলাই হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার প্রাথমিক শুনানি হয় এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করা হয়।
মামলার ৬১ আসামির মধ্যে তদন্তে বাদ পড়েন পাউবোর ৩ প্রকৌশলী, ৩ সেকশন কর্মকর্তা ও ২৮ জন ঠিকাদার। বাদ পড়া প্রকৌশলীরা হলেন সুনামগঞ্জ পাউবোর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই ও সাবেক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস। সাবেক তিন সেকশন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, বরকত উল্লাহ ভূঁইয়া ও জাহাঙ্গীর হোসেনও বাদ পড়েছেন অভিযোগপত্র থেকে।
ঠিকাদারদের মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ বর্তমান চেয়ারম্যান খায়রুল হুদা চপল, সজিব রঞ্জন দাস, খন্দকার শাহীন আহমেদ, জিল্লুর রহমান, এম এ হান্নান, কামাল হোসেন, কাজী নাছিমুদ্দিন, খন্দকার আলী হায়দার, আকবর আলী, রবিউল আলম, আবুল হোসেন, শিবব্রত বসু, মোজাম্মেল হক, বাচ্চু মিয়া, বিপ্রেশ তালুকদার, জামিল ইকবাল, চিন্ময় কান্তি দাস, খাইরুজ্জামান, মফিজুল হক, মোখলেছুর রহমান, রেনু মিয়া, শামসুর রহমান, আবদুল মান্নান, মাহতাব চৌধুরী, লুৎফুল করিম, মো. কেফায়েতুল্লাহ, হুমায়ুন কবির ও ইকবাল মাহমুদ এজাহারে আসামি থাকলেও অভিযোগপত্র থেকে বাদ পড়েন।
দুদকের মামলার পর একই বছরের ৩ আগস্ট আরেকটি মামলা করে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতি। সুনামগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে মামলাটি করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হক। এ মামলায় আসামি করা হয় ১৩৯ জনকে। দুদকের মামলার ৬১ আসামিকে এই মামলারও আসামি রাখা হয়। এর বাইরে ৭৮ জন ছিলেন ৩৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদকে পাঠানোর আদেশ দেন।
কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন। পরে বাদী এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন দেন। এই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত গত বছরের ১৯ জানুয়ারি নারাজি গ্রহণ করেন এবং মামলাটি পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
হাওরের বোরো ফসল ডুবির প্রেক্ষাপট ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে ১৫৪টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যায়। হাওরে ফসলহানির পর ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এরপর দুদক ১৩ এপ্রিল হাওরের ফসলহানি ও বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের তদন্তে দুদকের পরিচালক বেলাল হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে। এরপর ১৫ এপ্রিল পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে সুনামগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ফসলহানির ঘটনায় ৩০ মে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২ মে পাউবোর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) আবদুল হাই, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। দুদকের অনুসন্ধান শেষে ২ জুলাই মামলা হয়।
জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জে ওই সময় ১৫৪টি হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬১২ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০ কৃষক পরিবার।
যদিও স্থানীয় কৃষকদের দাবি ছিল, সে বছর হাওরের শতভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ওই সময়ের ফসল ডুবির ঘটনায় দৈনিক যুগান্তর ও বাংলা ইনসাইডারে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সরকার প্রধানের নজরে আসে প্রতিবেদনগুলো। এরপর হাওরবাসীর ওই সময়ে একমাত্র বোরো ফসল ডুবির ঘটনার সরেজমিনে দেখতে সুনামগঞ্জ ছুটে আসেন তৎকালীন সময়ে থাকা প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ ও প্রথধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুদক অভিযোগপত্র হাওড় রক্ষা বাঁধ
মন্তব্য করুন
উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় মাদক ও চোরাচালান বিরোধী বিশেষ অভিযানের নামে থানা পুলিশ আইওয়াশের পর শুধু মাত্র দুই কার্টুন ভারতীয় শেখ নাসির বিড়ি জব্দ করেই অভিযান সমাপ্ত করেছে।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে নানা নাটকীয়তা ও সময়ক্ষেপনের পর থানা পুলিশের এমন অভিযান নিয়ে সচেতন মহলে গোটা পুলিশ বাহিনীর ভাবমুর্তিকে ফের প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
তাহিরপুর থানায় জব্দ তালিকা ও এজাহার সুত্রে জানা গেছে, গত রোববার (৩০ জুন) মধ্য রাত পরবর্তী কোন এক সময়ে থানার এক এসআই সঙ্গীয় অফিসার্স নিয়ে বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদাঘাট বাজারের এক কাঠ মিস্ত্রির দোকান কোটার তালা ভেঙ্গে দুই কার্টুন ভারতীয় শেখ নাসির বিড়ি জব্দ করেন।
জব্দ তালিকা তৈরীর পর পরদিন ১ জুলাই অভিযান পরিচালনাকারী এসআই বাদী হয়ে উপজেলার কামড়াবন্দ গ্রামের শেখ গোলাম রব্বানীর ছেলে শেখ মানিককে একমাত্র পলাতক আসামী ও অজ্ঞাত নামা ২ থেকে ৩ জনের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
এর পূর্বে শনিবার সকালে বাদাঘাট বাজারে আসা এক নেটিজেন মসজিদের পেছনে জনৈক ব্যক্তির পাকা মার্কেটে থাকা একটি কক্ষের ভেতর চোরাকারবারীদের ভারতীয় আমদানি নিষিদ্ধ শেখ নাসির বিড়ির সারি সারি খাঁচা ও কয়েক কার্টুন বিদেশি মদের চালান মজুদ করে রাখার ভিডিও ফুটেজ ধারণ করেন।
এক পর্যায়ে অভিযানের খবর থানা পুলিশের নিকট থেকে চোরাকারবারীরা জেনেও যায়। পরিস্থিতি
সামাল দিতে কয়েক লাখ টাকার ভারতীয় বিড়ি খাঁচা ও বিদেশি মদের কার্টনগুলো তারা।
এদিকে চোরাচালানীরা নিরাপদে সড়ে যাবার পরই রোববার
মধ্যরাত পরবর্তী সময়ে যখন বাজারের অধিকাংশ ব্যবসায়ী রাতে ঘুমাতে যান ঠিক তখনই চোরাচালানীদের নির্দেশিত কাঠ মিস্ত্রি দোকান কোটার তালা ভেঙ্গে দুই কার্টুন ভারতীয় শেখ নাসির বিড়ি মালিকবিহীন অবস্থায় জব্দ করে অভিযান সমাপ্ত করেন।
মন্তব্য করুন
ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকার ২০১৭ সালে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৬৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পটি দুবার সময়সীমা বাড়ানোর পরও শেষ না হওয়ায়, আরও দু বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়। শুরুতে ৮৪২ কোটি টাকা বাজেট ছিল, তবে পরবর্তীতে এটি বেড়ে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে, যা এটিকে বিতর্কিত করে তোলে। নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তার স্ত্রী রেজওয়ান আহমেদ খুশবু প্রমাণসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
জানা যায়, দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আশরাফুজ্জামান নীলফামারীতে যোগদান করেন। তিনি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে নীলফামারী সদর ও জলঢাকা উপজেলায় নির্মিতব্য মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তদারকির দায়িত্ব পান। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নীলফামারী সদর উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়। সদর উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় শেষ হয়। জলঢাকা উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ এখনও চলমান রয়েছে। এ দুই মসজিদ নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
খুশবু অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২১ সালের জুলাই অথবা আগস্ট মাসে মোবাইল ফোনে আমার স্বামী মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ হতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতার করতে শুনি। ফোনালাপ শেষে আমি তাকে বলি, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখান থেকে তুমি ঘুষ নেবে?’ এতে সে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ সময় গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড রকম অপমানিত বোধ করলেও কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এরপর থেকেই সামান্য ব্যাপারেও কথাকাটাকাটি হতে শুরু হয়। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। খুশবু আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে স্বামীর ঘুষ নেওয়ার তথ্য পেয়ে বারবার অনুরোধ করেও তাকে দুর্নীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। বলে, তুই ও তোর পরিবার আমার কিছুই করতে পারবি না। আমার ক্ষমতা ও টাকার কাছে তোরা ভেসে যাবি। এভাবে বলতে বলতে অনেক মারধর করে। তার ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মেনে নিলে চুপচাপ থাকলে সব স্বাভাবিক থাকত। নির্যাতন করত না। যখন সে সৎ ছিল তখন কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও জানান, তার স্বামী তাকে বলে যে সে এরকম থাকতে চায় না, বড়লোক হতে হবে। যদি মডেল মসজিদ থেকে ঘুষ নিতে না দিস তাহলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়। সংসারের সুখ-শান্তির কথা বিবেচনা করে নানা অজুহাতে তাকে ৭ লাখ টাকা এনে দেন। এছাড়া বিয়ের সময় তার বাবার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়া হয়। বিয়ের পর বাড়ি সংস্কারের কথা বলে আরও আট লাখ টাকা নেওয়া হয়।
সন্তান জন্মের পর খুশবু একদিন মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করলে আশরাফুজ্জামান উত্তর দেন যে নানা কাজে টাকা-পয়সা লেনদেন করতে হয়, তাই এই প্রতিষ্ঠান। যদিও প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে মূলত অন্য উৎস থেকে।
তিনি আরও বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলার রূপালী ব্যাংকে তার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এবং তার স্বামী জোরপূর্বক ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেন। খুশবু সচিবের কাছে অভিযোগ করেন, এবং সচিব সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।
আশরাফুজ্জামানের বাবা আব্দুল মান্নান একজন পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। পাঁচ বছরে তাদের বাড়ির চেহারা বদলেছে; দুই কক্ষের ঘর থেকে পাঁচ কক্ষের আলিশান বাড়ি হয়েছে। বাড়ির একপাশে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের নামে একটি গুদাম ঘর তৈরি করা হয়েছে। ২০২২ সালে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয় এবং ২০২৩ সালের মে মাসে প্রায় ১১০০ মণ ভুট্টা ক্রয় করে সেই গুদামে রাখা হয়। যদিও প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ভুট্টা বিক্রি হয়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায় জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা জমা হয়েছে এবং ৩৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এফডিআর ক্লোজড বাবদ জমা হয়েছে।
মডেল মসজিদ প্রকল্পের পরিচালক নজিবুর রহমান জানান, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুজ্জামান জানান, উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ ছিল এবং তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর মেয়েপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করে, যার কারণে আশরাফুজ্জামান জামিনে আছেন।
আশরাফুজ্জামান তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সাবেক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে এবং তাকে হয়রানি করার জন্য এই সমস্ত অভিযোগ উত্থাপন করেছে।
মন্তব্য করুন
ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকার ২০১৭ সালে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৬৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পটি দুবার সময়সীমা বাড়ানোর পরও শেষ না হওয়ায়, আরও দু বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়। শুরুতে ৮৪২ কোটি টাকা বাজেট ছিল, তবে পরবর্তীতে এটি বেড়ে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।