আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ক অন্যদের জন্য মডেল।
মঙ্গলবার (০২ জুলাই) সন্ধ্যায় ভারতের নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে. ত্রিপাঠি প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবন কার্যালয়ে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আলোচনার মাধ্যমে স্থল সীমানা, সমুদ্রসীমার সমাধান করেও বাংলাদেশ ও ভারত উদাহরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জনগণের সহায়তা ও অবদান সবসময় স্মরণ করি।
ভারতের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে. ত্রিপাঠী বলেন, তিনি বাংলাদেশকে নিজের বাড়ির মতো অনুভব করছেন কারণ প্রকৃতিগত দিক থেকে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে পার্থক্য সামান্য।
উভয় দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্কে অ্যাডমিরাল দীনেশ ত্রিপাঠি বলেন, যদি বাংলাদেশ নৌবাহিনী কোনো সহযোগিতা চায়, তবে না বলার কোনো সুযোগ নেই।
ভারতের নৌবাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘর (বিএমএম) পরিদর্শন করেন এবং এটিকে বিশ্বমানের বলে উল্লেখ করে বলেন, তিনি বিএমএম পরিদর্শন করে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন।
বাংলাদেশের অনেক নৌ কর্মকর্তা ভারতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন উল্লেখ করে দীনেশ ত্রিপাঠী বলেন, বাংলাদেশ চাইলে আরও অফিসার পাঠাতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতের নৌ বাহিনী প্রধান বলেছেন বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরকে শান্তিপূর্ণ রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েরই মানসিকতা একই। এক্ষেত্রে উভয় দেশই একসঙ্গে কাজ করবে। দুই দেশ এই অঞ্চলে কোনো ব্যাঘাত আশা করে না।
ধানমন্ডি-৩২-এ বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করেও ভারতের নৌ প্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মত্যাগ ও অবদানের প্রতিফলন দেখে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন।
ভারতের নৌবাহিনী প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসাও করেন। এসময় অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: বাসস
বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক মডেল শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
টানা বর্ষন আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের যমুনা নদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার চার উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে, সেইসাথে তলিয়ে গেছে বসতভিটা, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি।
টানা বর্ষণ আর উজানের ঢলে জামালপুরের যমুনা নদীর পানি কমলেও , ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিনিত বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা দুই দিনে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এতে করে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মাদারগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ৪০টি গ্রামের অন্তত ৭০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে বসতভিটা, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি ও মাছের ঘের।
এছাড়াও দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। অপরদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কের একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ও কাঠারবিল এলাকায় দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের ৪০ মিটার অংশ বন্যার পানিতে ভেঙ্গে যাওয়ায় ওই এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।
এদিকে বন্যার পানির কারণে ২৫৯টি প্রাথমিক ও ৬৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় ইতিমধ্যেই কয়েকশ পরিবার গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও উচু সড়ক বাঁধ এবং স্টেশনের প্লাটফর্মে আশ্রয় নিয়েছে।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের জন্য ৩শ’ মেট্টিক টন চাল ও ৩ হাজার ৪শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গঠন করা হয়েছে ১১টি ফ্রি মেডিকেল টিম।
বন্যা পরিস্থিতি পানিবন্দি বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ
মন্তব্য করুন
২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে তৃতীয় দিনের মত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই অবরোধের ফলে সড়কের দুইপাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে তিনটায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এসে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের আজকের আন্দোলনের একাত্মতা পোষণ করে অংশ নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে গাছে ঝুলে থাকার ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তার গাঁয়ের সাদা কাপড়ে 'মেধা থাকার পরও কোটা পদ্ধতি আমাকে বাঁচতে দেয়নি', ' তোর ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মা' লেখা রয়েছে। এসব উপস্থিত আন্দোলনকারীরা 'লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাই নাই, লেগে ছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, 'আমরা সকল জায়গা থেকে অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতির বাতিল চাই। যতক্ষন পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি বাতিল হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।'
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল মালেক আকাশ বলেন, 'কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আমরা ত্রিরিয় দিনের মত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছি। বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধাবীদের মুক্তি দেন। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন এভাবেই আন্দোলন চালিয়ে যাব।'
এই বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলন সমন্বয়কদের অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, "সারা বাংলাদেশের সাথে সমন্বয় করে আজ তৃতীয় দিনের মতো আমাদের কুমিল্লার কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল ও কোটাপদ্ধতি সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে।'
উল্লেখ্য, এর আগে গত ৪ ও ৭ জুলাই ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক যথাক্রমে তিন ঘন্টা ও চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা।
কুবি কোটা আন্দোলন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানচলাচল
মন্তব্য করুন
সরকারি চাকরিতে
কোটা ব্যবস্থা বাতিল এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনবর্হালের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি
শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে রাজধানীর শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত রাস্তা
অবরোধ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশিরা।
এদিকে সোমবার
(৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় একই কর্মসূচি শুরু করেন জবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশিরা।
এসময় লিশ বংশাল মোড় ও আরুবাজার মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে গুলিস্তানের দিকে অগ্রসর হন তারা।
বিস্তারিত আসছে.........................
কোটা আন্দোলন শাহবাগ অবরোধ জাবি গুলিস্তান অবরোধ
মন্তব্য করুন
সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করাই উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সোমবার (৮ জুলাই) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আদালত আদেশে দিয়েছেন, সেই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এই ধরনের আদালতের প্রতি ওনাদের (শিক্ষার্থীদের) আন্দোলনটা আমি মনে করি, উনাদের না করাই উচিত হবে। আমি বলব আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেই বিষয়টা রাজপথে না আনা, কারণ এটা আদালতে তো আছেই, বিচারটা হচ্ছে, হবে; সেই ক্ষেত্রে উনাদের আমি একটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব। আমি মনে করি আন্দোলনটা না করাই ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে। আমরা বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাই তাহলেও সিপি (নিয়মিত আপিল) করব।’
এর আগে, গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারিকৃত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। ওইদিন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি হয়নি।
রিট আবেদনকারী পক্ষের আবেদনে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আবেদনটির শুনানি ‘নট টুডে’ আজ নয় বলে আদেশ দেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
এর আগে গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে গত ৯ জুন চেম্বার জজ আদালত এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
এর আগে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করা হয়। তারও আগে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা রয়েছে ১০ শতাংশসহ আরও কিছু সংখ্যক কোটা বিদ্যমান ছিল।
সরকারের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী, নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে এসব গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হয়। প্রসঙ্গত, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে (১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড) কোটাব্যবস্থা বহাল রয়েছে।
এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পরিপত্রের পাশাপাশি এর আগে দেওয়া হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের আদেশ প্রতিপালন না করা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য অধিকারের প্রতি অবজ্ঞার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হয়।
এদিকে রায় ঘোষণার (গত ৫ জুন) পর রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নবম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা থাকল না। স্বাধীনতার পর সংবিধান প্রণয়নের আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা প্রবর্তন করা হয়। এটি চলমান অবস্থায় ২০১৮ সালে সরকার পরিপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের ক্ষেত্রে বাতিল করার বিষয়টি ছিল অপমানজনক। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ৩০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়ন করার বিষয়টি স্পষ্টতই উল্লেখ রয়েছে।
পরে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহালের বিষয়ে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করলে বিষয়টি গত ৯ জুন চেম্বার আদালতে ওঠে। সেদিন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। ধার্য তারিখ ৪ জুলাই আপিল বিভাগে রিট আবেদনকারীপক্ষ এক দিনের সময়ের আরজি জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ জুলাই আপিল বিভাগ ‘নট টুডে’ (সেদিন নয়) বলে আদেশ দেন।
কোটাবিরোধী আন্দোলন ছাত্র আন্দোলন ঢাকা অবরোধ অ্যাটর্নি জেনারেল
মন্তব্য করুন
৪ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার (৮ জুলাই) চীনে গেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা তার দ্বিতীয় বিদেশ সফর। এবারের সফরে অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক বিষয়ে বড় ধরনের চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।
৯ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং এই সফরে চীনের সঙ্গে ৭০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক চুক্তি হতে পারে। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তা পাওয়া যেতে পারে পাঁচশ কোটি ডলারের, বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে দুইশ কোটি ডলারের।
শেখ হাসিনার এবারের চীন সফরকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক, উভয়দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, এই সফরের মাধ্যমে নতুন বাজেটের ঘাটতি পূরণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ।
গত ১৫ বছরে চীন বাংলাদেশের বেশকিছু মেগা-প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি বাস্তবায়নকারীর ভূমিকাও রেখেছে। এরগুলোর মধ্যে বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ ও কর্ণফুলি টানেল তৈরি। এরপর দেশটি এখন বাংলাদেশের তিস্তা প্রকল্পেও যুক্ত হতে চাচ্ছে।
বিগত নির্বাচন থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়েও চীনের আগ্ৰহ সবার চোখে পড়ার মত। আর সাম্প্রতিক সময়ে নতুন সরকার গঠিত হবার পর বাংলাদেশে চীনের তৎপরতা অনেক গুন বেড়েছে।
যেকারণে খুব স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীন এত আগ্রহ দেখাচ্ছে কেন? এতে তাদের লাভ কি? বাংলাদেশে চীনের ঠিক কি কি স্বার্থ রয়েছে? তারা আসলে কি অর্জন করতে চাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে?
চীন এখন বাংলাদেশে শীর্ষ ঋণদাতা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, গত চার অর্থবছরে চীন এককভাবে বাংলাদেশকে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে।
আর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে’র (এইআই) ২০২৩ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
আফ্রিকা থেকে শুরু করে এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশকেও ঋণ দিচ্ছে চীন। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়াটা তাদের জন্য বেশি লাভজনক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
গত দেড় দশকে ১২টিরও বেশি বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ। এসব প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থঋণ দিয়েছে চীন।
বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়া বেশি লাভজনক হিসেবে দেখার কারণ হলো- ঋণ দিয়ে একদিকে তারা সুদের টাকা পাচ্ছে, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে চীনা ঠিকাদাররাই ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেইসঙ্গে, বাংলাদেশের উপরেও চীনের প্রভাব বজায় থাকছে। এছাড়াও, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ফলে চীনা নাগরিকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে। যেসব প্রকল্পে চীন ঋণ দিচ্ছে, চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোই সেখানে কাজ করছে।
করোনা মহামারির পর ২০২৩ সালে বেকারত্বের হার রেকর্ড সংখ্যায় বেড়েছে চীনে। চীনের সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যেকারণে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে চীনের সরকার তাদের বেকার নাগরিকদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ দেশে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে চীনা নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে অনুমতি নিয়ে কাজ করতে আসা চীনা নাগরিকের সংখ্যা ছয় হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ ও কর্মসংস্থানেই থেমে নেই চীন। এ দেশে চীনের বাণিজ্যিক ও ভূ- রাজনৈতিক স্বার্থ ও চোখে পরার মত।
এইআই’র হিসাবে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাৎসরিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। আর বিশাল এই অঙ্কের প্রায় সবটাই আমদানি করে বাংলাদেশ।
একক দেশ হিসেবে চীনের কাছ থেকেই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে চীন থেকে পণ্য আমদানি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১২-১৩ অর্থবছরে চীন থেকে বছরে আগে সাড়ে ছয়শ কোটি মার্কিন ডলারের মতো পণ্য আমদানি করা হতো। আর এখন সেটি বেড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
এছাড়াও, বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জামসহ ২০১৬ সালে চীন থেকে দুটি সাবমেরিনও কিনেছে বাংলাদেশ। ফলে চীনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বেশ তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের পাশাপাশি ভূ-রাজনীতির কৌশলগত দিক থেকেও চীনের কাছে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এই গুরুত্বের প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান। কারণ, সুপার পাওয়ার হতে চাওয়া চীন মূলত এ অঞ্চলে একটা আধিপত্য রাখতে চায়। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরকে চীন নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়। যদিও এটার প্রধান কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি’।
২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই স্ট্রাটেজি ঘোষণা করে। যেখানে চীনকে বাদ দিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি নিরাপদ ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল’ গড়ে তোলার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
আর এই ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বসবাস করে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ । ফলে যেকোনো পণ্যের বাজার হিসেবে এই অঞ্চলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেকারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে এই অঞ্চলের জন্য আলাদা কৌশল ঘোষণা করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
যদিও, যুক্তরাষ্ট্রের আগেই ২০১৩ সালে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামে একটি উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামো উপস্থাপন করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি সংযুক্ত হতে চায় চীন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরই) নামের যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
কিন্তু বাংলাদেশের ওপর চীনের এই আধিপত্য এভাবেই সামঞ্জস্যতার সাথে চলবে নাকি চীন বাংলাদেশের রাজনীতি সহ অন্য সব কিছুতেও নিজেরদের প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টা চালাবে সেটিই এখন ভাবার বিষয়।
বাংলাদেশ ভারত চীন রাজনীতি শিন জিনপিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
টানা বর্ষন আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জামালপুরের যমুনা নদীর পানি কমলেও ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে জেলার চার উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন বন্যা প্লাবিত হয়েছে, সেইসাথে তলিয়ে গেছে বসতভিটা, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি।