ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

হাতকড়া খুলতে নিজেরাই চাবি বানিয়েছিলো জঙ্গিরা

প্রকাশ: ০৯:৫০ এএম, ২৩ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

পুলিশের ওপর হামলা করে জঙ্গিদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য হাতকড়া খুলতে নিজেরাই চাবি তৈরি করেছিলেন বাইরে থাকা জঙ্গিরা। কারাগার থেকে আদালতে আনা–নেওয়ার সময় যে হাতকড়া পরানো হয় দীর্ঘদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে চার ধরনের চাবি বানান তারা। আর হামলার সময় যে পেপার স্প্রে (মরিচের গুঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের মিশ্রণ) ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটিও জঙ্গিদের নিজেদের তৈরি করা।

আদালতের ফটকের সামনে থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তাঁরা বলছেন, জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হলো সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেলেও পলাতক দুই জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত অগ্রগতি নেই।

জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সিটিটিসি সূত্র বলছে, জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য ছয় মাস আগে থেকে পরিকল্পনা করছিলো নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। চারজনকে ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করলেও সফল হয় মাত্র দুজনকে ছিনিয়ে নিতে। হামলার সময় ছয়টি মোটরসাইকেল ব্যবহারের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে গত মে মাস থেকে মোটরসাইকেল কেনা শুরু করে তারা। এই ছিনতাইয়ে অংশ নিয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। চারটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করলেও এক দলের সদস্যরা অন্য দলের সদস্যদের চিনতেন না। প্রত্যেকের দায়িত্ব ভাগ করা ছিল। ‘কাট আউট’ (একই কাজে যুক্ত এক দলের তথ্য অন্য দল জানে না) পদ্ধতিতে ওই হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছেন জঙ্গিরা।

সিটিটিসির উপকমিশনার এস এম নাজমুল হক বলেন, ‘যারা জঙ্গি ছিনতাইয়ে জড়িত রয়েছে, তাদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

গত রোববার (২০ নভেম্বর) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ফটকে পুলিশকে মারধর ও চোখে পিপার স্প্রে করে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যকে ছিনিয়ে নিয়ে যান জঙ্গিরা। তাঁরা হলেন মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব। ওই দুজনসহ ১২ আসামিকে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল। ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি হত্যা মামলারও আসামি তাঁরা। দীপন ও অভিজিৎসহ লেখক, প্রকাশক ও ব্লগার হত্যা মামলাগুলোর প্রধান আসামি ও আনসার আল ইসলামের নেতা বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় জঙ্গি নেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানায় সিটিটিসি।

সিটিটিসি বলছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জঙ্গিদের আদালতে আনা-নেওয়ার পুরো রুট (পথ) সম্পর্কে হামলাকারীরা জানত। সেদিন আদালতে আনা ১২ জঙ্গির মধ্যে ৪ জঙ্গি কীভাবে আলাদা হবেন, সেই নির্দেশনাও তাঁদের আগে থেকেই দেওয়া হয়েছিল। যে দুজনকে ছিনিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি, তাঁরা হলেন আরাফাত রহমান ও আবদুস সবুর রাজু ওরফে সাদ ওরফে সুজন।

আরাফাত রহমান ও আবদুস সবুর সিটিটিসির জিজ্ঞাসাবাদে বলেন, কারাগারে থেকেও তাঁদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল বাইরে থাকে আনসার আল ইসলামের আসকারি (সামরিক) শাখার জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে। এটি সমন্বয় করছিলেন আসকারি শাখার গুরুত্বপূর্ণ নেতা আয়মান ওরফে মশিউর রহমান। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

সিটিটিসি সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে আরাফাত ও সবুর স্বীকার করেছেন, কারাগারের ভেতরেই তাঁরা মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারতেন। তাঁদের দেওয়া বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

ডান্ডাবেড়ি না পরানো নিয়ে প্রশ্ন

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগ (প্রসিকিউশন) বলছে, কারাবিধি অনুযায়ী সন্ত্রাসী, জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি বা একাধিক মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে উপস্থাপনের সময় ডান্ডাবেড়ি পরানোর নির্দেশনা থাকলেও ২০ নভেম্বরের ঘটনায় সেটি মানেনি কারা কর্তৃপক্ষ। ডান্ডাবেড়ি না পরানোর কারণে আদালত থেকে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে গত সোমবার কারা মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি দিয়েছে প্রসিকিউশন বিভাগ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি

আদালত ফটকের সামনে থেকে পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় গতকাল চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তদন্ত কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কারা অনুবিভাগ)। এ ছাড়া জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও পুলিশ সদর দপ্তর পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

এদিকে গতকাল কারা উপমহাপরিদর্শক পদমর্যাদার তিন কর্মকর্তাকে বদলি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাঁদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক এ কে এম ফজলুল হককে ঢাকা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে রংপুর বিভাগে এবং রংপুর বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক আলতাব হোসেনকে চট্টগ্রাম বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

জঙ্গিরা পালিয়ে কোথায়

ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সে জন্য গত রোববারই দেশজুড়ে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়। সীমান্ত এলাকাগুলোতেও নজরদারি বাড়ানো হয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি ছিনিয়ে নিতে আনসার আল ইসলামের আসকারি বিভাগের যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ভারত ফেরত এক জঙ্গিও ছিলেন। তাঁর নাম তানভীর ওরফে শামসেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতকে। ২০১৬ সালে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ওই সময় অনেক জঙ্গি ভারতের আসাম ও ত্রিপুরায় আশ্রয় নেন। সেখানে কয়েক বছরে আনসার আল ইসলামের ২০ জনের অধিক সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।

হামলায় অংশ নেওয়া তানভীর ওরফে শামসেদ মিয়া সীমান্ত দিয়ে পালানোর পথ চেনেন। এ কারণে কুমিল্লার সীমান্ত দিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ভারতে পালানোর চেষ্টা করতে পারেন। তবে সিটিটিসির ধারণা, জঙ্গিরা এখনো সীমান্ত অতিক্রম করতে পারেননি। তাঁরা ঢাকা এবং আশপাশের কোথাও আশ্রয় নিয়েছেন।


জঙ্গি ছিনতাই   তদন্ত   আনসার আল ইসলাম  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

সাবেক ১২ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২০ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সরকার টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ করছে। গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এর আগে তিন মেয়াদে যারা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ছিলেন এবং সরকারের ভিতর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকেরই দায়িত্ব পালনের সময়টি স্বচ্ছতার ছিল না। তারা নিজেদেরকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারেননি। আর এ কারণেই তাদের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত তিন মেয়াদ এ রকম অন্তত এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই দুর্নীতির অভিযোগ এখন বিভিন্ন সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। 

বর্তমান সরকার তার নির্বাচনী ইস্তেহারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি ঘোষণা করেছে। এই নীতির আওতায় দুর্নীতিবাজ যেই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর এই কারণেই সাবেক এই সব মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখা শুরু হচ্ছে। এই অভিযোগ তদন্ত শেষে  অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যে এক ডজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ২০০৯ থেকে ২০১৪ মেয়াদে মন্ত্রী মন্ত্রী ছিলেন এরকম অন্তত চার জন মন্ত্রী রয়েছেন। এই চারজন মন্ত্রীর মধ্যে আবার দুজন ২০১৪ থেকে ২০১৮ মন্ত্রিসভায় মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ মন্ত্রিসভায় মোট চারজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এবং সেটি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে যে সমস্ত মন্ত্রীরা ছিলেন, তাদের চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে।

সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় যারা ছিলেন, তাদের মধ্যে একজন অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের মন্ত্রী ছিলেন। বিদেশে তার বিপুল সম্পদের তথ্য সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। আর এই সম্পদ তিনি বৈধ পথে উপার্জন করেছেন, দেশ থেকে পাচার করেননি এ বক্তব্য রেখে ওই সাবেক মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ব্যাপারে সরকারকে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে সরকার এখন নীরবে তদন্ত করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এছাড়াও ২০১৪ ও ১৮ মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী থেকে ২০১৮ সালে পূর্ণমন্ত্রী হওয়া আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং তার পুত্রের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ আছে। মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় মন্ত্রণালয়ের কাজ এবং মন্ত্রণালয়ের বাইরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। ওই মন্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় একটি ভূমি অধিগ্রহণে মূল্যস্ফীতির ঘটনায় এখন তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন বলে জানা গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রী, পুত্র এবং তার সাবেক এপিএস এর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এই তদন্তে একাধিক বিষয় সামনে এসেছে। এছাড়াও ২০০৯ সালের মন্ত্রিসভায় একজন গুরুত্বপূর্ণ পেশাজীবী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরকারি কেনাকাটায় বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছিল। ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আগে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করেছিল, সেই তদন্ত এখন পুনরায় শুরু করা হয়েছে। ওই সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত বিভাগে দায়িত্বে থাকা একজন প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এখন তদন্তের আওতায় পড়েছে।

২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে যারা মন্ত্রী ছিলেন তাদের মধ্যে দুজন প্রভাবশালী হেভিওয়েট মন্ত্রীর মন্ত্রণালয়ের অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি এখন তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। মোট ১২ জন সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এরকম দুর্নীতির অভিযোগ এখন তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বুঝা যাবে তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো আদৌ সত্যি নাকি এই অভিযোগগুলো নেহাতে তাদের বিরুদ্ধে ঈর্ষা পরায়ণ হয়ে করা হয়েছে। তবে দুর্নীতি দশন কমিশনের এবাধিক সূত্র বলছে, নির্মোহ ভাবে তদন্ত করা হবে এবং সরকার এব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি অনুসরণ করছে।

সাবেক মন্ত্রী   দুর্নীতি   তদন্ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

বিএসএমএমইউতে শতকোটি টাকার দুর্নীতি: এক ডজন মামলা হচ্ছে বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৯ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দু’শত কোটি টাকারও বেশি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ অভিযোগগুলো নিয়ে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করছে। 

দুর্নীতি দমন কমিশন ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পেরেছে। এই সমস্ত অভিযোগগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নির্মোহভাবে আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আর এর ফলে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ একাধিক দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন। উপাচার্যের দায়িত্ব শেষ করার পরপরই তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের বারান্দায় ছোটাছুটি করতে হবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

উল্লেখ্য, অনেক যোগ্য ব্যক্তি থাকার পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কনক কান্তি বড়ুয়ার পর উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে। ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া ছিল একটি চমক। প্রধানমন্ত্রী তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন যেন তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং বিএসএমএমইউ’কে চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি সেন্টার এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তুলবেন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি নিয়োগ বাণিজ্য সহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে এসমস্ত অভিযোগের প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আসতে থাকে। একসময় বিএসএমএমইউ-এর দুর্নীতি এবং অনিয়মে প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ড বিরক্ত হন।  দু’টি সংস্থাকে এ বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। দু’টি সংস্থা তদন্ত করে দেখে যে, শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ বাজারে রয়েছে বাস্তবে অভিযোগ তার চেয়ে বেশি। 

তার বিরুদ্ধে প্রধান পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে একটি হল নিয়োগ বাণিজ্য। টাকা ছাড়া বিএসএমএমইউ-তে কোন নিয়োগ হত না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বাণিজ্য। তৃতীয়ত, পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য, চতুর্থত, শারফুদ্দিন আহমেদ একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন, যে বাহিনী উপাচার্যের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি করত। পঞ্চমত, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা। 

এই অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে যখন দু’টি তদন্তকারী সংস্থা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রদান করেন তখন প্রধানমন্ত্রী এসমস্ত অভিযোগ গুলো তদন্ত করে যথাযথ বিহীত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশন শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে ‘স্যাডো ইনকোয়ারী’ বা ‘ছায়া তদন্ত’ করছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই তদন্তের মাধ্যমে ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিভিন্ন অভিযোগ গুলোকে সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। 

২৮ মার্চ শারফুদ্দিন আহমেদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে ডাকতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে এখন প্রতিনিয়তই অভিযোগ দাখিল করা হচ্ছে। বিশেষ করে এড-হক ভাবে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে কি পরিমাণ অর্থ নেওয়া হয়েছে এবং কি পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি বিস্তারিত অভিযোগ এখন দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা হচ্ছে। 

বিদায়ী উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ একরকম তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে বিদায় নিচ্ছেন। তার জায়গায় নতুন উপাচার্য হিসেবে ইতোমধ্যে সরকার নিয়োগ দিয়েছেন ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হককে। ডা. দ্বীন মোহাম্মদ আগামী ২৮ মার্চ অপরাহ্ণে বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।       


বিএসএমএমইউ   দুর্নীতি মামলা   ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

জবির আরেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ

প্রকাশ: ০৭:৩২ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ দেওয়ায় হত্যাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ও টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী ফারজানা মীম।

সোমবার (১৮ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের অভিযোগকারী মীম বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষক আবু সাহেদ ইমন আমাকে যৌন হেনস্তা করে। এই অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে বিভাগের চেয়ারম্যান ও অভিযুক্ত শিক্ষক আমাকে সেটি তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এতে আমি রাজী না হওয়ায় তারা আমকে হাত-পা কেটে হত্যা করাসহ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের হুমকি দেন। আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষায় শূন্য শূন্য নম্বর দিয়ে ফেল করানো হয়। আমার অনার্সের ফাইনাল ভাইভায় আমাকে ফেল করানো হয়।’

তিনি বলেন, আমাকে এক ঘরে করে দেওয়া হয়েছে। আমি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। কখন আমাকে মেরে ফেলা হয়, সেটা জানি না। শুধু আমি না, তারা আমার পরিবারকেও নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং হেনস্তা করছে। বর্তমান এই অবস্থা থেকে বাঁচতে ডিবি কার্যালয়ে অভিযোগ নিয়ে এসেছি।

মীম তার অভিযোগে জানান, ২০২১ সালে আবু সাহেদ ইমন তাকে যৌন হেনস্তা করেন। তারপর অভিযোগ দেওয়া হলে তার জীবনে নেমে আসে নানা নির্যাতনের খড়্গ। সম্প্রতি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় যৌন হয়রানি ও নানা নিপীড়নের বিরুদ্ধে এই শিক্ষার্থী সোচ্চার হোন। সেখানেই অবন্তিকার ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে নিজের প্রসঙ্গও আসে। গণমাধ্যমে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন। তারপর থেকে আবার তাকে হত্যাসহ বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা মীমের অভিযোগ পেয়েছি। তার নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা নিশ্চিতের চেষ্টা করব। তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখবে, আমাদের সাইবার টিম।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়   মিন্টো রোড   যৌন হয়রানি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

টেলিগ্রাম স্ক্যাম নিয়ে সতর্ক বার্তা ডিএমপির

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

আধুনিক সময়ে প্রায় সবার হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন। ফ্রিল্যান্সিং করে ঘরে বসেই অনেকে করছেন অর্থ উপার্জন। আবার অনেকেই ইনকাম করার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। আর এই সুযোগ নিয়ে প্রতারণার জাল বিস্তার করছে একটি চক্র। ঘরে বসে পার্ট টাইম চাকরির অফার দিয়েই শুরু হয় তাদের কাজ। চটকদার সব বিজ্ঞাপন দিয়ে আকৃষ্ট করে সবাইকে। তাদের চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে সর্বস্বান্ত হন অনেকে।

এ বিষয়ে সতর্ক করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। সোমবার (১৮ মার্চ) এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সবাইকে এই স্ক্যাম সম্পর্কে সচেতন করে সিটিটিসি।

জানা যায়, টেলিগ্রাম অ্যাপসভিত্তিক চাইনিজ প্রতারক চক্র বাংলাদেশি কিছু প্রতারকের সহায়তায় জাল বিস্তার করছে। এরা ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে ঘরে বসে পার্ট টাইম চাকরির অফার দেবে।

এরপর ইউটিউব এ বিভিন্ন ভিডিও লাইক করতে বলবে। প্রতি লাইকের জন্য আপনাকে তারা ১০০ টাকা করে দেবে। এভাবে ৫০০-১০০০ টাকা দেবে তারা। একইসঙ্গে তারা হেল্পডেস্ক নামক টেলিগ্রাম গ্রুপে অ্যাড করে নেবে।

টেলিগ্রাম গ্রুপে ইনভেস্ট করার লোভনীয় সব অফার দেবে। আপনি একবার তাদের প্ল্যানে যখনই ইনভেস্ট করবেন, তখনই ফাঁদে পড়ে যাবেন। এভাবে কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে কথা বলে হাতিয়ে নেবে লাখ লাখ টাকা।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে রক্ষা পাবেন কীভাবে?

সবাইকে জেনে রাখতে হবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিংবা ঘরে বসে পাওয়া যে কোনো চাকরির অফারই এক একটি স্ক্যাম। ভুলেও কেউ এমন ইনভেস্টমেন্ট প্রতারণার ফাঁদে পা দেবেন না।


টেলিগ্রাম   স্ক্যাম   সতর্ক বার্তা   ডিএমপির   অনলাইন জব  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

পুলিশের চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাত, গ্রেপ্তার ১

প্রকাশ: ০৫:৩৭ পিএম, ১৫ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকুরি দেয়ার নাম করে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন তৈলকুপি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃত প্রতারকের নাম মো. এনামুল হক সরদার (৪০)। তিনি খুলনা জেলার ফুলতলা থানার জামিরা ইউপির দাউকোনা গ্রামের মৃত মোসলেম আলী সরদারের ছেলে।

জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পাটকেলঘাটা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তৈলকুপি এলাকা হতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকুরি দেওয়ার নাম করে টাকা পয়সা লেনদেন বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার সময় মো. এনামুল হককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।

এ সময় তার কাছ থেকে আলামতের প্রমাণ হিসেবে একশত টাকার সমমূল্যের তিনটি নন-জুডিশিয়াল শূন্য স্ট্যাম্প, (যার প্রতিটি স্ট্যাম্পে মো. ইয়াছিন আলীর স্বাক্ষর আছে) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিঃ এ্যাকাউন্ট নম্বর-০২৭৮১২৮০০০০০২৮৪ এর অনুকুলে দুটি শূন্য চেক, (যাতে ফিরোজা স্বাক্ষর আছে), জনৈক মো. ইয়াছিন আলীর বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগের অনলাইন এ্যাডমিট কার্ড (রোল নম্বর-৩৪১০২৪৩) উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় পাটকেলঘাটা থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

পুলিশের চাকরি   অর্থ আত্মসাত   সাতক্ষীরা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন