ইনসাইড পলিটিক্স

১৪ দলের বৈঠকে শরিক নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ

প্রকাশ: ১০:৩৯ এএম, ১৬ মার্চ, ২০২২


Thumbnail ১৪ দলের বৈঠকে শরিক নেতাদের ক্ষোভ প্রকাশ

প্রায় তিন বছর পর গতকাল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে ‘ক্ষমতার বাইরে থাকা’ শরিকরা নিজেদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরেন।

শরিক নেতারা বলেন, জোটভুক্ত হয়ে ভোট করেছি, আমাদেরকে কেন বিরোধী দলে যেতে বলা হলো! এটা কতটা যুক্তিসংগত! তারা বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, জোটের কর্মপরিধি কী হবে তা এখনই পরিষ্কার করা দরকার।

গতকাল গণভবনে বেলা ১১টা থেকে টানা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকে ক্ষমতা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্বের প্রশংসা করেন শরিক দলের নেতারা। অবশ্য জোট নেতাদের নিরাশ করেননি শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, একসঙ্গে আছি, একসঙ্গেই থাকব। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে একসঙ্গেই লড়াই করব। জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতায় আসব। বৈঠকে জোটের শরিক দলের সিনিয়র নেতারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে নিত্যপণ্যের দাম কমানোর তাগিদ দেন তারা। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

জোটপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন ১৪-দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, জাতীয় পার্টি (জেপি)সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে সিকদার, ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আইভি আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, বাসদের রেজাউর রশিদ প্রমুখ।

তবে ১৪ দল থেকে ঘোষণা দিয়ে বের না হলেও শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ বৈঠকে অংশ নেয়নি।

বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘকাল করোনা থাকায় একসঙ্গে বসতে পারিনি। খুব কঠিন সময় গেছে। দুই বছরের বেশি সময় ধরে আমি ঘরবন্দি। এ অবস্থায় ফাইল সই করি, ফাইল দেখি। আমার বাসার নিচে রান্না হয়। কাজের লোক সিঁড়িতে দিয়ে যায়। পরে খাই। সব কাজ করেছি বাসায় বসে। স্বজনদেরও ঠিকমতো সরাসরি সাক্ষাৎ পাইনি। বাংলাদেশকে ডিজিটাল করতে পেরেছিলাম বলেই ভার্চুয়ালি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। মোবাইল ফোনে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছি। এভাবেই জীবন কেটেছে। এ সময় করোনাকালে টিকা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করাসহ দুর্যোগে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা নিয়ে কথা বলেন।

জোটপ্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর কথা বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আমরা জোট করলাম, ভোট করলাম একসঙ্গে কিন্তু আমাদের কেন বিরোধী দলে যেতে বলা হলো? এটা কতটা যুক্তিসংগত! সাবেক মন্ত্রী মেনন বলেন, মন্ত্রী হওয়া বড় কথা নয়, আমাদের একসঙ্গে থাকাটা হলো বড় কথা। সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সব বিষয় এখনই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা দরকার।

সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ও দেশের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিয়েও কথা বলেন রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা যেন কোনোভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কাছে বন্দি না হয়ে যাই। পরিস্থিতি সেদিকেই কিন্তু যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) গুরুত্ব দিতে হবে। নইলে আগামীতে বিষয়টি আরও খারাপের দিকে যাবে।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বিশেষ করে তৃণমূল পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী সরাসরি জড়িয়ে পড়ছেন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে আমাদের কোনো নেতা-কর্মীর এমন ঘটনার সঙ্গে যুক্ত না হতে পারে।

১৪-দলীয় জোট নেতাদের সম্মান ও জোটের ঐক্যের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়ে মেনন বলেন, আমাদের জোটে শরিক দলের যেসব নেতা রয়েছেন, তাদের যেন অসম্মান না হয় সেদিকে আপনাকে (প্রধানমন্ত্রী) নজর দিতে হবে। যেন আমাদের জোটের ঐক্য ভেঙে না যায়।

বৈঠকে আমলাতন্ত্র নিয়ে কথা বলেন সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়াও। তিনি বলেন, আমলারা ভোল পাল্টাতে সময় নেয় না। কাজেই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া পদক্ষেপের প্রসংশা করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, আন্তর্জাতিক নানা চাপ থাকা সত্ত্বেও আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দেশের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। সঠিক সময়ে করোনার টিকা সংগ্রহ, ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি করতে সক্ষমতা দেখিয়েছেন।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, ১৪ দলের বর্তমান কী ভূমিকা হওয়া দরকার, আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে, সরকার গঠন করাসহ কিছু বিষয়ে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। আমাদের বসে থাকলে চলবে না। ষড়যন্ত্রকারী হেফাজতী, জামায়াতিরা পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে চায়। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে ন্যাপের কার্যকরী সভাপতি আইভি আহম্মেদ বলেন, আপনার কঠোর পরিশ্রম এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে আজ দেশের চেহারা বদলে গেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস উঠেছে। জনগণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ জানান তিনি।

জোট নেতাদের দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ে কথার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান আন্তর্জাতিক বিশ্বের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধমুখী চলমান সমস্যা নিয়ে তাঁর সরকার কাজ করছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এর রেজাল্ট পাওয়া যাবে।

জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মন্ত্রীদের ‘অতিকথনের’ বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, অনেকে লাগামহীন কথাবার্তা বলেন। এতে অনেক সময় বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কে কোন বিষয়ে কথা বলবেন এটা ঠিক করে দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪-দলীয় জোট গঠন হয়েছিল। সবাই কিন্তু এই দফাগুলোর সঙ্গে একমত নন। তিনি আরও বলেন, নেত্রী আপনার কাঁধে বন্দুক রেখে অনেকেই চলার চেষ্টা করছেন। এ ব্যাপারটিতে সজাগ থাকা প্রয়োজন। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো মন্তব্য করেননি।

১৪ দলের বৈঠকে উপস্থিত ছিল না বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া) কোনো নেতা। এ বিষয়টি উল্লেখ করেন কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, এর আগে তো তাদের একটি সিট (আসন) ছিল। এবার সেটিও নেই। এ কারণে হয়তো অভিমান করেছেন। মিটিংয়ে তারা কেউ আসেননি। তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী তার বক্তব্যে বলেন, নেত্রী আপনিই আমাদের ভরসা। আপনি ছাড়া আমাদের অস্তিত্ব নেই। জেলা-উপজেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটিতে ১৪ দলের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগদান করায় ১৪ দলের নেতাদের ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি বিএনপির অংশ না নেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে তাদের ‘নেতৃত্বের শূন্যতা’ তুলে ধরেন।

বৈঠকের একপর্যায়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা কী হবে বা এ বিষয়ে কিছু ভাবছেন কি না জোট শরিক দলের এক নেতার এমন প্রশ্নের উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত নির্বাচনের মতোই আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশগ্রহণ করব। এ সময় উপস্থিত নেতাদের জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।

বৈঠক শেষে জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে অংশগ্রহণ করবে। ১৪ দলের ঐক্য বজায় থাকবে। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করা হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে ১৪ দলের যে ভূমিকা সেটিও অব্যাহত থাকবে।

নির্বাচনে আসন বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ এ নেতা বলেন, এখনই আসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে না। এ জন্য আরও আলোচনা প্রয়োজন। অনেক বিষয়ের ওপর আসন বণ্টন নির্ভর করে। এ আলোচনা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরে হবে।

বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে তখন কি জোটবদ্ধ নির্বাচন হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আমু বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে না এটা তারা বলছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কী করবে এটা দেখার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

বিএনপির দেশব্যাপী আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে জানিয়ে আমু বলেন, বিএনপির আন্দোলনের বিরুদ্ধে ১৪ দল মাঠে নামবে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগকে যে নির্দেশ দেবেন, সে অনুযায়ী ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ শুরু করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে মেননের বই উপহার : ১৪ দলের সভা শেষে গণভবনে শেখ হাসিনাকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন তার লেখা আত্মজীবনী ‘এক জীবন (প্রথম পর্ব) স্বাধীনতার সূর্যোদয়’ বইটি উপহার দেন।

১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা জানান, দীর্ঘদিন পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ১৪-দলীয় জোটের আলোচনায় সব থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে জোটকে মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় করা। মূলত দীর্ঘদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় ১৪-দলীয় জোটের সাংগঠনিক কার্যক্রম।

১৪ দল   প্রধানমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এমপি-মন্ত্রী পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন না: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ: ০৫:২৪ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য বা স্বজনদের কেউ প্রার্থী হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।


বিস্তারিত আসছে...



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিতে প্রকাশ্য বিদ্রোহ

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না করা নিয়ে প্রকাশ্য বিদ্রোহ দেখা দিচ্ছে বিএনপিতে। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, দল সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে শুধুমাত্র প্রথম পর্যায়ের জন্য মনোনয়ন পত্র দাখিল সমাপ্ত হয়েছে। 

প্রথম পর্যায়ে যে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে সেখানে এখন পর্যন্ত বিএনপির ৯৭ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। বিএনপির এই নেতারা এখন কিছুতেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে রাজি নন। বরং তারা বলছেন যে, নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এ ধরনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী এবং অমর্যাদাকর।

বিএনপির যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে, তারা দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন না। উপজেলা নির্বাচন দলগতভাবে হচ্ছে না। আর একারণেই উপজেলা নির্বাচনে যদি তারা অংশগ্রহণ করে সেজন্য দল তাদেরকে বাধা দিতে পারে না। বিএনপির যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বক্তব্য হল সুস্পষ্ট। তারা বলছেন যে, যদি দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নির্বাচন হতো এবং দলের জন্য মনোনয়নের ব্যবস্থা করা হত তাহলে এই নির্বাচনে বিএনপির নেতাদেরকে নির্দেশনা দেওয়ার একটা বিষয় ছিল। কিন্তু যেহেতু তারা স্বউদ্যোগে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন সেজন্য এই নির্বাচনের ব্যাপারে কেন্দ্রের কোন নির্দেশনা থাকা উচিত নয় বা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দিতে পারেন না। 

প্রথম ধাপে ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে ১৫২টি উপজেলার নির্বাচন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রায় প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের তিন থেকে চারজন প্রার্থী রয়েছেন বলে জানা গেছে। আর এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপির যারা নির্বাচনে ইচ্ছুক তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। বিভক্ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একক বিএনপি প্রার্থী উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের জন্য একটি বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এবং এটি সংগঠনের জন্য লাভ হবে বলে অনেকে মনে করছেন। 

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এরকম অন্তত দু জনের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে। তারা বলছেন যে, বিএনপি কোনো রকম বিচার বিবেচনা ছাড়া এবং বাস্তবতাকে উপলব্ধি না করেই নির্বাচনের ব্যাপারে একতরফা এবং অবাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যার সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই৷ এমনিতেই বিএনপির সংগঠনের অবস্থা নাজুক। নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকে জেলে, অনেকে পলাতক। এরকম অবস্থায় স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন সংগঠন শক্তিশালী করার একটি বড় ধরনের উপায় বলে অনেকেই মনে করছেন। আর এ কারণেই তারা কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং এ নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন।

বিএনপির অনেক নেতা স্বীকার করেছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে দল চাঙা হত এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়ানো যেত। আর এ কারণেই তারাও উপজেলা নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা না গ্রহণ করার পক্ষে। তবে বিএনপির বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ের নেতা যারা আগ্রহী আছেন তারা বলেছেন যে, বিএনপি যদি তাদেরকে হবিষ্কারও করে তাহলেও তাদের কিছু যায় আসে না। তারপরও তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে রাজি।

বিএনপি   বিদ্রোহ   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এক যুগেও নেই ইলিয়াস আলীর সন্ধান, ফেরার প্রত্যাশায় বিএনপি

প্রকাশ: ০৯:৩৩ এএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। এক যুগ পার হলেও ইলিয়াস আলী জীবিত না মৃত সে খবর কেউ দিতে পারেনি দীর্ঘ এই সময়ে।

তবে সিলেটের বিএনপি নেতারা মনে করেন, ইলিয়াস সরকারের হেফাজতে অক্ষতই আছেন। তাকে ফিরে পেতে কেবল সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন। নিখোঁজের ১২ বছর পূর্তিতে তাকে ফিরে পেতে গতকাল নানা কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’র পর সিলেটে গঠন করা হয় ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’। এ বছর ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’র কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। এক যুগেও ইলিয়াসের সন্ধান না মিললেও হাল ছাড়েননি বিএনপি নেতারা।

তাদের ধারণা, ইলিয়াস আলী এখনো জীবিত আছেন। ইলিয়াসের অবস্থান সম্পর্কে সরকার জ্ঞাত আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ইলিয়াস আলীর সন্ধান মিলছে না। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের এক যুগপূর্তির দিন গতকাল জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট বিএনপি। এ ছাড়া বাদ আসর জেলা বিএনপির উদ্যোগে হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ইলিয়াসকে ফিরে পেতে বাদ জোহর একই মসজিদে দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। স্মারকলিপি প্রদানের আগে গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর ধরে ইলিয়াস আলী ফেরার অপেক্ষায় আছেন সিলেটবাসী। ইলিয়াসের জনপ্রিয়তায় আতঙ্কিত হয়ে সরকার তাকে গুম করেছে।

ইলিয়াস নিখোঁজ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন বলেন, ইলিয়াস আলীর সন্ধান পেতে তার সহধর্মিণী হাই কোর্টে রিট করেছিলেন। কিন্তু সরকারের অদৃশ্য হস্তক্ষেপে এক যুগেও সেই রিটের শুনানি হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় ইলিয়াস নিখোঁজের পেছনে সরকার জড়িত।


ইলিয়াস আলী   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

খন্দকার মোশাররফকে দেখতে বাসায় গেলেন ফখরুল

প্রকাশ: ০৯:৩৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপি সিনিয়র স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিতে তার বাসায় যান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গুলশানের বাসায় যান বিএনপি মহাসচিব। এরপর প্রায় এক ঘণ্টা তারা একান্ত আলাপ করেন।

বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই দুই নেতা একান্তে প্রায় এক ঘণ্টা সময় কাটান। এ সময় দুজন পরস্পরের খোঁজ নিয়েছেন।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর দুই দফায় সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন   মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচন বর্জন: লাভের চেয়ে ক্ষতি হচ্ছে বেশি বিএনপির

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। বিএনপির এ সিদ্ধান্তে হতবাক স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা। 

বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে যে, শেষ পর্যন্ত তাদের ধারণা ছিল উপজেলা নির্বাচনের বিষয়টি তারা উপেক্ষা করবে। এমনকি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা অনেক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গতকাল বিএনপি উজজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 

উপজেলা নির্বাচন এবার দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। এরকম একটি নির্বাচন বিএনপি কেন বর্জন করলো এবং এ বর্জনের ফলে কি লাভ হবে তা নিয়ে বিএনপির মধ্যেই আলোচনা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই প্রথম দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির দলীয় পদ পদবী রয়েছে এমন ৪৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। দলীয় পদ পদবী নেই কিন্তু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এরকম আরও ৭৬ জন উপজেলা নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। এখন তারা কি করবেন এ নিয়ে তারা নিজেরাই একটি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছেন। 

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, যারা উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন তারা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এবং তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি নমনীয় থাকবে। কিন্তু গতকাল বিএনপির এ সিদ্ধান্ত তাদেরকে হতাশ করেছে। এর ফলে বিএনপির মধ্যে দু’ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছে। 

অনেকেই যারা স্থানীয় পর্যায়ে পদ পদবী গ্রহণ করে আছেন তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। কারণ যদি নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তাদেরকে বহিষ্কার করা হবে। এর আগে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিটি কর্পোরেশনসহ স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় ২ শতাধিক বিএনপির নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এখন আবার নতুন করে বিএনপি যদি তাদেরকে বহিষ্কার শুরু করে তাহলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্থ হবে। একারণে অনেকে প্রত্যাহার করতে পারেন। কমিটিতে যাদের পদ পদবী নেই তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখা কঠিন হবে বলে অনেকে মনে করছেন।  

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বিএনপি সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র সরকার প্রার্থী হয়েছেন। তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলেই প্রার্থী হয়েছেন। এখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ফোন ধরছেন না বলে তিনি জানিয়েছেন। 

বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, মূলত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এবং এ সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচিত হয়নি বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, উপজেলা নির্বাচন করা নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। এবং এ আলোচনা না হওয়ার কারণে এখন দলটি নতুন করে সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

নির্বাচন বর্জন   বিএনপি   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন