ইনসাইড থট

স্মৃতিতে পদ্মা নদী পারাপার

প্রকাশ: ১১:০১ এএম, ১৪ জুলাই, ২০২২


Thumbnail

বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের পর আমার মা‘সহ পরিবারের অন্যান্য কতিপয় সদস্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে নানা বাড়ি গিয়েছিলাম। পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে নানা বাড়ি, দাদা বাড়ি যাওয়ার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে। তবে এবারের পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে নানা বাড়ি যাওয়ার আনন্দই আলাদা।

শিবচর থানার মাদবরের চর ইউনিয়নে পদ্মা নদীর পাড়েই নানাবাড়ি। আমার জানামতে তিনবার পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে নানাবাড়ী। নদীর ভাঙনে ভিটাবাড়ি, ক্ষেত-খামার সবকিছু হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নিঃস্ব হয়ে যায়। নানা বাড়ির সেই আভিজাত্য ও জৌলুস না থাকলেও আপ্যায়নের কমতি ছিল না। প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে দ্বিতীয়বার নদী ভাঙ্গনের পর আমার নানা (মা‘র বাবা) ইন্তেকাল করেছেন। তারপরও ঘুরে দাড়িয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু তৃতীয়বার নদী ভাঙ্গনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। একজন মাত্র নানা ছিলেন, মা‘র ছোট চাচা, যিনি মা‘র কয়েক বছরের বড়, তিনিও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইন্তেকাল করেছেন। সেই নানার একমাত্র পুত্রের আপ্যায়নের ধরন দেখে বুঝা যায়নি নানারা কেউ বেঁচে নেই। এটাই নানা বাড়ি বেড়ানোর আনন্দ।

পদ্মা সেতু অতিক্রম করেই মা‘কে বললাম, ‘মা, মাত্র ৮ মিনিটে এই বিশাল পদ্মা পাড় হলাম‘। উত্তরে মা বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। শেখ হাসিনার কারণেই পদ্মা সেতু হইচে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শেখ হাসিনারে নেক হায়াত দারাজ করুক। একশ বছর বাঁচাইয়া রাখুক‘। ঐদিনই সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরে আসার পর ছোট ভাই মা‘কে জিজ্ঞাসা করলো, ‘মা, চাচার বাড়িতে কেমন বেড়াইলা?‘ প্রতুত্তরে মা বললেন, ‘মুখে যাইই খাইছি, কিন্তু পদ্মা ব্রিজ দেইখ্যা মনডা ভইরা গেছে‘।

বাবার চাকরির সুবাদে শিশুকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে আসছি। দাদাবাড়ি কুতুবপুর, নানাবাড়ি মাদবরের চর। দুটোই ঢাকা থেকে পদ্মা নদীর অপর পাড়ে হওয়ায় প্রতিবছরই এক বা একাধিকবার বাবা-মায়ের সাথে গ্রামে আসতাম। সুতরাং খরস্রোতা বিশাল পদ্মা নদী পারাপারে আনন্দ-বেদনার অনেক স্মৃতি রয়েছে। 

এমন একটা সময় ছিল, যাত্রী বহন বা মালামাল পরিবহনে বিশাল আকারের নৌকা ব্যবহৃত হতো। যতটুকু মনে পড়ে যাত্রী বহনের বড় নৌকাকে বলা হতো ‘পালা নৌকা‘। মালামাল পরিবহনে ব্যবহৃত বড় নৌকাকে বলা হতো ‘ঘাসি নৌকা‘। এছাড়া দূরপাল্লায় যাতায়াতে ধনী শ্রেণির মানুষেরা কারুকাজ করা নিজস্ব মালিকানাধীন বড় নৌকা ব্যবহার করতো, যা ‘গয়না নৌকা‘ হিসেবে পরিচিত ছিল।

বর্তমানে দূরপাল্লায় যাতায়াতে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত সুন্দর সুন্দর একতলা দোতলা বড় বড় বাস ব্যবহার করা হয়। এই পরিবহনগুলো এতটাই বড় যে, যানজট এড়াতে, ঢাকা মহানগরের ছোট ছোট রাস্তায় চলাচল করে না। পরিবহন কোম্পানিগুলো ছোট আকারের বাস বা মিনিবাসে শহরের বিভিন্ন টিকিট কাউন্টার থেকে যাত্রী সংগ্রহ করে নিজস্ব টার্মিনালে নিয়ে বড় বাসে তুলে দেয়। ঠিক তেমনি, সেকালে বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট ছোট দ্রুতগতি সম্পন্ন নৌকা দিয়ে ঢাকাগামী যাত্রীদের সংগ্রহ করে নিয়ে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্দিষ্ট ঘাটে  অপেক্ষারত ‘পালা নৌকা‘য় তুলে দেওয়া হতো। তারপর বিশাল আকারের ঐ পালা নৌকা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হতো।

বৃহত্তর ফরিদপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সকল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকাগামী লঞ্চগুলো পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকা আসতো। আমরা নানাবাড়ি বাড়ি থেকে রওয়ানা হলে মাদবরের চর ঘাট থেকে লঞ্চে উঠতাম, দাদাবাড়ি থেকে রওয়ানা হলে ‘লাউখোলা‘ ঘাট বা ‘গস্তির হাট‘ থেকে লঞ্চে উঠতাম। সূর্যোদয়ের আগেই লঞ্চঘাটে আসতে হতো। বালুমাটির লঞ্চঘাট। প্রতিনিয়ত নদীভাঙনে লঞ্চঘাট প্রায়শই পরিবর্তন হতো। লঞ্চের কর্মচারিরা ১২-১৪ ইঞ্চি চওড়া একটি লম্বা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে সুবিধামত স্থানে ঘাট হিসেবে ব্যবহার করে যাত্রী উঠানামার ব্যবস্থা করতো। খুবই সাবধানে সেই সিঁড়ি বেয়ে লঞ্চে উঠতে হতো। অসাবধানতাবশত পা পিছলে পরলে সরাসরি পদ্মায়। সাথে সাথেই ঢেউয়ের আঘাতে পদ্মার স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। লঞ্চে উঠতে সহায়তার জন্য একটি লম্বা বাঁশের লগি ব্যবহার করা হতো। বাঁশের সগির গোড়াটি ঘাটে বালির মধ্যে গেঁথে দিয়ে বাঁশের সরু প্রান্তটি ধরে রাখতো লঞ্চে থাকা কর্মচারী। বাঁশের লগিটির আগা সরু হওয়ায় উহা দুলতে থাকতো। এছাড়া বৃষ্টির দিন হলে কাঠের সিঁড়িটি পিচ্ছিল হয়ে বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যেত।

লঞ্চগুলি কখনই আড়াআড়িভাবে পদ্মা নদী পাড়ি দিত না। লঞ্চ স্রোতের প্রতিকূলে কয়েক কিলোমিটার উজান বেয়ে কোনাকুনিভাবে ঢেউ কেটে কেটে উজানেই বিপরীত পাড়ের দিকে এগুতে থাকতো, এবং একই সঙ্গে লঞ্চ স্রোতের টানে ভাটির দিকেও যেতে থাকতো। শেষ পর্যন্ত লঞ্চ বিপরীত পাড়ে পৌঁছতো বটে, তবে গন্তব্যের চেয়ে কয়েক কিলোমিটার ভাটিতে। তারপর লঞ্চ উজান ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতো।

একবার ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে আমাদের বহনকারী লঞ্চ মুন্সিগঞ্জের জশিলদা বরাবর উজানে এসে পদ্মা নদী পাড় হওয়ার জন্য উজানের দিকে রওয়ানা হয়েছিল। নদীতে বড় বড় ঢেউ। আমি আপার কেলাস কেবিনের সামনে ডেকের উপর সারেং এর রুমের দরজা বরাবর দাড়িয়ে ছিলাম। ঢেউ এত উঁচু ছিল যে, মাঝে মাঝে সারেং সাহেবের ডেস্ক থেকে আকাশ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। লঞ্চ কর্মচারীরা ডেকের উপর সামনে পিছনে থাকা সকল যাত্রীদের নিজ নিজ আসনে যেতে বাধ্য করেছিলেন। লঞ্চ কোনক্রমেই কোনাকুনি অবস্থান নিতে পারছিল না। মনে হচ্ছিল, লঞ্চটি সামান্য কোনাকুনি হলেই ঢেউ এসে লঞ্চটিকে কাঁত করে ফেলবে। এমনি পরিস্থিতিতে সারেং খুবই দক্ষতার সাথে অস্বাভাবিক ঢেউ ও প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবেলা করে উজানেই এগুতে এগুতে কয়েক ঘন্টা লড়াই করে মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে খরস্রোতা পদ্মা নদী পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিল। স্মৃতিতে এমনি বিপদসংকুল ঘটনাও রয়েছে অনেক। 

কূয়াশাচ্ছন্ন রাতে ফেরি পারাপারে ডুবু চরে আটকা পড়ার স্মৃতির পাশাপাশি স্পীডবোটে পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে বিপদাপন্ন হওয়ার স্মৃতিও রয়েছে।

একবার মা‘কে নিয়ে মাদবরের চর থেকে ঢাকা আসার পথে কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে এসে জানলাম, ফেরী ছাড়তে দেরী হবে। আমাদের তাড়া আছে। দ্রুত ঢাকা পৌঁছতে হবে। উপায় কি? দ্রুতগতির স্পীডবোটে পাড় হওয়া যায়। কিন্তু এমনিতেই মা‘ নদী ভয় পান। কারন, মা‘র বয়স তখন ৮-৯ বছর। আমার মায়ের বর্ননা অনুযায়ী, নদীর পাড়ে বাড়ী  হওয়ার সুবাদে ধান সিদ্ধ করার জন্য বাড়ীর মহিলারা নদী থেকে পানি আনতো। ফুফুদের সাথে আমার মা ছোট কলস নিয়ে পদ্মা নদীতে পানি আনতে গিয়েছিলেন। ফুফুরা পানি নিয়ে ফিরছেন। নিজ কলসের পানি ঘোলা হওয়ায় মা তাঁর ফুপুকে বলেছেন, ‘ আমার কলসির পানি ঘোলা কেন‘? পরিস্কার পানির জন্য বায়না ধরছিলেন তিনি। একজন ফুফু বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, ‘তুই যাইয়া পরিস্কার পানি নিয়া আয়‘। যেই কথা সেই কাজ। মা তার কলস নিয়ে ফিরে গেলেন নদীতে। পদ্মা নদীর পানিতে সাধারণত অধিক পরিমাণে পলি মাটি মিশ্রিত থাকে বিধায় পদ্মার পানি ঘোলা থাকে। তথাপি শিশুদের অবুঝ মন। পরিস্কার পানি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এক পা এগিয়ে কলস ভরতে গিয়ে স্রোতের টানে কলসসহ ভেসে গেলেন আমার মা। সকলেই পানির কলস কাঁখে নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছেন। হঠাৎ সকলের নজরে এসেছে, জরিনা (আমার মা‘র নাম জরিনা) ফিরে নাই। নাই নাই নাই। এরমধ্যে ফসলের মাঠ থেকে আমার নানা ফিরে এসেছেন। তিনি মেয়েকে খুঁজছিলেন আদর করে মেয়ের মাথার চুল আচড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না জরিনাকে। এমন সময় ফুফুরা বললেন, ‘জরিনাতো গাঙে (নদীতে) পানি আনতে গেছিল‘। নানা চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘ আরে খাইছে তো, আমার জরিনারে গাঙেই নিয়া গেছে। কে কোতায় আছস গাঙ পাড় আয়‘। তাৎক্ষণিকভাবে নানা কয়েকজনকে সাথে নিয়ে নদীর পাড়ে চলে গেলেন। নদীর দিকে তাকিয়ে ভাটিতে খুঁজতে লাগলেন তাঁর প্রিয় কন্যাকে। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন নদীর ঢেউয়ের সাথে চুলের মত কিছু একটা ভাসছে। দু/একজন বলেছিলেন, কচুরিপানা উল্টে গিয়ে ভাসলে অমন দেখা যায়। কিন্তু নানা‘র মন সায় দিচ্ছিল না। তিনি বললেন, ‘কচুরীপানা হোক, যাই হোক ঐ চুলগুলো ধর, ঐডাই ধর, ঐডাই আমার জরিনা‘। এই কথা বলেই নানা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। এরই মাঝে অনেকেই নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। অনেকে নদীর তীর থেকে বড় বড় বাঁশ বা লগি ফেলে সহযোগিতা করছিল। নানা এক হাতে মেয়েকে ধরেছেন, আরেক হাত দিয়ে বাঁশ বা লগি ধরেছেন। নদীর পাড়ে থাকা লোকজন বাঁশ টেনে তাদের কিনারে এনেছিলেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে অনেক চেষ্টা তদবিরে সেযাত্রায় মা বেঁচে গিয়েছিলেন বটে, কিন্তু নদীর প্রতি আমার মা‘এর যে ভীতি সৃষ্টি হয়েছিলো, তার এতবছর পরও পুরোপুরি কাটেনি।

মাওয়া ঘাটে দ্রুত ফিরে যেতে সময়ের স্বল্পতার কারণে পদ্মা নদী পাড় হওয়ার জন্য শেষপর্যন্ত মা‘সহ স্পীডবোটে চড়ে বসলাম। এমনিতেই স্পীডবোট গুলো নদী পারাপারে প্রতিযোগিতা করে চলে। কাওড়াকান্দি শাখা নদী থেকে মূল পদ্মায় নামতেই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে দুটি স্পীডবোট ধাক্কা লাগে এবং ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষাকাল, টইটুম্বুর নদীতে ইঞ্জিন বন্ধ হওয়া ছোট স্পীডবোটে থাকা যাত্রীদের মাঝে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। সকলেই আল্লাহর নাম জপতে থাকে। স্পীডবোট ভাসতে ভাসতে পাশ্ববর্তী বালুচরে পৌঁছলে যাত্রীরা দ্রুত চরে নেমে পরে। স্পীডবোট চালক মেরামত করে বোট চালু করে বটে। কিন্তু যদি মধ্যনদীতে এমন ঘটনা ঘটতো, কি হতো? ভাবতেই গা শিউরে উঠে। এমনি পরিস্থিতিতে নদীর প্রতি ভীত আমার মা‘র মনের অবস্থা কি হতে পারে? 

যে সকল যাত্রীরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে ঢাকা রওয়ানা হতো, তারা সাধারণত তিনবেলার খাবার সঙ্গে নিয়ে আসতো। টিফিন ক্যারিয়ারে বাটিতে বাটিতে বিভিন্ন ধরনের রসালো খাবার। ঘ্রাণে জিভে পানি এসে যায়। এসব খাবার লঞ্চে বসে খেতে আলাদা একটা আনন্দ। অনেকটা পারিবারিক পিকনিকের আমেজ। আমার খুবই ভাল লাগতো ইলিশ মাছ ভাজা, ডিম ভাজা, মসুর ডালের চড়চড়ি, সাথে ইলিশের সাথে ভাজা শুকনো মরিচ। এছাড়া লঞ্চে পদ্মা পারাপারে বিভিন্ন ধরনের ‘স্ট্রিট ফুড‘ জাতীয় খাবারের বর্ননা না দিলেই নয়। লঞ্চের পিছনে ডেক থেকে দুই হাতের উপর ভর করে নীচে নামতেই ডান দিকে একটি চায়ের দোকান রয়েছে। সেখানে ‘কুকিজ‘ নামে 'S' shape এর টোস্ট বিস্কুট এর মত খাবার পাওয়া যায়। লঞ্চের যাত্রীরা কড়া মিষ্টি চা দিয়ে ভিজিয়ে খেতে খুবই পছন্দ করেন। বিশেষ করে শীতকালে রাতের লঞ্চের যাত্রীরা। ফুটবল খেলার মাঠে দর্শকরা যেমনিভাবে আগ্রহ সহকারে চিনাবাদাম চিবোতে পছন্দ করে, ঠিক তেমনি লঞ্চের যাত্রীরা কোড়ানো নারিকেল ও চিনি মিশিয়ে বিশেষ ধরনের ‘মচমচে চিড়া ভাজা‘ খুবই আগ্রহ নিয়ে খায়।

লঞ্চের কেরানী সাহেব, যিনি ভাড়া আদায় করার সময় টিকিট দিয়ে থাকেন, উনার টিপিক্যাল ব্যবহার এর কথা উল্লেখ না করলেই নয়। লঞ্চের কেরানী সাহেবের ভাড়া আদায় করার পদ্ধতি ছিল খুবই ইন্টারেস্টিং। ভাড়া আদায় বিষয়টি যাত্রীদের নিকট ‘টিকিট কাটা‘ হিসাবে পরিচিত। কেরানী সাহেব সাধারণত প্রতিটি ফ্লোরের একপ্রান্ত থেকে শুরু করে প্রতি জনে জনে ভাড়া আদায় করেন। কাজের সুবিধার্থে দুই/একজন সহকারী তার সাথে রাখেন। যে সকল যাত্রীরা ভাড়া কম দিতে চেষ্টা করেন বা প্রকৃত ভাড়া দেওয়ার মত সামর্থ্য থাকতো না, তারা পালিয়ে বেড়াতো, কম ভাড়ায় টিকিট সংগ্রহ করার বিভিন্ন ফন্দিফিকির করতো। পরবর্তিতে কেরানী সাহেবের নির্দিষ্ট রুমে সাক্ষাৎ করে যে কোন উপায়ে টিকিট সংগ্রহ করতো। কারন টিকিট ছাড়া লঞ্চ থেকে নামার কোন উপায় নাই। লঞ্চ নির্দিষ্ট ঘাটে পৌঁছার পর কেরানী সাহেব তার বিশেষ ধরনের চামড়ার ব্যাগটি কাঁধে ঝুলিয়ে লঞ্চ থেকে নামার সিঁড়ির সামনে সহকারীদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন। যাত্রীরা নামার সময় সিঁড়িতে পা দেওয়ার আগে টিকিটটা জমা দিতে হতো। যদি কোন যাত্রী যে কোন কারণে টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি এমন হতো, তবে ঐ মূহুর্তে কাছেই দাড়ানো কেরানী সাহেবের নিকট ভাড়া দিয়ে নেমে যেতেন। আর যদি ভিন্ন কোন ছলচাতুরি করার চেষ্টা করতেন তবে, সময় নষ্ট না করে কেরানী সাহেবের সহকারীরা ঐ যাত্রীকে ধাক্কা মেরে পানিতে ফেলে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। তবে আমার জানামতে, ব্যতিক্রম ঘটনাও রয়েছে। বর্তমানে অতি উচ্চ শিক্ষিত বিদেশ থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী জনৈক অধ্যাপক  ছাত্রজীবনে টিকিট না দিয়ে লঞ্চ থেকে লাফিয়ে পরার ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। অবশ্য তিনি ছলচাতুরি করেননি, উনার কাছে টিকিট কাটার মত প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা ছিল না।

হয়তো জীবনে আর কখনো লঞ্চে বা নৌকায় বা ফেরীতে পদ্মা নদী পার হতে নাও পারি। কিন্তু যখনই মোটরগাড়িতে চড়ে মাত্র ৭-৮ মিনিটে পদ্মা নদী পার হবো, তখন  স্মৃতির ভান্ডারে জমে থাকা অসংখ্য স্মৃতি মনে দোলা দিবে চিরদিন।

সাবাশ শেখ হাসিনা।
চিরকৃতজ্ঞ তোমার প্রতি। তোমার দৃঢ়তা ও সাহসিকতার জন্যই বাঙ্গালী জাতির আত্মমর্যাদার প্রতীক ‘পদ্মাসেতু‘ আজ বাস্তবতা।
তোমার পিতা দিয়েছে দেশ, 
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, তুমি দিয়েছো পদ্মা সেতু।
আমাদের টাকায় আমাদের পদ্মা সেতু, এটাই আমাদের গর্ব।

পদ্মা   শেখ হাসিনা   পদ্মা সেতু  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন