ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগের আছেন একজন শেখ হাসিনা


Thumbnail

অন্য সবার মতো আড্ডা আমাকেও টানে। কখনো কখনো মন চায় তুলতে চায়ের কাপে ঝড়। সে আড্ডা হোক রাজনীতি, হোক সাহিত্য। কথা হচ্ছিল আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে। বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলাম। টেবিলে ছিলেন আমার আরেক সহকর্মী। আলোচনা জমে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়া-না নেওয়া নিয়ে।  চায়ের কাপে ঝড়ে শ্রীলঙ্কার বর্তমান হাল, ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ববাস্তবতা ও সরকারের সামনের চ্যালেঞ্জ বাদ পড়ে না। উঠে আসে আগামী ভোটে বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকা ও ভারতের ভূমিকা কী হবে এবং কূটনীতিকরা কেন এত তৎপর এখন বাংলাদেশ নিয়ে। প্রশ্ন আমাদের। জবাব দিচ্ছেন নেতা। আবার তিনি আমাদের কাছেও ছুড়ে দিচ্ছেন প্রশ্নের বাণ। নেতা বললেন, ‘বিএনপি কিংবা বিদেশি কেউই আমাদের জন্য ফ্যাক্টর নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি বিদেশনির্ভর নয়। অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আর হাইকমিশনারের ইশারায় এ দেশে কিছু হবে না। লাভ হবে না ঘোলা পানিতে বিএনপির মাছ শিকারের চেষ্টা। সুশীল আর ডক্টরদের দেশ-বিদেশে নানামুখী তৎপরতা ভেস্তে যাবে যদি আমরা ঠিক থাকি।’ মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম। বললাম, আমরা ঠিক থাকি বলতে কী বোঝাতে চাইছেন? আরেকটু খোলাসা করুন। জবাবে সেই নেতা বললেন, ‘আমরা মানে আওয়ামী লীগকে বুঝিয়েছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের কর্মকান্ডের কথা বলছি। সাধারণ মানুষ সরকারি দলের কর্মকান্ড দেখে। কিন্তু কতিপয় অর্বাচীন বুঝে না বুঝে যা খুশি তা করে। নিজেরা নিজেরা মারামারি হানাহানিতে লিপ্ত হয়। অকারণে বিতর্ক তৈরি করে। লাগামহীন আচরণের প্রকাশ ঘটায়। বাস্তবতা বুঝতে চায় না। এতে মানুষ হতাশ হয়। ক্ষুব্ধ হয়, ব্যথিত হন সরকারি দলের কর্মীরাই। আমাদের সমস্যা নিজেদের অভ্যন্তরের ঝামেলা নিয়ে। বাইরের চক্রান্ত আগেও ছিল, এখনো আছে। এগুলো সামাল দিয়েই আওয়ামী লীগ আজকের অবস্থানে।’

কথাগুলো পছন্দ হলো। আওয়ামী লীগ ঐতিহ্যবাহী একটি অভিজ্ঞ পুরনো রাজনৈতিক দল। যুগে যুগে এ দলটি বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। এ দল মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে। শেখ হাসিনা সারাটা জীবন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নিয়ে লড়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন মানুষের অধিকার। তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষার সুফল ভোগ করছে আজকের আওয়ামী লীগ। তিনি গড়েছেন টানা ক্ষমতার রেকর্ড। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ জানে কী করে আন্দোলন করতে হয়। কী করে আন্দোলন ব্যাহত করতে হয়। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে ও ভিতরে থাকার সমান অভিজ্ঞতা দলটির। এ দলের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে কিছু করার শক্তি এখন বিএনপির নেই। টানা ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ভিতরে ক্লান্তি তৈরি হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তৈরি হয়েছে হতাশা। বিএনপি এখন আর আগের অবস্থানে নেই। তারা দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য কোনো আন্দোলন গড়তে পারেনি। দাঁড়াতে পারেনি নেত্রীর পাশে। এখনো দলের ভিতরে-বাইরে সমস্যার শেষ নেই। বেগম খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। হাসপাতাল, মামলা-মোকদ্দমা আর জেল নিয়ে তিনি কাবু। সাধারণ নেতা-কর্মীরা তাঁর শারীরিক অবস্থান নিয়ে চিন্তিত। দলের আরেক শীর্ষ নেতার অবস্থান লন্ডনে। বিদেশের মাটিতে বসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে শীর্ষ পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়া যায় না। কঠিন এ পরিবেশে দল সামাল দিতে লড়ছেন মির্জা ফখরুল। তিনি কতটা পারবেন তা বলার সময় আসেনি। তবু ভদ্রলোক হিসেবে মির্জা ফখরুল দেশ-বিদেশে একটা অবস্থান গড়েছেন। টিকে আছেন।

ক্ষমতা ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। সরকারি দলে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। বিরোধী দলে হামলা-মামলা আর কারাগার। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় বিরোধী দলে ছিল। হামলা-মামলাসহ কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আজকের অবস্থানে। আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি দুঃসময় কেউ মোকাবিলা করেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর এ দলটি দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ ছিল দলটির জন্য এক দুঃসহ পরিস্থিতি। তারপর পথপরিক্রম ও কঠিন বাস্তবতায় নেতারা সিদ্ধান্ত নিলেন দল টেকাতে নিয়ে আসবেন বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। আওয়ামী লীগের লাখ লাখ কর্মী নেত্রীর আগমনের খবরকে স্বাগত জানালেন। দলে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হলো। এ কর্মীরাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভরসা। শেখ হাসিনাও টিকে আছেন তাঁদের ভালোবাসায়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পথ তৈরি ১৯৭৭ সালে। সে বছরের ৩ ও ৪ এপ্রিল ঢাকার ইডেন হোটেলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সে সম্মেলনের দলাদলি কর্মীদের মধ্যে নীরব আলোচনায় নিয়ে আসেন শেখ হাসিনাকে। সম্মেলনে মিজানুর রহমান চৌধুরী দলের সভাপতির অন্যতম দাবিদার ছিলেন। মোল্লা জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। সে সম্মেলনে ফণীভূষণ মজুমদার, জহিরুল কাইউমসহ অনেক নেতা সরাসরি বিরোধিতা করলেন মিজান চৌধুরীর। তরুণ নেতারা এতে সায় দিলেন। সে কাউন্সিলে সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে আহ্বায়ক করা হয়েছিল অস্থায়ীভাবে। পরে আবদুল মালেক উকিল সভাপতির দায়িত্ব নেন। আবদুর রাজ্জাক হন সাধারণ সম্পাদক। তোফায়েল আহমেদ সাংগঠনিক সম্পাদক।

সেই সম্মেলনে মিজানুর রহমান চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘নেতা চলে গেলেও কর্মী রেখে গেছেন। যদি দেশে কোনো দিন বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের পক্ষেই সে সরকার গঠন সম্ভব।’ মিজান চৌধুরীর সেই বক্তৃতা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সাহসী করেছিল। ভাবনা তৈরি করেছিল শেখ হাসিনাকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের পরের সম্মেলন হয় ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি। সে সম্মেলনের এক বছর আগে থেকেই নেতারা দিল্লি আসা-যাওয়া শুরু করেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকন্যাকে অনুরোধ জানাতে থাকেন দলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। অনুরোধ নিয়ে বারবার গিয়েছিলেন ডা. এস এ মালেক, জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, কোরবান আলী, আমির হোসেন আমু, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতারা। ১৯৮১ সালের সম্মেলনে শেখ হাসিনার নাম সভানেত্রী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগকে এক রাখার জন্য, কর্মীদের উজ্জীবিত করতে এর কোনো বিকল্প ছিল না। সম্মেলনের পর আবার দিল্লি যান আবদুল মালেক উকিল, ড. কামাল হোসেন, জিল্লুর রহমান, আইভি রহমান, টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান, আবদুস সামাদ আজাদ, কোরবান আলী, জোহরা তাজউদ্দীন, সাজেদা চৌধুরী, গোলাম আকবর চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদসহ অনেক নেতা। আলাদাভাবে সবার আগে যান এস এ মালেক। তাঁরা নেত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন দেশে ফেরার তারিখ নিয়ে। আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সারা দেশে তখন একজনের জন্যই অপেক্ষা করতে থাকেন। সে অপেক্ষার অবসান ঘটে একই বছরের ১৭ মে।

শেখ হাসিনা হাল ধরার আগে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা ছিল। টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা ছিল। এক কঠিন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৩৪। সে বয়সে এত বড় একটি দলের হাল ধরার বিষয়টি ছিল চ্যালেঞ্জের। বঙ্গবন্ধুর মেয়ে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার কাছাকাছি নিয়ে যান। জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হন। ১৯৮৬ সালের মতোই ১৯৯১ সালে ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে ক্ষমতায় আসতে পারেনি আওয়ামী লীগ। অসীম ধৈর্য নিয়ে এক হাতে তিনি সব মোকাবিলা করেছেন। তাঁর একক কর্মতৎপরতায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। পাঁচ বছর না যেতেই ২০০১ সালে আবারও আওয়ামী লীগকে ঘিরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আওয়ামী লীগের পছন্দের সিইসি সেই চক্রান্তের জালে ছিলেন। সহায়তা পাওয়া যায়নি আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব শুরু হয়। সে তান্ডব থামাতে সেনাবাহিনী নামাতে হয়েছিল খালেদা জিয়ার সরকারকে। সারা দেশে চালানো হয় অপারেশন ক্লিনহার্ট। পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সেনাবাহিনী ফিরে যায়। কিন্তু শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শেষ হয়নি। এবার বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান এ ঘটনায় অভিযুক্ত হয়ে এখন কারাগারে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুর হাত থেকে আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেছেন। আল্লাহ তাঁকে দিয়ে দেশের জন্য বড় কাজ করাতে চান বলে বাঁচিয়ে রেখেছেন মানুষের জন্য।

শুধু ২১ আগস্ট নয়, ১৯৮১ সালে দেশে আসার পর ১৯৯৬ সালের আগে এবং ২০০১ সালের পর বারবার হামলার মুখে পড়েছিলেন শেখ হাসিনা। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন। কারাবরণ করেছিলেন। কিন্তু চরম ধৈর্য ধরে তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। সামাল দিয়েছেন দলের ভিতর-বাইরের সব। সাদা চোখে অনেক বাস্তবতা এখন হয়তো অনেকে ভুলে গেছেন। আবদুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে বাকশাল গঠন না হলে আওয়ামী লীগ ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালেই ক্ষমতায় আসত। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো না। ড. কামাল হোসেন, মোস্তফা মহসীন মন্টুদের চ্যালেঞ্জ সামলিয়েছেন। আবদুর রাজ্জাককে ঘরে ফিরিয়ে এনেছেন। বিলুপ্ত করেছেন রাজ্জাকের বাকশাল। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের সময় এবং পরে আমরা শেখ হাসিনার সঙ্গে সারা দেশ সফর করেছি। মানুষের ভালোবাসা দেখেছি তাঁর জন্য। বাংলাদেশের মানুষের সেই ভালোবাসার জবাব দিচ্ছেন তিনি ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের চমক দিয়ে। তাঁর দর্শন, চিন্তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে নতুন উচ্চতা দিয়েছে। নতুন মাত্রায় এনেছে। তৈরি করেছে আশার আলো। দেশ-বিদেশে বাংলাদেশ নিয়ে বেড়েছে প্রত্যাশা। পাকিস্তানের মতো দেশও এখন কথায় কথায় উপমা টানে বাংলাদেশের উন্নয়নের। প্রশংসা করে পদ্মা সেতুর। এ সাফল্য শেখ হাসিনার। এ সাফল্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক ধারার। বাংলাদেশের আগামী দিনের সুস্থ উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রত্যাশা বেড়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন স্বপ্ন। কতিপয় অর্বাচীনের বালখিল্য আচরণে এ অর্জন ব্যাহত হতে পারে না। শেখ হাসিনা নিজেও তা কাউকে করতে দেবেন বলে মনে করি না।

সব সময় অতি উৎসাহীরা সর্বনাশ করে আওয়ামী লীগের। দেশ-বিদেশে ক্ষুণ্ণ করে সুনাম। কতিপয় মন্ত্রী, এমপি, নেতা ও আমলার দায়ভার পুরো দল কেন নেবে? একজন এমপির কাজ মারধর করা নয়। দায়িত্বশীল সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দায়িত্ব কমিটি বাণিজ্য নয়। মাঠপর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মীই দুঃখ করেন কমিটি বাণিজ্য নিয়ে। হতাশা ব্যক্ত করেন সম্মেলন না করা নিয়ে। আড়াই বছর ধরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের কমিটি করার অনুরোধ রক্ষা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় যুবলীগ। এ সংগঠন এখন যে লাউ, সেই কদু। ওমর ফারুক চৌধুরীর সমালোচনাকারীদের একজন বললেন, তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন ক্ষিপ্রগতিতে। বেলা শেষে সংগঠন করে ঘরে ফিরতেন। এখন ঠিক বিপরীতটা। সেদিন এক এমপি দুঃখ করলেন ছাত্রলীগ নিয়ে। বললেন, কমিটি নিয়ে দুই পক্ষ থেকেই টাকা নিচ্ছে তারা। এভাবে কমিটি বাণিজ্য আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নয়। গতিশীল নেতৃত্ব তৈরি না হলে, যোগ্য নেতা না এলে রাজনীতিতে সরকারি আমলাদের দাপট স্বাভাবিকভাবে বাড়বে। চাকরিকালীন অনেক আমলাকে গত ১২ বছরে আওয়ামী লীগার হতে দেখেছি। আবার বদলাতেও দেখেছি। অবসরে গিয়ে অনেকে নতুন হিসাব করেন। ভুলে যান চাকরিকালীন অতি আওয়ামী লীগ সাজার কথা। আবার কেউ সাজেন সুশীল। টক-শোয় কথা বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনা করে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অথবা কোনো কমিশনে পাঁচ বছরের নতুন নিয়োগ না পেলে তারা ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। ভুলে যান চাকরিকালীন পাওয়ার কথা। আওয়ামী লীগ আমলানির্ভর হতে পারে না। আওয়ামী লীগ কামলানির্ভর রাজনৈতিক দল। এ দলে বারো রকমের মানুষের সমাবেশ আছে। কিন্তু মাঠের কর্মীদের বিষয়টি আলাদা। তাঁদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব নেই। তাঁরা কাজ করেছেন বঙ্গবন্ধুর জন্য। কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য। কী পেয়েছেন কী পাননি সে হিসাব মেলান না। আর সে হিসাব মেলান না বলেই আওয়ামী লীগ টিকে আছে।  টিকে থাকবে। শেখ হাসিনা যত দিন আছেন এ দলের চিন্তার কিছু দেখি না। তিনি এক হাতেই সামাল দিচ্ছেন সবকিছু। ভরসার কেন্দ্রবিন্দু একজনই।


আওয়ামী লীগ   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার সমালোচনা করলেও কেউই তার বিকল্প খুঁজে পান না


Thumbnail

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। 

দার্শনিক শেখ হাসিনা এখন আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। এতদিন তিনি ছিলেন আগে রাষ্ট্রনায়ক পরে এবং দার্শনিক। এখন তিনি আগে দার্শনিক পরে রাষ্ট্রনায়ক। কারণ তিনি একের পর এক দর্শনকে যেভাবে স্থায়ী রূপ দিয়ে যাচ্ছেন তাতে এদেশের সকলের মনোবলও বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভাতেও তিনি দর্শনের প্রতিফলন ঘটিয়েছেন। তিনি পুরনোদের সাথে নতুনদের যুক্ত করে নেতৃত্বের একটি চমৎকার ভারসাম্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। যা আমরা এই ১০০ দিনে বুঝতে পেরেছি এই নতুন মন্ত্রিসভার কাজকর্মে। সেদিক থেকে আমি অনুধাবন করতে পারি যে, এই ১০০ দিনে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত শতভাগ সফল।

গোটা বিশ্ব এখন যুদ্ধের মধ্যে পড়েছে। করোনার পর থেকে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ গোটা বিশ্ব অর্থনীতিতে টলটলয়মান করে দিয়েছে। এখন আবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে। বলা যায় বিশ্বে একটা মিনি বিশ্ব যুদ্ধ চলছে। গাজায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এরকম পরিস্থিতিতে দার্শনিক শেখ হাসিনার সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা যে, এখন পর্যন্ত তিনি সঠিক পথে আছেন এবং সফল ভাবে পুরো পরিস্থিতি মোকাবিলা করে যাচ্ছেন। বিশ্বের অস্থির পরিস্থির কথা অনুধাবন করে তিনি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন। যেমন-বিশ্ব বাজারে নতুন নতুন বাজারের সন্ধান। আমাদের যেন খাদ্য ঘাটতি পড়তে না হয় সেজন্য তিনি আগাম আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতেও তিনি জোরালো ভাবে আহ্বান করেছেন। 

একজন জেনারেলকে কীভাবে বিচার করা হয়? তিনি কয়টি ব্যাটল জয় করলেন সেটা দিয়ে কিন্তু নয়। তাকে বিচার করা হয় যখন তিনি একটা ব্যাটলে হেরে যান এবং তার সৈন্যরা যখন পুরো ভেঙে পড়েন ঠিক সে সময় তিনি কীভাবে তার সৈন্যদের উজ্জীবিত করতে পারলেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দার্শনিক শেখ হাসিনাও সে রকম একজন জেনারেল, যে জেনারেল কঠিন সময়ে সাধারণ জনগণকে সবচেয়ে কম কষ্টে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতেও যেন তিনি সফল ভাবে নিয়ে যাবেন সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকে তার সমালোচনা করছেন ঠিক কিন্তু কেউ তার বিকল্পের কথা বলতে পারছেন না। তিনি দলকে যেমন ধরে রেখেছেন বা নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঠিক তেমনিভাবে সরকারকেও সঠিক পথে পরিচালনা করছেন। সুতরাং শেখ হাসিনার বিকল্প যে শেখ হাসিনাই এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সরকারের প্রথম ১০০ দিনের মত সামনের দিনগুলোতে সাফল্য ধরে রাখবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

কতিপয় সাংবাদিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর


Thumbnail

বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।

ভিন্ন চিত্র দেখলাম শনিবার সকালে বরিশাল সদর হাসপাতালে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ড দিতে যেয়ে দেখেন দুজন টিভি সাংবাদিক ওয়ার্ডে ভিডিও করছেন। ভিডিও শেষ হবার পর চিকিৎসক তাঁর রাউন্ড শুরু করলেন। রাউন্ড শুরু করতেই দুজন সাংবাদিক আবার ক্যামেরা ধরে চিকিৎসকের সাথে কথা বলা শুরু করলেন। চিকিৎসক তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিনয়ের সাথে নিচু স্বরে একে একে ২০ বার (গুনে নিশ্চিত হয়েই বলছি) সাংবাদিকের নাম জিজ্ঞেস করলেন, পরিচয় জানতে চাইলেন। উক্ত সাংবাদিক নাম বলেননি, পরিচয় দেননি। বরং উচ্চস্বরে উল্টা পাল্টা কথা বলেছেন, পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। অবশেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক উর্ধতন কাউকে ফোন দেয়ার পর সাংবাদিক সাহেব তার নাম বলেছেন। এখানে দুটি প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।  প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সাংবাদিক দুজন কি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাধর হয়ে গেছেন ? দ্বিতীয় প্রশ্ন, সাংবাদিক দুজনকে কেন নাম বলতে হবে ? নাম, পদবি, পরিচয় থাকবে তাদের বুকে বা কোমরে প্রদর্শিত আই ডি কার্ডে। এখন দেখার বিষয়,  প্রদর্শিত স্থানে আই ডি ছিল কিনা ? না থাকলে থাকবে না কেন?

সাংবাদিক ও চিকিৎসকবৃন্দ ঘটনার ভিডিও চিত্র সমূহ পৃথকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়েছেন। সব গুলো ভিডিও কয়েকবার দেখেছি, পর্যালোচনা করেছি। দায়িত্বরত চিকিৎসক কখনোই উচ্চস্বরে কথা বলেননি। তিনি যথেষ্ট ধৈর্য্য, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। পক্ষান্তরে সাংবাদিক দুজন বারবার উচ্চস্বরে কথা বলেছেন। তাদের কথা বলার ধরণ দেখে মনে হয়েছে, এটি একটি মগের মুল্লুক। কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়ার্ড রাউন্ড শুরু করার আগে প্রতি রোগীর সাথে একজন এটেন্ডেন্ট ব্যাতিরেকে সবাইকে বের হবার কথা বলেছেন। সবাই বেরিয়ে না গেলে তিনি চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। সেটাই নিয়ম।  সারা দুনিয়ায় সেটাই হয়ে থাকে। সাংবাদিকদ্বয় সেটি শুনতে নারাজ। এখানে তারা স্পষ্টতই সরকারি কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন, যা আইনত দণ্ডনীয়।  

দিন শেষে বেসরকারি টিভি চ্যানেলে দেখলাম সাংবাদিকদের হেনস্থা করেছে ডাক্তার। অথচ ভিডিও গুলি পর্যালোচনা করলে যে কেউ বলবেন, ডাক্তারকে হেনস্থা করেছে সাংবাদিকরা। আসলেই মগের মুল্লুক। ঘটনা কি ? আর সংবাদ শিরোনাম কি? এসব মগের মুল্লুকের রাজত্ব  থেকে জাতিকে পরিত্রান দেয়া প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিএমএ, এফডিএসএর, বিডিএফ ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ সমন্বয়ে একটি কমিটি করে দেয়া দরকার। কমিটি হাসপাতালে সাংবাদিক প্রবেশে ও তাদের দায়িত্ব নির্ধারণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। সে নীতিমালায় যাতে স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে বাধা প্রদান না করা হয়, রোগীর অনুমতি ব্যাতিরেকে তাদের ছবি, ভিডিও বা রোগ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রকাশ বা প্রচার না করা হয়, সেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন। তা না হলে হাসপাতাল সমূহে এ ধরণের অরাজকতা হতেই থাকবে, বাড়তেই থাকবে।  

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

প্রথম আলোর পর কী ডেইলি স্টারও বিক্রি হবে?


Thumbnail

এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন।

প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে অনেকেরই  ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী লোক।

এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।

তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।

এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।

আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম। সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায় যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।

ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।

তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।

তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।


প্রথম আলো   ডেইলি স্টার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে বিএনপির রাজনীতি


Thumbnail

বিএনপির রাজনীতি এখন ভুলের চোরাগলিতে আটকে গেছে। রাজনীতিতে একের পর এক ভুল করার কারণে তারা এখন হতাশায় নিমজ্জিত। কোন কী বলতে হবে সেটার খেই হারিয়ে ফেলেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

বিএনপি এখন দাবি করছে যে, তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মী জেলে আছেন। এখানে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি হল যদি ৬০ লাখ কর্মী তাদের থাকত তাহলে এতদিনে তারা কেন আন্দোলনে ব্যর্থ হল? যদি এত সংখ্যক নেতাকর্মী থাকত তাহলে তো অনেক আগেই সরকারের পতন ঘটে যেত। কারণ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য এক লাখ নেতাকর্মী হলেই যথেষ্ট। কিন্তু এত সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়েও তারা ব্যর্থ কেন! এত বড় সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে তারা তাদের নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করতে পারেনি। কোন আন্দোলনই তারা করতে পারল না! বরং তাদের নেত্রীকে সরকারের অনুকম্পায় ফিরোজায় থাকতে হচ্ছে। ফলে স্বভাবতই বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যা কত সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর এত নেতাকর্মী থাকা সত্বেও তাদের নেতাকে লন্ডনে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে! 

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হল বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মী যদি জেলে থাকেন তাহলে দেশের জেলখানা গুলোর ধারণ ক্ষমতা কত। এবং সেখানে যদি বিএনপির নেতাকর্মীর সংখ্যাই হয় ৬০ লাখ তাহলে এর মধ্যে সাধারণ কয়েদি কোথায় আছেন। তাদেরকেই বা কোথায় রাখা হয়েছে।

কথায় আছে, পথের মাঝে পথ হারালে আর কি পথ ফিরে পাওয়া যায়! বিএনপির অবস্থায় এখন তাই। তারা রাজনীতির পথের মাঝে রাজনীতির পথ হারিয়ে ফেলেছেন। কোনটা রাজনীতি আর কোনটা রাজনীতি নয় সেটাও বিএনপির নেতাকর্মীরা বোধহয় ভুলে গেছেন কিংবা বুঝতে পারছেন না। অন্য আরেকটি কথায় আছে যে, স্বপ্নে যখন কেউ কিছু খাবে তখন পান্তা খাবে কেন? পোলাও কোরমা খাওয়াই ভালো। বিরিয়ানিও খাওয়া যেতে পারে। সুতরাং ৬০ লাখ না বলে তাদের বলা উচিত ছিল বাংলাদেশে তো প্রায় ১৮ কোটি লোক আছে এর মধ্যে ৬ কোটি লোকই বিএনপির নেতাকর্মী। তাহলে অত্যন্ত লোকে আরও ভালো ভাবে বুঝত যে, বিএনপি আসলেই অনেক বড় একটি শক্তিশালী দল এবং তাদের আন্তর্জাতিক মুরব্বিরা বুঝতে পারত যে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত ভালো। 

তবে বাস্তবতা হল বিএনপি ৬০ লাখ নেতাকর্মী দাবি করলেও আসলে তাদের কোন জনসমর্থনই নাই। যদি তাই থাকত তাহলে তারা নির্বাচন বিষয়টিকে এত ভয় পেত না। নির্বাচন বর্জনের মতো সিদ্ধান্ত নিত না। শুধু তাই নয়, বিদেশিও তাদের কোন বন্ধু নাই। যারা আছে সেই বন্ধুদের কথায় দলটি বরং এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যাচ্ছে। দেশিয় বিএনপির যে সমস্ত বন্ধুরা ছিলেন, বিভিন্ন সময় বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে কিছু লেখালেখি করতেন, তাদেরকে রাষ্ট্রক্ষমতার স্বপ্ন দেখাতেন তারাও এখন হারিয়ে গেছেন। সব কিছু মিলিয়ে দলটি এখন অনেকেটা এতিম হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়ত সামনে দলটির নাম নিশানাও থাকবে না। যারা নিজের দলের নেতাকর্মীর সঠিক সংখ্যা জানেন না তাহলে বুঝতে হবে সেই দলটি এখন কোন পর্যায় গেছে। কতটা দেউলিয়া হলে একটি দলের নেতাকর্মীর সংখ্যা নিয়ে তারা নিজেরাই বিভ্রান্ত হন। সুতরাং দলটি যে অচিরেই হারিয়ে যেতে বসছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন