ইচ্ছে
ছিল এবারকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনের দিনে বিভাগ/হল /বিশ্বিদ্যালয়ে যাবো। আমাদের
কপালে সমাবর্তন জোটে নি- কারণ স্বৈরাচারী এরশাদ ছিলেন আচার্য। উনার
কাছ থেকে আমরা যেমন সনদ নিতে চাইনি, তেমনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিতে চায় নি। সেই সাহসী হিমালয়ের মতো সুউচ্চ নৈতিকতার অধিকারী শিক্ষকের অভাব আজ সমাজকে ভাবিয়ে
তুলেছে। মহামান্য
রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের সমাবর্তন
ভাষণে সেটাই ফুটে উঠেছে।
এবার সতর্ক বার্তা ছিল অজানা প্রান্তের অজানা কণ্ঠ থেকে - আগামী এক মাস যেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাই! সুতরাং,
ঘরে বসে স্মৃতি রোমন্থন করছিলামবন্ধুদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতায়। ১৯৮২
সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ১৯৯১ সালে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হওয়া পর্যন্ত আমার সময়গুলো কেটেছে কবি জসীমউদ্দীন হলে। চারতলায় আমার রুম ছিল। একান্ত আমার একটি সিট যা আমার মেধার
স্বীকৃতি। রুমমেট হিসেবে যাদের পেয়েছিলাম তাদের মধ্য থেকে করোনায় হারিয়েছি স্কুলজীবনের বন্ধু আহসানুল ইসলাম ডিককে। ডিক ফিন্যান্সের ছাত্র ছিল। খুবই পরোপকারী বন্ধু। নিজের ক্ষতি করে বন্ধুর উপকার করা ছিলো ডিকের স্বভাব। স্বৈরাচারী এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্রসমাজ তাকে কিছুদিনের জন্য হল ছাড়তে বাধ্য
করেছিল। বিষয় হলে সিট দখল নিয়ে নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের অন্যায়কে প্রতিবাদ করেছিল ডিক। নতুন বাংলা ছাত্রসমাজের নেতারা তাদের মতো করে হল চালাতে ছাত্রদল,
ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রলীগ/সমাজকে তখন প্ৰতিপক্ষ হিসেবে নিয়ে নিপীড়ন করতো। মারধোর ছাড়া ফ্লোরে থুথু ফেলে সেটা চেটে খেতে বাধ্য করতো! সেই বীভৎস নিপীড়ণের স্বীকার ছাত্রনেতারা দেশের উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।
আমার
আরেক রুম মেট ছিলেন স ম আলাউদ্দিন।
খুবই হাসিখুশি একজন মানুষ। ইতিহাসের এই ছাত্র সচিবালয়
ঘেরাও করতে চলে যেতেন। এরশাদবিরোধী এমন কোনো আন্দোলন নেই যে আন্দোলনে আলাউদ্দিন
ভাই থাকেননি। গণতন্ত্রের আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান এই সেদিন সমাবর্তন
উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি
স্বীকার করলেন। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মহামান্য বেশ কিছু কথা বলেছেন যা জাতির বিবেককে
নাড়া দিয়েছে। ১৯৯০ সালের ১১ নভেম্বর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এরশাদের আদেশ অমান্য করে যে আন্দোলন শুরু
করেছিল সেকথা আমি আগের লেখায় বলেছি।
মুক্তির
সংগ্রামে, স্বাধীনতার সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন শিক্ষকরা। সেই জাতির বিবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এরশাদের জরুরি আইন অমান্য করে ৬ডিসেম্বর রাজপথে নামে এবং একযোগে সকলে পদত্যাগ করেন। গণতন্ত্রের প্রতি এই শ্রদ্ধা দেখিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল- আজ মহামান্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আক্ষেপ করে বলছেন শিক্ষকদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার কথা।
মহামান্য বিনয়ের সঙ্গে আপনাকে একটি প্রশ্ন করতে পারি কি?
আপনি কি ভেবেছেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে
কেন এমন হলো? গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাত্র
-ছাত্রী ২০০৭ সালে কি ঝুঁকি নিয়েছিলেন,
কিভাবে তারা জেল খেটেছেন,
কিভাবে তাদেরকে চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলোকি আমরা মনে রেখেছি?
পাঠকদের কাছে বিনয়ের সঙ্গে মন জানতে চায়,আমাদের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্রের সুফল ভোগ কারা করছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির কোনায় ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডাক্তার মিলনকে হত্যা করা হয়েছিল খুবই ঠান্ডা মাথায়।সবচে মেধাবী সেই ডাক্তাররা কি কখনো প্রথম গ্রেড পায়?
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র
-ছাত্রী, শিক্ষক -কর্মচারী -কর্মকর্তা গুলির তান্ডবে ছিল দিশেহারা। প্রাণভয়ে সকলে ছুটেছিল।কোথা থেকে গুলি আসছিলো কেউ বুঝতে পারছিলাম না।সেদিন যারা রুখে দিয়েছিলো তারা কিভাবে অবহেলিত তা কি আমাদের অজানা
!
আমাদের সকল সুযোগ সুবিধা পান যারা তাদের সম্পর্কে আজনা-ই বললাম, কিন্তু শিক্ষকদের জীবন কিভাবে কাটছে সেটাও যেন আমরা দেখি। সমাজ
দেখেও না দেখার ভান
করে-ট্যাক্স, ভ্যাট সবই কিন্তু শিক্ষকরা দেন। আর
কারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় , বিদেশে অর্থ পাচার করে সেটাও আজ অজানা নয়। কিন্তু শিক্ষকদের কষ্টকে বিবেচনায় না রেখে রসালো ভাবে বলা হয়
"ভর্তি পরীক্ষার টাকা ভাগ বাটোয়ারা
" করে খায় শিক্ষকরা।
সবচে মেধাবী যে ছাত্রটি শিক্ষক হয়েছেন তাকে ধুলো মাখিয়ে কাদের সন্তানেরা রাজবেশে চলে যান সমাজ কি তা জানেনা? অপেক্ষা করতে করতে যখন আর কোনো উপায় বা সম্ভাবনা দেখেন না,তখন তারা যাচ্ছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা সান্ধ্যকালীন ক্লাসে। এভাবে শিক্ষকদেরকে তাদের আদর্শর পথ থেকে নিয়ে গেলো যে বাজার অর্থনীতি তার দায় কি কেবল শিক্ষকদের?
সেটা অনুসন্ধান করা প্ৰয়োজন।
১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ডাক্তার মিলন শহীদি মৃত্যুবরণ করেন। এই
বিষয়ে এক লেখক লিখেছেন
"তার মৃত্যুতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন দাবানলে রূপ নেয়।ডাক্তাররা শুরু করেন অবিরাম কর্মবিরতি। গণপদত্যাগ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। জরুরি অবস্থা জারি করে স্বৈরসরকার।কিন্তু সেই জরুরি অবস্থা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসে ছাত্রছাত্রীদের মিছিল। নয় বছরের রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেয়ে মুক্তবাতাসে নিঃশ্বাস নিতে ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে আসেন নাগরিকরা।সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে সংঘর্ষে প্রাণ দেন আরও অনেকে। এভাবেই মিলনের মৃত্যুর ভিতর দিয়ে এরশাদের পতনের শেষ অধ্যায় রচিত হয়। ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন এরশাদ
(জহিরুলহকমজুমদার,
https://bangla.bdnews24.com/opinion_bn/archives/58785)।" আজ আমাদের সবচে জরুরি কাজ কেন শহীদ ডাক্তার মিলনের সতীর্থরা মনোনয়ন পেয়ে কাদের কাছে নির্বাচনে হেরে যায় তা
অনুসন্ধান করা! পেশাজীবীরা কি এমনিতেই তাদের শপথ ভুলে সরল সঠিক পথ থেকে সরে গেছেন নাকি
নির্লিপ্ত সমাজ জনপ্রিয়তা দিয়ে তাদেরকে বিতাড়ন করেছে?
আজ আমরা সেই আগেরই মতো বড়ো বড়ো জনসভা দেখছি। সে বিষয়ে আজ
(২৪নভেম্বর ) মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন,
"রাজ পথে শক্তি দেখিয়ে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক নির্বাচন হবেনা
( প্রথমআলোhttps://www.prothomalo.com/bangladesh/ixn8glxg52)।" তার বক্তব্য থেকে এ কথা বলা যায় -আমরা সঠিক পথ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছি। আমাদের এখন থামতে হবে। এবং সেই কাজটি বিশ্ববিদ্যালয় তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে জাতি আশা করে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যা করে যে বিচারহীনতার সংষ্কৃতি চালু হয়েছিল সেই গভীর নর্দমা থেকে জাতিকে সঠিক পথ দেখাতে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাতিঘর হিসেবে কাজ করেছিল
- আজ আবার সেই মহান দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিতে হবে সেই আহবান মহামান্য রাষ্ট্রপতির ভাষণে আছে।
আজ হুমকির রাজনীতিতে জনগণ ভীত! আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষক সমাজকে আলোর পথ দেখাতে হবে। শহীদ মিলনের স্মৃতিস্তম্ভে কেবল একতোড়া ফুল কিংবা একটি আলোচনা সভা নয়
- জাতীয় সমস্যার আরও গভীরে গিয়ে জাতিকে পথ দেখাতে হবে।
মহামান্য শিক্ষকদের নৈতিক অবক্ষয়ের কথা বলেছেন যাতে আমরা জেগে উঠি-
দেশের সুনাগরিক হিসেবে যে মহান দায়িত্ব শিক্ষকরা পেয়েছেন সেটা যেন পালন করি।মহামান্য আপনার আবেদনে আমরা সাড়া দেব। তবে যুগের পর যুগ যেভাবে শিক্ষকদেরকে অবহেলা করা হয়েছে তারও অবসানে আপনার সমর্থন চাই।শিক্ষকরা যাতে সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে সেই দাবিটি কি আমি আপনার কাছে বিনীতভাবে সীমিত পরিসরে করতে পারি?
মহামান্যর আরেকটি আক্ষেপ
- শিক্ষক নিয়োগে যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ
সকল বিশ্ববিদ্যালয় মেধাকে মূল্যায়ন করে।আমার জানা মতে, আপনার কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কিভাবে মেধাকে অবমূল্যায়ন করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। মহামান্য আপনি জানেন কোন কোন শিক্ষক বা উপাচার্য/প্রো-উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা তো জনগণের নেই-
কেবল আপনার আছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপনি অবিলম্বে তাদেরকে অপসারনের ব্যবস্থা নেবেনকি?
শিক্ষকদের বিবেক জাগরণের পাশাপাশি জাতি আপনার কাছে উপাচার্য অপসারণের মতো কঠোর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে- সরকার যেভাবে বাধ্যতামূলক অবসর দিচ্ছে ঠিক একই ভাবে।দুর্নীতিবাজ উপাচার্যদের সরিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে কালিমা মুক্ত করতে আপনার কাছে আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষকদের আকুল আবেদন আদেও পৌঁছাবে কি?মহামান্য ক্ষমা করবেন; আমাদের অপারগতার জন্য- ক্ষমা করবেন আমার অবোধ প্রশ্নগুলোর জন্য-কারণ আমি তো এখনও ছাত্র -শিক্ষক হতে পারিনি!
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর