ইনসাইড বাংলাদেশ

চাপ দিয়ে কি সরকারকে নতজানু করা যাবে?


প্রকাশ: 21/01/2022


Thumbnail

স্পষ্টত আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে বাংলাদেশের ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন একের পর এক যেমন বাংলাদেশের ওপর চাপ দিচ্ছে, এখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও বাংলাদেশের ওপর এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আর এই চাপ সৃষ্টির প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, গুম ইত্যাদি বিষয়গুলোকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, বাংলাদেশে যতটুকু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে বা বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যত প্রশ্ন করা হয়, তারচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বিশ্বে এমন আরো অনেকগুলো রাষ্ট্র নিয়েও কোনো কথা বলা হচ্ছেনা। আমরা পাকিস্তানের কথাই ধরতে পারি। পাকিস্তানে যে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভয়াবহ সেটা নিয়ে কারো কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু পাকিস্তানের কাউকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জো বাইডেন প্রশাসন নিষিদ্ধ করেছে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়না। পাকিস্তানের এলিট ফোর্সকে নিষিদ্ধ করার জন্য কোনো মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে এমন কোনো তথ্য নেই। ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সেখানকার বুদ্ধিজীবী এবং সুধীজন একের পর এক প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। এমনকি অর্মত্য সেন পর্যন্ত ভারতের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়েছেন এবং এটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন। কোথায়? ভারতের বিরুদ্ধে তো কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞার খবর পাওয়া যায়না? তাহলে কেন বাংলাদেশ?

বাংলাদেশে গত এক যুগে বিস্ময়কর উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আর এই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা ঠেকানোর জন্যই কি এক ধরনের চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে? বিভিন্ন মহল মনে করে যে, বাংলাদেশের যে উন্নয়ন তা অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই ঘুরে দাঁড়ানো অনেকের কাছেই পছন্দ না। আর সে কারণেই বাংলাদেশের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে এ সমস্ত চাপের পিছনে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী অপশক্তির একটা সক্রিয়, প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, চাপ দিয়ে কি বাংলাদেশকে নতজানু করা যাবে?

বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই আন্তর্জাতিক নানারকম ষড়যন্ত্রের ক্রিয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ওপর ষড়যন্ত্র হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন স্বাধীন বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন বাংলাদেশকে একই রকম চাপ দেয়া হয়েছিল। পিএল-৪৮০ এর গম চালান বাংলাদেশে পাঠানো বন্ধ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বাংলাদেশে একটি কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা হয়েছিল। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেই জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। আর এই ষড়যন্ত্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অব্যাহত ছিলো। ১৯৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখনও আন্তর্জাতিক চাপ আসে। বাংলাদেশকে গ্যাস বিক্রির জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যেই বলেছেন সে সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গ্যাস দেয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল এবং বাংলাদেশ সেই চাপে নতি স্বীকার করেনি জন্যই ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিততে পারেনি। আওয়ামী লীগ সভাপতি এটিও প্রকাশ্যে বলেছেন যে, 'র' এর সঙ্গে আঁতাত করে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটকে জেতানো হয়েছিল। তাহলে কি একই ষড়যন্ত্র নতুন করে হচ্ছে? 

কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে যে, বাংলাদেশ একটি বদলে যাওয়া দেশের নাম। গত এক দশকে বাংলাদেশ স্বনির্ভর, স্বাবলম্বী এবং আত্মপ্রত্যয়ী একটি জাতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। কাজেই চাপ দিয়ে বাংলাদেশকে নতজানু করা হবে বা ১৯৭৫ সালে বা ২০০১ সালে যা করা হয়েছিল এখন তা করা যাবে, এটি বাস্তবতা নয়। বরং বাংলাদেশ এখন অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থভূমি এবং আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম ক্ষমতাধর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। এরকম বাস্তবতায় যারা বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে বা বাংলাদেশকে নিয়ে ভিন্ন ধরনের খেলা খেলছেন তারা কতটুকু সফল হবেন, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ, বাংলাদেশ এখন আর আগের বাংলাদেশ নেই। চাপ দিয়েই সরকারকে নতজানু করার মতো পরিস্থিতিও বাংলাদেশে নেই। আন্তর্জাতিক যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশের র‍্যাবকে নিষিদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘ দাবি করেছেন, এই সংগঠনগুলোর পিছনে কারা মদদদাতা সে প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি তারা এই প্রচেষ্টায় সফল হবে কিনা সেটি নিয়েও কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সবচেয়ে চৌকশ এবং পেশাদার দেশটির নাম হলো বাংলাদেশ। কাজেই, বাংলাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে নোংরা খেলা হচ্ছে, বাংলাদেশকে চাপ দেওয়ার যে ভয়ংকর কৌশল, সেই কৌশল এবার সফল হবে কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭