ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার বাসায় ফেরা: বিভ্রান্ত করাই বিএনপির রাজনীতি?


প্রকাশ: 02/02/2022


Thumbnail

দীর্ঘ ৮১ দিন রাজধানী ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল বাসায় ফিরেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে বাসায় নেয়া হয়। কিন্তু এতদিন বিএনপির নেতারা বলে আসছিলো ‘খালেদা জিয়া মরণাপন্ন, আর বাঁচবেন না, এখনই তাকে বিদেশে নিতে হবে। দেশে এ রোগের চিকিৎসা নেই’। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে জেলায় জেলায় সমাবেশও করেছে বিএনপি। অথচ এখন বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে বাসায় অবস্থান করছেন। জনগণকে বিভ্রান্ত করা বিএনপির বহু পুরনো কৌশল হিসেবেই মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

জনগণকে বিভ্রান্ত করার রাজনীতি বিএনপির জন্য নতুন কিছু নয়। বিএনপি প্রতিষ্ঠাই পেয়েছে মানুষকে বিভ্রান্ত করার মধ্য দিয়ে। দলটি জন্মলগ্ন থেকেই  ক্ষমতাকে কে কুক্ষিগত করা এবং ক্ষমতায় বসার হাতিয়ার হিসেবে জনমনে বিভ্রান্তি এবং অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। বিএনপির রাজনৈতিক গ্রাফটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলেই দেখা যায়, দলটি সব সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে। অসত্য তথ্য কিংবা অর্ধ সত্য তথ্য দিয়ে আসছে। আমরা সকলেই জানি অর্ধ সত্য তথ্য মিথ্যের থেকেও ভয়ংকর। সত্য-মিথ্যার মিশ্রণের ফলে বক্তব্য বেশি গ্রহণযোগ্য হয় এবং সত্য থেকে মিথ্যা আলাদা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই মিথ্যাচারের প্রকল্পে কিছু আছে ইতিহাস বিকৃত করার উদ্দেশ্য, আর কিছু আছে তাৎক্ষণিক রাজনৈতিক সুবিধা লাভের আশা। বিএনপির রাজনৈতিক ডিসকোর্স থেকে এর উত্তর স্পষ্ট হয়ে উঠে।

জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন তিনি বলেছিলেন, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশ মাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে জাতি দেখলো যে, ক্ষমতায় বসেই তিনি রাজাকার, আলবদরদের পৃষ্ঠপোষকতা আরম্ভ করলেন। গ্রেফতার রাজাকারদের জেল থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। শুধু জেল থেকে মুক্ত করাই না, রাষ্ট্রীয় খরচে তাদের পুনর্বাসনও হয় জিয়াউর রহমানের হাত ধরে।

স্বৈরাচার এরশাদের ক্ষমতায় আসার পেছনেও ছিল বিএনপির নেতাদের হাত। এমনকি এরশাদকে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় আসনেও বসিয়েছিল বিএনপি, আরও স্পষ্ট করে বললে স্বয়ং জিয়াউর রহমান। এরপর দীর্ঘদিন ধরে এরশাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামী ছাত্রবন্ধুরা আন্দোলন করে তার পতন ঘটিয়ে ছিল। কিন্তু স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ৯১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি সারাদেশে প্রচারণা চালালো যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাবে। মসজিদে উলুধ্বনি ‍উচ্চারিত হবে। ফেনী নোয়াখালী এলাকা ভারত দখল করে নেবে। পরবর্তীতে ৯৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলো, দেখা গেলো বিষয়টি সত্যি না। দেশে এরকম কিছুই ঘটেনি। বাংলাদেশ বাংলাদেশের জায়গায় আছে। বরঞ্চ ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে দেশ আরও শক্তিশালী হয়েছে। 

এরপর ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে খালেদা জিয়া বললো যে, বাংলাদেশে পাগল এবং শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়। ফলে নিরপেক্ষ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা যাবে না। কিন্তু এখন এই বিএনপিই বলছে, নিরপেক্ষ লোক দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। পাগল এবং শিশু কিভাবে নিরপেক্ষ হয়ে গেল, এটি একটি বড় প্রশ্ন বটে। 

২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তৎকালীন বিএনপি নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে মাহি বি চৌধুরী ‘সাবাস বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন। প্রামাণ্যচিত্রে বি. চৌধুরী একহাতে কোরআন এবং অন্য হাতে গীতা রেখে বলেছিলেন যে, ‘আপনারা কোন শাসন চান?’ সেসময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভারতের সেবাদাসসহ নানারকম অভিযোগ তুলেছিল তিনি। ওই প্রামাণ্যচিত্রটি পরিচালনা করেছিলেন মাহি বি. চৌধুরী এবং উপস্থাপনা করেছিলেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী। সাবাস বাংলাদেশে দেখানো হলো যে বাংলাদেশে ইসলাম বিপন্ন, কোরআন বিপন্ন। সবকিছুর খারাপ অবস্থা। এরকম পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করার আহ্বান জানানো হলো শাবাস বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু বিষয়টি ছিল স্রেফ মিথ্যাচার। আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের কোনো নাগরিকই এরকম সমস্যার মুখোমুখি হয়নি। মসজিদে নামাজ হয়েছে, মন্দিরে প্রার্থনা। তবে হ্যাঁ, তৎকালীন সময়ে সাম্প্রদায়িক এবং মৌলবাদী গোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল এবং সরকারের বলিষ্ঠ ভূমিকার রাখার কারণে দেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেনি তারা। 

এরপর ২০০৬ সালে বিএনপি আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে এবং দলটির পক্ষপাতদুষ্টতার জন্যই ওয়ান-ইলেভেন সম্ভব হয়েছিল। বিএনপি সেসময় যদি গণতান্ত্রিক পন্থায় চলতো এবং শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় বিশ্বাসী হতো, তাহলে ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির সুযোগ ছিল না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। 

বিএনপির সর্বশেষ জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে খালেদা জিয়ার অসুস্থা নিয়ে। বিগত কয়েক মাস ধরেই খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার নির্দেশে জাতির সামনে একের পর এক অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করেছে বিএনপির নেতারা। তারা এতদিন বলে আসলো যে খালেদা জিয়া মরে যাবে। তাকে বিদেশে পাঠানো দরকার। তাদের এই ধরণের মিথ্যাচারের কারণে জনগণও এতোদিন মনে করে আসছিল হয়তো খালেদা জিয়ার ভয়ঙ্কর কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু গতকাল খালেদা জিয়া সুস্থ হয়ে তার নিজ বাসভবনে ফিরে গেছেন। ফলে বিএনপির বিভ্রান্তির রাজনীতির সবশেষ প্রমাণ হলো খালেদা জিয়ার অসুস্থতা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭