ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

ইলিয়াস আলী কি লন্ডনে?


প্রকাশ: 04/02/2022


Thumbnail

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক এবং রহস্যের জট কাটতে না কাটতেই বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলীকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। লন্ডনে বিএনপির একাধিক নেতা দাবি করেছেন যে, ইলিয়াস আলীকে দেখা গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। লন্ডনে বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা তার ফেসবুকে ‘ইলিয়াস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো, আলহামদুলিল্লাহ’ বলে কিছুক্ষণ রাখেন। তারপর তিনি তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি ডিলিট করে দেন বলে লন্ডনে অবস্থিত বিএনপির অন্তত দুজন নেতা জানিয়েছেন। এর পরেই গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে, ইলিয়াস আলী কি এখন তাহলে লন্ডনে অবস্থান করছেন?

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর ঢাকায় তাকে এবং তার গাড়িচালককে শেষবারের মতো দেখা গেছে। এরপর ইলিয়াস আলীকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ইলিয়াস আলীকে গুম করে ফেলা হয়েছে। সরকার এ দাবি বরাবরই অস্বীকার করে আসছে। কিন্তু ইলিয়াস আলী কোথায় আছে সে সম্পর্কে কোন তথ্যই পাওয়া যায়না। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেন যে, সরকার তাকে খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। বিএনপির অবশ্য ইলিয়াস আলী একমাত্র নিখোঁজ নেতা নন, এর আগে হারিছ চৌধুরী এবং সালাউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে সালাউদ্দিন আহমেদকে ভারতে পাওয়া যায়। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখানকার সীমান্তরক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। এখনো সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতে অবস্থান করছেন। হারিছ চৌধুরীও ওয়ান-ইলেভেনের সময় পালিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি লন্ডনে যান বলেও বিভিন্ন মহল বলেছে। যদিও তার পরিবার বলছে যে, তিনি কখনোই লন্ডনে যাননি, ঢাকায় ছিলেন। যদিও বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে যে, হারিছ চৌধুরীর ২০০৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকায় থাকা অবাস্তব, অসম্ভব। সম্প্রতি সিআইডি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুজট নিয়ে তদন্ত করছে।

ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর থেকেই এই নিখোঁজের ঘটনাটিকে গুম বলে চালানোর চেষ্টা করছে এবং বারবার বলা এ ব্যাপারে অভিযোগের তীর সরকার দিকে দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, ২০১০ সালে ইলিয়াস আলী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন। বিএনপির সিলেটের রাজনীতিতে একটি অংশের সঙ্গে তার বিরোধ ছিলো। মির্জা আব্বাস কিছুদিন আগে দলের এক আলোচনা সভায় দাবি করেছেন যে, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পিছনে বিএনপি দায়ও কম নয়। যদিও তিনি পরবর্তীতে তাঁর এই বক্তব্যকে গণমাধ্যমে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন এবং এ ব্যাপারে তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। কিন্তু ইলিয়াস আলী যে মারা গেছেন এমন কোন নিশ্চিত তথ্য কারো কাছে নেই। হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু এবং তিনি বাংলাদেশে ছিলেন, এই দুটি তথ্যের পর সকলে নড়েচড়ে বসেন এবং তখন মনে করা হয় যে, যেকোনো ব্যক্তি আত্মগোপনে বাংলাদেশে বা বিদেশে থাকতে পারেন।

ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথমদিকে তাঁর পরিবার অনেকটা মুষড়ে পড়লেও এখন তারা স্বাভাবিক রয়েছেন এবং ইলিয়াস আলীর স্ত্রীকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনেকটা সক্রিয় দেখা যাচ্ছে। আর এটা নিয়ে খোদ বিএনপির মধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে যে, ইলিয়াস আলী যদি সত্যিই মারা যেয়ে থাকেন তাহলে তাদের পরিবারের তো এরকম অবস্থা থাকার কথা না। নিশ্চিত ভাবেই অনেকে মনে করেন যে, ইলিয়াস আলী হয়তো কোথাও আত্মগোপন করে আছেন। বিএনপির অনেক নেতাই এরকম আত্মগোপন করে আছেন বিভিন্ন বাস্তবতার কারণে। সে কারণেই সাম্প্রতিক সময়ে যখন লন্ডনে বিএনপির একজন নেতা ইলিয়াস আলীর সঙ্গে দেখা করেছেন বলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, তখন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিএনপি'র একাধিক নেতা দাবি করছেন যে, ইলিয়াস আলীকে নিয়ে মাঝে মাঝে এরকম গুজব ছড়ানো হয়, এটির কোনো ভিত্তি নেই। ইলিয়াস আলী যদি লন্ডনে থাকতেন তাহলে অবশ্যই তার সঙ্গে যোগাযোগ হতো। তবে অনেকেই মনে করেন যে, কৌশলগত কারণে এবং সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্যই হয়তো ইলিয়াস আলীর আত্মগোপনের নাটককে গুম হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭