ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

সুইস ব্যাংকের গোপনীয় তথ্য ফাঁস


প্রকাশ: 22/02/2022


Thumbnail

‘সুইস সিক্রেটস’ শিরোনামে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি ব্যাংক ‘ক্রেডিট সুইসের’ গোপনীয় তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে বিশ্বজুড়ে। বৈধ আয়ের পাশাপাশি অবৈধ অর্থ গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোর এমন তথ্য ফাঁস হয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করেছে সবাইকে। 

ক্রেডিট সুইসের ফাঁস হওয়া নথিতে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা ও সাবেক সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের জমানো ‘গোপন সম্পদ’-এর তথ্য বের হয়ে এসেছে। আর এসব ব্যক্তিদের মাঝে আছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের নাম।

সুইস ব্যাংকের ৩০ হাজার ব্যক্তির ব্যক্তিগত, যৌথ ও কর্পোরেট ১৮ হাজার অ্যাকাউন্টের তথ্য ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া অ্যাকাউন্টে সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি। এসব অ্যাকাউন্ট চল্লিশের দশকের পর, ২০০০ সালের পর এবং বেশ কিছু গত দশকে খোলা হয়। এমনকি বেশ কিছু এখনো সচল রয়েছে। 

বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিরা ‘বিভিন্ন অনৈতিক পন্থা অবলম্বন’ ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভূ-কৌশলগত ভূমিকা কাজে লাগিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমিয়েছিলেন।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ‘সুইটডয়চে সেইটুং’কে একজন অজানা ‘তথ্য ফাঁসকারী (হুইসেলব্লোয়ার)’ এসব তথ্য সরবরাহ করেন। বিশ্বের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন অর্গানাইজিং ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) এবং দ্য গার্ডিয়ান, নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ বিশ্বের ৫০টি সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা এসব তথ্য পর্যবেক্ষণ করে ‘সুইস সিক্রেটস’ শিরোনামে একযোগে প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমগুলো এসব ব্যক্তির সম্পদ অর্জনের কৌশলও প্রকাশ করে।

প্রতিবেদন প্রকাশের পর জার্মান সংবাদমাধ্যমটির পক্ষে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সুইস ব্যাংকিংয়ের গোপনীয়তা আইন অনৈতিক। গোপনীয়তা রক্ষার অজুহাত অনৈতিক কাজ ঢেকে রাখার কৌশল, যা অপরাধীদের সহযোগী হিসেবে সুইস ব্যাংকের লজ্জাজনক ভূমিকা আড়াল করে রাখে।’

ফাঁস হওয়া গোপন নথিতে বিভিন্ন দেশের যেসব সাবেক ও বর্তমান গোয়েন্দা প্রধানদের নাম রয়েছে তাদের মাঝে আছেন, পাকিস্তানের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) সাবেক প্রধান আখতার আবদুর রহমান, ইয়েমেনের রাজনৈতিক নিরাপত্তা সংস্থার (পিএসও) সাবেক প্রধান গালিব আল-কামিশ, জর্ডানের জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেটের (জিইডি) সাবেক কর্মকর্তা সাদ আল-খাইর।

এছাড়া উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মাঝে রয়েছেন, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, তাঁর দুই ছেলে এবং মিসরের সাবেক একনায়ক প্রয়াত হোসনি মুবারকও। প্রতিবেদনে বলা হয়, মুবারকের ছয় ব্যাংক হিসাবের একটিতে ২২ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি জমা ছিল।

তবে ক্রেডিট সুইস গণমাধ্যমের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়ে বলেছে, পর্যালোচনা করা অ্যাকাউন্টগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ এখন বন্ধ অথবা গণমাধ্যমের অনুসন্ধানের আগে বন্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল, যার মধ্যে ২০১৫ সালের আগে ৬০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তারা আরো বলে, এই প্রতিবেদনগুলো শুধু ব্যাংকই নয়, সামগ্রিকভাবে সুইস আর্থিক বাজারকে অবমূল্যায়ন করার সমন্বিত চেষ্টা বলে মনে হচ্ছে, যা গত কয়েক বছর ধরে চলছে।

প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রক্রিয়ারও বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন বাহিনীর দখলদারির সময় মার্কিন বাহিনী মুজাহিদদের মদদ দিয়ে ছায়াযুদ্ধ চালিয়েছিল। সে প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান, জর্ডান, ইয়েমেনসহ বিভিন্ন মিত্র দেশ কিভাবে ওয়াশিংটনকে সহযোগিতা করেছে তার বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। নেপথ্যের শীর্ষ ব্যক্তিরা কিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হন, আছে তার বর্ণনাও।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭