ইনসাইড বাংলাদেশ

সংখ্যালঘু নির্যাতনে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচারের নেপথ্যে কারা?


প্রকাশ: 25/02/2022


Thumbnail

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) হলো একটি এনজিও যা যুক্তরাষ্ট্রের দাতব্য সংস্থার অধীনে নিবন্ধিত এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সঙ্গে জড়িত। এটি বাংলাদেশ, ভারত এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ আন্তর্জাতিক এনজিও হিসাবে অনেক দেশে কাজ করছে। এই সংস্থাটি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে জেনোফোবিয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতিগত বৈষম্য, নাগরিক অসন্তোষ, বর্বরতা ও নিপীড়নের অবসান ঘটাতে কাজ করছি দাবি করলেও মূলত বাংলাদেশবিরোধী এক ভয়ঙ্কর অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। সেই অপপ্রচারের ফলে জেনোফোবিয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতিগত বৈষম্য, নাগরিক অসন্তোষ, বর্বরতা ও নিপীড়নের অবসান তো হচ্ছেই না বরং সেগুলোকে আরও উস্কে দিচ্ছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।

হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিস (এইচআরসিবিএম) এনজিও সংস্থাটি বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন চলছে মর্মে যুক্তরাষ্ট্রে প্রচার-প্রচারণা করছে এবং বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। ১৯৭১ সালে ৩০ লক্ষ শহীদের ৭০ শতাংশই হিন্দু ছিলো, এমনটাই জানিয়ে হিন্দু জেনোসাইড (Hindu Genocide) হয়েছিল বলে দাবী করছে সংস্থাটি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সম্পর্কে এই ধরণের মিথ্যাচার ক্রমশ করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব যখন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, তখন এই ধরণের মিথ্যাচার একটি দেশের উন্নয়নের হুমকি স্বরূপ। জানা যায়, বাংলাদেশে নির্যাতিত সংখ্যালঘু নারী ও মেয়ে প্রসঙ্গে এইচআরসিবিএম জাতিসংঘে একটি প্যারালাল সভা করছে যা ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ্য করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশের কোথায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে? এই ধরণের মিথ্যাচারের জবাব কেন দেয়া হচ্ছে না? এর পেছনে কারা রয়েছে?

প্রিয়া সাহার কথা মনে আছে? বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অভিযোগ তুলছেন প্রিয়া সাহা নামের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংগঠনের এক নেত্রী। সেই ভিডিও প্রকাশের পরই মূলত প্রিয়া সাহা সকলের সামনে আসেন এবং আলোচনা-সমালোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হন। এই নিয়ে দেশে ব্যাপক আলোড়ন ও চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিলো। ২০১৯ সালের ১৭ই জুলাই ‘সেকেন্ড মিনিস্টারিয়াল টু এ্যাডভান্স রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ নামক একটি ইভেন্টে যোগ দিতে হোয়াইট হাউসে যান। সেখানে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বলেন, “স্যার, আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। এখানে ৩৭ মিলিয়ন (তিন কোটি ৭০ লাখ) হিন্দু বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান নিখোঁজ হয়ে গেছে। দয়া করে আমাদের, বাংলাদেশী মানুষদের, সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই। সে দেশে এখনো ১৮ মিলিয়ন (১ কোটি ৮০ লাখ) সংখ্যালঘু আছেন। আমার অনুরোধ হচ্ছে, আমাদের সাহায্য করুন। আমরা আমাদের দেশ ছেড়ে যেতে চাই না। শুধু আমাদের দেশে থাকতে সাহায্য করুন।”

সম্প্রতি এই প্রিয়া সাহার ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তিনি সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের নামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বের দরবারে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার করছেন এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। সম্প্রতি নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নীলক্ষেতে বইয়ের দোকানে আগুন দিয়ে পাঠের অযোগ্য বই মেলা থেকে কিনতে বাধ্য করছে। ধিক।’ তাঁর এমন স্ট্যাটাসের পর স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এই তথ্য তিনি কোথায় পেলেন কিংবা এর সত্যতা কি? সরকারবিরোধী উস্কানি তৈরিতে এই ধরণের স্ট্যাটাস দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এইদিকে, এইচআরসিবিএম এর তৈরি করা একটি তথ্যচিত্রে দেখা যায় যে, ১৯৪৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত আদমশুমারির পরিসংখ্যানে কীভাবে কমেছে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা। সেখানে দেখানো হয় যে, সংখ্যালঘুদের হার কমেছে তাদের ওপর নির্যাতন এবং তাদের নির্বিচারে হত্যার ফলে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে হিন্দু ছিলো ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা ২০১১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৬ শতাংশে। অথচ আদমশুমারি অনুযায়ী যদি আমরা দেখি, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে হিন্দু ছিলো ৯৬ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮ জন, যা ২০১১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৩০ হাজার ৬৫১ জন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে নির্যাতন হলে কীভাবে দেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯৭৪ সালের ৮১ শতাংশের মুসলিম দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বিবেচনায় এই হিন্দুর বৃদ্ধির হার কম হবে, এটা খুব স্বাভাবিক। তাই এটি যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এইচআরসিবিএম এর এমন কার্যক্রমের পেছনে প্রিয়া সাহা মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন বলেই মনে করছেন অনেকে।

তবে শুধু প্রিয়া সাহাই নয়, এমন আরও অনেকেই দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশবিরোধী এমন অপপ্রচারে লিপ্ত। তাঁরা ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে থেকে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, অপপ্রচার রোধে কি করছে আমাদের দূতাবাসগুলো?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭