ইনসাইড ইকোনমি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: দিশেহারা জনগণ, চাপে সরকার


প্রকাশ: 05/03/2022


Thumbnail

কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, কোন ষড়যন্ত্র নয়। বরং দ্রব্যমূল্য ইস্যুতেই চাপের মুখে পড়েছে সরকার। মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে এখন প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ শুরু করেছে। আর অস্বস্তি থেকে মানুষ ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে যে, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, এই পরিস্থিতি চলতে পারে না। আর সরকারের পক্ষ থেকে যা করা উচিত তা করা হচ্ছে না বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে। বিশেষ করে মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলছে বলেই সাধারণ মানুষ মনে করে। গত সপ্তাহে লাফিয়ে লাফিয়ে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। জিনিসপত্রের দাম এমন পরিস্থিতি চলে গেছে যে, নিম্নআয়ের মানুষ তো বটেই উচ্চ মধ্যবিত্তের জন্য বাজার-সদাই করা একটা চাপের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা কিছুতেই তাদের আয়ের সাথে ব্যয় মিলাতে পারছেন না। সাধারণ মানুষ এই সমস্ত ঘটনার জন্য একসময় ছোটখাটো অস্বস্তি প্রকাশ করলেও এখন মুখ ফুটে কথা বলা শুরু করেছে, এজন্য দায়ী করছে সরকারকে। বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন, হুশিয়ারি-সাবধানী করছেন কিন্তু তার কথা কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কথা বলার পরপরই পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে গেছে, অন্যান্য জিনিসের দামও বাড়তি। বাজারের ওপর সরকারের কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ নেই বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষ। আর কেউ কেউ মনে করছেন সরকারের মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।

সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন যে, বিভিন্ন হাত বদল হওয়া এবং চাঁদাবাজির কারণে শাক-সবজির দাম বেড়ে যায়। চাঁদাবাজি যদি হয়, সেটি বন্ধ করার দায়িত্ব সরকারের। সরকারের একজন দায়িত্বশীল সচিব এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করতে পারেন কিনা, সে প্রশ্ন উঠেছে। তার এই বক্তব্যের পর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম এবং মানুষ চাঁদাবাজির অজুহাত দিচ্ছে। অন্যদিকে, বাণিজ্যমন্ত্রী হুমকি দিচ্ছেন যে বাজার মনিটরিং করা হবে, অধিক দামে বিক্রি করা হলে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু তার কথাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাজারে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। মুখে মন্ত্রী বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বললেও, বাজারে মনিটরিং করার কথা বললেও, আইনপ্রয়োগের হুমকি দিলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। সেই কথা তিনি কেন বলেন যে কথা তিনি বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেন না।

মানুষ এখন দিশেহারা অবস্থায় টিসিবির দিকে নজর দিয়েছে কিন্তু সেটি টিসিবির মধ্যেও নানা রকমের সমস্যা ক্রমশ মানুষকে অস্থির করে তুলেছে। সাধারণ মানুষ মনে করছে এখনই যদি দ্রব্যমূল্যের লাগাম না টেনে ধরা যায় সামনের রোজায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। দ্রব্যমূল্যের হু হু ঊর্ধ্বগতির পেছনে অনেকে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন, অনেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে দায়ী করছেন, অনেকে সরকারের সমন্বয়হীনতাকে চিহ্নিত করছেন। কিন্তু যেটিই কারণ হোক না কেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। না হলে এই একটি ইস্যু সরকারের জন্য অশনি সংকেত বয়ে নিয়ে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কারণ মানুষ এখন বাজারে যাওয়াটাকে একটা আতঙ্ক হিসেবে মনে করছে। আর এভাবে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে দিশেহারা সাধারণ মানুষ যেকোনো কিছুই করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাই দ্রব্যমূল্যের জন্য একদিকে যেমন বাজার নিয়ন্ত্রণ দরকার, দরকার মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়। পাশাপাশি এ ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানো দরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭