ইনসাইড ইকোনমি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাবে কে?


প্রকাশ: 07/03/2022


Thumbnail

বাজারে দিনের পর দিন হু হু করে বাড়ছেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। যেনো লাগাম টেনে ধরাই মুশকিল হয়ে পড়েছে। কয়েক দিনের ব্যবধানেই ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে ক্রেতা ভোগান্তির মধ্যেই অস্থির হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার। দুইদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। স্বস্তি নেই চাল বা সবজির বাজারেও। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এসব পণ্যের দামও। এমন অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিয়ন্ত্রণহীন এ দামের ফলে নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে ক্রেতাদের। প্রশ্ন উঠেছে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতি ঠেকাবে কে? 

এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সব সময় বলছেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি পণ্য রয়েছে। পণ্যের কোনো সংকট নেই। সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ভোজ্যতেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক বেড়েছে। ভোজ্যতেল আমাদের আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। এ অবস্থায় তেলের দাম কিছুটা না বাড়ালে কেউ আমদানি করবে বলে মনে হয় না। পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোজ্যতেল আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত দুই বছরের করোনাকালে ও বর্তমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব রয়েছে। এসবের প্রভাবে দ্রব্যমূল্যে পড়েছে, বাংলাদেশেরও এর প্রভাব পড়েছে। দেশের দুই মন্ত্রীর দুই ধরনের কথায় নিয়ন্ত্রণহীন বাজারকে আরও নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

ক্রেতারা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি আর বাজার থেকে প্রায় উধাও হওয়ার মধ্যে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছে। এভাবে হুটহাট দাম বাড়িয়ে অতিমুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করছে বলেই তাদের অভিযোগ। ক্রেতারা আরও বলছেন, আর এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে রোজা শুরু হবে। এর আগেই এইভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মরার ওপরে খারার ঘা এর মতো। ক্রেতারা অতি শীঘ্রই এই অবস্থা থেকে পরিত্রান চাচ্ছেন। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে ভোক্তা অধিকার, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অভিযান চালালেও কোনোভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। 

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, হঠাৎ করেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সব পণ্যের দাম এখন প্রায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় এমনিতেই মানুষ দিশেহারা। এরপর এক এক মন্ত্রী এক এক কথা বলছেন। এতে মানুষ আরও বিভ্রান্ত  হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী সব সময় বলছেন, বাজারে পণ্যের সংকট নেই। তাহলে মানুষ কেনো ভোজ্যতেল বাজারে গিয়ে পাচ্ছেন না? এ বিষয়গুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আরও ভালোভাবে মনিটরিং করা উচিৎ এবং দাম যেনো নিয়ন্ত্রণে থাকে সে দিকে নজর দেওয়া উচিৎ। শুধু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অজুহাত দেওয়াটাও সমিচিন হবে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে মিল পর্যায়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। সমস্যার মূলে না গিয়ে এলোপাথারি অভিযানে হিতে বিপরীত হতে পারে। 

এদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে গত ১৩ বছরের মধ্যে তেলের দাম সর্বোচ্চ বেড়ে ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তেলের এই দাম বৃদ্ধির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ফলে দেশের বাজারে তেলের দাম বেড়ে গেলে এমনিতেই দেশে পরিবহণ খরচ বেড়ে যাবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। এ অবস্থায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাবে কে এই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭