ইনসাইড বাংলাদেশ

পদ্মা সেতু: পাল্টে যাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের চিত্র!


প্রকাশ: 10/06/2022


Thumbnail

আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে সরকার। রঙিন সাজে সাজানো হচ্ছে সেতু। একদিকে যেমন পদ্মার সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষা অন্যদিকে এই সেতুকে ঘিরে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। কারণ পদ্মা সেতু বাঙালির লালিত স্বপ্ন, বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির সোপান। বাঙালির অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে এই পদ্মা সেতু। তবে এটা নিশ্চিত যে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বদলে যাবে পুরো বাংলাদেশের চিত্র। খুলে যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের অর্থনৈতিক-সামাজিক মুক্তির দ্বার।

পদ্মা সেতু পাল্টে দেবে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের চিত্র। ভোগান্তির অপর যে নাম ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট, সেই নৌরুট সেতু উদ্বোধনের পর হবে স্বস্তির অপর নাম। পদ্মা সেতু চালু হলে পাল্টে যাবে এই নৌরুটটির চিরাচরিত চিত্র। যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ কমে যাবে এই ঘাটে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আর অপেক্ষা করতে হবে না পদ্মা নদী পারের জন্য।

স্বাভাবিক সময়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন নদী পারাপার হয়। তবে বিশেষ সময়গুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যার কারণে নানা ধরনের গাভোন্তিতে পড়েন যাত্রী ও চালকরা। দিনের পর দিন নদী পারের অপেক্ষায় পণ্যবাহি ট্রাকগুলোকে অপেক্ষা করতে হয় খোলা আকাশের নিচে। মানবেতর জীবন-যাপন করেন চালক ও চালকের সহকারীরা। অন্যদিকে নদী পারি দেওয়ার জন্য দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকেও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে অপেক্ষায় থাকতে হয় ফেরির। ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবহনের মধ্যে থেকে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্কদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তি।

কিন্তু আশার কথা হলো পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এই নৌরুটে চাপ কমবে যানবাহনের এমনটাই প্রত্যাশা করছে যাত্রী ও চালকরা। সেক্ষেত্রে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যে ভোগান্তি পোহাতে হতো সেটার অবসান ঘটবে। তখন আর ফেরির জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হবে না কোন যানবাহনেরই। নির্বিঘ্নে ফেরি পার করতে পারবে গাড়িগুলো।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নিয়মিত চলাচলকারি বিভিন্ন গ্রুপের পরিবহনের যাত্রী ও একাধিক পণ্যবাহী ট্রাকের চালকরা সাংবাদিকদের বলেন, ভোগান্তির অপর নাম ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। এই নৌরুটে সব সময় যানজট ও দীর্ঘ গাড়ীর সারি সব সময় লেগেই থাকত। এখন আশা করছি সেই ভোগান্তি আর এখন আমাদের পোহাতে হবে না। পদ্মা সেতু চালু হয়ে গেলে এই নৌরুটে অনেক যানবাহনের চাপ কমে যাবে। সেক্ষেত্রে খুব দ্রুতই আমরা নদী পার হতে পারব। পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের এই ভোগান্তি লাঘব হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে স্বাভাবিক ভাবেই এই নৌরুটে যানবাহনের চাপ কিছুটা কমে যাবে। কিছু কিছু জেলার যানবাহন তখন সরাসরি পদ্মা সেতু পারি দিয়ে তারা ঢাকাতে প্রবেশ করবে। আবার ঢাকা থেকে তারা পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঢুকবে। সেক্ষেত্রে এই নৌরুটের ওপরে চাপ অনেকটাই কমবে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, পদ্মা সেতু চালু হলে যে শুরু এই নৌরুটেরই চাপ কমবে তাই নয়, যাত্রীদেরও সময় সাশ্রয় হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে খুলনা থেকে ঢাকা যেতে সময় সাশ্রয় হবে। এখন ঢাকায় যেতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে। ফেরি পারাপারের ওপরও নির্ভর করে কত সময় লাগবে। ফেরিতে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। সেতু চালু হলে টোল দিয়ে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে পদ্মা নদী পার হওয়া যাবে। সে হিসেবে মাত্র চার ঘণ্টায় ঢাকায় যাওয়া যাবে। দেশের বৃহত্তম এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে রাজধানীসহ অন্যান্য অংশের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করতে পরে। সব ক্ষেত্রেই একটি দ্বার উন্মোচিত হবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরে। সেই অপেক্ষাতেই এখন পুরো দেশ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭