ইনসাইড আর্টিকেল

চাহিদা হারাচ্ছে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাখরখানি


প্রকাশ: 04/07/2022


Thumbnail

মচমচে খেতে, রুটির মতো গোলাকার অতিব সুস্বাদু বাখরখানি ঢাকার ঐতিহ্য। ইতিহাসে সাক্ষ্য-প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত করতে এখনো টিকে আছে অনেক আদীম গলি, পথ, দালানকোঠা, প্রান্তর তেমন ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক সাম্রাজ্য, নগর, সংস্কৃতি। কিন্তু ঐতিহ্য হিসেবে সেই আদিমকাল থেকে টিকে আছে বাখরখানির কদর বাংলার বিশেষত ঢাকার মানুষের বুকে। ছোট থেকে বড় সকলেই যেন এর স্বাদ নিয়ে মনে সন্দেহের অবকাশটুকু নেই। স্বাদের কথা বিচার করলে এর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কথিত আছে, বাঙালির প্রায় আড়াই’শ বছরের প্রিয় খাবার বাখরখানি। ঐতিহ্যবাহী এ খাবারটি ঢাকার আদি বাসিন্দাদের কাছে এখনো জনপ্রিয়। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় সবচেয়ে খাঁটি এবং নিপুণ বাখরখানি তৈরি হয় বলে দাবি করেন ঢাকাবাসীরা। পুরান ঢাকায় অনেকেই সকালের কিংবা বিকালের নাস্তা হিসেবে বাখরখানি খেতেই পছন্দ করতেন। 

বাখরখানির আদি কথা সম্পর্কে জানা যায়, বাখরখানি নামটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঢাকার আঠারো শতকের ইতিহাস । ঢাকার নায়েব নাজিম মীর লুৎফুল্লাহ্ ওরফে দ্বিতীয় মুর্শিদ কুলি খাঁর জামাতা ছিলেন মির্জা আগা বাকের। নবাব সিরাজদ্দৌলার অনুরক্ত বাকের ছিলেন বুজর্গ উম্মেদপুর ও সালিমাবাদ পরগনা দুটির জমিদার। আগা সাদিক ছিলেন তার পুত্র। জনশ্রুতি অনুযায়ী, আগা বাকের ও তার স্ত্রী খানি বেগমের নামানুসারেই মচমচে এ রুটির নাম রাখা হয় ‘বাখরখানি’, যা থেকে পরে লোকমুখে এর প্রচলিত নাম হয়ে যায় বাখরখানি। নবাব পরিবারের বাবুর্চিরাই এ বাখরখানির আবিষ্কারক। 

এরপর থেকেই প্রচলন ঘটে এই মুখরোচক খাবারের যা সকলে গ্রহণ করে এবং দ্রুত এর প্রচার ছড়িয়ে পড়ে ঢাকার প্রতিটা জায়গায়। কেবল শহরাঞ্চলে যে এর কদর ছিল ব্যাপারটা মোটেও তেমন না। বরং গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত এর কদর ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক বেশি। মানুষ বিকালের আড্ডায়, অতিথি আপায়নে কিংবা ঘরে অবসরে বসে উপভোগ করে এই ঐতিহ্যবাহী খাবার। অনেকে আবার দুধ দিয়ে বাখরখানি খেতে ভালোবাসেন। ছোটদের ক্ষেত্রে এই নজির দেখতে পাওয়া যায় বেশি। মাংস, চা, মিষ্টি সব কিছুতেই বাখরখানি রুটি ছিল শীর্ষে। 

তবে কমে গেছে বর্তমানে এই রুটির চাহিদা। পুরান ঢাকায় এখনো কিছু ব্যবসায়ী থাকলেও আগের মতো তৈরি হচ্ছে না এই ঐতিহ্যবাহী রুটি। পুরান ঢাকার বাখরখানি ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেল, ওই একই এলাকা জুড়ে তাদের বাখরখানির ব্যবসা প্রায় তিনপ্রজন্ম ধরে। অনেকের দাদা/পরদাদা ব্যবসা শুরু করেছিলেন যার হাল ধরে রেখেছেন এখনো তারা। এমন কয়েকটি দোকান খুঁজে পাওয়া গেলেও, বেশিরভাগ দোকানে বাখরখানির দোকানে ঠাঁই পেয়েছে অন্যান্য মিষ্টি। যে কয়টি দোকান কেবলই বাখরখানি বিক্রি করছে তারা তাদের পুরাতন ঐতিহ্য ধরে রাখার তাগিদেই এই কাজ করছেন বলে জানা যায়। 

তেমনি একজন বাখরখানি ব্যবসায়ী আলতাফ ইসলাম, তাঁর দোকানের নাম " ইকবাল বাখরখানি।" নামের ইতিহাস জানতে চাইলে তিনি মুচকি হেসে জানান, তাঁর বাবা এবং দাদার সময়ের ব্যবসা, উনারা এই নাম রেখেছেন। উনার দাদার মৃত ছোট ভাইয়ের নামে এই দোকানের নামকরণ করা হয়েছিল বলে শুনেছেন তিনি। প্রায় ৭০ বছরের ইতিহাস এই দোকানে আবদ্ধ। এই স্মৃতির কারণের আদিম ব্যবসা আঁকড়ে আছেন বলে দাবি করেন তিনি। 

ব্যবসার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ইনসাইডারকে জানান, একটা সময় ছিল, যখন কারিগররা অতি কষ্টে অবসর পেত। চাহিদা এত বেশি ছিল। সেই তুলনায় এখন চাহিদা কম। তাই লাভও তুলনামূলক কম। আর নতুন কারখানায় নতুন মেশিনে তৈরি খাবারের প্রতি আগ্রহ মানুষের দিন দিন বাড়ছে, সেই তুলনায় আদিম এই রুটি যা কিনা পুরাতন চুলায় তৈরি হয় তাতে আগ্রহ খুব একটা মানুষ পায় না। তবে স্বাদের দিক থেকে বাখরখানি অনন্য। একবার যে খাবে সে স্বাদের জন্য হলেও এই রুটি চাইবে বারবার। এখনকার আধুনিক জীবন যাপনে সহজলভ্য প্যাকেটজাত খাবারগুলো হাতে পাওয়া যত সহজ হচ্ছে ততই কমছে এইসব পুরাতন লোকজ খাবারের প্রতি মানুষের আগ্রহ। 

অনেক কিছু বদলে গেলেও ঢাকার ঐতিহ্যের এই খাবার এখনো টিকে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে। এখনো বিভিন্ন ঘরে, শহরে কিংবা গ্রামে আছে এর জনপ্রিয়তা। যদি সহজলভ্য খাদ্যের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে আমাদের লোকজ এসব অতিব স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাদ্যের দিকে আগ্রহী হই তাহলে এর তৈরি বৃদ্ধি যেমন পাবে তেমনি টিকে থাকবে শত বছরের ইতিহাস। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭