এডিটর’স মাইন্ড

এটাই কি তাহলে শহিদুলের একমাত্র শাস্তি?


প্রকাশ: 14/07/2022


Thumbnail

অবশেষে বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো: শহীদুল ইসলামকে অপসারণ করা হলো। শহিদুলকে অপসারণ করে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরানকে। একজন পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে মোহাম্মদ ইমরান ভারতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং সরকার তার উপর আস্থা রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক যখন টলটলায়মান তখন ইমরান সেখানে গিয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন এবং এই সম্পর্কের টানাপোড়েন কাটিয়ে ওঠার জন্য আন্তরিক উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু কূটনৈতিক অঙ্গনে এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে যে শহিদুলের কি হবে? শহিদুলকে যখন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়, তখন থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছিলো। 

স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির সঙ্গে তার যোগসাজশের খবর নতুন নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় হলে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এছাড়াও তার ছোটভাই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির থেকে একবার এজিএস এবং একবার জিএস পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। পারিবারিকভাবে তার সকল আত্মীয়-স্বজনই বিএনপি-জামায়াত ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মূলত শহিদুল ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। এরপরই বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী এলিট ফোর্স র‍্যাবের একাধিক কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং বাংলাদেশের মানবাধিকারসহ নানা ইস্যুতে চাপ প্রয়োগ করা হতে থাকে। এই সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও বরফ গলানোর সম্ভব হয়নি।

কূটনীতিক বলছেন যে, দূতাবাসের অকর্মণ্যতা, দায়িত্বহীনতা এবং নির্লিপ্ততার কারণেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। তবে ভয়ংকর তথ্য হলো যে শহিদুল রাষ্ট্রদূত হওয়ার পরই সেখানে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার জোরালো করেছে এবং সেখানে দূতাবাসের ভূমিকা রহস্যময়। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক এপিএসের ভূমিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। তারা সেখানে বসে বিভিন্ন মার্কিন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লবিং করছে। সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে মুশফিক ফজল আনসারী নামে একজন ব্যক্তি রীতিমতো বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চালাচ্ছেন এবং তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি লবিস্ট গ্রুপ সেখানে পরিচালনা করছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ রকম বাস্তবতায় বিদায়ী রাষ্ট্রদূত শহিদুলের সঙ্গে এই সমস্ত চক্রের যোগসাজশের কথা মার্কিন প্রবাসী বাঙালিরা আলোচনা করেন।

এরকম বাস্তবতায় শহিদুলকে বদলি করা হলো। কিন্তু তিনি যে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন সৃষ্টি করলেন, তার ব্যর্থতার কারণে যে বাংলাদেশকে নানারকম সংকটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তার কি হবে? আমলাদের শাস্তি কি শুধুমাত্র বদলি? একটা জায়গা থেকে সরিয়ে দেওয়া? কূটনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, ওয়াশিংটনে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় শহিদুলের প্রতিটি ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা উচিত এবং তিনি আসলে কি করেছেন সেটি তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্তের যদি তার দোষ প্রমাণ হয় তাহলে তার উপযুক্ত শাস্তি দরকার। কেবলমাত্র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া কোনো শাস্তি হতে পারে না বলেই কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭