বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেছেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে পরীক্ষা মূলক। পরীক্ষাতে ভালো রেজাল্ট, রেকর্ড সিজিপিএ পাওয়া এই গুলোই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে শিক্ষার সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধের যে সংযোগ সে প্রসঙ্গটি আড়ালে চলে গেছে। শিক্ষকরাও ভুলে গেছেন। মানবিক মূল্যবোধ গুলো এমন জিনিস সেগুলো চাইলেই আয়ত্ত করা যায় না কিংবা এমনি হয়। এগুলো লম্বা সময় ধরে চর্চা করার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। আর সে জায়গায় থেকে আমরা সরে গেছি। এগুলো পরিবার এবং স্কুল থেকেই চর্চা করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘটে যাওয়া অস্থিরতা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক আবদুল মান্নান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।
অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, এগুলো যে শুধু আমাদের দেশে ঘটছে তা না, দেশের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। শিক্ষার পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে আমরা অনেক আলোচনা করি ঠিকই কিন্তু সেগুলোর চর্চার দিকে আমাদের কারোর নজর নেই। সবাই আমরা জিপিএ-৫ আর রেকর্ড সিজিপিএ এই বিষয়গুলোর প্রতি বেশি ঝুঁকে গেছি। সেটা যদি বলি পরিবার কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উভয়। অর্থাৎ আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে পরীক্ষা কেন্দ্রিক করে তুলেছি। যার ফলে আমরা মানসিকভাবে বদ্ধ হয়ে গেছি। এ ধরনের মানসিক রোগ আমাদের গ্রাস করে রেখেছে।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাঙ্গনের এখনকার অস্থিরতা থেকে বের হয়ে আসা খুব সহজ না, আবার কঠিনও না। ছোট থেকেই আমরা এই চর্চাগুলো করতে হবে। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে হঠাৎ করেই আমরা এই মূল্যবোধগুলো অর্জন করতে পারবো না। আগে, বিশেষ করে আমাদের শিক্ষা জীবনে এই ধরনের ঘটনা আমরা চিন্তাই করতে পারতাম না। ছাত্রের হাতে শিক্ষকের মৃত্যু, জনপ্রতিনিধির দ্বারা শিক্ষক হেনস্তার শিকার হচ্ছেন-এগুলো খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। শিক্ষকের গলায় জুতার মালা দিয়ে ঘোরানো এই গুলো ন্যক্কারজনক। শিক্ষকদের হেনস্তা করার ঘটনা সামাজিক অস্থিরতার চূড়ান্ত লক্ষণ। এটা সমাজের ধ্বংস নিয়ে আসতে পারে। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষাগুলো ভেঙ্গে পড়েছে। এখন ছোট-বড় কেউ কাউকে মানছে না। এই পরিস্থিতিতে থেকে বেরিয়ে আসতে হলো আমাদের পরিবার থেকেই পারিবারিক মূল্যবোধের শিক্ষাগুলোর বেশি বেশি করে চর্চা করতে হবে। তাছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষক, সমাজ, রাষ্ট্র এবং যারা শিক্ষা পলিসির সাথে জড়িত আছেন তাদের সবার সমন্বয় প্রচেষ্টা চালাতে হবে।