বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেছেন, দেশে জ্বালানি তেলের মজুদ ফুরিয়ে আসছে, এধরনের কথা গুজবই বটে। যারা এ ধরনের কথা বলছেন তারা অধিকাংশই হয়তো বিপিসি বা সরকারের এই কাজের সঙ্গে হয়তো পরিচিয় নয় কিংবা ভালো ধারণা রাখেন না। তাদের সাধারণ চোখে, সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার কারণেই মূলত তারা এ ধরনের কথা বলছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে যে, দেশের জ্বালানি তেলের মজুদ ফুরিয়ে আসছে। প্রকৃত অর্থে দেশে কি পরিমাণ তেল মজুদ রয়েছে তা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ বি এম আজাদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য এ বি এম আজাদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর প্রধান বার্তা সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান।
এ বি এম আজাদ বলেন, আমি যদি আজকের ফিগারের কথা বলি তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, দেশে এখন ৪ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টনের বেশি ডিজেল মজুদ আছে। যেটা আমাদের ৩২ থেকে ৩৩ দিন পর্যন্ত অনায়াসে চলবে। অকটেন আছে প্রায় ১৪ হাজার মেট্রিক টন, সেটা দিয়ে আমাদের ১১ থেকে ১২ দিনের মতো চলে যাবে। এদিকে এর মাঝেই দুই বা তিনের মধ্যে আমাদের নতুন করে আরও কার্গো চলে আসবে। অকটেন নিয়ে আমাদের কোনো ধরনের আশঙ্কাই নেই। আর পেট্রোল আমরা লোকাল সোর্স থেকে পাই। এটা প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টনের মতো মজুদ রয়েছে। আমরা প্রতিদিন ৩-৪ হাজার মেট্রিক টন পেট্রোল উৎপাদন করছি। আর যে তেল আছে সেটা প্রায় ৩৩ হাজার মেট্রিক টনের মতো। যেটা দিয়ে আমাদের আরও ৪৪ দিনের মতো অনায়াসে চলবে। আর ফার্নেস ওয়েল আছে প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টনের মতো। সেটা দিয়ে আমরা ৪৫ দিন চলতে পারবো। এটা হয়তো ৫০ দিন পর্যন্তও চলে যেতে পারে। কারণ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো যদি ডিজেল কম নেয় তাহলে বেশি দিন যাবে।
তিনি বলেন, এখন যে সংকটের কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে এমন হতে পারে, যিনি বলেছেন, তিনি হয়তো একটি নিদির্ষ্ট মজুদের কথা বলছেন। কিন্তু আমাদের এটা ২৪ ঘণ্টার হিসেব। এখানে প্রতিদিন কার্গো আসছে, জমা হচ্ছে। আমাদের স্টোরেজ হাই হচ্ছে। আবার স্টোরেজ থেকে চলে যাচ্ছে। তখন আবার সেটা কমে যাচ্ছে, আবার কার্গো আসছে, জমা হচ্ছে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এটি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের ভালো ধারণা না থাকার কারণে এই ধরনের গুজবের কথা উঠেছে। একটি বড় বিষয় হলো আমরা হঠাৎ করেই কোনো জিনিস কিনি না। আমাদের একটা বার্ষিক পরিকল্পনা থাকে। সেটার আবার ৬ মাসের একটা সাব-প্ল্যান থাকে এবং এই ৬ মাসের আমদানির বিষয়টা কর্নফার্ম থাকে। অর্থাৎ, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সময়ের জন্য আমাদের সাপ্লাইয়াদের সঙ্গে কথা বলা আছে, আমরা তাদের মাসে মাসে শিডিউল দেই। সে হিসেবে তারা আমাদের কাছে কার্গো পাঠায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লোকাল যে সাপ্লাইয়াগণ আছেন, তাদের সাথেও আমাদের আগে থেকেই কথা বলা থাকে। তারা সেভাবে আমাদের সাপ্লাই দিয়ে থাকে। সুতারাং দেশের অভ্যন্তরীণ এবং দেশের বাইরে থেকে আসা উভয় সোর্স থেকে আমাদের সাপ্লাই বেশ ভালো আছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান বলেন, এখন সরকার যেটা করছে, যেহেতু বিশ্বজুড়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছে এবং সবাই সাশ্রয়ী হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববাজারে সেগুলোর দামও বেড়েছে। সে কারণে সরকার এখন সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে। অনেক সময় আমরা শৌখিনভাবে অনেক কিছু ব্যবহার করে থাকি। সেটা যেন না হয় সরকার সেটা চেষ্টা করছে। প্রয়োজন অনুসারে আমরা তো অবশ্যই ব্যবহার করবো। কিন্তু আমরা যেন অপচয় না করি সেটাই সরকারের চাওয়া। এতে করে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। এই টাকা দিয়ে আমাদের দেশের অন্যান্য উন্নয়ন কাজে লাগাতে পারবো। কিন্তু যারা বলছেন দেশে ডিজেল শেষ হয়ে আসছে ইত্যাদি তারা একটি ঘটনা দিয়ে আরেকটি ঘটনাকে যোগ করার চেষ্টা করছে।