ইনসাইড টক

'আতঙ্ক না বাড়িয়ে সবাই মিলে সংকট মোকাবিলার চেষ্টা করতে হবে'


প্রকাশ: 31/07/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, সারা পৃথিবীতেই সংকট চলছে। সুতরাং আমরা সারা পৃথিবী থেকে তো আলাদা নয়। সমুদ্রে যখন ঢেউ উঠেছে তা কক্সবাজারেও লাগবে। সেরকমই ঢেউ লেগেছে বা লাগছে। এখন আমাদের উচিৎ হবে সেটা ভাবা যে, এই ঢেউ থেকে আমরা আমাদের রক্ষা করবো কিভাবে। কিভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমরা এই ঢেউ থেকে রক্ষা পেতে পারি। আমার ইতোমধ্যে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি। বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছে। তার কারণেই আমদানি আস্তে আস্তে কমে আসছে। জুলাই মাসে আমার ধারণা ৬ বিলিয়ন ডলারের মতো হবে। যেটা মে মাসেও ৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। সুতরাং যেই পরিমাণ রিজার্ভ আমাদের আছে, সেটা দিয়ে ৬ বিলিয়ন দিয়ে হিসাব করলেও ৬ মাসের হিসেবে ৩৬ বিলিয়ন হয়। অর্থাৎ ৬ মাস তো সহজেই আমরা আমদানি করতে পারবো। 

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ডলারের সংকট এবং অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ড. আতিউর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ড. আতিউর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

ড. আতিউর রহমান বলেন, আমাদের ভয়টা কিসের আমার বোধগম্য হয় না। এছাড়াও আমরা যে বিদেশি ঋণ নিয়েছি তার পরিমাণ জিডিপির মাত্র ১৯ শতাংশের মতো। এই ঋণ প্রতি বছর আমাদের দেড় থেকে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি শোধ করতে হবে না। সেখানে প্রতি মাসেই আমরা শুধুমাত্র প্রবাসী আয় থেকে পাই দুই বিলিয়ন ডলার। কাজেই এই ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো। 

তিনি বলেন, একটি সমস্যা রয়েছে। সেটি হলো প্রাইভেট সেক্টরে যে লোনগুলো হচ্ছে, যেগুলোর রেট অব ইন্টারেস্ট বেশি এবং সময়ও কম। এগুলো যেনো আর না বাড়ে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক বেড়ে গেছে। গত ১ বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছে। এটা আমাদের কমাতে হবে। যেমন করেই হোক, এরকম লোন আমরা নেবো না। যেটা প্রাইভেট সেক্টরের এবং একই সঙ্গে কম সময়ে বেশি সুদ, এগুলো আমাদের বন্ধ করতে হবে। কারণ আমাদের টাকার মান কমে যাচ্ছে। টাকার মান কমে গেলে কিন্তু সুদও বেড়ে যাচ্ছে। যদি ২০ শতাংশ টাকার মান কমে যায়, তাহলে ডলারে যে সমস্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো কিন্তু প্রাকটিক্যালি ২০ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। সুতরাং প্রাইভেট সেক্টরের লোনের বিষয়ে খুব সাবধানে চলতে হবে।

ড. আতিউর রহমান আরও বলেন, পাবলিক সেক্টর থেকে যেটা নেওয়া হচ্ছে, সেটা তো আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক থেকে নেওয়া হচ্ছে। এগুলো অনেক লম্বা সময় এবং কম সুদে। সুতরাং এগুলো আরও বেশি নিয়ে, যেগুলো বেশি সুদে কম সময়ের সেগুলো কমিয়ে ফেলতে হবে। এখানে শ্রীলঙ্কার কথা অনেকেই বলে। শ্রীলঙ্কার তো ১৫-২০ দিনের আমদানী করার অর্থও নাই। আমাদের তো ৬ মাসের আছে। আমাদের রপ্তানীর পরিমাণ প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার সব মিলে। আমাদের প্রবাসী আয় প্রায় ২১-২২ বিলিয়ন ডলার। এবছরও ২২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষি অনেক শক্তিশালী। শ্রীলঙ্কার যেমন বাইরে থেকে খাবার আনতে হয়, আমাদের তো বাইরে থেকে খাবার আনতে হয় না। আমাদের বিদ্যুতে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে সেটা কিন্তু জ্বালানী তেলের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে সেই জন্য। আমাদের তাহলে চেষ্টা করা উচিৎ যে, আমরা যদি সোলার প্যানেল দিয়ে ইরিগেশন পাম্প আরও বেশি চালু করি তাহলে কিন্তু এটি লংটার্মে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। এছাড়াও সোলার প্যানেল দিয়ে ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে যদি এমন প্রণোদনা দেই যে, প্রত্যেকেই একটি প্রিমিয়াম পাবে। যে প্রণোদনা জ্বালানীতে দেওয়া হচ্ছে, সেই পরিমাণ প্রণোদনা সোলারে দেওয়া হলে মানুষ ফ্ল্যাটের ছাদে সোলার লাগিয়ে নেবে। 

ড. আতিউর রহমান বলেন, একটি লংটার্ম চিন্তা করতে হবে। শুধু সর্টটার্ম চিন্তা করলে হবে না। তবে এই মুহূর্তে আমাদের জাতির স্বার্থেই শুধু শুধু আতঙ্ক না বাড়িয়ে সবাই মিলে কি করলে এই সংকট মোকাবিলা করতে পারি সেই চেষ্টা করতে হবে। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের রেট অব ইন্টারেস্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে জন্য সমস্ত ডলার এখন আমেরিকার দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশ থেকে এমনকি সিঙ্গাপুর থেকেও সরে যাচ্ছে। সেই জন্য ডলারের সাপ্লাই কমে গেছে। সাপ্লাই কমে গেলে তার দাম বাড়ে। সে কারণে ডলারের দামও বেড়ে গেছে। সুতরাং এটা আমাদের দোষ না। এটা তো আমেরিকানদের নীতির কারণে হয়েছে। এতদিন আমেরিকানরা ০ রেট অব ইন্টারেস্ট রেখেছিল। হঠাৎ করে প্রায় ২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এটার জন্য প্রভাব তো পড়বেই এবং পড়ছে। আমি আবারও বললাম, বঙ্গপোসগরে ঢেউ উঠলে কক্সবাজারেও লাগবে। সেজন্য আমাদের একটু সাবধানে চলতে হবে। আমাদের কৃষি আছে, প্রবাসী আয় আছে, রপ্তানী আয় আছে। সুতরাং আমরা একটু চেষ্টা করলেই এই সংকট সামলাতে পারবো। আর ইমপোর্ট কমাতে হবে এবং ইমপোর্ট কমানো হচ্ছে। অপ্রয়োজনীয় আমদানী রোধে শক্ত কিছু নীতিমালা নিতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা কেটে যাবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭