ইনসাইড টক

‘বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূন্য হতে দুই দশকের বেশি লাগবে না’


প্রকাশ: 02/08/2022


Thumbnail

রানা দাশগুপ্ত। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর। গত ২৭ জুন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক প্রকাশিত জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেখা যায় দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হার কমে গেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কমে যাওয়ার কারণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন রানা দাশগুপ্ত। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান তুহিন

প্রশ্ন: সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হার কমেছে। কেন হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে?

রানা দাশগুপ্ত: পাকিস্তান আমলে ১৯৪৭ সালে সমগ্র জনসংখ্যার ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ ছিলো সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এটা সত্তরের নির্বাচনের সময় চলে এলো ২০ শতাংশে। ৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গেল পাকিস্তান আমলেই। সেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা কমে যাওয়া, বৈষম্য, নির্যাতন-নিপীড়ন চলমান রয়েছে। ২০১১ সালে বলা হলো হিন্দুদের সংখ্যা বলা হলো ৮ দশমিক ৬ শতাংশ। মোট সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা বলা হলো ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আমরা যতই চিৎকার করতে থাকলাম সংখ্যালঘুর হার কমছে কেন। ৩ বছর আগে পরিসংখ্যান ব্যুরো একটি রিপোর্ট দিয়ে বললো, বিগত দেড় বছরে অর্থাৎ শেখ হাসিনার আমলে হিন্দু সংখ্যা ২ শতাংশ বেড়েছে। যদি সেটি সত্য হয়েই থাকে তাহলে এই ২ শতাংশ বেড়ে হওয়ার কথা ছিলো ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হওয়ার কথা ছিলো ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। সেই জায়গায় বলা হচ্ছে যে, হিন্দুর সংখ্যা ৮ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ কমে গেছে। বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানও কমে গেছে কিছু। তাহলে ধরে নিতে হবে হয় এই সংখ্যাটা মিথ্যা।

প্রশ্ন: সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হার সঠিক বলে আপনি মনে করেন?

রানা দাশগুপ্ত: আমরা জানি জরিপ করার সময় হিন্দু এলাকাগুলোতে গণনা করতে কেউ যায়নি। বাংলাদেশের কোনো জেলায় যায়নি। কিসের উপর হিন্দুদের এই জনসংখ্যা নির্ণয় করলো জানিনা। আর যদি এটি সত্য হয় তাহলে ধরে নিতে হবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়েছে কিন্তু বিগত ৭০ বছরে সংখ্যালঘুদের জনজীবনে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। দুঃখ এবং যন্ত্রণা যা পাকিস্তান আমলে ছিলো, তা এখন আরও বহুগুণে বেড়েছে। যে কারণে তারা দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে, এটাই তো ধরে নিতে হবে। এই ধারা যদি চলতে থাকে তাহলে বাংলাদেশ সংখ্যালঘু শূন্য হতে দুই দশকের বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ হলেও সংখ্যালঘুরা যে অন্ধকারে ছিলো পাকিস্তানে, একই অন্ধকারে আছে বাংলাদেশে।

প্রশ্ন: সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

রানা দাশগুপ্ত: যখন সেক্যুলার দেশে যায়, গণতান্ত্রিক দেশে যায় তখন বলা হয় বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যখন মুসলিম প্রধান দেশে যায় তখন বাংলাদেশকে পরিচয় দেয়া হয় ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে। এই দ্বিচারিতার ভিত্তি হচ্ছে সংবিধান। এরকম দ্বিচারিতা ১৯৭২ সালের সংবিধানে ছিলো না। জিয়াউর রহমানের পর থেকে সংবিধান যে জায়গায় চলে গেছে এবং পঞ্চদশ সংশোধনের পরে এসে এটা দ্বিচারিতার সংবিধান হয়ে গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেন, সেগুলো তো দ্বিচারিতারই নামান্তর। যে কারণে তাঁর বিরুদ্ধে আমাদের ধিক্কার মিছিল বের করতে হয়। আমাদেরকে বলতে হয় যে, তিনি যে দল থেকেই সামনে নির্বাচনে দাঁড়ায় না কেন, সংখ্যালঘুরা তাকে ভোট দিবে না তাঁর মিথ্যাচারের জন্য।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭