ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি'র নতুন জোট: তারেককে নেতৃত্বে চাননা শরিকরা


প্রকাশ: 04/08/2022


Thumbnail

বিএনপি নতুন একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছে। গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে বিএনপি একটি নতুন জোট করতে চায়। বিএনপি এখন পর্যন্ত ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। কিন্তু এই নতুন জোট গঠনে যাদের সাথে আলোচনা করেছে তাদের আপত্তি নেই, আপত্তি রয়েছে এই জোটের নেতৃত্ব কার কাছে থাকবে তা নিয়ে। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, জোট গঠনের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লন্ডনে পলাতক বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। বিএনপি যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে তাদের মধ্যে অন্তত তিনটি রাজনৈতিক দল তারেকের নেতৃত্বের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। ফলে ২২ দলীয় নতুন জোট গঠন এখন একটা সংশয়ের মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া বিএনপি'র মধ্যেও এখন জোট গঠনের ব্যাপারে চাপ রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ তে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন বিএনপির একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা মনে করেন। 

বিএনপি যে রাজনৈতিক দলগুলো সাথে বৈঠক করেছে তাদের মধ্যে অন্যতম কর্ণেল অলি আহমেদের এলএলডিপি। কর্ণেল অলি আহমদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করতে সম্মত হয়েছে কর্ণেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে এ দলটি। কিন্তু কর্ণেল অলি আহমেদ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, যে জোট হবে সেই জোটের শীর্ষ নেতা করতে হবে তাকেই। এর ব্যাখ্যা হিসেবে এলডিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, কর্ণেল অলি আহমেদ এখন বিএনপির যেকোনো নেতার চেয়ে সিনিয়র। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা ছিলেন। কাজেই এই জোটের নেতৃত্ব তার কাছে থাকা উচিত। অন্যদিকে এই বৈঠকে মেজর জেনারেল (অব). সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের দল কল্যাণ পার্টির পক্ষ থেকে তারেকের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। কল্যাণ পার্টির নেতা জেনারেল ইবরাহিম জানিয়েছেন যে, যেহেতু এটি সরকার পতনের আন্দোলন হবে, সেজন্য এমন একজন নেতা সামনে থাকতে হবে যিনি স্বশরীরে নেতৃত্ব দিতে পারেন। এই স্বশরীরে নেতৃত্ব দেওয়ার অর্থ হলো তারেক জিয়া যেহেতু এখন দেশে নেই, সে কারণে সম্ভাব্য নতুন সরকারবিরোধী জোটে তার থাকা উচিত নয়।

উল্লেখ্য যে, এই বৈঠকগুলোতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও বেশকিছু রাজনৈতিক এবং নির্বাচন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। সেই প্রস্তাবগুলো নিয়ে বিএনপি'র মধ্যে কোনো আপত্তি নেই। তবে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, শরিকরা বিভিন্ন কথাই বলবে। কিন্তু বিএনপি যেহেতু বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, কাজেই এই জোট গঠিত হবে বিএনপির নেতৃত্বেই এবং বিএনপি'র নেতা তিনি দেশে থাকুন, বিদেশে থাকুন, তিনিই এই জোটের নেতা হবেন। গতবারের মতো ড. কামাল হোসেনের মতো কাউকে এই জোটের নেতা করা হবে না। তবে বিএনপি যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছে তা নিয়ে বিএনপি'র মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিএনপি'র অনেক নেতা মনে করছেন যে, ২০১৮ এর মতো আবার ভুলের ফাঁদে বিএনপি পা দিচ্ছে। তারা মনে করেন যে, বিএনপি'র এককভাবে আন্দোলন করা উচিত এবং বিএনপি যদি মাঠের আন্দোলনে সক্রিয় করতে পারে তাহলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল আপনা-আপনিভাবে আসবে, কোন শর্ত ছাড়াই বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হবে। 

কিন্তু এখন যেভাবে সবার দ্বারে দ্বারে যাওয়া হচ্ছে তাতে বিএনপি'র শক্তি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া তারা মনে করেন যে, যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে, তাদের অধিকাংশই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বিএনপি'র সঙ্গে আদর্শিক দূরত্বে অবস্থান করে। কাজেই এই আদর্শিক দূরত্ব নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কতটুকু সফল হবে সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাছাড়া বিএনপি'র একজন স্থায়ী কমিটির নেতা বলেছেন যে, যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করা হচ্ছে, তাদের কারও কারও সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এবং যখন আন্দোলন শুরু হবে তখন এরা পিছুটান দেবে এবং আন্দোলনকে নির্বাচনমুখি করবে। এটি আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত হতে পারে বলে তারা মনে করছেন। কাজেই শেষ পর্যন্ত বিএনপির  এই নতুন জোট উদ্যোগ কতটা সফল হবে সেটি নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭