ইনসাইড বাংলাদেশ

এপিএসই সর্বনাশ


প্রকাশ: 05/08/2022


Thumbnail

মন্ত্রীদের কাজের সুবিধার জন্য একজন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু এই সহকারী একান্ত সচিবরা প্রায়ই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। একাধিক মন্ত্রী এপিএস এর কারণে বিপদে পড়েছেন, বিতর্কিত হয়েছেন। বিভিন্ন সময় এই এপিএসদের দৌরাত্ম্যের কারণে মন্ত্রণালয়ের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একজন সাবেক মন্ত্রীর এপিএসের সম্পদের পাহাড়ের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে প্রচণ্ড প্রভাবশালী ছিলেন মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি প্রথমে ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে, পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এই সময় তার এপিএস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এ এইচ এম ফুয়াদ। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ বিপুল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, নিয়োগ-বাণিজ্য, কাজকর্মে স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে অর্থ ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অপকর্মের মাধ্যমে তিনি বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। আর এ কারণেই এই সাবেক এপিএসের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে মামলা করেছে সিআইডি। 

সিআইডি অনুসন্ধানে এই এপিএস এর সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। শুধু এই এপিএস নয়, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সরকার টানা ক্ষমতায় রয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রীর বিভিন্ন এপিএসদের নানারকম কেলেঙ্কারি সরকারকে বিব্রত করেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণ করে মন্ত্রিসভায় চমক দেখায়। এই সময় একজন নতুন মন্ত্রী এপিএস হিসেবে তার পুত্রকে নিয়োগ করেছিলেন। পরবর্তীতে এ নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে আসেন। তবে ওই মন্ত্রীর পুত্র মন্ত্রীর দপ্তরে সমস্ত ফাইলপত্রের ব্যাপারে পরামর্শ দিতেন বলে জানা গেছে। ওই একই সময়ে উত্তরাঞ্চল থেকে এক মন্ত্রীর এপিএসের ক্ষমতার দাপটে ওই মন্ত্রণালয় অস্থির ছিল। পরবর্তীতে অবশ্য ওই ২ জন মন্ত্রীই আর নির্বাচনের মনোনয়ন পাননি। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে এবং হেভিওয়েট ব্যক্তিদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করে। সেই সময় একজন হেভিওয়েট নেতার এপিএস এর দৌরাত্ম্যের খবর প্রকাশিত হয়। তার বিরুদ্ধে এখন দুদকে তদন্ত চলছে। এছাড়াও ওই সময় আরও দুই-একজন এপিএসকে নিয়ে মন্ত্রীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন।

২০০৯ থেকে ১৪ সালের প্রথম মেয়াদে এক এপিএস এর কেলেঙ্কারির কারণেই মন্ত্রিসভা থেকে সরে যেতে হয় প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করলে আবার মন্ত্রিসভায় চমক দেওয়া হয়। এবারও এপিএসদের নিয়ে কেলেঙ্কারির নতুন মাত্রা লাভ করে। একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যিনি ২০১৪ মেয়াদে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, ২০১৮ তে পূর্ণ মন্ত্রী হন। ২০১৪ তে যখন তিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তখন তার একান্ত সচিব হিসেবে একজন সরকারি কর্মকর্তা কাজ করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে যখন তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হন, তখন ওই কর্মকর্তাকেই মন্ত্রী তার সহকারী একান্ত সচিব বা এপিএস হিসেবে নিয়োগ দান করেন। একজন পিএস কিভাবে এপিএস হন, এ নিয়ে সে সময়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই এপিএসের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ, নানারকম দুর্নীতির অভিযোগ আসে। দুদকও তাকে তলব করেছিল। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে মন্ত্রী তাকে এপিএস এর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। এখন অন্তত দুজন মন্ত্রী রয়েছেন, যাদের এপিএসরা মন্ত্রণালয়ে দাপট দেখায় এবং তাদের কারণে মন্ত্রণালয়ে এক ধরনের বিরক্তির সৃষ্টি হয়েছে। এপিএসদের কারণে মন্ত্রীদের সর্বনাশ হচ্ছে এবং মন্ত্রীরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছে। শুধু যখন মন্ত্রী থাকেন তখন না, মন্ত্রীত্ব চলে যাওয়ার পরও এপিএস নিয়ে তাদের সমস্যার অবসান হচ্ছে না। তাই রাজনৈতিক বিবেচনায় এপিএস নিয়োগ করা উচিত কিনা সে প্রশ্নটি নতুন করে সরকারের মধ্যে এসেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭