এডিটর’স মাইন্ড

অলি আতঙ্কে বিএনপি


প্রকাশ: 05/08/2022


Thumbnail

প্রতিবার নির্বাচনের আগে বিএনপি বিশ্বাসঘাতকদের আতঙ্কে থাকে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির মধ্যে এই আতঙ্ক প্রবল হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি প্রথমে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে। বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়েছিলো। সেই সময় বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিকল্পধারাকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিলো, এ নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলো। সে নিয়ে বিএনপিতে এখন তীব্র সমালোচনা। বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রকাশ্যে বলেছেন, ড. কামাল হোসেনকে ইমাম মেনে বিএনপি মহা ভুল করেছিলো। এবারও বিএনপি নির্বাচনের আগে জোট গঠন করে করতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যেভাবেই জোট হোক না কেন নেতৃত্ব থাকবে বিএনপির হাতে। তবে এই জোট নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন নানা রকম সংশয়, সন্দেহ এবং অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছে। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই জোট হলো আন্দোলনের জোট। কিন্তু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, এই আন্দোলনের জোটই একসাথে নির্বাচন করবে এবং নির্বাচনের পরে জাতীয় সরকার গঠন করবে করা হবে এই জোটের নেতৃত্বে। এরই প্রেক্ষিতেই অনেকে সন্দেহ করছেন যে, আরেকটি নির্বাচনে বিএনপিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য নতুন জোট হচ্ছে কিনা। নতুন জোটে যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে সেই রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তত একজন নেতাকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে সন্দেহ, সংশয় ক্রমশ দানা বেঁধে ওঠছে। তিনি হলেন এলডিপির কর্নেল অলি আহমেদ।

কর্নেল অলি আহমেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতা। জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ সালে বিএনপির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, খালেদা জিয়ার অন্যতম ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তারেক জিয়ার কারণে বিএনপিতে তিনি শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি মন্ত্রীত্ব বঞ্চিত হন, এরপর আস্তে আস্তে তিনি বিএনপি থেকে তিরোহিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি এলডিপি নামে ক্ষুদ্র একটি রাজনৈতিক দলের নেতা। কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে তার প্রভাব রয়েছে অপরিসীম। যেমন- অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বিএনপির অনেক নেতারাই গোপনে শ্রদ্ধা করেন, তার সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং তাকে নেতা হিসেবে মানেন। ঠিক তেমনি কর্নেল অলিরও বিএনপিতে বিপুল প্রভাব বলয় রয়েছে। বিশেষ করে যারা তারেক জিয়াবিরোধী হিসেবে পরিচিত তাদের সঙ্গে কর্নেল অলি আহমেদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির সাথে কর্নেল অলি আহমেদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে। সেই বৈঠকে কর্নেল অলি জানিয়ে দিয়েছেন যে, জোট যদি গঠন হয় সেই জোটের নেতা হবেন তিনি। কারণ তিনি সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ নেতা। বিএনপির মধ্যে এই বক্তব্যের পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। কর্নেল অলির ভূমিকা নিয়ে বিএনপিতে বিতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে তারেক জিয়া কর্নেল অলিকে পছন্দ করেন না এবং তারেক জিয়ার কারণে কর্নেল অলিকে বিএনপি ছাড়তে হয়েছিলো, এটা সকলেই জানেন। গতবারও যখন বিএনপির নেতৃত্বে জোট গঠিত হয়েছিলো তখন তারেক জিয়া কর্নেল অলিকে ২০ দলীয় জোটে নেয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার আগ্রহের কারণেই শেষ পর্যন্ত কর্নেল অলি জোটে ঠাই পান। কিন্তু এবার যখন তিনি জোটের নেতৃত্ব দাবি করেছেন, তখন বিএনপি নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। ইতোমধ্যে লন্ডনে বার্তা পাঠানো হয়েছে, বিএনপি এখন সবসময় বিশ্বাসঘাতক আতঙ্কে থাকে, বিএনপির নেতারা মনে করে যে নির্বাচনের আগে বিএনপিতে কোনো এজেন্ট ঢুকে দল ভাঙ্গাবে বা বিএনপিকে নির্বাচনমুখি করবে। সেরকম একটি আতঙ্ক থেকেই কর্নেল অলিকে সন্দেহ করা হচ্ছে। কর্নেল অলি যেভাবে কথা বলছেন তাতে বিএনপি ভাঙ্গার কোনো চক্রান্ত তিনি করছেন কিনা বা বিএনপিকে নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তার আছে কিনা।

একাধিক সূত্র বলছে যে, বিএনপি এখন যে জোট গঠন করবে সেই জোটে অলিকে রাখবে না। কিন্তু অলিকে যদি নাও রাখে তাহলে বিএনপির একটি ভালো অংশ কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে চলে যাবে। বিশেষ করে বিএনপিতে যারা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ আছেন তারা কর্নেল অলির সঙ্গে যোগ দেবেন বলে অনেকের ধারণা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপিকে অখণ্ড রাখা যেমন একটি চ্যালেঞ্জ তেমনি বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখাও একটি বড় সমস্যা বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। এই বাস্তবতায় সামনের দিনগুলোতে বিএনপিতে কর্নেল অলি কি তাণ্ডব করেন সেটি দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭