ইনসাইড বাংলাদেশ

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি: উভয় সংকটে সরকার


প্রকাশ: 06/08/2022


Thumbnail

শেষ পর্যন্ত আইএমএফের পরামর্শে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতেই হলো সরকারকে। গতকাল মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর এক সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে জনমনে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আর কোনো বিকল্প ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এই জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে হতবাক হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, এভাবে একধাপে এত দাম বৃদ্ধি কোনভাবেই কাঙ্খিত না। এটার জন্য সরকারকে বড় রকমের চাপের মধ্যে পড়তে হবে। মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। ডিজেলের মূল্য যেখানে ছিল ৮০ টাকা, সেখানে করা হয়েছে ১১৪টাকা। কেরোসিনের মূল্য ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা করা হয়েছে। পেট্রোলের মূল্য ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ টাকা করা হয়েছে। অকটেন করা হয়েছে ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ আইএমএফ এর কাছ থেকে ঋণ চেয়েছে। আইএমএফ ঋণের যে শর্ত দিয়েছিল, সেই শর্তের একটি বড় বিষয় ছিল যে জ্বালানি খাতে এবং অন্যান্য খাতে ভর্তুকি কমাতে হবে। এই ভর্তুকি কমানোর জন্য সরকার প্রথমে সারের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। এখন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করলো।

আইএমএফ থেকে ঋণ না পেলে বিশ্বব্যাংক, এডিবি এবং জাইকা থেকেও বাংলাদেশের ঋণ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশ ১০ বিলিয়ন ডলার ঋণের জন্য চেষ্টা করছে। এর মধ্যে আইএমএফ থেকেই বাংলাদেশ ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাবে বলে আশা করছে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে যে, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে আইএমএফ এর ঋণ পাওয়া সহজ হবে। সরকারের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার জন্য এই ঋণটা জরুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, আইএমএফ এর ঋণ সরকারের অর্থনৈতিক চাপ মোকাবিলা, বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের যে চাপ, সেই চাপ মোকাবিলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু রিজার্ভের চাপ মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার জনঅসন্তোষের মুখে পড়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরই সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে যে ঘটনাগুলো ঘটবে, তাতে ভয়াবহভাবে সংকটে পড়বে সাধারণ মানুষ বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথেই অবধারিতভাবে গণপরিবহনের ভাড়ার বৃদ্ধি ঘটবে এই ভাড়া বৃদ্ধির কারণে বাজারে দ্রব্যমূল্য আরেক দফা বাড়বে।

এমনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস অবস্থা বিরাজ করছে। তারপরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পুরো দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনের আগে জ্বালানি তেলের এভাবে মূল্যবৃদ্ধিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে তারা কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অন্তত দুইজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, এভাবে মূল্যবৃদ্ধির না করলেও পারতো। আস্তে-ধীরে মূল্যবৃদ্ধি করলে এটি সরকারের জন্য এত চাপের সৃষ্টি করতো না। কিন্তু সরকার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উভয় সংকটের মধ্যে পড়েছে। একদিকে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবির ঋণের বিকল্প নেই, অন্যদিকে এই ভর্তুকি কমাতে গিয়ে সরকারের জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এই উভয় সংকটের মধ্যে সরকার আপাতত অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে জানা গেছে। সামনে এই সংকট মোকাবিলায় সরকার কি করে সেটাই দেখার বিষয়। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭