ইনসাইড পলিটিক্স

মান্না কি বিএনপির নেতা?


প্রকাশ: 06/08/2022


Thumbnail

মাহমুদুর রহমান মান্না, নাগরিক ঐক্য নামে একটি রাজনৈতিক দল করেন। কিন্তু নিজের দল চেয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতেই তিনি যেন এখন বেশি আগ্রহী। বিভিন্ন সময়ে বিএনপি নেতাদেরকে তিনি টেলিফোন করেন, তাদেরকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দেন কি করতে হবে, না করতে হবে এ বিষয়ে জ্ঞান দেন। বিএনপির অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত না হয়েও উপস্থিত হন এবং বিএনপির নেতাদের মতোই আচরণ করেন। বিএনপির নেতারাও মাহমুদুর রহমান মান্নাকে প্রকাশ্য সমালোচনা করতে এখন ভয় পান। কারণ, মান্নার সঙ্গে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বিএনপির দুই একজন নেতা বলেছেন যে, মাহমুদুর রহমান মান্না তাদের জন্য এখন একটা বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিপত্তি বিরক্তির বিপদ। মাহমুদুর রহমান মান্না এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে একটি বিরক্তির নাম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে মাহমুদুর রহমান মান্না লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তারেক জিয়া তাকে একবার বিএনপিতে যোগ দেওয়ারও অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সেই সময় মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপিতে যোগ দেননি। কিন্তু বিএনপিতে যোগ না দিলেও তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছেন। তারেক জিয়া এখন মাহমুদুর রহমান মান্নার ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল বলে জানা গেছে। প্রতিদিনই মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। একদা বাম এই নেতা বাকপটু, কথাবার্তায় অত্যন্ত চতুর। সে কারণে সহজেই তিনি তারেকের মতো একজন ব্যক্তিকে বশীভূত করতে পেরেছেন এবং তারেক জিয়ার অনেক সিদ্ধান্তই এখন মান্নার পরামর্শ বলে জানা গেছে। এটি বিএনপিতে জানাজানি হওয়ার পর মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে বিএনপির অনেকেই আতঙ্কিত। তারা মান্নার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কোনো কথাবার্তা বলেন না, এমনকি মাহমুদুর রহমান মান্নার সামনে তারা দলের কোনো বিষয় আলোচনাও করেন না। বিএনপির একজন নেতা বলেন যে, কিছুদিন আগে মাহমুদুর রহমান মান্না তাকে ফোন করেছিলেন। একটি বিষয় নিয়ে তার সাথে দীর্ঘ আলাপ হয় এবং সেখানে তিনি বিএনপির কিছু নেতিবাচক বিষয়ও তুলে ধরেন। দুই দিন পর লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া তাকে টেলিফোন করে বকাঝকা করেন যে, তিনি দলের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তারেক জিয়া তাকে হুমকিও দিয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কথাবার্তা বলা হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই নেতা বলেছেন, আমি শুধু মাহমুদুর রহমান মান্না ছাড়া কারো সাথে এ বিষয়ে কথা বলিনি। তার মানে স্পষ্টতই মান্নাই এই কথা তারেক জিয়াকে বলেছেন।

ইদানীং বিএনপির নিজস্ব সব কর্মসূচিতে মাহমুদুর রহমান মান্না এসে উপস্থিত হন। সম্প্রতি, ভোলায় নিহত দুইজনের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠানে বিএনপি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। তখন দলের নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন যে, মান্না এখানে কেন, এটি তো বিএনপির কর্মসূচি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেহেতু তারেক জিয়ার সঙ্গে মান্নার ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানেন সেজন্য তিনি পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন যে, আমাদের শরিকদের যে কেউ আসতে পারে বিএনপির কর্মসূচিতে, এতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু মাহমুদুর রহমান মান্না কেবল বিএনপির কর্মসূচিতে এসেই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, তিনি বিএনপির বিভিন্ন নেতাকে নসিহত দিচ্ছেন, উপদেশ দিচ্ছেন। কি করতে হবে, না করতে হবে, কিভাবে বক্তৃতা দিতে হবে, কোন লাইনে কথা বলতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের পরিধি ছাড়িয়ে তিনি এখন ছাত্রদল, যুবদলের নেতাদেরকেও পরামর্শ দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও তিনি বলছেন যে, তাকে 'ভাইয়া' টেলিফোন করে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বলেছে। প্রকাশ্যে বিএনপি নেতারা কোন কিছু না বললেও গোপনে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। বিএনপির একজন নেতা বলছেন যে, মান্না যদি বিএনপির ব্যাপারে এতই নাক গলাবেন তাহলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন না কেন? অন্য রাজনৈতিক দলের নেতা হয়ে বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পরামর্শ দেওয়াটা মোটেই শোভন নয়। মাহমুদুর রহমান মান্না যদি সত্যিই বিএনপির কল্যাণ চান, তাহলে বাইরে থেকে পরামর্শ না দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করা উচিত। বিএনপিতে যোগ দেবেন না অথচ বিএনপি নিয়ে তিনি জ্ঞান দেবেন, এটা হয় না। মাহমুদুর রহমান মান্নার বিএনপিপ্রীতি এবং বিএনপিতে খবরদারি নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন নানা রকম প্রশ্নের তৈরি হয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭