এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগ: হতাশ, বিব্রত, বিরক্ত, নিশ্চুপ


প্রকাশ: 07/08/2022


Thumbnail

হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আওয়ামী লীগকে হতবাক করেছে। আওয়ামী লীগের অনেক শীর্ষ নেতারা এ সম্পর্কে অন্ধকারের ছিলেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা কিছুই জানতেন না। শুক্রবার রাতে যখন তেলের মূল্য এভাবে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করা হয়েছে, তারাও হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। আওয়ামী লীগের দুই একজন নেতা তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাফাই গাইলেও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাকর্মী এই ঘটনায় বিব্রত এবং কিছুটা ক্ষুব্ধও বটে। এটার প্রকাশ দেখা যায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তির মন্তব্য থেকে। গতকাল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরে এক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা তাকে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করে। এই প্রশ্নে তিনি জবাব দেন, আপনারা এই বিষয়ে প্রথমে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া নেন। আমার প্রতিক্রিয়া কেন? আমি তো বিদ্যুৎ মন্ত্রী না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ, অর্থবহ।

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন যে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিটা তিনি পছন্দ করেননি জন্য এরকম মন্তব্য করেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নয়, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, নির্বাচনের আগে এইভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মাশুল আওয়ামী লীগ দিতে হবে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন যে, এর ফলে কৃষির উপর প্রভাব পড়বে এবং কৃষি পণ্যের দাম বাড়বে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, এখন এই রকম সিদ্ধান্তটি এভাবে না নিলেও চলতো। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, আমরা যদি ধাপে ধাপে বাড়াতাম, সেক্ষেত্রে মানুষের জন্য এটি সহনীয় হত। কিন্তু একবারে এভাবে দাম বৃদ্ধিটি কোনোভাবেই যৌক্তিক হয়নি। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন যে, হাইব্রিড বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং আমলারা সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন। এ কারণেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত গুলো হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন যে, এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ কষ্টে আছে, তার মধ্যে এই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সর্বব্যাপী হবে। এর ফলে জনমনে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠবে। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, পরিস্থিতি এখন নাজুক অবস্থায় চলে গেছে। এজন্য আমরা প্রকাশ্যে কোনো কথা বলতে পারছি না। কিন্তু জনগণের কাছে আমরা কি নিয়ে যাবো? আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে যে, তারা এইভাবে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে হতাশ। তারা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী গত ১৩ বছরের নিরলস পরিশ্রম করে যে অগ্রগতি, উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য এনেছেন তাকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং কালিমালিপ্ত করার জন্য কিছু আমলা এবং সরকারের কিছু মন্ত্রী যেন উঠে পড়ে লেগেছে। তারা একের পর এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আওয়ামী লীগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ যখন জনগণের  কাছে যাবে, তখন এইসব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। আওয়ামী লীগের অন্য একজন নেতা বলেছেন যে, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ যে অর্জন করেছিল, এই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি তাকে ম্লান করে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরণ করা দরকার বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন যে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির আগে রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত ছিলো।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭