ইনসাইড টক

‘মালিক সমিতি অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা নিয়ে আমাদের মুখোমুখি হতে চায় না’


প্রকাশ: 09/08/2022


Thumbnail

মোজাম্মেল হক চৌধুরী। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব। গত ৫ আগস্ট মধ্যরাতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, গণপরিবহনে নৈরাজ্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে কথা বলেছেন মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহমুদুল হাসান তুহিন

বাংলা ইনসাইডার: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা দেখা যাচ্ছে না। কোথাও ১০ টাকার ভাড়া ২০ টাকা, আবার ৩০ টাকার ভাড়া ৩৫ টাকা নিচ্ছে। এই বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

মোজাম্মেল হক চৌধুরী: আমরা এটা পর্যবেক্ষণ করছি। সরকার বাসের ভাড়া বাড়ালেন প্রতি কিলোমিটার হিসেবে। কিন্তু রাজধানীতে যে সিটিং সার্ভিস বাসগুলো চলছে, বাসগুলো আগের বাড়তি ভাড়ার সাথে এখনকার ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে আগেই যেখানে বেশি ভাড়া নিত, এর সাথে যোগ করে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যাত্রী সাধারণের অবস্থা এখন নাজেহাল। আমরা বিষয়টি গভীর উদ্বেগের সাথে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এই বিষয়ে কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে নামবো।

বাংলা ইনসাইডার: ইদানীংকালে গণপরিবহনে দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ চালক কিশোর। এই যে কিশোরদের হাতে গণপরিবহন চলে যাচ্ছে এবং তাদের মধ্যে যে অসম প্রতিযোগিতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে সেটি রোধে আপনারা কি করছেন?

মোজাম্মেল হক চৌধুরী: আমরা এ ব্যাপারে সব সময় সোচ্চার এবং প্রতিবাদী। কিন্তু বিষয়টি সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হলো আমাদের যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ অথবা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় তাদের এই সমস্ত বিষয় নিয়ে কোনো গবেষণা নেই। মাঠ পর্যায় তাদের তেমন কোনো তদারকি নেই। মাঠের সাথে তাদের কোনো যোগাযোগও নেই। তারা কেবলমাত্র উপরের লেভেলের কয়েকজন নেতার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। নেতাদের নিয়ে পরিবহন খাতে সিদ্ধান্ত নেন। যাদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন তাদের মূলত তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক  আছে বলে আমাদের মনে হয় না। আমরা নানা গবেষণায় দেখেছি, তারা মাঠ থেকে বিচ্ছিন্ন নেতা। ফলে তারা মাঠের বাস্তব চিত্রগুলো হাজির করতে পারেন না। এই কারণে এই সমস্ত সমস্যাগুলো দিন দিন গভীর থেকে আরও গভীরতর হচ্ছে। এখান থেকে উত্তরণের জন্য যে ধরনের মেকানিজম দরকার, সে মেকানিজম কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি না।

বাংলা ইনসাইডার: যাত্রী কল্যাণের মহাসচিব হিসেবে আপনি কি পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছেন বা কি পদক্ষেপ নিবেন?

মোজাম্মেল হক চৌধুরী: আমাদের কাজ হলো এ সমস্ত তথ্য-উপাত্তগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরা, সে কাজটি আমরা করছি। আমাদের কাজ হলো এডভোকসি করা, সে কাজটি আমরা করছি। আমাদের কাজটি হলো জনসাধারণকে সচেতন করা, যাত্রী সাধারণকে সচেতন করা, তাদের দায়িত্বশীল করা। সে কাজটি আমরা গুরুত্ব সহিত করছি। এখন নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আজকে হয়তো আমরা ওইভাবে সারা বাংলাদেশে বিস্তৃত করতে পারছি না। যাত্রীরা অসংগঠিত, অসচেতন হওয়ার ফলে এখানে মালিকরা এবং শ্রমিকরা সংখ্যায় কম হলেও তারা কিন্তু নৈরাজ্য করার ক্ষেত্রে বা আরও বিশৃঙ্খলা করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। যাত্রী সাধারণ অসংগঠিত এবং অসচেতন বলেই আমরা হয়তো আমদের আন্দোলন-সংগ্রাম বেগবান করতে পারি না। তবে আমরা প্রত্যেকটা বিষয় সরকার এবং গণমাধ্যমের নজরে আনার চেষ্টা করি। অর্থাৎ সমস্যা সমাধানের জন্য যে তথ্য-উপাত্ত গুলো প্রয়োজন সেগুলো আমরা সরকারকে নিয়মিত সরবরাহ করছি। সেক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যে ধরনের ফিডব্যাক প্রত্যাশা করি, সেভাবে আমরা ফিডব্যাক পাচ্ছি না।

বাংলা ইনসাইডার: আপনার বাস মালিক সমিতির সাথে এইসব বিষয় নিয়ে কি বসেছেন?

মোজাম্মেল হক চৌধুরী: মালিক সমিতি আসলে আমাদের সাথে বসতে চায় না। কারণ, তারা নৈতিকতার জায়গায় অনেক দুর্বল এবং গণপরিবহনের নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা নিয়ে আমাদের মুখোমুখি হতে চায় না। কারণ, আমরা যে সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রস্তাব দেই সেগুলো ধারণ করার মতো সক্ষমতা তারা রাখে না। সে কারণে আমরা দেখি যে, তারা আমাদের মুখোমুখি হতে চায় না। বিষয়গুলো তারা বিব্রতকর মনে করেন।

বাংলা ইনসাইডার: গণপরিবহনে নৈরাজ্যের পেছনে কি রাজনৈতিক প্রভাব দায়ী?

মোজাম্মেল হক চৌধুরী: পরিবহনের যারা শীর্ষস্থানীয় নেতা তারা সবসময় সরকারি দলের চাদরের নিচে ঢুকে পড়েন। আমরা এখনও লক্ষ করছি, বর্তমান ক্ষমতাসীন দল তিনবার ক্ষমতায়। বিভিন্ন দলে বিভক্ত ছিলেন এমন বাস পরিবহন নেতারাও এখন এই দলের চাদরের নিচে ঢুকে পড়েছে। ফলে আমরা দেখি, তাদের ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করা, পরিবহনের সুযোগ-সুবিধা আদায়, এবং প্রভাব বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে তারা একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২০১৮ আমাদের সালে আমাদের যখন নিরাপদ সড়কের আন্দোলন হলো তখন হেলমেট বাহিনী বা কথিত ছাত্রলীগ নেতাদের আক্রমণ আমরা দেখেছি, কোটা আন্দোলন সময়ও হেলমেট বাহিনীর আক্রমণ দেখেছি। এমনকি সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনেও আমরা হেলমেট বাহিনী দেখেছি। কিন্তু আমরা যখন দেখি বাস মালিক-শ্রমিকরা জনগণকে জিম্মি করে সারা দেশে পরিবহন খাত বন্ধ করে দেয় তখন কোনো হেলমেট বাহিনী তাদের ওপর আক্রমণ করে না। মূলত, মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন সরকারী দলের অঙ্গ সংগঠনে পরিণত হয়ে পড়ে। এ কারণে আমরা দেখি এখানে জনস্বার্থ বিষয়গুলো বারবার উপেক্ষিত হয়, মালিক সমিতির স্বার্থগুলো প্রায়োরিটি পায়। ভাড়া নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সরকারের সাথে মালিক সমিতির বৈঠক। এটা বাসের ক্ষেত্রেও হয়, লঞ্চের ক্ষেত্রেও হয়। আমরা গভীর উদ্বেগে লক্ষ করি যে, সেখানে কোনো গণমাধ্যম থাকে না, যাত্রী সাধারণের কোনো প্রতিনিধি থাকে না। মালিকদের কথার প্রেক্ষিতেই সরকার ভাড়া বাড়িয়ে দেন। ভাড়ার বোঝা যাদের সইতে হবে, তারা কতটুকু লোড নিতে পারবেন বা তাদের অভিযোগ, তাদের কথাগুলো, যাত্রী সেবার মান সংক্রান্ত দাবী গুলো, ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ কান্না তুলে ধরার জন্য যাত্রী প্রতিনিধি নিশ্চিত করা হয় না। ফলে আমরা দেখি একচেটিয়াভাবে ভাড়া বাড়ানো হয় এবং সেটা অযৌক্তিকভাবে বাড়ানো হয়। ফলে যাত্রী সাধারণের দুর্ভোগ বাড়ে। ভাড়া বাড়িয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় তার চেয়ে বাড়তি বাড়া আদায় করা হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭