ইনসাইড পলিটিক্স

শরিকদের মান ভাঙ্গাবে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 09/08/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আদর্শিক এবং নির্বাচনী জোটে ফাটল ধরেছে। সরকারের একের পর এক সিদ্ধান্তে বিরক্ত আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট ১৪ দলীয় জোট। ১৪ দলীয় জোটের সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু নীতি এবং পদক্ষেপের প্রকাশ্য সমালোচনা করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ১৪ দলের মধ্যে ভাঙনের পদধ্বনি শোনা গেছে। ১৪ দলের প্রায় সব শরিক দল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করেছে। তারা প্রকাশ্যে এটিকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হিসেবে মনে করছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী জোট মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি এখন সরাসরি সরকারবিরোধী অবস্থানে গেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের গতকাল বলেছেন যে, বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার পথে যাচ্ছে। তারা ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিকে মানুষের ওপর জুলুম বলেও অভিহিত করেছেন। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ প্রায় নিঃসঙ্গ এবং একঘরে হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কি করবে?

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগ এখন ১৪ দলের দিকে মনোযোগ দেবে, ১৪ দলকে আবার নতুন করে সংগঠিত করার কাজটি শুরু করবে। অন্যদিকে মহাজোটের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, মহাজোট নির্বাচনকালীন জোট। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ মহাজোট বিষয়ক কার্যক্রম শুরু করবে। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা শরিকদের স্বাধীন মতামতকে সম্মান জানাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেছেন যে, ১৪ দল হলো একটি আদর্শিক জোট। ১৪ দলের প্রত্যেকটা দলের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, নীতি-আদর্শ রয়েছে। কাজেই যেকোনো কর্মসূচি, পদক্ষেপের সমালোচনা করার অধিকার তাদের রয়েছে এবং এই সমালোচনা গুলোকে সরকার সম্মান জানায়। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে যাই বলুন না কেন, ভেতরে ভেতরে ১৪ দলের মধ্যে যে অস্বস্তি এবং টানাপোড়েন সেটা নিয়ে চিন্তিত এবং সেটি সমস্যার সমাধান করতে চায়।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ একলা চলো নীতি অনুসরণ করে চলছে। এই সময়ে আওয়ামী লীগ যে মন্ত্রিসভা গঠন করে সেই মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের কোনো শরিকদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ১৪ দলের সঙ্গে সরকারের কোনো বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়নি। একটি নামকাওয়াস্তে বৈঠক হয়েছে, সেই বৈঠকটিও ছিলো সৌজন্যে বৈঠক। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তের কোনো ক্ষেত্রেই ১৪ দলের অংশগ্রহণ থাকেনা বলে ১৪ দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছেন। এর আগে ১৪ দলের সমন্বয়ক ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। তিনি ১৪ দলের কিছু কিছু বৈঠক করতেন এবং ১৪ দলকে সচল রাখতেন। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় আমির হোসেন আমুকে। তিনি ১৪ দলকে অতটা সক্রিয় করতে পারেননি। এখন সরকারের যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে শরিকরা সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে ১৪ দলের মান ভাঙানোর জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমানকে ১৪ দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সাথে কথাবার্তা বলার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ১৪ দলের একটি বৈঠক ডাকারও কথা হয়েছে। সেই বৈঠকে ১৪ দলের কাছে সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে বলেও জানা গেছে। এছাড়াও ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি বৈঠকের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, কোন বাস্তবতা সরকারকে লোডশেডিংয়ে যেতে হচ্ছে, কোন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকার ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি করেছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ১৪ দলের সঙ্গে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা হলেই তারা বিষয়টি বুঝবে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, ১৪ দল হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি আদর্শিক জোট। কাজেই, সরকারের নানা সিদ্ধান্তের মতপার্থক্য থাকলেই যে ১৪ দল ভেঙে যাবে এমনটি নয়। আরে ১৪ দলের নেতারা যেন সরকারের সিদ্ধান্তগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে পারেন, সেজন্যই ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যোগাযোগ করে তাদের সাথে কথাবার্তা বলা হবে বলেও জানা গেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭