ইনসাইড ইকোনমি

আমলারা কি অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটাতে পারবে?


প্রকাশ: 12/08/2022


Thumbnail

এখন মোটামুটি স্পষ্ট যে, সরকার একটা আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই সংকটের কারণ কি, সেটি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু দেশে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট আছে এটি নিয়ে কোনো লুকোচুরি নেই। বরং সরকারও অর্থনৈতিক সংকটের কথা স্বীকার করছে সংকটের কারণ হিসেবে সরকার এক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, সুশীল সমাজ এক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, রাজনীতিবিদরা আরেক রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের পথ কী? এরকম অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের ক্ষেত্রে সরকার এখন পর্যন্ত আমলাদের ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সংকট নিরসনে কাজ করছে। এখানে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা এখন পর্যন্ত গৌণ। কিন্তু বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে সিভিল ব্যুরোক্রেসি সীমাহীন ভাবে ব্যর্থ হয়েছে, অর্থনৈতিক সঙ্কট সমাধান করতে পেরেছে রাজনীতিবিদরাই।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদদেরকে সাইডলাইনে বসিয়ে রেখেছে। এমনটি নয় যে আওয়ামী লীগে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য দক্ষ রাজনীতিবিদ নেই। বরং রাজনীতিবিদরাই সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারেন বলেই অনেকের ধারণা। মনে করা হয় যে, অর্থমন্ত্রী হতে গেলে অর্থনীতিবিদ হতে হয়। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তেমন নয়। ভারতের উদাহরণ দেওয়া যাক। ভারতের প্রণব মুখার্জির সবচেয়ে সফল অর্থমন্ত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তিনি অর্থনীতিবিদ ছিলেন না, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রীকে সফলতম অর্থমন্ত্রী অন্যতম সফলতম অর্থমন্ত্রী মনে করা হয়। তিনি দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি অর্থনীতির ছাত্র ছিলেন বটে কিন্তু অর্থনীতিবিদ ছিলেন না। এভাবে বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট গুলোকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সমাধান করাই যৌক্তিক। যুক্তরাজ্যের কথাই ধরা যাক। সেখানে ঋষি সুনাক অর্থমন্ত্রী হওয়ার কারণেই তারা অর্থনৈতিক পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরেছিলো। যদিও দেশটি এখন ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে আছে, সেই সঙ্কটও বাংলাদেশের মতো বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আমাদের সংকট সমাধানে রাজনীতিবিদদের ওপর ভরসা রাখতে পারেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর গত দুই মেয়াদেই একজন আমলা ছিলেন এবং বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত এখন পুরোপুরি আমাদের দখলে। প্রায় সব ব্যাংকের চেয়ারম্যানই কোনো না কোনো সাবেক আমলা এবং আমলারা থাকার পরও এখন বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের রেকর্ড হয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে যে আমলাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে তারা কি করছেন? এটা কি তাদের অবসরোত্তর জীবনযাপন নাকি সত্যি সত্যি তারা দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় কাজ করতে চান। অন্যদিকে, অর্থ মন্ত্রণালয়ে আগে যেমন অর্থমন্ত্রীদের পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিলো সেই অবস্থাটাও পাল্টে গেছে। এখন অর্থমন্ত্রীর চেয়ে অর্থ সচিবের গুরুত্বই দৃশ্যমান বেশি হচ্ছে এবং তাদের পরামর্শই বাস্তবায়িত হচ্ছে বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে। তাই যদি হয় তাহলে এই সংকট সমাধানে আমলারা কতটুকু সফল হচ্ছে।

বিভিন্ন মহল বলছে যে, আমলারা একের পর এক ভুল তথ্য দিয়েছে, সাময়িক সমাধান করার চেষ্টা করেছে, ফলে সংকট এখন গভীর হয়েছে। অন্যদিকে কেউ কেউ মনে করেন যে, এই সংকটের সময়ে অনেক সুচিন্তিত অর্থনীতিবিদ আছেন, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেন এমন অনেক অর্থনীতিবিদ আওয়ামী লীগের চারপাশে রয়েছেন, যাদের পরামর্শ সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ড. খলীকুজ্জমান একজন ভালো অর্থনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ছিলেন। ড. আবুল বারাকাত একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ। নাজনীন আহমেদ গবেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ড. বিনায়ক সেন একজন মেধাবী চিন্তাশীল অর্থনীতি হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এদের কারো কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নিয়েছে বলে জানা যায়নি। এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এসব ব্যাপারে অর্থনীতিবিদের সঙ্গে কোনো বৈঠক করেছে বা পরামর্শ করেছে বলেও জানা যায়নি। সরকারকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে বলে মনে করেন কেউ কেউ। অনেকে মনে করেন, অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে নীতি-কৌশলগত পরামর্শ নিতে হবে। আমলারা শুধুমাত্র গাণিতিক হিসাব এবং তথ্য-উপাত্তকে ঠিক করে সংকটের সমাধান করবেন কিন্তু যেটি সম্ভব নয়। তাই আমলাতান্ত্রিক সময় আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অর্থনৈতিক সংকট সমাধান হবে না বলে অনেকের ধারণা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭