ইনসাইড পলিটিক্স

মন্ত্রীদের কথায় অস্থির আওয়ামী লীগ: নিষেধাজ্ঞা আসছে


প্রকাশ: 13/08/2022


Thumbnail

মন্ত্রীদের লাগামহীন, বেপরোয়া এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এ নিয়ে বিব্রত, বিরক্ত, হতাশা প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রীরা যেভাবে কথা বলছেন তাতে সংকট সম্পর্কে এক ধরনের উন্নাসিকতা প্রকাশ হচ্ছে এবং এটি সরকারের জন্য নেতিবাচক হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রীদের এই সমস্ত কথাবার্তার ব্যাপারে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন আনুষ্ঠানিকভাবে। তিনি বলেছেন, এই সময়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলা উচিত নয়, সংযত কথাবার্তা বলা উচিত। সরকার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রীদের এই যথেচ্ছ কথাবার্তা বন্ধের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। দলের সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন মন্ত্রী যারা বেপরোয়া কথাবার্তা বলছেন তাদেরকে সতর্কবার্তা দিবেন এবং লাগামহীন কথাবার্তা বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দিবেন বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন সিলেটে সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, বিশ্ব সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষ এখনো বেহেশতে আছেন। তার এই বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় চলছে। যখন মানুষ লোডশেডিংয়ে অস্থির, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, মধ্যবিত্তের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা, সেই সময় মন্ত্রী কিভাবে এইরকম দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলেন এটি আওয়ামী লীগের নেতাদেরকেই বিস্মিত করেছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এ ধরনের বক্তব্য আওয়ামী লীগকে শুধু নয়, সরকারকে একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ফেলবে, সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়ে যাবে। শুধু পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নয়, গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন মন্ত্রীরা এলোমেলো কথাবার্তা বলছেন। এর আগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেছেন যে, মানুষ এখনও জামাকাপড় পড়ে আছে, তারা তো ভালই আছে। এটি একটি বিরক্তিকর এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। অন্য একজন মন্ত্রী বলেছেন যে, আমরা অভাবে আছে কিন্তু কেউ এখনো না খেয়ে নেই। এ ধরনের বক্তব্য মন্ত্রীরা কেন বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য কি সে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, হাইব্রিড মন্ত্রীদের সংখ্যা বেশি। উড়ে এসে জুড়ে বসে এমপি হয়েছেন, মন্ত্রী হয়েছেন। তারা এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলছেন। তাছাড়া যে মন্ত্রীর যে দায়িত্ব নয়, সেই মন্ত্রী সেই বিষয় নিয়ে কেন কথা বলছেন, এ নিয়েও আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামীকাল দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠক করছেন। এই বৈঠকেও মন্ত্রীদের বেপরোয়া কথাবার্তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, যে মন্ত্রীর বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলার দরকার নেই তিনি কেন বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বলছেন বা যে মন্ত্রীর দ্রব্যমূল্য নিয়ে কথা বলার দরকার নেই তিনি কেন কথা বলছেন। এই ধরনের কথাবার্তা সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কালে তিনটি বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এবং মানুষ এ নিয়ে সমালোচনা করছে। এমনিতেই সরকার নানামুখী চাপের মধ্যে রয়েছে, জনগণ অস্বস্তিতে রয়েছে, জনগণের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। সেই রকম পরিস্থিতিতে এ ধরনের কথাবার্তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুধু এই বিষয়ে নয়, তার নিজস্ব মন্ত্রণালয়ের বিষয়েও লাগামহীন, দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা বলে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে। এই সমস্ত মন্ত্রীদের লাগাম টেনে ধরতে পারলে সামনের দিনগুলোতে সরকারকে আরো খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রীদের বেপরোয়া কথাবার্তা অনেক উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। আর এটি বন্ধের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাদেরকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হবে। যে কেউ যেকোনো বিষয়ে কথাবার্তা যেন না বলে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭