ইনসাইড বাংলাদেশ

নতুন আইজিপি নিয়ে আলোচনা, বর্তমানের পাশাপাশি রয়েছে নতুন মুখও


প্রকাশ: 14/08/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে ড. বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। তার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এই পদে কে আসবেন সেটি নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। আড়াই লাখের বেশি সদস্যের পুলিশ বাহিনীর নতুন নেতৃত্বে বর্তমান আইজিপিই থাকছেন নাকি নতুন কেউ এই পদে আসছেন তা নিয়েও ইতোমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বিবেচনায় থাকবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। ফলে যাকেই এই পদে নিয়োগ দেওয়া হোক না কেনো, তাকে আগামী নির্বাচনে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনীর সর্বোচ্চ ভূমিকা থাকে।  

গুরুত্বপূর্ণ এ পদে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন রাষ্ট্রীয় নানা সংকটে পরীক্ষিত বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। এই পদে তার মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ পুলিশ প্রধান হিসেবে এই বাহিনীতে নানামুখী যুগান্তকারী পদক্ষেপের কারণে সমাদৃত বর্তমান ড. বেনজীর আহমেদ। সে কারণে ড. বেনজীর আরেকটি বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারে সরকার। এছাড়াও আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও আইজিপি হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন। যাদের নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে। ড. বেনজীর আহমেদকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া না হলে ৩১তম পুলিশ প্রধান হিসেবে দেখা যাবে নতুন মুখ।

সূত্র জানায়, পুলিশ প্রধানের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে অনেক সিনিয়র অফিসারের বিষয়ই আলোচনায় আসে। এর মধ্যে পুলিশ হিসেবে কর্মজীবনের সফলতা, গ্রহণযোগ্যতা ও আস্থা বিবেচনায় পদটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ চার বছর সময় ধরে আইজিপি ছিলেন হাসান মাহমুদ খন্দকার। ২০১০ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

৩১তম আইজিপি হিসেবে আলোচনায় আছেন যারা-

ড. বেনজীর আহমেদ 

বর্তমান আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া প্যাসিফিক সেন্টার ফর সিকিউরিটি স্টাডিজ, অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরা চার্লস স্ট্রার্ট ইউনিভার্সিটি ও সিঙ্গাপুরে বিশ্বব্যাংকের আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পড়াশোনা করেন ড. বেনজীর আহমেদ। ২০১৯ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।  

২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকার বেনজীর আহমেদকে দেশের ৩০তম পুলিশপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়। এরপর থেকে তার নানা পদক্ষেপের কারণে ‘জনমুখী পুলিশি সেবা’ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। আইজিপি হিসেবে যোগদানের পর ড. বেনজীর আহমেদের হাত ধরে এসআই-কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াসহ পুলিশে বেশকিছু সংস্কার এসেছে। যোগ হয়েছে নতুন নতুন বিষয়, আধুনিক হয়ে উঠেছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশকে জনবান্ধব করতে তার রয়েছে নানা উদ্যোগ। সহজে পুলিশি সেবা পাওয়ায় পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থাও বেড়েছে।  

যে কোনো সংকটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, জঙ্গি ও মাদক নির্মূলে প্রতিনিয়ত অভিযানসহ তার নানামুখী পদক্ষেপ পেয়েছে প্রশংসা। করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে সামনে থেকে মানুষকে সেবা দিয়ে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পুলিশ।  

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বেনজীর আহমেদকে র‌্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি দায়িত্ব বুঝে নিয়ে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে ভূমিকা পালন করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান তিনি। হলি আর্টিসান হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানও বেগবান রেখেছেন তিনি। সুন্দরবনের জলদস্যুতার অবসান ঘটিয়ে একটি স্বস্তির উপকূলীয় অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় বিশেষ অবদান রেখেছেন ড. বেনজীর আহমেদ।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

বাংলাদেশ পুলিশের ৩১তম আইজিপি হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। অষ্টম বিসিএস ব্যাচের ওই কর্মকর্তার আগামী ১১ জানুয়ারি অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। সৎ পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে বাহিনী ও সরকারের কাছে তার সুনাম থাকা এই কর্মকর্তাকে আইজিপি হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে সরকার। বাংলাদেশ পুলিশে অসামান্য অবদান ও অনন্য সেবাদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদকে ভূষিত হয়েছেন। গত বছরের ১৮ অক্টোবর চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।  

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।  

অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে ঢাকা রেঞ্জে ও ডিআইজি হিসেবে ডিআইজি (অপারেশনস্), ডিআইজি (প্রশাসন), রেঞ্জ ডিআইজি হিসেবে ময়মনসিংহ ও ঢাকা রেঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। 

পুলিশ সদর দপ্তরের এস এম রুহুল আমিন 

নতুন আইপিজি হিসেবে আলোচনায় আছেন ১২তম বিসিএস ব্যাচের কর্মকর্তা পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (লজিস্টিকস অ্যান্ড অ্যাসেট অ্যাকুইজিশন) এস এম রুহুল আমিন। তিনি গোপালগঞ্জ সদর থানায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতকসহ (সম্মান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।  

এস এম রুহুল আমিন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার, ঢাকায় সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার হিসেবে যোগদান করে বরিশালে পুলিশি সেবার নবদিগন্তের সূচনা করেন।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সরকার যাকেই এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিক না কেনো, তাকে আসন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম হতে হবে। সেটা ভেবেই সরকার নিয়োগ চূড়ান্ত করবে। এখন দেখার এই গুরুত্বপূর্ণ পদে কে আসেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭