ইনসাইড পলিটিক্স

সুশীলরা কি আবার ক্ষমতায় যেতে চায়?


প্রকাশ: 14/08/2022


Thumbnail

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনৈতিক বিরোধের জের হিসেবে দেশের রাষ্ট্রপতি দখল করেছিলো সুশীল সমাজ। এটিকে বলা যায় সাংবিধানিক ক্যু। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি একটি একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করতে চেয়েছিলো বিএনপি। কিন্তু সেই নির্বাচন আওয়ামী লীগ প্রত্যাখ্যান করে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টিসহ প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দেয়। এরকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের ১১ দিন আগে ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত একটি সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং সেই ক্ষমতা গ্রহণকে সকলেই স্বাগত জানিয়েছিলো। সেনাসমর্থিত এই সরকারটি ছিলো আসলে একটি সুশীল সমাজের সরকার। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাই ওই অনির্বাচিত সরকারের চালিকাশক্তি ছিলো। সাম্প্রতিক সময় রাজনৈতিক উত্তাপ এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে নানা রকম টানাপোড়েনের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ কি আবার ক্ষমতা গ্রহণ করতে চায়? সে রকম ক্ষমতা গ্রহণের কি পাঁয়তারা করছে তারা? এই প্রশ্নটি উঠেছে নানামুখী বাস্তবতায়।

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিকবার বলেছেন যে, তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে। বিশেষ করে নির্বাচন এলেই তাকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র হয়, এবারও হচ্ছে। এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন যে, একটি মহল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী যখন এ বক্তব্য দিচ্ছেন ঠিক সেই সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে বিএনপি এখন রাজপথে নানা রকম কর্মসূচিতে দিচ্ছে। ২০০৭ সালের মতো আওয়ামী লীগ-বিএনপি যেন মুখোমুখি অবস্থানে না যায় সেজন্য আজ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন যে, বিরোধী দল আন্দোলন করলে সেই আন্দোলন কর্মসূচীতে যেন বাধা না দেওয়া হয়। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সরকার কিছু কিছু অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। তাছাড়া এই সময়ের মধ্যে আরও কিছু সমস্যা প্রবল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ডলারের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং ইত্যাদি সংকটের ফলে জনজীবনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে মাঠে নেমেছে সুশীল সমাজ।

সুশীল সমাজ পরিস্থিতিকে আরও জটিল ঘোলাটে এবং ভয়ঙ্কর করে দেখানোর চেষ্টা করছে। প্রতিদিন সুশীলদের পক্ষ থেকে কেউ না কেউ শঙ্কা জাগানিয়া বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আর এ সমস্ত বক্তব্যগুলো সমাজে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। সুশীল সমাজ যেভাবে কথা বলছে, তাতে অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশ বোধহয় আবার শ্রীলঙ্কা হয়ে যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কার পথে বাংলাদেশ হাঁটছে ইত্যাদি। কোনো কোনো সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এমনভাবে কথা বলছেন যে, এই সরকারই বোধহয় সব সঙ্কটের মূলে। এর কারণেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে যে, হঠাৎ করে সুশীল সমাজ প্রবলভাবে মাঠে নামলো কেন? বিএনপির যে সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক অবস্থা তাতে বিএনপির আপাতত ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই। এমনকি দেশের যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলেও বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বিএনপি এখন যে সমস্ত কথাগুলো বলছেন সেই সমস্ত কথাগুলো সবই সুশীল সমাজের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি। সুশীল সমাজ যে কথাগুলো বলছে, সেগুলোই বিএনপি নেতাদের মুখে শোভা পাচ্ছে। কাজেই বিএনপি যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন না বা ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো আগ্রহ বিএনপির আপাতত নেই এটি সুস্পষ্ট। তাছাড়া বিএনপি নিজেরাও জানে যে, তাদের যে নেতৃত্বের অবস্থা এবং সাংগঠনিক অবস্থা তাতে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব নয়। তাহলে বিএনপি কেন আন্দোলন করছে? সুশীল সমাজ কি তাহলে বিএনপি মাঠে নামিয়ে দিয়েছে? সুশীল সমাজকে ক্ষমতায় আনার জন্যই কি বিএনপি তাহলে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করছে?

২০০৭ সালে যেমন আওয়ামী লীগ-বিএনপির সহিংসতার প্রেক্ষাপটেই ড. ফখরুদ্দিনের সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলো ঠিক তেমনি বিএনপির এবং আওয়ামী লীগের আরেকবার সহিংসতার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ বিএনপির পাল্টা হিসেবে বলেছে যে, আগস্ট মাস যাইতে দেন, আমরা দেখবো কত ধানে কত চাল। অর্থাৎ রাজনীতিতে যদি আবার নতুন করে সহিংসতা এবং উত্তাপ ছড়ায় তাহলে সুশীল সমাজের কি ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০০৭ সাল আর ২০২২ সাল এক নয়। এখন দেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন রাজনৈতিকভাবে অনেক দূরদৃষ্টি, বিচক্ষণ। তাই সুশীল সমাজরা যদি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যই অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা রকম কথাবার্তা বলে, সেটি সাময়িকভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করবে বটে কিন্তু এটি ক্ষমতায় যাওয়ার কোনো সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭