ইনসাইড পলিটিক্স

জিয়াই বঙ্গবন্ধু হত্যার মাস্টারমাইন্ড


প্রকাশ: 14/08/2022


Thumbnail

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং কার কি ভূমিকা ছিলো তা নিয়ে খুব শীঘ্রই একটি কমিশন গঠন করা হবে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। প্রতিবার আগস্ট মাস এলেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের মূল হোতাদের উদ্ঘাটনের জন্য একটি কমিশন গঠন করার আহ্বান জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এরকম ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা কিভাবে যুক্ত তা পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন বলে জানা যায়। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত কোনো কমিশন গঠন করা হয়নি। তবে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের কমিশন গঠন করার জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন এবং খুব শীঘ্রই এই কমিশন গঠন করা হবে। কমিশন নিশ্চয়ই আগস্ট ট্র্যাজেডির পুঙ্খানুপুঙ্খ ঘটনা তদন্ত করবেন এবং এ ঘটনায় কার কি ভূমিকা ছিলো, সেটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিভিন্ন গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এইটুকু প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। মূলত তার পরিকল্পনাতেই এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছিলো এবং বিভিন্ন ক্রিয়াশীল শক্তির সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি ছিলেন পর্দার আড়ালে।

জিয়াউর রহমানের সামরিক ইতিহাস যদি একটু খতিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে তিনি সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য ছিলেন যেটি আইএসআই নামে পরিচিত। আইএসআই এর সদস্য হিসেবে তিনি ঢাকায় দায়িত্বে ছিলেন এবং যুদ্ধ যখন অনিবার্য সেই সময় জিয়া অনেকটা চাকরীর খাতিরে নির্দেশিত হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। যেকোনো সামরিক যুদ্ধকৌশলের একটি অনিবার্য অঙ্গ হলো গোয়েন্দা প্রেরণ করা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে কিভাবে কাজ হবে, মুক্তিযোদ্ধারা যেন বিভ্রান্ত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধের ভিতর থেকে যেন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে বিপন্ন করা যায় সেজন্যই জিয়াউর রহমানকে সম্ভবত পাকিস্তানি এজেন্ট হিসেবে পাঠানো হয়েছিলো। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় কর্নেল বেগ জিয়াউর রহমানকে যে চিঠি লিখেছিলেন সেই চিঠি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, জিয়াউর রহমান আসলে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেও তিনি ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমানের ভূমিকাও ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ, যেমন প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো খন্দকার মোশতাক আহমেদের ভূমিকাও। এরা দুইজনই ভিতরে ভিতরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতা করেছিলেন। এজন্য জিয়াউর রহমানকে যেমন একসময় তার কমান্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, ঠিক তেমনি খুনি মোশতাক আহমেদকেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বিতর্কিত ভূমিকা কারণে শেষ পর্যন্ত জিয়াউর রহমান স্বাধীন দেশে সেনাপ্রধান হতে পারেননি যদিও তিনি শফিউল্লাহর চেয়ে সিনিয়র ছিলেন। কারণ, ১৯৭১ সালে তার ভূমিকা ছিলো বিতর্কিত এবং রহস্যময়। স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান উপ-সেনাপ্রধান হলেও তিনি কর্নেল ফারুক, রশীদ, ডালিমসহ বিভিন্নদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করতেন এবং জিয়াউর রহমানই তাদেরকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য প্ররোচিত করেন, এরকম বেশকিছু তথ্য প্রমাণ এখন পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান যখন বিভিন্ন রকম অপতৎপরতা চালাচ্ছিলেন, সেটি বঙ্গবন্ধুর কানে এলে বঙ্গবন্ধু তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে বদলি করেন। এ সময় জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জায়গায় তার বদলি ঠেকানোর জন্য তদবির করেছিলেন। এই সময়কালে জিয়াউর রহমান অন্তত তিনবার আগামাসি লেনে খুনি মোশতাক আহমেদের সাথে দেখা করেন বলেও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একটি রাজনৈতিক সরকারকে সামনে নিয়ে আসার পরিকল্পনা তৈরি করেন।

খুনি মোশতাক ছিলো একজন লোভী, চতুর, দুর্নীতিবাজ দানব। আর এ কারণেই জিয়াউর রহমান তাকে খুব সহজেই টোপ দিয়ে গিলতে পারেন। জিয়াউর রহমানের পরিকল্পনার তিনটি ভাগ ছিলো। একটি ভাগ ছিলো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো, দ্বিতীয়ত খুনি মোশতাককে দিয়ে একটি সরকার গঠন এবং তৃতীয় ভাগ ছিলো যে, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়ে আওয়ামী লিগকে নিশ্চিহ্ন করা। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর যখন সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছিলো এবং খুনি মোশতাক যখন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি তখন কর্নেল তাহেরের সহায়তায় ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। এর আগে ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফরা একটি সামরিক অভ্যুত্থান করেছিলো কিন্তু খালেদ মোশাররফদের দোদুল্যমানতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিচক্ষণতার অভাব এবং আত্মকেন্দ্রিক চিন্তার ফলে তারা ৭১ এর পরাজিত শক্তিকে শেষ পর্যন্ত পরাজিত করতে পারেনি। বরং তারাই পরাজিত হয়েছিলেন। আর সেই সুযোগে জিয়াউর রহমান ৭ নভেম্বর ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং কর্নেল তাহেরকেই পরে বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে যারা গবেষণা করছেন, এই তদন্ত কমিশন যদি ঠিক মত কাজ করে তাহলে নিশ্চয়ই এই সত্যগুলো তদন্তে বেরিয়ে আসবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭