ইনসাইড বাংলাদেশ

আগস্টের প্রথম প্রতিরোধ


প্রকাশ: 15/08/2022


Thumbnail

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট। ইতিহাসের নিকৃষ্টতম এবং জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডের পর তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। সকালে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হয়ে পড়েছিলেন দিকভ্রান্ত। কিন্তু এরকম একটি হতাশাজনক সময়ে কিছু কিছু মানুষ প্রতিবাদ করেছিলেন, কেউ কেউ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। আগস্ট ট্রাজেডিতে যেমন প্রতিরোধহীনতার কথা বলা হয়, যেমন নিল্পিপ্ত সংগঠনের কথা বলা হয়, ঠিক তেমনি কম উচ্চারিত হয় প্রথম প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদের কথা। আগস্টে জাতির পিতাকে যখন ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে আক্রমণ করা হয়, তখন সেই আক্রমণের কথা জানতে পারেন তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিল। পরবর্তীতে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পেয়েছিলেন। এই অবস্থায় তিনি ছুটে আসেন ৩২ নম্বরের দিকে। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের কাছে ঘাতকরা তাকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে এই একজন শহীদ হয়েছিলেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী সেই সময় টাঙ্গাইলে ছিলেন। তিনি যখন বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা জানতে পারেন তখন তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে তিনি নেতাকর্মীদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। তারপর তিনি ভারতে আশ্রয় নেন প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি ভারতে ছিলেন। পঁচাত্তরের পর থেকে কিছুদিন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের চেষ্টা করলেও সেটি সফল হয়নি। কিন্তু তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন।

এরকম প্রতিবাদ করেছিলেন বিশ্বজিৎ ঘোষও। এজন্য জিয়াউর রহমান তাকে গ্রেফতার করেন। দীর্ঘ ১৫ বছর এই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক কারান্তরীণ ছিলেন। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট এর ঘটনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মিছিলটি বের করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। ছাত্র ইউনিয়নের ডাকসুর ভিপি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে এই মিছিলটি বের হয়। এই মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এই মিছিলে ছাত্র ইউনিয়নের মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছাড়াও ছিলেন আওয়ামী লীগের বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মান্নান খান এবং সাবেক সচিব শওকত আলী। এই মিছিলের পর ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণও করা হয়েছিল। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল বের হয়। ১৫ আগস্টের সকালবেলা বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা ছিল। এজন্য সারাদেশ থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। তারা যখন প্রত্যুশে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ঘটনা শুনেন, তখন তারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। এই সময় জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ কয়েকজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নীলক্ষেত এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল করেছিলেন। কিন্তু জাহাঙ্গীর কবির নানক নিজেই বলেছেন যে, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনার অভাবে তারা শেষ পর্যন্ত বেশি দূর এগোতে পারেননি।

পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট এর এই ঘটনার পর বিক্ষিপ্তভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল করেছিল এবং বিক্ষোভ করেছিল। অনেক তৃণমূলের সদস্যরা স্বপ্রণোদিত হয়েও মিছিল করেছিলেন। কিন্তু এই সময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিল বিভ্রান্ত। কেউ কেউ মোস্তাকের পদলেহনের জন্য বঙ্গভবনের দিকে ছুটে গিয়েছিলেন। সে কারণেই বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদগুলো পুঞ্জিভূত হতে পারেনি। অবশ্য নভেম্বরের দিকে এসে আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল করা হয়। কিন্তু ৩ নভেম্বরের পর সেই তৎপরতাও ভেস্তে যায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭