ইনসাইড পলিটিক্স

পঁচাত্তরে কেন আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করতে পারেনি?


প্রকাশ: 15/08/2022


Thumbnail

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নিয়ে যখন আলোচনা হয়, এই ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার ঘটনা যখন স্মৃতিচারণ করা হয় তখন বারবার একটি প্রশ্ন সামনে আসে, সেটি হলো আওয়ামী লীগের ভূমিকা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্তত তিনটি বক্তৃতায় বলেছেন, এত বড় সংগঠন, এত নেতাকর্মীরা তারা কোথায় ছিল? কেউ প্রতিবাদ করতে পারলো না কেন? শুধু পঁচাত্তরের ঘটনাই নয়, বিভিন্ন সংকটে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ ভেঙে পড়ে, তারা রুখে দাঁড়াতে পারে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা হাত-পা গুটিয়ে বসে ছিলেন, কর্মীরা বিভ্রান্ত ছিলেন। সেসময় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের দৃঢ়তার কারণ সংগঠনকে পুনর্গঠন করা সম্ভব হয়েছিল। পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুতুলের মতো দাঁড়িয়েছিলেন। তারা এক রকম দিক নির্দেশনাহীন অবস্থায় নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে ছিলেন কিন্তু নেতৃত্ব ছিল বিভ্রান্ত। ২০০৭ সালে এক-এগার সময়ও দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে রকম হওয়ার কথা ছিল সেই প্রতিবাদ হয়নি। প্রশ্ন হলো যে, পঁচাত্তরে আওয়ামী লীগের এত বড় সংগঠন কেন প্রতিবাদ করতে পারেননি? পঁচাত্তরের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাকশাল প্রবর্তন করেছিলেন। বাকশালের মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে এসেছিলেন জাতির পিতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো এই যে, এই বাকশালের পক্ষ থেকেও তেমন কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। রাজনীতি বিশ্লেষকরা পঁচাত্তরের প্রতিবাদহীন আওয়ামী লীগের স্বরূপ অন্বেষণ করতে গিয়ে একাধিক কারণ পেয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে,

১. চাটুকাররা নেতৃত্ব বেশি ছিল: ১৯৭৪ সালে তাজউদ্দীনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দূরত্ব তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তাজউদ্দীন মন্ত্রিসভা থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর তাজউদ্দীনকে আওয়ামী লীগের কোনো বড় পদে দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছিল যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাজউদ্দীনের একটি দূরত্ব তৈরি করা হয়েছিল এবং এই দূরত্ব তৈরিতে প্রধান ভূমিকা রেখেছিলেন খুনি মোশতাক। খুনি মোশতাক চক্র বঙ্গবন্ধুর চারপাশে ঘিরে ছিলেন আর এই কারণেই দেখা যায় যে, বঙ্গবন্ধু নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তার রক্তের উপর দিয়ে তারই মন্ত্রিসভার ২৩ জন সদস্য খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিলেন। অর্থাৎ যে নেতৃত্ব ছিল সেই নেতৃত্বে ছিল বিশ্বাসঘাতক। যার ফলে প্রতিবাদ হয়নি।

২. অন্য নেতৃত্বে ভীরু কাপুরুষতা: পঁচাত্তরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিন ধরনের নেতৃত্ব ছিলো। প্রথম ধরনের নেতৃত্ব ছিলো বিশ্বাসঘাতকের দল, যারা খুনি মোশতাকের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। দ্বিতীয় অংশ ছিলো বিভ্রান্ত এবং ভীরু যারা এই ঘটনার প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি। কেউ তিন-চারদিন ঘরে বসে ছিলেন। কেউ পালিয়ে গিয়েছিলেন, কেউ প্রতিবাদ করলে জেলে যেতে হবে-এই কারণেই তারা সঠিক সময় সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারেনি। 

তৃতীয় ভাগ ছিল যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, নির্যাতন ভোগ করেছিলেন এবং সামরিক জান্তা জিয়া মনে করেছিলেন যে, এরাই হয়তো সে শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ করতে পারবেন। আর এই তিনটি কারণেই শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মধ্যে থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একটি নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন, একটি ডাকের অপেক্ষায় ছিলেন। আওয়ামী লীগের একাধিক কর্মী বলেছেন যে, তারা নেতৃত্বের নির্দেশের অপেক্ষায় ছিলেন কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনার পর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদেরকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কেউ কেউ বলেন যে, এরকম একটি ঘটনা ঘটতে পারে এটা আওয়ামী লীগের নেতারা চিন্তাও করতে পারেনি। কিন্তু একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে এবং প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হবে এটিই হওয়া উচিত। কিন্তু সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতারা সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলেই সংশ্লিষ্ট  মনে করেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭